somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তুলা রাশির মেয়ে মিথুন রাশির ছেলে: এই জুটিতে ঘর বাঁধিলে সে ঘর সুখের হয়

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ট্রিভিয়া ক্যুইজ:
"তুলা রাশির মেয়ে, মিথুন রাশির ছেলে - এই জুটিতে ঘর বাঁধিলে, সে ঘর সুখের হয়!" কার গাওয়া গান???


আপনি এক্স-প্রজন্মের মধ্যবিত্ত পরিবারের বঙ্গ সন্তান কি' না, তার লিটমাস টেস্ট হল শাকিলা জাফরের গাওয়া গানের এই কলি।(যারা এই গানটি শোনেন নি, কিংবা মনে করতে পারছেন না, তাঁদের জন্য ছোট্ট একটা চমকের ব্যবস্থা করা হয়েছে - অনুগ্রহপূর্বক অপেক্ষা করুন!)

সেকালে জনপ্রিয়তায় তুঙ্গস্পর্শী এই গান টি.ভি.তে প্রচার হওয়ার পরের দিনই আমার পাশের বাড়ীর মিথুন রাশির সদ্য গোঁফ-গজানো ছেলেটা হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে আমার পড়ার টেবিলের সামনে নখ খুঁটতে খুঁটতে মিনমিনে স্বরে জিজ্ঞেস করে বসলো আমাকে, "তোমার রাশি তো তুলা, তাই না?" ব্যাপারখানা কী বুঝতে পেরে মনে মনে হাসতে হাসতে হয়রান হলেও, কুলুপ-আঁটা মুখে এমন ভাব ধরলাম যেন ভাজা মাছটা এখনো উল্টে খেতে শিখিনি।


রোমাঞ্চকর সেই কাহিনী অন্য দিনের জন্য তোলা থাকুক। রাশিচক্রের আবেদন একালে কতখানি, আমার জানা নেই। তবে সাথী হিসেবে নিজ ব্যক্তিত্বের সমকক্ষ কাউকে খুঁজে পাওয়ার তাড়না নিঃসন্দেহে সার্বজনীন।মানুষের পার্সোন্যালিটির সাথে সম্পৃক্তি রয়েছে তার কগনেটিভ ফাঙ্কশন প্রেফরেন্সের (cognitive function preference)।আমাদের স্বতন্ত্র কগনেটিভ ফাঙ্কশন প্রেফরেন্স এবং টেম্পরমেন্ট (temperament) নিয়ে আলোচনাই এই লেখার/ব্লগাড্ডার বিষয়বস্তু। আর, এই ব্লগাড্ডার মূল আকর্ষন হল
(স্টেজ-ব্যাকগ্রাউণ্ডে রহস্যময় সুরমূর্ছনা বেজে চলেছে, এমন একটা ইমো হবে) ---- লেখার একেবারে শেষ পর্বে থাকবে "ক্রিস্টাল-বল-পর্ব",যেখানে আমি স্ফটিক-বলে চোখ রেখে বলে দেব আপনার আদর্শ প্রেমিক-প্রেমিকা'র পার্সোন্যালিটি টাইপের সিক্রেট কোড (বাচ্চালোগ, তালিয়া বাজাও!) -- অতএব ধৈর্য ধরে সঙ্গে থাকুন!

মানুষের কগনেটিভ ফাঙ্কশন প্রেফরেন্সের তারতম্য ঘটিত ক্ল্যাসিফিকেইশন নিয়ে যে ক'টি আধুনিক মডেল আছে, তন্মধ্যে জনপ্রিয়তায় শীর্ষস্থানীয়সমূহের অন্যতম হল এম.বি.টি.আই. পার্সোন্যলিটি টাইপ।আমাদের আলোচনা কেবল এম.বি.টি.আই টাইপ-এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।




শুরুতেই বলে রাখা ভালো, আমার অ্যাকাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড এঞ্জিনীয়ারিংয়ে।এম.বি.টি.আই. টাইপ নিয়ে খাপছাড়া নাড়াচাড়া করেছি নিতান্তই শখের বশে।আমার এম.বি.টি.আই. বিদ্যার দৌড় কতটুকু, তার বর্ণনা জুড়ে দিলাম ডিসক্লেইমারে।এম.বি.টি.আই. টাইপ নিয়ে আমার আগ্রহের ঐতিহাসিক পটভূমি ব্যাখ্যা করি।
.
১৯৯৮ সালের ঘটনা। তখন আমার বিয়ের কথাবার্তা চলছে। বিয়েটা অ্যারেঞ্জনড ম্যারেজ একার্থে; সনাতনী ধারার সাথে পার্থক্য শুধু এ'টুকু - পাত্রপক্ষের ঘটক পাত্র নিজেই, আর পাত্রীপক্ষের তরফ থেকে ঘটকালী করেছি স্বয়ং আমি। লাইব্রেরী থেকে এম.বি.টি.আই. টাইপ নিয়ে লেখা একটা বই জোগাড় করে ফেললাম।ব্যস! শ্রীমান পাত্র আর পালাবেন কোথায়? তাঁর এম.বি.টি.আই. টাইপ নিয়ে গবেষণা তো বটেই, এ'ছাড়াও স্কোরকার্ড তৈরী করে সুদীর্ঘ সার্ধশত দিবস আর সার্ধশত রজনী নানাবিধ প্রশ্নবাণে বেচারাকে এতটাই অতিষ্ট করে তুলেছিলাম যে, শেষমেশ যখন শ্রীমানের পালা এলো পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়বার, তখন তাঁর চিন্তাশক্তি লুপ্ত হবার পথে। ভেবে ভেবে কোন কূল-কিনারা করতে না পেরে আমাকে শুধু একটাই প্রশ্ন করেছিলেন, "ইয়ে, মানে, আচ্ছা, বলুনতো কী প্রশ্ন করা যায়?" তখনই আমি পাকা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম - বরমাল্য (পড়ুন ফাঁসির রজ্জু) যদি পরাতেই হয়, তাঁর গলেই পরাবো।

যা বলছিলাম।এম.বি.টি.আই. টাইপ নিয়ে আগ্রহের শুরুটা সেই থেকে।

পার্সোন্যালিটি টাইপ বিষয়টা কী?
মানুষের ব্যক্তিত্বের ব্যাপ্তিশীলতাকে বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে বাক্সবন্দী করাটা অবান্তর নয় কি'?
'ব্যক্তিত্ব' বলতে আমরা কি' বুঝি? 'চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য' বলতেই বা কি' বুঝি? একটা মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তার জিনগত বিন্যাস (genetic disposition) থেকে শুরু করে পারিপার্শ্বিক পরিবেশের প্রেক্ষিতে গড়ে ওঠে।প্রক্রিয়াটা খুবই জটিল।কিন্তু এম.বি.টি.আই পার্সোন্যালিটি টাইপিং বলতে স্রেফ বোঝায় মানুষের কগনেটিভ ফাঙ্কশন প্রেফরেন্সের ভিত্তিতে উদ্ভুত একটা প্যাটার্ণকে।

‘কগনেটিভ ফাঙ্কশন প্রেফরেন্স’ বস্তুটা কী?

তারও আগে যে প্রশ্নটা আসে - এম.বি.টি.আই. টাইপলজি (typology) সম্পর্কে জেনে আমার লাভটা কী? এর ব্যবহারিক উপযোগিতা কোথায়?
এম.বি.টি.আই. টাইপলজির ব্যবহারিক প্রয়োগ নিয়ে বলি প্রথমে। ১৯৯৮ সালে রেকর্ডকৃত তথ্যানুযায়ী (রেফারেন্স: পাদটীকা দ্রষ্টব্য) সারাবিশ্বে ৩০টি দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এম.বি.টি.আই. ইনস্ট্র্যুমেন্টের (ইনস্ট্র্যুমেন্ট-এর বাংলা প্রতিশব্দ কেউ জানালে বিশেষ বাধিত থাকবো) প্রায়োগিক ব্যবহার চালু ছিলো:-

- শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষাদান পদ্ধতিতে,
- ভবিষ্যতে কোন ক্যরিয়ার বেছে নেবেন, সেই সংক্রান্ত পরামর্শ ও দিক নির্দেশনায় (career counselling),
- চাকরীতে এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে টীম ওয়ার্ক, দ্বন্দ্ব-সংঘাত সমাধান প্রকল্পে (conflict resolution),
- প্রফেশ্যনাল ডেভেলপমেন্টে,
- লীডারশীপ ট্রেইনিংয়ে,
- দাম্পত্য কলহ সমাধান প্রকল্পে (marriage counselling),
- মার্কেটিং প্রকল্পে।

আমার নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলি। একবার একটা চাকরীর জন্য দরখাস্ত করলাম। যথারীতি ইন্টারভিয়্যুতে ডাক পড়লো। চাকরীটা পাবার কথা জাপানে। যাই হোক। লিখিত ও মৌখিক ইন্টারভিয়্যু শেষে থার্ড রাউন্ডে এসে কর্তৃপক্ষ সুপ্রসন্ন বদনে আমাকে একটা প্রশ্নপত্র হাতে ধরিয়ে দিলেন। দ্রুত চোখ বুলাতেই দেখি যে, আর কিছুই না, পুরোটাই এম.বি.টি.আই. প্রশ্নমালা। উনাদের ভাষ্য ছিলো যে, উনাদের কম্পানির গবেষণার উপাত্ত সাপেক্ষে, জাপানে বিদেশী যে সব কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন, তাঁদের পারফর্মেন্স বিবেচনায় দেখা গেছে যে, নির্দিষ্ট পার্সোন্যলিটি টাইপের সাথে সুস্পষ্ট ক্যরেলেইশান (correlation) আছে। কাজেই, আমার পার্সোন্যলিটি টাইপ ম্যাচ করলে তবেই আমাকে চাকরীতে নিযুক্ত করা হবে। এটা আট বছর আগেকার কথা। আমিও সুপ্রসন্ন চিত্তে গড়গড় করে প্রশ্নোত্তর লিখে ফেললাম - যেহেতু এম.বি.টি.আই. টাইপলজি সম্পর্কে তারও বেশ ক'টা বছর আগে থেকেই পরিচিতি ছিলো, যার বয়ান এই লেখার প্রথমেই দিয়েছি।
আমার দৃঢ় অনুমান, আগামী পাঁচ দশকের মধ্যে এম.বি.টি.আই. টাইপলজি সর্বজনবিদিত হবে, বাংলাদেশের স্কুলে নাধ্যমিক পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভূক্ত হবে। ২০০৬ সালের রেকর্ডকৃত উপাত্ত অনুযায়ী (পাদটীকা দ্রষ্টব্য) এম.বি.টি.আই. ইন্সট্র্যুমেন্ট এ'যাবৎ ২১টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
এ-তো গেল এম.বি.টি.আই. টাইপলজি'র প্রায়োগিক ব্যবহারের কথা। এখন আগের প্রশ্নে ফিরে আসি।

‘কগনেটিভ ফাঙ্কশন প্রেফরেন্স বস্তুটা’ কী?

এখানে আমি কেবল মনোবিজ্ঞানের পরিভাষায় আলোচনা সীমিত রাখব।
আমাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত যা কিছু ঘটছে, তা আমরা একেকজন একেকভাবে ইন্টারপ্রেট করছি - ইনফর্মেইশান প্রোসেসিং (information processing) ব্যক্তিভেদে ভিন্ন। একই ঘটনা প্রত্যক্ষ করে কেউ চোখের পানি মুছছেন, কেউ হাসতে হাসতে গড়াগড়ি দিচ্ছেন। আবার ইনফর্মেইশান প্রোসেসিং শেষে আমাদের নানা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।একই মানুষ একই ঘটনার ভিত্তিতে কারো কাছে ফেরেশতা, কারো কাছে শয়তান প্রতিপন্ন হচ্ছে (উদাহরণগুলো অবশ্য একটু বেশীই মশলা-মাখানো হয়ে গেল - কী আর করা)।

এই ইন্টারপ্রিটেইশান আর সিদ্ধান্তের খেলায় আমাদের মস্তিষ্কের নানা অংশ নানা ভাবে উদ্দীপিত হচ্ছে।খেলার এই প্রক্রিয়াকেই বলা হচ্ছেকগনেটিভ ফাঙ্কশন (সংক্ষেপে এখন থেকে লিখবো cf)। এই খেলায় যখন আমাদের মস্তিষ্কের নানা অংশ নানা ভাবে উদ্দীপিত হয়, তখন দেখা যাচ্ছে যে প্রত্যেকটা মানুষেরই সহজাত প্রবণতা ('ন্যাচরাল প্রেফরেন্স') রয়েছে বিশেষ কোন cf ব্যবহার করবার। এরই গাল-ভরা নামকরণ করা হয়েছে কগনেটিভ ফাঙ্কশন প্রেফরেন্স।

এ'বেলা আবারও বলে রাখা ভাল - একজন মানুষের চরিত্র গঠনে, লালিত মূল্যবোধ ছাড়াও অনেক ফ্যাক্টর সক্রিয় ভূমিকা পালন করে, আমি কেবল মানুষের পার্সোন্যালিটির সাথে যে সহজাত cf-এর সম্পৃক্তি আছে, তা নিয়ে আলোচনা করছি

মানুষের cf প্রেফরেন্সের ক্ল্যাসিফিকেইশন কিভাবে, কখন করা হল, কে করলেন, সেই ইতিহাস নিয়ে এখানে কোন আলোচনায় যাচ্ছি না। বরঞ্চ পাদটীকায় ঐ ইতিহাসের তথ্যসমৃদ্ধ কতগুলো লিঙ্ক সংযুক্ত করে দিলাম। যারা আগ্রহবোধ করবেন, তাঁরা পড়ে দেখতে পারেন। আগে লেখা কিছু বাক্যের পুনরাবৃত্তি করি:- মানুষের cf প্রেফরেন্সের তারতম্য ঘটিত ক্ল্যাসিফিকেইশন নিয়ে যে ক'টি আধুনিক মডেল আছে, তন্মধ্যে জনপ্রিয়তায় শীর্ষস্থানীয়সমূহের অন্যতম হল এম.বি.টি.আই. পার্সোন্যলিটি টাইপ। আমাদের আলোচনা কেবল এম.বি.টি.আই. টাইপ-এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।



এম.বি.টি.আই. মডেলের ভিত্তিতে মানুষের সিদ্ধান্ত নেবার পদ্ধতিকে দুই শ্রেনীতে ভাগ করা হয়েছে:- T ('থিংকিং' এর আ্যাব্রিভিয়েইশন) এবং F ('ফিলিং' এর আ্যাব্রিভিয়েইশন)।

যারা সিদ্ধান্ত নেবার সময়ে অনুভূতিকে (নিজের অথবা অন্যের) প্রাধান্য দিয়ে থাকেন - অনুভূতির সাথে সততা ও সঙ্গতি বজায় রেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন - তাঁদের মুখ্য cf হল F, গৌন cf হল T। উল্টোভাবে, যারা অবজেক্টিভ ভাবে চিন্তার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেন - তাঁদের মুখ্য cf হল T, গৌন cf হল F।

উল্লেখ্য পয়েন্ট: প্রত্যেকটা মানুষই ক্ষেত্রভেদে কম-বেশী এই দু'টো cf-ই ব্যবহার করে থাকে। তবে সকলেরই সহজাত প্রবণতা আছে একটি বিশেষ cf ব্যবহারের। একেই বলা হচ্ছে 'কগনেটিভ ফাঙ্কশন প্রেফরেন্স' কিংবা 'মুখ্য cf' (dominant cognitive function)।

যাদের 'মুখ্য cf' হল F, তাঁরা হাঁদারামও নন, যৌক্তিক চিন্তায় অপারগও নন। ঠিক তেমনিভাবে, যাদের 'মুখ্য cf' হল T, তাঁরা পাষাণহৃদয় নন। এটা যার যার সহজাত cf প্রবণতা। তবে এই দু'দলের মানুষ প্রায়ই একজন আরেকজনকে ভুল বুঝে থাকেন, বিভিন্ন ট্যাগে ট্যাগায়িত করেন - cf সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাব থাকবার কারণে।

একটা ছোট্ট উদাহরণ দেই। 'কোথাও কেউ নেই' এর মুনা। অত্যন্ত বুদ্ধিদীপ্ত তরুণী। কিন্তু কার সাথে মালাবদল করবার জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষায় থাকে সে? একজন বেকার যুবক। মুনা তার জীবনের মৌলিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে অনুভূতিকে প্রাধান্য দিয়ে। যাকে আমরা বলি ভ্যালিউ জাজমেন্ট। মুনার মুখ্য cf হল F।

এর উল্টো উদাহরণ দেই। 'ইরিনা' এর অখুন মীর। বস্তুনিষ্ঠ একজন মানুষ। সে প্রত্যেকটা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে অবজেক্টিভ ভাবে। সে মোটেও পাষাণহৃদয় মানুষ না।তারপরও ইরিনাকে রাগিয়ে দিচ্ছে এই মুখ্য cf-এর তারতম্যের কারণে। অখুন মীরের মুখ্য cf হল T।

এতক্ষণ সিদ্ধান্ত নেবার অনুপান বিষয়ক আলোচনা চললো। এবারে আসি ইনফর্মেইশন প্রোসেসিংয়ের প্রসঙ্গে।

এই পৃথিবী থেকে অহর্নিশ আমাদের মস্তিষ্ক তথ্য আহরণ করছে। আমরা একেকজন একেক দৃষ্টিকোণ থেকে একই ঘটনাকে ইন্টারপ্রেট করছি নানবিধভাবে। দৃষ্টিকোণের পার্থক্যের কারণে অনাকাঙ্খিত কোন্দলেও জড়িয়ে পড়ছি কখনও কখনও। মস্তিষ্কের এই তথ্য আহরণের প্রক্রিয়াকেই আমি আখ্যা দিচ্ছি 'ইনফর্মেইশন প্রোসেসিং'।

এম.বি.টি.আই. মডেলের ভিত্তিতে 'ইনফর্মেইশন প্রোসেসিং' মানুষ মূলতঃ দু'ভাবে করছে - দু'ধরণের cf-এর প্রভাবে - মানুষের পার্সোন্যালিটি টাইপের এই বিভাজন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিভাজন। এই দু'টো cf কে সংক্ষেপে বলা হয় যথাক্রমে S ('সেন্সিং' এর আ্যাব্রিভিয়েইশন) এবং N ('iNtuition' এর আ্যাব্রিভিয়েইশন)।

টার্ম নিয়ে আমরা মাথা ঘামাবো না। টার্ম-সংক্রান্ত জটিলতা/ জার্গন থেকে দূরে থাকি আমরা।






S এবং N।
প্রথমেই উদাহরণ দিয়ে আলোচনা শুরু করি। রিয়্যল এস্টেইটের কর্মযোগী একজন ব্যক্তি। কিংবা সেক্রেটেরিয়্যল সার্ভিসে নিবেদিতপ্রাণ একজন ব্যক্তি। একজন রান্না বিশারদ। ধরে নিচ্ছি, যার যার জীবিকা নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট এবং পূর্ণমাত্রায় পরিতৃপ্ত। তাঁর মুখ্য cf কেমন হবে? প্রথমতঃ, ঐ ব্যক্তিকে খুব ডিটেইল ওরিয়েন্টেড হতে হবে - সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয় পর্যবেক্ষণে দক্ষ হতে হবে - 'আণুবীক্ষণিক' দৃষ্টিশক্তি থাকতে হবে। দ্বিতীয়তঃ, ঐ ব্যক্তির কর্মকাণ্ড হবে পরিমাপযোগ্য - কংক্রিট ডাটা কিংবা বিষয়-আশয় নিয়ে তার কাজ-কারবার।
এদের সকলের মুখ্য cf হল S।

'অয়োময়' ধারাবাহিক নাটকে আবুল হায়াত যে চরিত্রে অভিনয় করেছেন, ঐ চরিত্রটির মুখ্য cf হল S।

এবারে প্রতিতুলনা করি। মিসির আলি। তিনি বাস করেন ভাবের জগতে। অ্যবস্ট্র্যাক্ট আইডিয়া/ কনসেপ্ট হল তাঁর আগ্রহের বিষয়বস্তু। তাঁর মুখ্য cf হল N। অধিকাংশ বিজ্ঞানীদের মুখ্য cf হল N। তাঁদের দৃষ্টিশক্তি 'দূরবীক্ষণিক' - বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের একটা সামগ্রিক প্যাটার্ণ তাঁরা খুঁজে ফেরেন।

(সাইড নোট: আমাদের দেশে কী পড়াশোনা করবো না করবো, সায়েন্স নিবো কি না, এ'সমস্ত সাধারণতঃ বাবা-মা ঠিক করে দেন। তাই ঐ লাইনে চিন্তা করলে চলবে না। 'সহজাত প্রবণতা' বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে।)

এই গেল তথ্য আহরণ আর সিদ্ধান্ত নেবার পরিক্রমা। এর সাথে যোগ হয় তৃতীয় মাত্রা। সেটাও আবার দু'রকমের - অন্তর্মুখী (I) আর বহির্মুখী (E)।

এ'পর্যন্ত আমরা তথ্য আহরণ আর সিদ্ধান্ত নেওয়া সংক্রান্ত মোট চারটা cf-এর নাম শুনলাম -- F, T, S এবং N।
এই চারটা cf-এর যে কোন একটি হবে আপনার নিজের পার্সোন্যালিটি টাইপের মুখ্য cf।


সেই কগনেটিভ ফাঙ্কশনের প্রবাহ হতে পারে অন্তর্মুখী (I), কিংবা বহির্মুখী (E)। অন্তর্মুখী, বহির্মুখী - বিষয়টা কী, অল্পকথায় বলি। অন্তর্মুখী প্রবাহ হবে উল্লম্ব (ভ্যর্টিকল), ফোকাসট (focused), ইনটেন্স এবং গভীর। বহির্মুখী প্রবাহ হবে অনুভূমিক (horizontal), বিস্তৃত এবং অবশ্যই বহির্বিশ্বের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। গোলেমেলে প্যাঁচালো মনে হচ্ছে?? নো প্রবলেমো। এক্ষুণি কাদেরের 'পানির মত সহজ' ভাষায় ব্যাখ্যা করছি - আর একটু পরই! এখন একটা কফি-বিরতি চলুক? 'চমকের ব্যবস্থা' রাখা হয়েছে শুরুতেই বলেছিলাম। আর সাসপেন্সে রাখাটা মানায় না! যারা শাকিলা জাফরের গাওয়া গানটি শোনেননি, তাঁদের জন্য গানটি শোনাবার ব্যবস্থা করলাম (যদিও অরিজিন্যল version টা খুঁজে পাইনি) - শুনুন গান, আর হয়ে যাক চা-কফি পান।। কফি-বিরতি'র পরপরই আমরা আবার কগনেটিভ ফাঙ্কশন নিয়ে জোরেসোরে আলোচনা শুরু করবো। ততক্ষণ সঙ্গে থাকুন!


http://www.youtube.com/watch?v=W0gN6OkBH-A


তো, যা বলছিলাম।তৃতীয় মাত্রা যোগে আমরা সর্বমোট আটটি cf পেলাম শেষমেশ!
কিভাবে?
উদাহরণ: অন্তর্মুখী T (সংক্ষেপে Ti), আর বহির্মুখী T (সংক্ষেপে Te)।
এভাবে আরও তিনটা cf-এর অন্তর্মুখী আর বহির্মুখী প্রবাহ থেকে পাবো আরও ছ'টা cf - Fe, Fi, Se, Si, Ne এবং Ni.

Te: decision মেইকিং cf - সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার সাথে সমৃক্ত cf। যাদের মুখ্য cf হল Te, তাঁরা বহির্বিশ্বে খুব যুক্তিনির্ভর, গোছানো, করিৎকর্মা, হাইলি এফিশিয়েন্ট, ম্যানেজমেন্টে দক্ষ, নিয়মতান্ত্রিক - সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে চলে অভ্যস্ত। স্ট্যান্ডার্ড বজায় রেখে চলেন এবং অন্যরাও তাই করবেন, এই প্রত্যাশা রাখেন। বিতর্কিত আলোচনায় নামলে তাঁরা কোন রেফারেন্সের উদ্ধৃতি দিয়ে তবেই মাঠে নামবেন, রেফারেন্স ছাড়া ব্লগর-ব্লগর করবেন না।

Ti: এটাও decision মেইকিং cf, তবে এই cf এর প্রবাহ অন্তর্মুখী। যাদের মুখ্য cf হল Ti, তাঁরা স্ট্যান্ডার্ড-ফ্যান্ডার্ড নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নন। তাঁরা নিজস্ব যুক্তি দিয়ে একটা বিষয়কে সামগ্রিকভাবে বুঝতে চান গভীরভাবে। বহির্বিশ্বে সময়নিষ্ঠা অক্ষুণ্ন রাখাটা তাঁদের কাছে প্রায়োরিটি না।

ছোট্ট একটা উদাহরণ দেই Te আর Ti এর। ধরুন সামনের মাসে গানের একটা স্টেজ শো আছে টোনা আর টুনির - গাইতে হবে "তুলা রাশির মেয়ে, মিথুন রাশির ছেলে" গানটি। টোনা'র মুখ্য cf হল Ti। তো, টোনা এখন করবে কী, গানটার আদ্যোপান্ত জানতে চাইবে - সুর, তাল, লয়, সারগাম নিয়ে গবেষণায় বসবে। এদিকে টুনি'র মুখ্য cf হল Te। টুনি'র মূল লক্ষ্যই থাকবে কত অল্প সময়ে চমৎকার একটা স্টেজ পার্ফরমেন্সের (performance) জন্য নিজেকে তৈরী রাখা যায় - সেই বিষয়ে। প্রথম দিন থেকেই টুনি গানটা প্র্যাকটিস করা শুরু করে দেবে ঘড়ির টাইমার অন করে। তো এখন টোনা আর টুনিকে যদি ব্যান্ড মেম্বার করে দেওয়া হয়, তবে তাদের অবস্থাটা কেমন বাঘা ওল আর বুনো তেঁতুলের মত হবে, তা সহজেই অনুমেয়!! কিন্তু এই টোনা-টুনির মধ্যেই যদি পারস্পরিক বোঝাপড়া, শ্রদ্ধা, সম্প্রীতি ইত্যাদি থেকে থাকে, তবে এই জুটির ব্যান্ডের ভবিষ্যত নক্ষত্রের মত উজ্জ্বল হবার কথা!

Ne: ইনফর্মেইশন প্রোসেসিং cf - পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত cf। বহির্মুখী, অনুভূমিক। আমরা পৃথিবীটাকে একেকজন একেকভাবে দেখি - একেক পারস্পেক্টিভ থেকে - একেক লেন্সের চশমা চোখে লাগিয়ে। আমাদের cf গুলো হল সেই লেন্স।যাদের মুখ্য cf হল Ne, তাঁরা 'আউট অভ দ্য বক্স' চিন্তা করতে ভালবাসেন। ভবিষ্যতমুখী চিন্তা-ভাবনা এঁদের, দূরবীক্ষণিক দৃষ্টি। পৃথিবীর যাবতীয় কর্মকাণ্ডের মধ্যে একটা প্যাটার্ণ, সিস্টেম চট করে চোখে পড়ে তাঁদের। কোন একটা বিষয় কিংবা সিস্টেমকে কিভাবে আরো এফিশিয়েন্ট করে তোলা যায় এই নিয়ে চিন্তা করায় মূল আগ্রহ তাঁদের - এবং একইসাথে অনেকগুলো অল্টারনেইটিভ নিয়ে প্যারালালি চিন্তা করায় পারদর্শী এঁরা। নিজেদের আইডিয়া শেয়ার করতে ভালবাসেন খুব। আইডিয়া ছড়িয়ে দিতে চান।

Ni: এটাও ইনফর্মেইশন প্রোসেসিং cf - পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত cf। কিন্তু অন্তর্মুখী। যাদের মুখ্য cf হল Ni; নির্দিষ্ট বিষয়ে গভীরভাবে নিবব্ধ তাঁদের চিন্তাশক্তি। তাঁরা ভাবের জগতের মানুষ, আইডিয়ার জগতের মানুষ। বর্তমান নিয়ে খুব একটা বিচলিত নন। তাঁদের cf অন্তর্মুখী হবার কারণে তাঁদের পর্যবেক্ষণ করবার প্রক্রিয়াটা অনেকটাই সাধিত হয় অবচেতন মনে - যাকে আমরা ইনট্যুইশন বলি - যা সচেতন অবস্থায় প্রায়ই ব্যাখ্যাতীত হয়ে থাকে। এঁদের ইনট্যুইশন (gut feelings) প্রখর। নিজেদের আইডিয়া পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিতে খুব একটা ব্যতিব্যস্ত নন। এঁরা প্রায়ই দিবাস্বপ্ন দেখেন। বেশ ভুলোমনা - ছোট্ট জিনিষপত্র যেমন হাতঘড়ি, মোবাইল ফোন ইত্যাদি প্রায়ই হারিয়ে ফেলেন।

উদাহরণ: মিসির আলি, হিমু।
মিসির আলি'র মুখ্য cf এবং আনুষঙ্গিক cf হল যথাক্রমে Ti এবং Ne - Ti,Ne কম্বিনেইশন। (এই 'কম্বিনেইশনের' প্রসঙ্গে পরে আসছি।)
মিসির আলি খুব যৌক্তিক, মেথডিক্যল উপায়ে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে থাকেন উনার 'ক্লায়েন্ট'দেরকে কীভাবে রহস্যের সমাধান করলেন।
হিমু'র মুখ্য cf হল Ni। হিমুর ইনট্যুইশন প্রখর। তার প্রেডিকশন প্রায়ই সত্যি হয় – কীভাবে, তা ব্যাখ্যাতীত। আইডিয়া ছড়িয়ে দিতে হিমুর অনীহা। হিমু তার জ্ঞান পৃথিবীময় ছড়িয়ে দিতে আগ্রহী নয় মোটেও।মুখ্য cf হল Ni - এমন আমাদের সকলের পরিচিত আরেকজনের নাম হল স্যার আইজাক নিউটন। তিনি তাঁর জগদ্বিখ্যাত ক্যালক্যুলাসের থিওরী সুদীর্ঘ কুড়িটি বছর বাক্সবন্দী করে রেখেছিলেন।

Se: এটিও পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত cf। বহির্মুখী। যাদের মুখ্য cf হল Se; তাঁরা বাস করেন বর্তমানে। তাঁদের দৃষ্টি আণুবীক্ষণিক - বর্তমানের প্রতিটি মুহূর্ত তাঁরা খুব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যবেক্ষণে সিদ্ধহস্ত।
আমাদের চারপাশে কী ঘটছে, সর্বাধুনিক ট্রেন্ড কোনটা জানতে চান? তাঁদের জিজ্ঞেস করুন - তাঁরা গুরু। লেইটেস্ট মডেলের গাড়ি কিনতে চান, কোন রেস্তোরাঁয় কোন খাবারটা সবচেয়ে ভালো বানায়, চুলের ফ্যাশানের লেইটেস্ট ট্রেন্ড কোনটা জানতে চান? তাঁদের জিজ্ঞেস করুন। বিশেষ করে পঞ্চেন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয়াদি তাঁদের নখদর্পনে। এজন্য যারা খুব ভালো নাচিয়ে, আঁকিয়ে, বাদক, কোরিওগ্রাফার, কম্পোজার, রন্ধনশিল্পী, খেলোয়াড়, ক্রীড়াবিদ, ফ্যাশান মডেল - তাঁদের সবার মুখ্য cf (অথবা আনুষঙ্গিক cf) হল Se।

Si: এটিও পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত cf। অন্তর্মুখী। যাদের মুখ্য cf হল Si; তাঁরা বর্তমানের পরীক্ষিত এবং প্রতিষ্ঠিত ফর্মূলাতে বিশ্বাসী। রিস্ক নেবার পক্ষপাতী নন এঁরা - এক্সপেরিমেন্টের মধ্যে নেই - কংক্রিট "tried and tested" তথ্যের প্রতি এঁদের আস্থা। এঁরা সাধারণত খুব ফ্যামিলি ওরিয়েন্টেড, আচারাদি নিষ্ঠার সাথে পালন করেন এবং পারিবারিক/সামাজিক/জাতীয় ঐতিহ্য/সংস্কৃতি বজায় রাখেন। সমাজের চোখে এঁরা খুব দায়িত্ববান, বিশ্বস্ত ও কর্তব্যনিষ্ঠ মানুষ।

বাকী রইলো যে ফাঙ্কশনটি, সেটা হল F। যাদের মুখ্য cf হল F; তাঁরা অনুভূতিপ্রবণ। আমরা সবাই কম-বেশী অনুভূতিপ্রবণ, কিন্তু এঁদের অনুভব করবার ক্ষমতা আর ইনটেন্সিটি অন্যদের অনুভূতিপ্রবনতাকে ছাড়িয়ে যাবে।

T-F ইন্টারঅ্যাকশনটা বেশ গোলমেলে হবার সম্ভাবনা ক্ষেত্রবিশেষে। যাদের মুখ্য cf হল "T"-এর এক্সট্রীম এন্ডে (extreme end) -- তাঁরা "F"-এর এক্সট্রীম এন্ডে যাদের cf এমন ব্যক্তিকে দেখলে জাজ করতে পারেন: "এই যে এসেছে মিস্টার (অথবা মিস) ন্যকা, শো-অফ, জামার আস্তিনে কলিজা নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, আহ্লাদে আটখানা" ইত্যাদি ইত্যাদি। যাদের মুখ্য cf হল F (সাথে আনুষঙ্গিক cf যদি হয় N, তাহলে তো আরও এক-কাঠি সরেস); তাঁরা প্রেমে পড়লে পড়বেন একেবারে ঘাড়মোড় ভেঙে; ছ্যাঁকা খেলে নতুন করে মন বাঁধতে সবার চাইতে বেশী সময় লাগবে এঁদের।

Fe: যে কোন জন-সমাবেশে উপস্থিত সবচেয়ে জনপ্রিয় মানুষটির মুখ্য cf হল Fe। এটি একটি decision মেইকিং cf - সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার সাথে সমৃক্ত cf। বহির্মুখী। বহির্মুখী প্রবাহ হবার কারণে, যাদের মুখ্য cf হল Fe; তাঁরা ethics এবং শিষ্টাচার-সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে সবসময়ে একটা বাহ্যিক স্ট্যান্ডার্ড বজায় রেখে চলবেন। মানুষকে দ্রুত আপন করে নেবার সহজাত ক্ষমতা তাঁদের। স্বনামধন্য পাবলিক স্পীকার যারা, তাঁদের সকলের মুখ্য cf হল Fe।

Fi: এটিও একটি decision মেইকিং cf - সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার সাথে সমৃক্ত cf। অন্তর্মুখী। যাদের মুখ্য cf হল Fi; তাঁদের নীতিবোধ প্রখর, কিন্তু কোন বাহ্যিক স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করে না। তাঁদের নিজস্ব নৈতিকতা আছে - যার প্রতি এঁরা সর্বান্তকরণে সৎ এবং নিবেদিতপ্রাণ - যা সমাজের চোখে বেখাপ্পা হল, কি হল না, এই নিয়ে তাঁরা উদ্বিগ্ন নন। অপরের অনুভূতি আত্মস্থ করায় জুড়ি নেই এঁদের। ভালোবাসার ক্ষমতা অসাধারণ। 'লিটল মারমেইড' এর 'এরিয়েল', 'বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্ট' এর 'বেল' (Belle) -- এঁদের মুখ্য cf হল Fi।

এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, আমরা প্রত্যেকেই ক্ষেত্রভেদে সবগুলো cf (সর্বমোট আটটি) ব্যবহার করে থাকি কমবেশী। তবে আমাদের প্রত্যেকেরই নির্দিষ্ট একটি মুখ্য cf আছে, যা আমরা সবচাইতে বেশী ব্যবহার করি। আমাদের মুখ্য (dominant - প্রধান) কগনেটিভ ফাঙ্কশনের (cf) এর সাথে সঙ্গী হিসেবে রয়েছে আরও একটি নির্দিষ্ট আনুষঙ্গিক (auxiliary - দ্বিতীয় বহুল-ব্যবহৃত) cf। আমাদের মস্তিষ্কে পর্যবেক্ষণ-সিদ্ধান্ত এই দু'টি প্রক্রিয়ার যে কোন একটি ব্যাহত হলে আক্ষরিক অর্থে আমরা কর্মক্ষমতা হারিয়ে নিষ্ক্রিয় জড়বৎ হয়ে পড়বো। কাজেই আমাদের এই মুখ্য-আনুষঙ্গিক cf জুটির যে কোন একটি হল আমাদের পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত (Se, Si, Ne, কিংবা Ni), অন্যটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত (Te, Ti, Fe, কিংবা Fi)। এই মুখ্য-আনুষঙ্গিক cf জুটির একটি যদি হয় অন্তর্মুখী, অন্যটি হবে বহির্মুখী।

এই ফর্মূলায় মোট ষোলটি ভ্যারিয়েইশন পাবো আমরা। আমরা যদি আমাদের স্বতন্ত্র মুখ্য-আনুষঙ্গিক cf জুটিটিকে সনাক্ত করে নিতে পারি, তবে বাকী ছ'টা কগনেটিভ ফাঙ্কশন 'জেনেটিক ম্যাপিং' এর মতই একটা সুনির্দিষ্ট প্যাটার্ণ অনুসরণ করবে। যে কোন 'সুস্থ'/ মানসিকভাবে ব্যালান্সড মানুষের কগনেটিভ ফাঙ্কশন প্রেফরেন্স একটা সুনির্দিষ্ট ম্যাথমেটিক্যল ফর্মূলা মেনে চলে - শুধু আমাদের যার যার প্রথম দু'টো (মুখ্য আর আনুষঙ্গিক) cf জানা থাকলেই হল। আমি ম্যথমেটিক্যল ফর্মূলা নিয়ে ব্লগর ব্লগ করবো না (এমনিতেই ক্রিস্টাল-বল-পর্ব 'ওভারডিউ' হয়ে গ্যাছে) তবে পাদটীকায় সংশ্লিষ্ট লিংক যুক্ত করে দেব, যাদের এই ম্যাথমেটিক্যল ফর্মূলা নিয়ে আগ্রহ আছে, তাঁরা পড়ে দেখতে পারেন।মজার ব্যাপার হল, প্রতিকূল পরিবেশে এবং মানসিক চাপের মধ্যে একজন ব্যক্তির cf প্রেফরেন্সের এই ম্যাপিং আমূল বদলে যায়। সেটাও আরেকটা ম্যাথমেটিক্যল ফর্মূলা অনুসরণ করেই। আমরা বিস্তারিত আলোচনায় যাচ্ছি না - খুব বেইসিক লেভেলে রাখছি আমাদের আলোচনা। তাই সাধারণ পরিবেশের প্রেক্ষাপটেই cf-সংক্রান্ত আলোচনা সীমিত রাখছি।

তো, আমাদের কগনেটিভ ফাঙ্কশন প্রেফরেন্সের ভিত্তিতে আমরা সর্বমোট ষোল রকমের পার্সোন্যালিটি টাইপ পাচ্ছি - এই ষোল রকমের পার্সোন্যালিটি টাইপের 'cf প্রেফরেন্স ম্যাপিং' হবে ষোল রকমের। এই ম্যাপিং এ সবগুলো (সর্বমোট আটটি) cf একটা নির্দিষ্ট প্যাটার্ণ অনুসরণ করবে। এই প্যাটার্ণ/ ম্যাপিং কে সংক্ষিপ্তাকারে প্রকাশ করার জন্য সাংকেতিক কোড ব্যবহৃত হয়, চার অক্ষরের - অর্থাৎ, কোডটিতে মোট চারটি অক্ষর থাকে।

তাহলে কি দাঁড়ালো? ষোলটি পার্সোন্যালিটি টাইপের চার-অক্ষর সম্বলিত মোট ষোলটি সাংকেতিক কোড আছে। নিচে প্রদত্ত ছকে এই ষোলটি পার্সোন্যালিটি টাইপের cf-ম্যাপিং দেখানো হল। সবচেয়ে বাঁয়ের কলামে আছে প্রতিটি পার্সোন্যালিটি টাইপের চার-অক্ষর সম্বলিত সংক্ষিপ্তাকার কোড। এরপর প্রেফরেন্স (সহজাত প্রবণতা) অনুসারে সাজানো হয়েছে cf-ম্যাপিং। প্রথমে মুখ্য (dominant) cf --> তারপর আনুষঙ্গিক (auxiliary) cf --> তারপর tertiary cf ---> তারপর inferior cf ইত্যাদি। (আমি টেকনিক্যল জার্গননিয়ে বিস্তারিত লিখে বিরক্তির উদ্রেক করবো না আর।

[legend: Dom.= Dominant CF = মুখ্য CF; Aux. = Auxiliary = আনুষঙ্গিক CF; Ter.= Tertiary CF = তৃতীয় বহুল ব্যবহৃত CF; and so on]


MBTI ->Dom. -> Aux. -> Ter. -> 4th CF -> 5th CF ->
6th CF ->7th CF -> 8th CF


1 ISTJ ----> Si -> Te -> Fi -> Ne -> Se -> Ti -> Fe -> Ni


2 ISFJ ----> Si -> Fe -> Ti -> Ne -> Se -> Fi -> Te -> Ni


3 INFJ ---->Ni -> Fe -> Ti -> Se -> Ne -> Fi -> Te -> Si


4 INTJ ---->Ni -> Te -> Fi -> Se -> Ne -> Ti -> Fe -> Si


5 ISTP ----> Ti -> Se -> Ni -> Fe -> Te -> Si -> Ne -> Fi


6 ISFP ----> Fi -> Se -> Ni -> Te -> Fe -> Si -> Ne -> Ti


7 INFP ---->Fi -> Ne -> Si -> Te -> Fe -> Ni -> Se -> Ti


8 INTP ---->Ti -> Ne -> Si -> Fe -> Te -> Ni ->Se -> Fe


9 ESTP ---->Se -> Ti -> Fe -> Ni -> Si -> Te -> Fi -> Ne


10 ESFP---> Se -> Fi -> Te -> Ni -> Si -> Fe -> Ti -> Ne


11 ENFP--->Ne -> Fi -> Te -> Si -> Ni -> Fe -> Ti -> Se


12 ENTP--->Ne -> Ti -> Fe -> Si -> Ni -> Te -> Fi -> Se


13 ESTJ ---> Te -> Si -> Ne -> Fi -> Ti -> Se -> Ni -> Fe


14 ESFJ ---> Fe -> Si -> Ne -> Ti -> Fi -> Se -> Ni -> Te


15 ENFJ---> Fe -> Ni -> Se -> Ti -> Fi -> Ne -> Si -> Te

16 ENTJ---> Te -> Ni -> Se -> Fi -> Ti -> Ne -> Si ->Fe


ব্যস, cf-ম্যাপিং নিয়ে অনেক ব্লগর ব্লগর হয়েছে। চলে আসি অতি-প্রতীক্ষিত ক্রিস্টাল-বল-পর্বে। কথা ছিলো যে, আপনার আদর্শ প্রেমিক কিংবা প্রেমিকা'র সিক্রেট কোড জানিয়ে দেবার, তাই না? আহা! শখ কত!! আমি ফিরি ফিরি কোন পরামর্শকেন্দ্র খুলে বসিনি - There is no free lunch! দেশে আসি, লাল ফিতা কেটে 'প্রিয়তিপ্রিয় পরামর্শকেন্দ্র' শুভ উদ্বোধন করি - তারপর দেখা যাবে।

অন আ সিরিয়াস নোট, আমরা যদি একে অপরের cf প্রেফরেন্স গুলো সম্পর্কে জেনে থাকি, মেকানিজমগুলো সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখি, এবং সর্বোপরি, একে অপরের স্বতন্ত্র দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই - তাহলে পৃথিবীতেই স্বর্গের আনন্দ নেমে আসবে। সব দম্পতিই হবেন পৃথিবীর সেরা জুটি।।


২০১৪ এর অভিনন্দন আপনাকে এবং আপনার সকল প্রিয়জনদেরকে।।

==

আমি নিচে একটা লিংক দিলাম -

Click This Link

এম.বি.টি.আই. পার্সোন্যালিটি টাইপ সংক্রান্ত প্রশ্নমালা আছে সেখানে - "হ্যাঁ/না" টাইপের উত্তর দিতে হবে শুধু - খুব সহজ - সবগুলো প্রশ্নের উত্তর আপনার জানা - উত্তরগুলো দেবার জন্য আমার এই পোস্ট পড়ার **কোনই দরকার নাই** - উত্তরগুলো আপনি লেখার সাথে সাথে আমার ক্রিস্টাল-বল বলে দেবে আপনার পার্সোন্যালিটি টাইপের সিক্রেট কোড!


প্রশ্নগুলো ইংরেজীতে লেখা - তাই আমি আমার মত করে ঐ একই প্রশ্নমালা বাংলায় লিখে দিয়েছি নিচে।


১) (বামে) দুঃখী মানুষকে সান্ত্বনা দিতে ভালবাসি - মানুষকে সান্ত্বনা দেওয়ার প্রবণতা আমার মধ্যে ন্যাচরালি চলে আসে।
(ডানে) ক্রিয়াকলাপ কীভাবে সাধিত হচ্ছে, তার একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করতে আমার খুব ভালো লাগে - এটা আমার সহজাত প্রবণতা।

২) (বামে) অন্যরা যাতে করে নিজেদেরকে আরও সুবিন্যস্ত করতে পারে, এ'ব্যাপারে সহায়তা করতে ভাল লাগে বেশী - এটা আমার সহজাত প্রবণতা।
(ডানে) আমি আপনমনে জীবনের গভীরতম বোধ নিয়ে ভাবতে বেশী সাচ্ছ্বন্দ্যবোধ করি - এটা আমার ন্যাচরাল টেন্ডেন্সি।

৩) (বামে) কল্পনা করতে ভালবাসি খুব - এটা আমার সহজাত প্রবণতা।
(ডানে) যখন যে কাজটা করা জরুরী, ঠিক তখনই সেরে ফেলি - সময়ের কাজ সময়ে করার স্বভাবটা আমার মজ্জাগত।

৪) (বামে) নির্দিষ্ট কোন বস্তু, বিষয়, আইডিয়া কিংবা মানুষের সাথে গভীরভাবে পরিচিত হতে কিংবা গভীরতার সাথে পর্যবেক্ষণ করতে বেশী পছন্দ করি।
(ডানে) ভ্যারাইটি না থাকলে খুব সহজে ত্যক্ত-বিরক্ত/ "বোরড" হয়ে যাই। একই জিনিষের পেছনে একসাথে অনেক সময় ব্যয় করলে একঘেয়েমিতে পেয়ে বসে।

৫) (বামে) মানুষের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপনে মধ্যস্থতা করতে বেশি সাচ্ছ্বন্দ্যবোধ করি - এটা আমার সহজাত প্রকৃতি।
(ডানে) অমুক থিওরী'র ব্যাখ্যা, কিংবা তমুক বিষয়ের আলোচনায় ভুল-ত্রুটি, যুক্তির ঘাটতি ইত্যাদি নিয়ে ভাবতেই আমি বরঞ্চ বেশী সাচ্ছ্বন্দ্যবোধ করি।

৬) (বামে) দুর্বোধ্য এবং অস্পষ্ট বিষয় নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে আমার।
(ডানে) হাতের কাজ অবিলম্বে সেরে ফেলতে পটু আমি।

৭) (বামে) এত নিয়মনীতি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মেনে চলতে ভালো লাগে না আমার - বিরক্ত লাগে বেশী।
(ডানে) নিজস্ব বিশ্বাস, প্রত্যযে এতটুকু ছাড় দেবে না, কম্প্রোমাইজ করবে না এমন জেদী মানুষের একরোখামি দেখলে বেশী বিরক্ত লাগে।

৮) (বামে) নির্ঝঞ্ঝাট জিনিষের অযথা খুঁত ধরে পরিবর্তনের ছোঁয়া নিয়ে আসার কথা যারা বলে, তাদের আঁতলামি অসহ্য লাগে বেশী।
(ডানে) নতুন কিছু (প্রোজেক্ট বা পরিকল্পনা) শুরু করার কথা শুনলেই যারা পা টেনে ধরে, কাজ শুরু করার আগেই সব ডিটেইলস জানতে চায়, তাদের গেঁয়োপনা বেশী অসহ্য লাগে।

৯) (বামে) নানাবিধ অভিনব পন্থা ও কর্মপ্রণালী উদ্ভাবন করার প্রচেষ্টা-তেই বেশী আনন্দ পাই।
(ডানে) নিজের পর্বেক্ষণকে আরও শানিত করার প্রচেষ্টা-তেই মজা পাই বেশী।

১০) (বামে) নিজের মূল্যবোধকে আঁকড়ে রাখায় বিশ্বাসী আমি -- আমার আত্মার শান্তির উৎস এখানেই।
(ডানে) অন্যদের সুপারভাইজ করবার মত কাজে আমি বেশী স্বচ্ছন্দ -- আমার ন্যচরাল দক্ষতা এখানে।

১১) (বামে) আমার নিজের মত করে জটিল সিস্টেমসমূহের যুক্তিপূর্ণ ব্যাখ্যা/ সমাধান দাঁড় করার মধ্যে দিয়েই আমি আত্মতুষ্টি লাভ করি।
(ডানে) মানুষের প্রতি সহমর্মিতা দেখানো, তাঁদের অনুভূতিশীলতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও যত্নবান হওয়ার মধ্যে দিয়েই আমি মনে শান্তি খুঁজে পাই।

১২) (বামে) অজানা বিষয়বস্তু নিয়ে ভাবন ও চিন্তন আমার মনে আনন্দের যোগান দেয় বেশী।
(ডানে) 'সলিড' পরিশ্রমের 'সলিড' ফল আমাকে আনন্দিত করে বেশী।

১৩) (বামে) তেমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে, নিজের বিশ্বাসকে একাই ডিফেন্ড করতে পিছপা হব না আমি।
(ডানে) তেমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে, অন্যদেরকে আইন-কানুন মেনে চলায় বাধ্য করা-তে পিছপা হব না আমি।

১৪) (বামে) যা ক'দিন পরেই আউটডেটেড হয়ে যাবে, সেকেল হয়ে যাবে, যার চল উঠে যাবে সমাজ থেকে তা নিয়ে মানুষের বাড়াবাড়ি রকমের প্রীতি দেখলে বেশী বিরক্তি লাগে।
(ডানে) হাতের কাজ ফেলে রেখে যারা ভবিষ্যতের দিবাস্বপ্নে মেতে ওঠে, তাদেরকে বেশী বিরক্তিকর মনে হয়।

১৫) (বামে) খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে মানুষজনের এত মাথা ব্যথা দেখলে গা জ্বলে যায়।
(ডানে) মাথামুণ্ডু কিছু ঠিক না করে আকাশ-কুসুম কর্মসূচীতে মানুষকে ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখলে গা বেশী জ্বালা করে।

১৬) (বামে) বস্তুনিষ্ঠ সত্যের অনুধাবনে আমার মনের পরিতৃপ্তি মেলে সবচাইতে বেশী।
(ডানে) নিবিড়, গভীর সম্পর্কের বাঁধনে জড়িয়ে অপার্থিব সুখ খুঁজে পাই।

১৭) (বামে) স্রোতের বিরুদ্ধে চলায় আগ্রহী আমি, সমাজের অসার রীতি-নীতিকে চ্যালেঞ্জ করার সহজাত প্রবণতা আছে আমার মধ্যে।
(ডানে) নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে লব্ধজ্ঞান পুনঃ পুনঃ নিরীক্ষণ করে নিজেকে আরও পরিশুদ্ধ করে গড়ে তোলার সহজাত প্রবণতা আছে আমার মধ্যে।

১৮) (বামে) নিজের ব্যক্তিগত বিচার-বিবেচনাবোধ-প্রত্যয় আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
(ডানে) আইন-কানুন-নিয়মনীতি মেনে চলার পক্ষপাতী আমি - এটিই আমার কাছে সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ।

১৯) (বামে) ভবিষ্যতের বৈপ্লবিক দিকদর্শন নিয়ে কল্পনাবিলাসী হতে ভালো লাগে বেশী।
(ডানে) যখন যে কাজ/সমস্যা সামনে আসে, তৎক্ষণাত তার সমাধানকল্পে পদক্ষেপ নিতে আমার ভালো লাগে বেশী।

২০) (বামে) চারপাশে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশের বলয় গড়ে তোলায় পারদর্শী আমি - আমার সহজাত প্রকৃতি।
(ডানে) কোন মেশিন, কোন সিস্টেম কিভাবে ফাঙ্কশন করে, তা' নিয়ে গবেষণা করে আরাম পাই - ন্যাচলার টেন্ডেন্সি আমার।

২১) (বামে) নিজস্ব বিচারবোধের নিক্তিতে নৈতিক দিকনির্দেশনা সন্ধানে প্রয়াসী আমি - এটা আমার সহজাত প্রবণতা।
(ডানে) প্রতিরোধের মুখে মানুষকে শান্ত বানিয়ে কীভাবে তাদের দিয়ে ঠিক কাজটা করাতে হয়, সে বিষয়ে বিশেষ দক্ষ আমি - সহজাত দক্ষতার অধিকারী।

২২) (বামে) কাজ সমাপ্ত করে বেশী শান্তি পাই।
(ডানে) ভবিষ্যতে অবস্থা কী রূপ নিতে পারে এই নিয়ে জ্ঞানগর্ভ ধারণা রাখতে বেশী মজা লাগে।

২৩) (বামে) এক্সপেরিমেন্ট করবার জন্য জিনিষপত্র বিভিন্নভাবে বদলালে কী হয় না হয়, তা' পর্যবেক্ষণ করতে বেশী উপভোগ করি আমি।
(ডানে) যা জানি, তা' নিয়েই চিন্তাভাবনা করাটা বেশী উপভোগ্য আমার কাছে।

২৪) (বামে) বন্ধুদের সাথে আলাপ-আলোচনা করতে বেশী ভালো লাগে আমার।
(ডানে) নিজে নিজে সমস্যা সমাধান করতে বেশী স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি আনি।

২৫) (বামে) সঙ্কটপূর্ণ পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে পারলে আমার পরিতৃপ্তি মেলে বেশী।
(ডানে) নিগূঢ় দুর্বোধ্য রহস্যের কিনারা করতে পারলে আমার পরিতৃপ্তি মেলে বেশী।

২৬) (বামে) পছন্দের বিষয়-সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যাদি ও বস্তু সংগ্রহ করা আমার সহজাত প্রকৃতি।
(ডানে) এক কাজে বা বিষয়ে অনেকক্ষণ মনোযোগ ধরে না রেখে, একসাথে প্যারালালি অনেকগুলো কাজ চালিয়ে যেতেই আমি বেশী স্বচ্ছন্দ।

২৭) (বামে) আমার ধীশক্তির পরিচয় দিতে পারলে - আমার ভাষ্য ও ব্যাখ্যার যথার্থতা প্রমাণিত হলে আত্মতৃপ্তি পাই অনেক।
(ডানে) ক্যাঁচাল দেখতে ভালো লাগে না - মানুষে মানুষে সুন্দর সম্পর্ক দেখলে প্রাণটা জুড়িয়ে যায়।

২৮) (বামে) এলেবেলে না করে মানুষকে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করতে দেখলে প্রাণে শান্তি আসে বেশী।
(ডানে) একান্ত ব্যক্তিগত মূল্যবোধের সাথে সৎ ও সঙ্গতিপূর্ণ আচরণ করতে সমর্থ হই যখন, তখন সবচেয়ে বেশী ভাল থাকি - প্রাণে শান্তি আসে।

২৯) (বামে) নিজের লালিত মূল্যবোধের সাথে কম্প্রোমাইজ করতে হলে বেশী কষ্ট হয়।
(ডানে) চারপাশে শান্তিভঙ্গকারী বিশৃঙ্খলা দেখলে বেশী কষ্ট হয়।

৩০) (বামে) এক জিনিষ বার বার করতে, রুটিন-বাঁধা গৎবাঁধা কাজ করতে বেশী বিরক্ত লাগে আমার।
(ডানে) দরকারী তথ্যের মধ্যে অস্পষ্টতা থাকলে কাজ করতে আরও বেশী বিরক্ত লাগে।

৩১) (বামে) মানুষে মানুষে কোন্দল দেখতে একেবারেই পছন্দ করি না।
(ডানে) অসংলগ্ন, অবান্তর যুক্তি আর থিওরী একেবারেই পছন্দ করি না।

৩২) (বামে) আমার প্রচেষ্টার পরিমাপযোগ্য, দৃশ্যমান, বাস্তব, "সলিড" পুরস্কার যখন দেখি, তখন বেশী আনন্দ হয়।
(ডানে) চোখ বুঁজে নিজের যাবতীয় প্রত্যাশা, স্বপ্নগুলো সফল হয়েছে - এমনটা জল্পনা-কল্পনা করে সময়ে কাটাতে দারুণ লাগে - বেশী আনন্দ হয়।

৩৩) (বামে) "সেই সাগরবেলায় ঝিনুক খোঁটার ছলে, গান গেয়ে পরিচয়", নয়তো "আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম" -- অতীতের স্মৃতি রোমন্থন করা-তেই আনন্দ পাই বেশী।
(ডানে) সুন্দর ভবিষ্যত গড়ার চিন্তা আমাকে বেশী আনন্দিত করে।

৩৪) (বামে) প্রতিদিনকার কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করায় আমি পটু। দিনের কাজ দিনেই শেষ করা আমার ন্যাচরালি আসে।
(ডানে) লংটার্ম দিক-নির্দেশনায় নিয়ন্ত্রণ রাখা ও দূরদর্শিতায় আমি বেশী আগ্রহী। আমার ন্যাচরাল টেন্ডেন্সি।

৩৫) (বামে) যুক্তি খাটিয়ে চিন্তাভাবনা করা-তেই বেশী স্বস্তি পাই আমি।
(ডানে) অন্যদের প্রতি কেয়ারিং মনোভাব পোষণ করা-তেই আমার স্বস্তি মেলে বেশী।

৩৬) (বামে) সুনির্দিষ্ট কর্ম-পরিকল্পনায় এবং অভীষ্ঠ লক্ষ্যে সদাপ্রস্তুত থাকাটা সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি। এটাই আমার সহজাত প্রবণতা।
(ডানে) বিবেকের কাছে সতত সৎ থাকাটা সবচাইতে বেশী গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি। এটাই আমার সহজাত প্রবণতা।


"SUBMIT" বাটনে চাপ দিতেই পেয়ে যাবেন আপনার কাঙ্খিত পার্সোন্যালিটি টাইপের কোড।
ফলাফল অংশে একটা স্পাইরালাকৃতি নিয়ে সবগুলো কোড লিখিত অবস্থায় আছে দেখবেন। স্পাইরালটির আলোকিত অংশে যে তিনটি কোড দেখবেন, তাঁর একটি কোডই হল আপনার নিজস্ব এম.বি.টি.আই. টাইপ। বিস্তারিত তথ্যাদি ঐ ফলাফল পেইজে-ই লেখা থাকবে। তাই আমি আর কথা না বাড়াই!

আমার গল্পটি ফুরোলো, নটে গাছটি মুড়োলো।।
==

ডিসক্লেইমার: আমার অ্যাকাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড এঞ্জিনীয়ারিংয়ে। এম.বি.টি.আই. টাইপ নিয়ে খাপছাড়া নাড়াচাড়া করেছি নিতান্তই শখের বশে। তবে একটা অ্যাকাডেমিক মহলের অনলাইন ফোরামের সাথে কিছুদিন মিথস্ক্রিয়ার অভিজ্ঞতা আছে। ম্যাসাচ্যুসেটস ইন্সটিটিউট অভ টেকনলজীতে পি.এইচ.ডি. প্রোগ্র্যাম শেষ করতে যাচ্ছেন, এমন একজন স্ট্যুডেন্টের সাথে "টেড টক" স্টাইলে (মশলামাখানো এক্সপ্রেশন) ঘন্টাখানেকের ছোট্ট একটা ওয়েব-ইন্টারভিয়্যু হতে যাচ্ছে আমার। এই পোস্টের যাবতীয় লেখা কোন আর্টিক্যলের বাংলা অনুবাদ নয়; লেখাটা একান্তই আমার নিজের - ইনফর্মালি যতটুকু শিখেছি আর বুঝেছি পার্সোন্যালিটি টাইপ সম্পর্কে, তাই-ই নিজের ভাষায় নিজের মত করে লিখেছি। কাজেই লেখায় ভুল-ভ্রান্তি থাকতেই পারে।

(আমার এই লেখাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছে 'চতুর্মাত্রিক' নামক ব্লগে।)
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:০৮
৩৪টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×