somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সরকারী ফ্রিজ (সাইকো)

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমাদের বাড়িতে জীর্ণশীর্ণ আধভাঙা একটা ফ্রিজ আছে, যার গায়ে বড়বড় করে একটা কাগজে লিখে রেখেছি "সরকারী ফ্রিজ"। গ্রামের হেন কোন মানুষ নেই যেকিনা বিখ্যাত এই ফ্রিজ ব্যবহার করেনা। কেউ এক কেজি মাংস চার বেলা খাবে বলে চারটে টুপলা বানিয়ে তিন টুপলা রেখে যাবে আমাদের ফ্রিজে। আবার কারো স্বামী সখ করে রাত দুপুরে কেজি কেজি মাছ ধরে আনে শুধুমাত্র আমাদের এই ফ্রিজের উপর নির্ভর করে। এ রকম হাজারো বিরক্তিকর কারণবশতই ফ্রিজের নাম রেখেছি সরকারী ফ্রিজ। কেননা আমরা জানি, যে স্থান বা পন্য গনহারে ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় তাহাকেই সরকারী সম্পত্তি বলা হয়। সুতরাং সরকারী মাল দরিয়ায় ঢাল!!

ফ্রিজটা যেদিন প্রথম আমার বাবা কিস্তিতে কিনে এনেছিলেন সেদিন আমাদের বাড়ি যুদ্ধ জয়ের আনন্দ পালন করা হয়েছিল। কারণ গরম আসলেই আমার মায়ের আমরণ অনশনের একদফা দাবি ছিল একটাই "ফ্রিজ চাই ফ্রিজ চাই"। ফলে বাবা বাধ্য হয়ে কিনে এনেছিলেন সাধের এই ফ্রিজটি। প্রথম প্রথম ফ্রিজের চরম যত্নআত্তি করতাম, যেমন - ময়লা হাতে ছোঁয়া যাবেনা, বিদ্যুৎ চলে গেলে খোলা যাবেনা, ওভার লোড করা যাবেনা ইত্যাদি ইত্যাদি।

কিন্তু প্রথম দিকে ফ্রিজের সম্ভ্রম রক্ষা করতে পারলেও আস্তে আস্তে তা হয়ে ওঠে জনগণের সম্পত্তি। দিন নেই, রাত নেই যখন তখন গ্রামের মানুষ অবাধে ব্যবহার করে চলেছে আমাদের এই ফ্রিজটি। ছোট ছোট মাছ, মাংসের টুপলায় উপচে পরতো যেন। এত এত টুপলার ভিতরে মাঝে মাঝে নিজেদের টুপলা চিনতেই হিমশিম খেতে হয় আমাদের। ফলে বার কয়েক যে ভুল করে অন্যের মাংস নিজেদের মনে করে খেয়ে ফেলিনি তাও কিন্তু নয়!! পরে অবশ্য ক্ষতিপূরণ বাবদ নিজেদের টুপলাটা দিয়ে দিতে হয়েছে। বরং ছোট টুপলা খেয়ে খেসারত দিতে হয়েছে বড় টুপলা!!!
কিন্তু ভুল করে একদিন এক টুপলা মাংস খেয়ে ফেলেছিলাম আমরা, যার খেসারত আজো দিতে পারিনি ... এবং যে স্মৃতি মনের কোনে উকি দিতেই ভয়ে আজো রক্ত হিম হয়ে যায়...

সেদিন ছিল শুক্রবার। জুম্মার নামাজ শেষে বাসায় ফিরেই মাকে ডেকে বললাম - কি রেঁধেছ? তাড়াতাড়ি দাও পেটের ছুঁচো গুলো লাফাচ্ছে !!! বলে টিভি টা অন করে বসলাম খাবার টেবিলে। টিভি বন্ধ থাকলে আমার খাওয়া হয়না!! রান্নাঘর থেকে লোভনীয় ঘ্রান ভেসে আসছে। স্বাভাবিক ভাবেই সপ্তাহের এই একটি দিন একটু ভালো মন্দ খাবারের আশায় হাঙ্গামা শুরু করে দেয় সব ছেলে মেয়েরাই। আমিও দাতে মাংস কাটার লোভে জিভ বের করে অপেক্ষা করতে করতেই মা মাংসের গামলা টা আমার সামনে এনে রাখলেন আর আমি ওমনি টপ করে এক পিস গরম মাংস মুখের মধ্যে পুরে ফেললাম। আহ!! কি আরাম !! এমনিতেই পৃথিবীর সব মায়ের রান্না তার সন্তানের কাছে শ্রেষ্ঠ রান্না, তবুও আমার কাছে মনেহয় আমার আমার মায়ের রান্নাই বোধহয় সবথেকে সেরা। একই কথা ঘুরিয়ে বললাম আরকি !!

কিছুক্ষন বাদেই মা আমার প্লেটে ভাত বারলেন এবং নিজেও বসলেন। ঠিক তখনই ঘটলো বিচ্ছিরি ঘটনাটা !! হটাত করেই মা আমার প্লেট ছুড়ে মাটিতে ফেলে দিলেন এবং মুখে কাপড় চেপে দৌরে গেলেন বাড়ির উঠনে!! আমি কিংকর্তব্যবিমুর হয়ে ছুটলাম তার পিছু পিছু… দেখলাম মা হড়হড় করে বমি করছেন!!! আমি পাগলের মত মায়ের মাথায় পানি ঢালতে ঢালতে বললাম-
“কি হয়েছে মা?? হটাত কি হইলো তোমার??”
মা বমি করতে করতেই কোনরকমে বলল-
“খোকা, খবরদার ঐ মাংস খাসনা !!”

মাকে আর কোন প্রশ্ন না করে কিছুক্ষন বাদে মাকে ঘরে এনে শুইয়ে দিলাম। খেয়াল করলাম মা থরথর করে কাপছেন!! আমার জীবনে মাকে কোনদিন এভাবে ভয় পেতে দেখিনি। কিন্তু কেন এবং কি দেখে মা এমন ভয় পেলেন তা জানার জন্য যখন তদন্ত করতে গেলাম তখন আমার শরীরের সবকটা লোম দাড়িয়ে আমায় জানান দিল - Something is wrong!!! Very very wrong!!!

দেখলাম মাংসের গামলার ভিতরে কোনার দিকে একটা মানুষের আঙ্গুল!!! স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে । মনে হচ্ছে কিছুদিন আগেই খুব যত্ন করে নেইল কার্টার দিয়ে নখ কাটা হয়েছে নিখুত ভাবে। রান্না হওয়া সত্ত্বেও আঙ্গুলের নখটা অক্ষতই রয়ে গেছে। পুরো গামলার আর কোন মাংস দেখে বোঝার উপায় নেই যে ওগুলো মানুষের মাংস !!!
মাথা ঝিমঝিম করতে থাকলো… প্রচণ্ড বমি চাপছে কিন্তু বমি করার মত শক্তিও যেন হারিয়ে ফেলেছি। হিসাব মিলছে না কিছুতেই!! তবে কি আজকেও ভুল করে অন্য কারো মাংসের টুপলা রেধে ফেলেছেন মা?? তাই যদি হবে তবে কে সেই ব্যাক্তি যে আমাদের ফ্রিজে মানুষের মাংস রেখে গেছে???

তিনদিন পর-

আজ তিনদিন হয়ে গেলেও অপরাধীকে ধরতে পারলাম না। মায়ের প্রচণ্ড জ্বর। সেদিন বিকালে বমি করে আমি রক্ষা পেলেও মা পাননি। এই তিনদিন আমি এক চুলও নড়িনি বাড়ি থেকে। দিনরাত শুধু লক্ষ্য রেখে চলেছি, কে কে আমাদের ফ্রিজে মাংস নিতে আসছে বা কে কে মাংস রেখে যাচ্ছে। কিন্তু নাহ… এ পর্যন্ত কারো সন্দেহ মূলক আচরন লক্ষ্য করিনি… তবে কি কোন ভাবে আসামী টের পেয়ে গেলো !! যদিও এ ব্যাপারে আমরা মা, ছেলে ছাড়া আর কেউ জানেনা। কি করা যায়… কি করা যায়… ভাবতে ভাবতে মাথা চুলকাচ্ছিলাম এমন সময়-
“ভাইয়া, অ্যান্টি বাড়িতে আছে?”
দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি তাবাচ্ছুম নামের মেয়েটা মাথায় কাপড় চেপে কাচুমাচু মুখে জড়সড় হয়ে দাড়িয়ে আছে। আমাদের বাড়ির পাশেই একটা মেসে নতুন এসেছে মেয়েটা। দেখেই বোঝা যায় নিরিহ গোছের অমায়িক ভদ্র একটা মেয়ে। মাঝে মাঝে বার কয়েক রাস্তায় দেখা হলেই লম্বা করে সালাম দেয়াতে ওর উপর আলাদা একটা দৃষ্টিভঙ্গিও জন্ম নেয়। কেননা আজকালকার মেয়েরা স্কুল কলেজের স্যার ম্যাডাম কেও সালাম দিতে চায়না। আর তাছাড়া বাবা মা কে ছেড়ে শহরে পড়তে আসা ছেলে মেয়েদেরকে আমি স্নেহের চোখেই দেখি। আমি মুখের চিন্তিত ভাবটা দূর করে সাথে সাথে হাঁসি মুখে বললাম-
“মায়ের তো শরীর খারাপ, কিছু লাগবে?”
“না… মানে ফ্রিজে মাংস ছিল তো … নিতে আসছিলাম”
কারো ফ্রিজে মাংস রাখা বা তা নিতে আসা যেন মহা পাপ বা লজ্জার কিছু, এমন ভঙ্গিতেই কথাটা বলল তাবাচ্ছুম। আমি বিষয়টাকে একটু সহজ করে ভ্রু কুঁচকে বললাম-
“তো কি হয়েছে? ভিতরে এসে ফ্রিজ থেকে নিয়ে যাও”
বলে আমি শোবার ঘরে চলে গেলাম। এ সময় ওর সামনে থাকলে বিব্রত হতে পারে। আমি শুয়ে শুয়ে আবারো ভাবনার জগতে প্রবেশ করলাম...

কিন্তু কিছুক্ষন বাদেই খুটখুট শব্দে বের হলাম ঘর থেকে, এবং বের হতেই যা দেখলাম তা দেখার জন্য তৈরি থাকার প্রয়োজন ছিল !! ভেবেছিলাম মেয়েটা তার মাংসের টুপলা নিয়ে চলে গেছে… কিন্তু নাহ… যায়নি… বরং পুরো ফ্রিজের সমস্থ মাছ মাংসের টুপলা গুলো মেঝেতে যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে একাকার অবস্থা করে ফেলেছে!!! পাগলের মত সব গুলো টুপলা হিংস্র ভাবে ছিঁড়ে ছিঁড়ে দেখছে আর ব্যর্থ মুখে ফেলে দিচ্ছে…!!! আমি পাসে গিয়ে দাড়াতেও কোন প্রকারের আগ্রহ দেখালোনা সে… বরং একই ভঙ্গিতে অপ্রকিতস্থের মত খুঁজে চলেছে তার হারিয়ে যাওয়া টুপলাটা…

এর পরে আর বোঝার কিছু বাকি থাকেনা… আমি আস্তে করে আমার মা কে নিয়ে বের হয়ে পরলাম বাড়ি থেকে এবং বাইরে থেকে তালা মেরে দিলাম বাড়ির প্রধান ফটোকে।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:৩৯
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×