somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফেসবুক সার্টিফিকেট

১৯ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৫:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


একবার আমার এক মামার জন্য পাত্রী দেখতে গিয়ে ভিষণ বিপদে পরেছিলাম।

স্কুল কলেজের ভারী ভারী সার্টিফিকেটের পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বিশেষ স্থান অর্জন করে নিয়েছে ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট। যা কিনা ব্যাংকে একাউন্ট খোলা, চাকরির ক্ষেত্র ছাড়াও আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিশেষ বিশেষ প্রয়োজনে ব্যবহার হয়। কিন্তু বিবাহ শাদির ক্ষেত্রেও যে ব্যবহার হতে পারে তা আমার জানা ছিলনা।

ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট এর অর্থ দাঁড়ায় ‘চারিত্রিক সনদপত্র’। যা আমরা সাধারণত ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা পরিষদ বা সিটি কর্পোরেশন থেকে সংগ্রহ করে থাকি। যাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে থাকি অর্থাৎ ওয়ার্ড কাউন্সিলর বা চেয়ারম্যান, তারা কিন্তু আমাদের সম্পর্কে আগা মাথা কিচ্ছু না জেনেই দিব্যি সাক্ষর করে দেন সনদপত্রে!!

যাইহোক, মামার বিয়ের প্রসঙ্গে আসি। মামার জন্য পাত্রী দেখতে গিয়ে ভীশম খাওয়া অবস্থা। পাত্রী রূপে গুনে অনন্য। মামার চোখ যেন আর সরছিল না। তিনি তৎক্ষণাৎ পকেট হাতড়ে একটা সোনার আংটি বের করে কন্যার হাতে পরাতে গেলেই বাঁধল বিপত্তি!! মামাকে থামিয়ে দিয়ে কন্যা তার বাবা মায়ের দিকে তাকিয়ে একটু ইতস্তত হয়ে বলল -
“আংটি পরানোর আগে আমার কিছু কথা ছিল”

আমি, মামা ও মামার বাবা, মা সবাই হা হয়ে গেলাম। মেয়ে কি বলতে চায় তা অনুমান করা মুশ্কিল। কেননা বিগত ২৭ বছরের জীবনে অনেক বিবাহ শাদি দেখেছি কিন্তু কখনো এমন পরিস্থিতিতে পরিনি।

চারিদিকে চাপা গুঞ্জন শুরু হয়ে গেল। মামা চোখমুখ কাঁচুমাচু করে বসে রইলেন। এ সময় ছোট্ট করে কেশে গলা খাকাড়ি দিয়ে কন্যার চাচা বললেন -
“তোমরা না’হয় পাশের ঘরে গিয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ করে নাও”

এতে আমরা ছেলে পক্ষের সবাই সম্মতি জানালেও কন্যা তাতে রাজী নয়! তার যা বলার সবার সামনেই বলতে চায় সে। তাতেও আমরা কেউ আপত্তি করলাম না, বরং অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকলাম তার কথা শোনার জন্য।

এবার কন্যা একটু সাবলীল ভঙ্গিতে বলল -
“আসলে তেমন কিছু নয়!! জীবনে এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিব, তাও আবার সম্পুর্ন অচেনা অজানা একজন মানুষের সাথে সারাজীবন কাটাব! তাই সেই মানুষটির চরিত্র সম্পর্কে একটু অবগত হতে চাচ্ছিলাম”

একথা শুনে মামার বাবা হোহো করে হেসে দিয়ে বললেন -
“ও এই কথা!! হাহাহা! শোন মামনী, ছেলে আমাদের চাঁদের টুকরো, চাঁদে কলঙ্ক আছে কিন্ত আমার ছেলের চরিত্রে কোন দাগ নেই!! এলাকায় এমন কেউ নেই যে আমার ছেলে সম্পর্কে একটা মাছি মারার অভিযোগ আনতে পারে। আর তাছাড়া আমাদের পৌরসভাসহ ওর ভার্সিটি থেকেও পাওয়া সর্বত্তম চরিত্রের সনদপত্র আমার কাছে আছে। তুমি চাইলে কালই পাঠিয়ে দেব, হাহাহা”

বলে সামনের টেবিলে রাখা মিষ্টির বাটি থেকে একটা মিষ্টি টপ করে মুখে ভরে আবারও হোহো করে হাসলেন তিনি। তার সাথে সাথে তাল মিলিয়ে হাসলেন কন্যা পক্ষের কেও কেও। কিন্তু কন্যা যেন এতে তুস্ট হলনা! সে বলল -
“আমার ওসব সার্টিফিকেট চাইনা!!”

মামার বাবা অবাক হয়ে বললেন -
“তাহলে কোন সার্টিফিকেট চাও?”
“ফেসবুক সার্টিফিকেট!!!”
“মানে??”
“মানে ফেসবুক হল একমাত্র প্রতিষ্ঠান যে কিনা প্রত্যেকটি মানুষের প্রকৃত ও আসল চরিত্র জানে”
“কিন্তু সে সার্টিফিকেট কোথায় পাবো মামনী?”
আগের থেকেও হতবাক হয়ে বললেন মামার বাবা।

এবার কন্যা তার চোখে মুখে হালকা হাসির রেখা টেনে বলল -
“খুব সহজ!! আপনার ছেলেকে বলুন এই মূহুর্থে তার ফেসবুক আইডি এবং পাসওয়ার্ড আমাকে দিতে!!!”

কথা শুনে আমি তো “থ” হয়ে গেলাম। মামা এবং তার বাবা একে অপরের দিকে মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে। তা দেখে কন্যা সাথে সাথে আবার বলল -
“অসুবিধা নেই, আমিও আমার আইডি আপনার ছেলের কাছে দিব, যেন সেও তার হবু বউয়ের চরিত্র সম্পর্কে অবগত হতে পারে!!”

মামার বাবা এসব ফেসবুক টেসবুক সম্পর্কে কিছু জানেন না, শুধু কানেই শুনেছেন। তাই ছেলের দিকে তাকিয়ে ছেলের ঘাড়ে চাপড় মেরে বললেন -
“তোর উপর আমার বিশ্বাস আছে। বউমা যা চায় দিয়ে দে বাপ”

ব্যস। ঘটনা এখানেই শেষ। বিয়েটা হয়নি। তবে সেদিন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে মামার অসহায় মুখ, কপালের ঘাম আর সেই বিশাল ঢোক গেলার দৃশ্য জীবনেও ভুলবো না।
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×