পর্যবেক্ষণলব্ধ উপাত্ত
পৃথিবী থেকে গড় দূরত্ব
১৪৯.৬ ×১০ ৬ কিমি (৯২.৯৫×১০ ৬ মা)
( আলোর গতিতে ৮.৩১ মিনিট)
দৃশ্যমান ঔজ্জ্বল্য (ভি)
−২৬.৮ m
পরম মান
৪.৮ m
বর্ণালীভিত্তিক শ্রেণীবিন্যাস
জি২ভি
কক্ক্ষীয় বৈশিষ্ট্যসমূহ
আকাশগঙ্গার কেন্দ্র থেকে গড় দূরত্ব
~২.৫×১০ ১৭ কিমি
(২৬,০০০-২৮,০০০ আলোক বর্ষ )
ছায়াপথীয় পর্যায়কাল
২.২৫-২.৫০×১০ ৮ a
বেগ
২১৭ কিমি/সে ছায়াপথের কেন্দ্রের
চতুর্দিকে কক্ষপথ, ২০ কিমি/সে
নাক্ষত্রিক প্রতিবেশের অন্যান্য তারার
সাপেক্ষে
ভৌত বৈশিষ্ট্যসমূহ
গড় ব্যাস
১.৩৯২ ×১০ ৬ কিমি (১০৯ পৃথিবী)
পরিধি
৪.৩৭৩ ×১০ ৬ কিমি
কমলাকৃতি
৯×১০ −৬
পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল
৬.০৯ ×১০ ১৮ মি² (১১,৯০০ পৃথিবী)
আয়তন
১.৪১ ×১০ ২৭ মি³ (১,৩০০,০০০ পৃথিবী)
ভর
১.৯৮৮ ৪৩৫×১০ ৩০ কেজি (৩৩২,৯৪৬ পৃথিবী)
ঘনত্ব
১,৪০৮ কেজি/মি³
পৃষ্ঠের অভিকর্ষ
২৭৩.৯৫ মি সে-২ (২৭.৯ জি )
পৃষ্ঠ থেকে মুক্তি বেগ
৬১৭.৫৪ কিমি/সে (৫৫ পৃথিবী)
পৃষ্ঠের তাপমাত্রা
৫৭৮৫ কে
করোনায় তাপমাত্রা
৫ MK
কেন্দ্রের তাপমাত্রা
~১৩.৬ MK
ঔজ্জ্বল্য (L sol )
৩.৮২৭×১০ ২৬ W
~৩.৭৫×১০ ২৮ lm
(~98 lm/W ফলপ্রসূতা)
গড় তীব্রতা (I sol )
২.০০৯×১০ ৭ W m-২ sr-১
ঘূর্ণন বৈশিষ্ট্যসমূহ
ক্রান্তিকোণ
৭.২৫ ° (ভূকক্ষের সাথে)
৬৭.২৩° ( ছায়াপথীয় তলের সাথে)
উত্তর মেরুর বিষুবাংশ [১]
২৮৬.১৩°
(১৯ ঘ ৪ মিন ৩০ সে)
উত্তর মেরুর বিষুবলম্ব
+৬৩.৮৭°
(৬৩°৫২' উত্তর)
বিষুবরেখার ঘূর্ণন কাল
২৫.৩৮ দিন
(২৫ দ ৯ ঘ ৭ মিন ১৩ সে)[১]
বিষুবরেখায় বেগ
৭১৭৪ কিমি/ঘ
আলোক মণ্ডলীয় গঠন (ভর অনুসারে)
হাইড্রোজেন [২]
৭৩.৪৬ %
হিলিয়াম
২৪.৮৫ %
অক্সিজেন
০.৭৭ %
কার্বন
০.২৯%
লোহা
০.১৬ %
নিয়ন
০.১২ %
নাইট্রোজেন
০.০৯ %
সিলিকন
০.০৭ %
ম্যাগনেসিয়াম
০.০৫ %
সালফার
০.০৪ %
সূর্য সৌরজগতের কেন্দ্রের খুব কাছে
অবস্থিত তারাটির নাম। প্রায় আদর্শ
গোলক আকৃতির এই তারা প্রধানত প্লাজমা
তথা আয়নিত পদার্থ দিয়ে গঠিত যার মধ্যে
জড়িয়ে আছে চৌম্বক ক্ষেত্র। [৩] এর ব্যাস
প্রায় ১৩ লক্ষ ৯২ হাজার কিলোমিটার যা
পৃথিবীর ব্যাসের ১০৯ গুণ, ভর প্রায় ২×১০ ৩০
কিলোগ্রাম তথা পৃথিবীর ভরের ৩ লক্ষ ৩০
হাজার গুণ। এই ভর সৌরজগতের মোট ভরের
শতকরা ৯৯.৮৬ ভাগ।[৪] সূর্যের প্রধান
গাঠনিক উপাদান হাইড্রোজেন, আসলে
মোট ভরের তিন চতুর্থাংশই হাইড্রোজেন।
হাইড্রোজেনের পরেই সবচেয়ে প্রাচুর্য্যময়
মৌল হিলিয়াম । হিলিয়ামের চেয়ে
ভারী মৌল সূর্যের মাত্র ১.৬৯% ভরের জন্য
দায়ী, তারপরও এদের সম্মিলিত ভর
পৃথিবীর ভরের ৫,৬২৮ গুণ। এই ভারী
মৌলগুলোর মধ্যে রয়েছে অক্সিজেন,
কার্বন, নিয়ন, লোহা ইত্যাদি।[৫]
তারার শ্রেণীবিন্যাস করার একটি
সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে যা অনুসারে সূর্য
জিটুভি (G2V) শ্রেণীর মধ্যে পড়ে। অনেক
সময় একে হলদে বামন ডাকা হয় কারণ
তার তড়িচ্চুম্বকীয় বিকিরণের তীব্রতা
সবচেয়ে বেশি বর্ণালীর হলুদ-সবুজ অংশে।
সূর্যের রঙ সাদা হলেও ভূপৃষ্ঠ থেকে একে
হলুদ দেখাতে পারে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে
নীল আলোর বিচ্ছুরণের কারণে।[৬]
বর্ণালী ধরন "জিটু" বলে দেয় সূর্যের পৃষ্ঠের
তাপমাত্রা আনুমানিক ৫৭৭৮ কেলভিন বা
৫৫০৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর "ভি" দিয়ে
বোঝায় আকাশগঙ্গার অধিকাংশ তারার
মত সূর্যও একটি প্রধান ধারার তারা অর্থাৎ
সে কেন্দ্রভাগে নিউক্লীয় সংযোজন
বিক্রিয়ার মাধ্যমে অবিরাম
হাইড্রোজেন পুড়িয়ে হিলিয়াম উৎপাদন
করে যাচ্ছে। কেন্দ্রে সূর্য প্রতি
সেকেন্ডে ৬২ কোটি মেট্রিক টন
হাইড্রোজেন পোড়ায়। আগে
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সূর্যকে অনুজ্জ্বল ও
বেশ তাৎপর্যহীন একটি তারা মনে করলেও
বর্তমানে জানা গেছে আকাশগঙ্গার
শতকরা ৮৫ ভাগ তারার চেয়ে সূর্যের
উজ্জ্বলতা বেশি, প্রকৃতপক্ষে আকাশগঙ্গার
অধিকাংশ তারাই লোহিত বামন।[৭]
সূর্যের পরম মান +৪.৮৩; কিন্তু পৃথিবীর খুব
কাছে হওয়ার কারণে আকাশে একে অন্য
যেকোন বস্তুর চেয়ে অনেক উজ্জ্বল
দেখায়, তাই আপাত মান অনেক কম, -২৬.৭৪।
[৮] সূর্যের করোনা অবিরত মহাশূন্যে
প্রসারিত হতে থাকে যে কারণে
সৌরঝড়ের জন্ম হয়। সৌরঝড় মূলত আয়নিত
কণার ধারা যা হেলিওপজ তথা প্রায় ১০০
নভো-একক (সূর্য থেকে পৃথিবীর গড় দূরত্বের
১০০ গুণ) পর্যন্ত ধেয়ে যায়। সৌরঝড়ের
মাধ্যমে আন্তঃনাক্ষত্রিক মাধ্যমে সৃষ্ট
হেলিওস্ফিয়ার বা সৌরমণ্ডল সৌরজগতের
বৃহত্তম অবিচ্ছিন্ন কাঠামো। [৯][১০]
সূর্য বর্তমানে স্থানীয় বুদবুদ অঞ্চলের
স্থানীয় আন্তঃনাক্ষত্রিক মেঘের মধ্য
দিয়ে ভ্রমণ করছে যা আকাশগঙ্গার
কালপুরুষ বাহুর ভেতরের দিকে অবস্থিত।
পৃথিবী থেকে ১৭ আলোকবর্ষ দূরত্বের
মাঝে তথা সবচেয়ে নিকটবর্তী ৫০টি
তারার (সবচেয়ে নিকটবর্তী তারা
প্রক্সিমা সেন্টরি ৪.২ আলোকবর্ষ দূরে)
মধ্যে সূর্য ভরের দিক দিয়ে চতুর্থ।[১১] সূর্য
আমাদের ছায়াপথের কেন্দ্র থেকে
আনুমানিক ২৪ - ২৬ হাজার আলোকবর্ষ দূরে
অবস্থিত এবং কেন্দ্রের চারদিকে ২২.৫
থেকে ২৫ কোটি বছরে একবার ঘুরে আসে।
ছায়াপথীয় উত্তর মেরু থেকে দেখলে
সূর্যের এই আবর্তন ঘড়ির কাঁটার দিকে।
আমাদের ছায়াপথ যেহেতু মহাজাগতিক
অণুতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণের (পটবিকিরণ)
সাপেক্ষে হ্রদসর্প মণ্ডলের দিকে
সেকেন্ডে ৫৫০ কিলোমিটার বেগে
ধাবিত হচ্ছে সেহেতু পটবিকিরণের
সাপেক্ষে সূর্যের বেগ কাংস্য বা সিংহ
মণ্ডলের দিকে সেকেন্ডে প্রায় ৩৭০
কিলোমিটার। [১২]
পৃথিবী থেকে সূর্যের গড় দূরত্ব আনুমানিক
১৪.৯৬ কোটি কিলোমিটার যাকে ১ নভো-
একক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে
পৃথিবীর কক্ষপথ যেহেতু উপবৃত্তাকার
সেহেতু সূর্য থেকে তার দূরত্ব পরিবর্তিত
হয়, জানুয়ারি মাসে সে সূর্যের সবচেয়ে
কাছে (অনুসূর) আসে এবং জুলাইয়ে
সবচেয়ে দূরে (অপসূর ) সরে যায়।[১৩]
যাহোক, গড় দূরত্বে সূর্য থেকে আলো
পৃথিবীতে আসতে ৮ মিনিট ১৯ সেকেন্ড
সময় নেয়। এই সূর্যালোকের শক্তি পৃথিবীর
প্রায় সকল জীবকে বাঁচিয়ে রাখে।
উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় এই
আলো থেকে খাদ্য উৎপাদন করে এবং
প্রাণীরা খাদ্যের জন্য এসব উদ্ভিদ বা অন্য
প্রাণীর উপর নির্ভর করে।[১৪] পাশাপাশি
জলবায়ু এবং আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণেও
সূর্যালোক প্রধান ভূমিকা রাখে। পৃথিবীর
উপর সূর্যের বিশাল প্রভাব সেই
প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই মানুষ
অনুধাবন করে আসছে। অনেক সংস্কৃতিতে
সূর্যকে তাই দেবতা মনে করা হতো। তবে
সূর্যের প্রকৃত কাঠামো সম্পর্কে
বৈজ্ঞানিক ধারণা গড়ে উঠতে অনেক
সময় লেগেছে। উনবিংশ শতাব্দীর
প্রখ্যাত বিজ্ঞানীরাও সূর্যের গাঠনিক
উপাদান এবং শক্তির উৎস সম্পর্কে সঠিক
তথ্য জানতেন না। এখনও সূর্য নিয়ে গবেষণা
চলছে কারণ তার কিছু ব্যবহর এখনও পুরোপুরি
ব্যাখ্যা করা যায়নি।
বৈশিষ্ট্যসমূহ
সূর্য একটি জি-ধরণের প্রধান ধারার তারা
যার ভর সৌর জগতের মোট ভরের শতকরা
৯৯.৮৬৩২ ভাগ। এর গঠন প্রায় নিখুঁত গোলকের
মত, কিন্তু উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর দিকে
কমলালেবুর মত একটু চাপা। এই কমলাকৃতির
পরিমাণ প্রতি ৯০ লক্ষ ভাগে এক ভাগ।
অর্থাৎ সূর্যের মেরু অঞ্চলীয় ব্যস বিষুবীয়
ব্যসের চেয়ে মাত্র ১০ কিলোমিটার কম।
যেহেতু সূর্য প্লাজমা তথা আয়নিত গ্যাস
দিয়ে গঠিত, সেহেতু এটি বিষুবীয়
অঞ্চলে মেরু অঞ্চলের চেয়ে বেশি বেগে
ঘোরে। এই পরিবর্তনশীল বেগকে বলা হয়
ব্যবকলনীয় বেগ। এ ধরণের বেগের কারণ,
সূর্যের মধ্যকার পরিচলন এবং কেন্দ্রের
চেয়ে পৃষ্ঠের দিকে তাপমাত্রার ঢাল
বেশি বাঁকা হওয়ায় ভরের স্থানান্তর। ভূ-
কক্ষের উত্তর মেরু থেকে দেখলে সূর্যের
যে বামাবর্তী কৌণিক ভরবেগ পর্যবেক্ষণ
করা যায় তার কিছু অংশ এই ভর
স্থানান্তরের কারণে পুনর্বন্টিত হয়। অর্থাৎ
এক স্থানের ভরবেগ কমে গিয়ে অন্য
স্থানে বেড়ে যায়। এই প্রকৃত ঘূর্ণন বেগের
মান হচ্ছে বিষুবীয় অঞ্চলে ২৫.৫ দিন এবং
মেরু অঞ্চলে ৩৩.৫ দিন। তবে পৃথিবীর
সাপেক্ষে সূর্যের অবস্থান প্রতিনিয়ত
পরিবর্তিত হতে থাকায় আমরা এই আবর্তন
বেগের মান পাই ২৮ পার্থিব দিন। দেখা
যাচ্ছে, সূর্যের নিজ কক্ষের চারদিকে
আবর্তন বেগ খুবই কম, এই ঘূর্ণন বেগ থেকে যে
কেন্দ্রাতিগ বলের সৃষ্টি হয় তা সূর্যের পৃষ্ঠ
অভিকর্ষের তুলনায় ১৮০ লক্ষ ভাগের এক
ভাগ। গ্রহগুলোর জোয়ার বলও এ তুলনায় এত
নগণ্য যে তারা সূর্যের আকার-আকৃতির কোন
পরিবর্তন করতে পারে না।
সূর্য একটি পপুলেশন ১ তারা, অর্থাৎ এতে
ভারী মৌলিক পদার্থের পরিমাণ বেশি।
তারাটির উৎপত্তির পেছনে খুব সম্ভবত
আশপাশের এক বা একাধিক অতিনবতারা
বিস্ফোরণের ভূমিকা রয়েছে। উল্লেখ্য
অতিনবতারা বিস্ফোরণ বিশাল গ্যাসীয়
মেঘকে সংকুচিত করার মাধ্যমে নতুন
তারা সৃষ্টির সূচনা ঘটাতে পারে।
সৌরজগতে সাধারণ পপুলেশন ২ তারার
(যাদের মধ্যে ভারী পদার্থ কম থাকে)
চেয়ে বেশি ভারী মৌল দেখা যায়।
যেমন, ইউরেনিয়াম এবং স্বর্ণ । এই ভারী
মৌলগুলো সম্ভবত অতিনবতারা
বিস্ফোরণের সময় তাপহারী বিক্রিয়ার
মাধ্যমে, অথবা কোন বৃহৎ দ্বিতীয় প্রজন্ম
তারার অভ্যন্তরে নিউট্রন শোষণ
প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন হয়েছিল।
পার্থিব গ্রহগুলোর মত সূর্যের কোন
নির্দিষ্ট পৃষ্ঠসীমা নেই এবং এর গ্যাসের
ঘনত্ব ব্যসার্ধ্য বৃদ্ধির সাথে সাথে সূচকীয়
হারে হ্রাস পায়। তথাপি এর প্রায়
সুনির্দিষ্ট একটি অভ্যন্তরীন গঠন রয়েছে
যা নিচে বর্ণনা করা হবে। সূর্যের ব্যসার্ধ্য
নির্ণয় করা হয় কেন্দ্র থেকে
আলোকমণ্ডলের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত।
আলোকমণ্ডল সূর্যের এমন একটি অঞ্চল যার
বাইরে গ্যাস এত পাতলা হয়ে যায় যে
উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিকিরণ নিঃসরণ
করতে পারে না। এজন্যই দৃশ্যমান আলোয়
আমরা সাধারণত সূর্যের আলোকমণ্ডলই
দেখি।
সূর্যের অভ্যন্তরভাগ সরাসরি দেখা যায়
না, সূর্য তড়িচ্চুম্বকীয় বিকিরণের প্রতি
অনচ্ছ। কিন্তু সৌরকম্পনবিদ্যা-র মাধ্যমে
অভ্যন্তরভাগ সম্পর্কে ধারণা লাভ সম্ভব,
ঠিক ভূকম্পনবিদ্যার মত। ভূমিকম্পের
কারণে সৃষ্ট তরঙ্গের মাধ্যমে যেমন
পৃথিবীর অভ্যন্তরীন গঠন সম্পর্কে ধারণা
পাওয়া যায় ঠিক তেমনি সূর্যের
অভ্যন্তরভাগ দিয়ে চলমান অব-শাব্দিক
চাপ তরঙ্গের মাধ্যমে সূর্যের অভ্যন্তরীন
গঠনও জানা সম্ভব। এছাড়া কম্পিউটার
সিম্যুলেশনের মাধ্যমেও সূর্যের অদেখা
ভুবন সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায়।
কেন্দ্রভাগ
সূর্যের কেন্দ্র থেকে শুরু করে মোট
ব্যসার্ধ্যের শতকরা ২০-২৫ ভাগ পর্যন্ত যে
অঞ্চলটি রয়েছে তার নাম কোর বা
কেন্দ্রভাগ। এই অঞ্চলের ঘনত্ব ১৫০ গ্রাম/
ঘনসেন্টিমিটার (পানির ঘনত্বের ১৫০ গুণ)
এবং তাপমাত্রা প্রায় ১ কোটি ৩৬ লক্ষ
কেলভিন। অথচ সূর্যের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা
মাত্র ৫৮০০ ডিগ্রি কেলভিন। সোহো
মহাকাশ মিশন থেকে পাওয়া তথ্য বলছে,
সূর্যের কেন্দ্রভাগে ঘূর্ণন বেগ বিকিরণ
অঞ্চলের অন্যান্য স্থানের তুলনায় বেশি।
এই অঞ্চলে প্রোটন প্রোটন শিকলের
মাধ্যমে হাইড্রোজেন সংযোজনের
(ফিউশন) মাধ্যমে হিলিয়াম তৈরি হয়।
এটিই সূর্যের শক্তির প্রধান উৎস। সূর্যে
উৎপাদিত মোট হিলিয়ামের শতকরা
মাত্র ২ ভাগ সিএনও চক্র থেকে আসে।
কেন্দ্রভাগে সূর্যের মোট শক্তির প্রায়
পুরোটাই উৎপাদিত হয়। ব্যসার্ধ্যের ২৪% এর
মধ্যে ফিউশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে সূর্যের
মোট শক্তির শতকরা ৯৯ ভাগ উৎপাদিত হয়,
৩০% এর পর আর কোন ফিউশন বিক্রিয়া
দেখাই যায় না। সুতরাং সূর্যের বাকি
অংশ কেন্দ্রভাগের শক্তি দিয়েই চলে,
কেন্দ্রভাগ থেকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায়
শক্তি বাইরের স্তরগুলোর দিকে প্রবাহিত
হয়। অনেকগুলো স্তর ভেদ করে অবশেষে এই
শক্তি আলোকমণ্ডলে পৌঁছায়, এরপর পদার্থ
কণার গতিশক্তি বা সূর্যালোক হিসেবে
মহাশূন্যে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রতি সেকেন্ডে ৯.২×১০ ৩৭ টি প্রোটন-
প্রোটন শিকল বিক্রিয়া ঘটে। প্রতিটি
বিক্রিয়ায় যেহেতু ৪টি হাইড্রোজেন
মিলে একটি হিলিয়াম তৈরি হয় সেহেতু
বলা যায়, প্রতি সেকেন্ডে সূর্য ৩.৭×১০ ৩৮
টি প্রোটনকে (প্রায় ৬.২×১০ ১১
কিলোগ্রাম) আলফা কণা তথা হিলিয়াম
কেন্দ্রিনে রূপান্তরিত করে। সূর্যে মোট
মুক্ত প্রোটনের সংখ্যা প্রায় ৮.৯×১০ ৫৬ টি।
হাইড্রোজেনের সংযোজন বিক্রিয়ার
মাধ্যমে সংযোজিত ভরের শতকরা ০.৭
ভাগ শক্তিতে পরিণত হয়। হিসাব করলে
দেখা যায় ভর-শক্তি রূপান্তরের মাধ্যমে
সূর্যে প্রতি সেকেন্ডে ৪২ লক্ষ মেট্রিক টন
শক্তি বিমুক্ত হয়। ভর ধ্বংস হয় না বরং এই
ভর শক্তিতে রূপান্তরিত হয় যা বিকিরণ
হিসেবে মহাশূন্য ছড়িয়ে পড়ে।
আইনস্টাইনের ভর-শক্তি সমতুল্যতা দিয়ে
এটি ব্যাখ্যা করা যায়।
তবে কেন্দ্রেভাগের সব স্থানে একই
হারে বিক্রিয়াটি ঘটে না। কেন্দ্র
থেকে দূরত্ব বৃদ্ধির সাথে সাথে এটি
পরিবর্তিত হয়। তাত্ত্বিক মডেল থেকে
দেখা যায় সূর্যের কেন্দ্রে শক্তি
উৎপাদনের পরিমাণ প্রতি ঘন মিটারে
২৭৬.৫ ওয়াট। পরিমাণটি কিন্তু মোটেই
বেশি নয়। এই সংখ্যা পারমাণবিক বোমার
বদলে আমাদেরকে সরীসৃপদের বিপাক
ক্রিয়া ব্যবহৃত শক্তির কথা মনে করিয়ে
দেয়। সূর্যের প্রতি একক আয়তনে উৎপাদিত
সর্বোচ্চ শক্তিকে খাদ্যশস্যের বর্ধনে
ব্যবহৃত সারের ব্যয়িত শক্তির সাথে তুলনা
করা হয়েছে। সূর্য থেকে যে আমরা এত
শক্তি পাই তার কারণ এই নয় যে, এই
গ্যাসপিণ্ডের প্রতি একক আয়তনে বিপুল
পরিমাণ শক্তি উৎপাদিত হয়, বরং এইজন্যে
যে সূর্যের আয়তন অনেক বেশি। একক
আয়তনে শক্তির পরিমাণ অনেক কম হলেও
সমগ্র আয়তনে সংখ্যাটি অনেক বড় হয়ে
যায়।
কেন্দ্রভাগের সংযোজন বিক্রিয়া একটি
আত্ম-সংশোধনযোগ্য সাম্যাবস্থায় আছে।
বিক্রিয়ার হার যদি একটু বেড়ে যায়
তাহলে কেন্দ্রভাগ উত্তপ্ত হয়ে
সম্প্রসারিত হতে শুরু করে, এতে গ্যাসের
ঘনত্ব কমে যায়, বিক্রিয়া হারও কমে যায়।
আবার বিক্রিয়ার হার স্বাভাবিকের
চেয়ে কমে গেলে কেন্দ্রভাগ সামান্য
সংকুচিত হয়ে গ্যাসের ঘনত্ব বাড়িয়ে
দেয়, যার ফলে বিক্রিয়ার হার আবার
বেড়ে যায়। এভাবেই সাম্যাবস্থা রক্ষিত
হয়।
বিক্রিয়া যেসব উচ্চ শক্তির গামা রশ্মি
উৎপন্ন হয় তারা বিকিরিত হওয়ার মাত্র
কয়েক মিলিমিটারের মধ্যেই সৌর
প্লাজমা দ্বারা আবার শোষিত হয়, এরপর
সামান্য নিম্ন শক্তিতে আবার বিকিরিত
হয়। এভাবে বিকিরিণ-শোষণের খেলা
চলতেই থাকে। এজন্যই সূর্যের কেন্দ্র থেকে
পৃষ্ঠে শক্তি পৌঁছুতো অনেক সময় লাগে।
কেন্দ্র থেকে পৃষ্ঠে ফোটনের আসতে প্রায়
১০,০০০ থেকে ১৭০,০০০ বছর লাগে বলে
অনুমান করা হচ্ছে।
পৃষ্ঠমুখী যাত্রার পথে ফোটন পরিচলন
অঞ্চল পার হয়ে শেষে আলোকমণ্ডলে
পৌঁছায়, এই স্তর পেরোলেই অবারিত
মহাশূন্য, যাতে দৃশ্যমান আলো হিসেবে
ফোটনগুলো ছড়িয়ে পড়ে। কেন্দ্রে
উৎপাদিত প্রতিটি গামা রশ্মি সূর্য
থেকে পালানোর পূর্বে কয়েক মিলিয়ন
দৃশ্যমান তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ফোটনে রূপান্তরিত
হয়। সংযোজন বিক্রিয়া গামা রশ্মির
পাশাপাশি নিউট্রিনো-ও উৎপন্ন হয়,
কিন্তু গামা রশ্মির মত তারা পদার্থের
সাথে এত মিথস্ক্রিয়া করে না, আসলে
মিথস্ক্রিয়া করে না বললেই চলে।
সুতরাং উৎপাদিত নিউট্রিনোর প্রায়
সবগুলোই তৎক্ষণাৎ সূর্য থেকে পালাতে
সক্ষম হয়। অনেক বছর ধরে সূর্য থেকে যে
পরিমাণ নিউট্রিনো পাওয়ার কথা তার
চেয়ে প্রায় ৩ গুণ কম পাওয়া যাচ্ছিল। এই
সমস্যার নাম দেয়া হয়েছিল সৌর
নিউট্রিনো সমস্যা। কিন্তু ২০০১ সালে
নিউট্রিনো স্পন্দন আবিষ্কৃত হওয়ার পর এর
সমাধান হয়েছে। আসলে সূর্য থেকে অনেক
নিউট্রিনো আসে, কিন্তু পৃথিবীতে
দুরবিনের মাধ্যমে আমরা মাত্র ৩ ভাগের
২ ভাগ নিউট্রিনো সনাক্ত করতে পারি,
কারণ পৃথিবীতে আসতে আসতে
নিউট্রিনোগুলো স্বাদ পাল্টায়।
বয়স
সূর্যের বয়স বের করার কোন সরাসরি উপায়
না থাকলেও পরোক্ষভাবে তা করা
হয়েছে। যেমন পৃথিবী তে প্রাপ্ত সবচেয়ে
প্রাচীন প্রস্তর ও উল্কা পিণ্ডের বয়স হচ্ছে
৪৬০ বৎসর। ধারণা করা হয়, সমগ্র সৌরজগতের
সৃষ্টি একই সময়ে। সেক্ষেত্রে সূর্যেরও বয়স
হয় একই। [১৫]