এসএসসি পাশ করেছি। লেখাপড়াটা চালিয়ে নেয়া আর সম্ভব হচ্ছিলো না। বাধ্য হয়ে ছোট একটা কাজ নিয়ে ছিলাম। আশা অফিসে পিয়ন পদে চাকরি। তোমাদের যখন স্কুলে যাওয়ার সময় হত ঐ সময়টায় আমার আমার অবসর ছিলো। অফিসের জানালায় দাড়িয়ে দেখতাম তোমাদের দলবেঁধে স্কুলে যাওয়া। মনের ভেতরটা হাহাকার করতো লেখাপড়ার জন্য।
একদিন তোমার চোখে চোখ পরে যায়। তারপর থেকে প্রতিদিন তুমি জানালায় তাকাতে। একদিন আমি লুকিয়ে থাকলাম। দেখলাম স্কুলের ইউনিফরম পরা কি সুন্দর তুমি এগিয়ে আসছো। অফিসের সামনে এসে তোমার দৃষ্টি স্থির জানালায়। তোমার চোখেমুখে অস্থিরতার ছাপ স্পস্ট।
জানালায় তুমি কাকে খুঁজছো? সে কি তোমার যোগ্য? নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়। তারপর প্রতি দিন তুমি এলেই আমি জানালা থেকে সরে দাড়াই। কিন্তু প্রতিদিনই তোমাকে দেখি আগের দিনের চেয়ে আরো অস্থির। কি দেখেছিলে তুমি আমাতে জানিনা। তোমার জন্য আমার মায়া হয়। আমি আর তোমাকে দেখলে লুকাইনা। কেন অমন করে তাকাও তুমি?
খোজ নিয়ে জানতে পারি তুমিও সাধারণ ঘরের মেয়ে। এক বিকেলে পথের ধারে তোমার সামনে পরে যাই। তুমি আমাকে ডাকলে, “শুনুন”। আর তোমার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে যাই। তুমি বললে, “আপনার সম্বন্ধে আমি অনেক জেনেছি। আপনি তো আমার সবকিছু এলোমেলো করে দিয়েছেন। এখন কি করবেন করেন।” আমি বললাম, “আমি তোমার যোগ্য নই”। তুমি বললে, ”এখন প্রথম বর্ষে ভর্তি চলছে। আপনি আবার কলেজে ভর্তি হয়ে যান প্লিজ। অন্তত আমার জন্য প্লিজ। আমি আপনাকে সফল দেখতে চাই।” তোমার চোখ জোড়া জলে ছলছল।
তুমি আমাকে বাধ্য করেছিলে কলেজে ভর্তি হতে। তখন আমার চেয়ে সুখী এই পৃথিবীতে আর কেউ ছিলো কিনা জানিনা। তোমার নাম দিয়েছিলাম আমি ’প্রেরণা’। তারপর একদিন আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে দিয়ে তুমি হারিয়ে গেলে। তোমার পরিবার আমার মত একটা পিয়ন ছেলেকে মেনে নিতে পারেনি।
সেই পিয়ন ছেলেটি আজ একটি অফিসের সহকারী ব্যবস্থাপক। কিন্ত তুমি কোথায় প্রেরণা? তোমাকে আমি কি করে ভুলবো?
তোমাকে নিয়ে আমি একটি গান বেধেঁছি। যদি কখনো সুযোগ হয় তোমাকে শুনাব। তুমি শুনবে?
এই পৃথিবী ছেড়ে, একদিন চিরতরে,
হারিয়ে যাব আমি মরনের হাত ধরে।
কেউ কাঁদলো বা নাই কাঁদলো সেদিন,
তুমি মনে রেখ, শুধু তোমারি ছিলাম আমি
জীবনের প্রতিটি দিন।।
আজোতো ভুলিনি আমি তোমাকে
তুমিযে আমার মন-প্রাণ।
আমার জীবনে যা কিছু
সবই যে তোমার অবদান।..........................
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫৯