somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আলো-আঁধারের দ্বন্ধ: পঁচে যাওয়া সমাজ; নষ্ট মানসিকতা

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১) শাম্মী অত্যান্ত আধুনিক, স্টাইলিশ এবং প্রগতিশীল একজন তরুণী! আকর্ষনীয় ড্রেসের সাথে ম্যাচিং মেকাপ ও গহনার মিশ্রণে সেক্সি লুক তৈরি করে নিজেকে প্রকাশ করতে সে ভালোবাসে। বাবা অথবা বিএফের টাকায় সপ্তাহে দুই-তিন দিন রেস্টুরেন্ট এবং মাসে অন্তত এক থেকে দুই বার শপিং-এ যায়। মাঝে মধ্যে একটু নাইট ক্লাবে যায়, আর দুই-একটা বোতলও ফাকা করে আরকি। সমাজের চোখে শাম্মী রুপসী এবং র্স্মাট একজন নারী!
.
অপর দিকে নিলু মনে-প্রাণে বাঙ্গালী সংস্কৃতি লালনকরী সাধারণ বেশ-ভূসার এক তরুণী। সাধারণ জীবনযাত্রায় তার সাচ্ছন্দ। তবে পরিবার এবং প্রিয়জনদের কষ্ট লাঘবে সে আন্তরিক। বাবার কষ্ট লাঘবে সে মাঝে মধ্যেই বাজারের ব্যাগ হাতে তুলে নেয়। সবজি-মাছ নিজেই দেখেশুনে কেনে। তাই সমাজের চোখে সে বেখাপ্পা এবং অশালীন একজন নারী! অনেকেই বাকা চোখে তাকায় তার দিকে!
.
২) তপু এবং অরণ্য হালের আপডেট তরুণ-তরুণী। দুজনেই কলেজে পড়ছে। তিন-চার বছরের প্রেমের সম্পর্ক তাদের। প্রায় সব সময়ই তারা একসাথে স্বামী-স্ত্রীর মতো ঘোরাঘুরি করে। বহুবার শাররীক সম্পর্ক হয়েছে তাদের। একজন আরেক জনের পিছনে দেদারচ্ছে খরচ করছে; উপহার, ফোনে কথা বলা, রেসটুরেন্টের বিল বাবদ। পাশাপাশি দুজনেই একাধিক অপশনাল রিলেশন মেনটেন করছে গোপনে। সমাজের চোখে এটা আধুনিকতা; খুব স্বাভাবিক!
.
অন্যদিকে হাসান এবং তাবিবা সদ্য বিয়ে করেছ। তারা দুজনও এখনো ছাত্র; অনার্স পড়ছে। তারা দুজনে দুজনের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং সব সখ-আহ্লাদ নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে পুরন করতে চায়। একসাথে ঘোরাঘুরি, উপহার, খুনসুটি এবং অন্য সব কিছু তারা বৈবাহিক জীবনে এসে দারুণ উপভোগ করে। কিন্তু সমাজের চোখে তারা বেহিসাবী এবং ক্ষেত! হাজারো বাকা দৃষ্টি তাদেরকে ছায়ার মতো অনুসরন করে। সমাজের ভাষ্য, বাবা-মায়ের ঘাড়ে চড়ে নিজেদের ক্যারিয়ার ধ্বংশ করছে তারা। তাছাড়া সংসারের মতো কঠিন একটা বিষয়ে কতোটুকু ম্যাচুয়েড তারা?
.
৩) চোখে সানগ্লাস, পরনে টি-শার্ট ও ছেড়া ফুটো জিন্স আর বাহারি চুলের স্টাইলে জাবির র্স্মাট বয় নামে ক্যাম্পাসে পরিচিত। মুখে সিগারেট এবং বাইক ও বহু মেয়েকে সঙী করে চলা জাবির হাজারো মেয়ের ক্রাশ। ফেসবুকে তার বাহারি হাজারো রঙিন ছবি। সমাজের চোখে আদর্শ ছেলে; যুগের সাথে তো এভাবেই তাল মিলাতে হয়!
.
অন্যদিকে রিমন বিশ্ববিদ্যালয়ের অত্যান্ত মেধাবী ছাত্র। হাজারো লোকের ভীড়ে মুগ্ধ করার মতো ভাষন দিতে পারে; বাংলা কিংবা ইংরাজিতে অনর্গল কথা বলতে পারে। যে কোন পরিস্থিতিকে নিজের বশে আনার দারুণ ক্ষমতা তার। ভালো লিখালেখি করে। যে কোন দায়িত্ব পালনে দারুণ আন্তরিক। কিন্তু পোশাকে আশাকে চটকদারতা নেই অতোটা; খুব সাধরণ চলাফেরা। তাই অনেকের চোখে ক্ষেত; অবার অনেকের চোখে মেধাবী গাধা একটা!
.
এবার উপরের ঘটনাগুলোক বিশ্লেষন করুন। আমাদের সমাজ এবং এখানকার মানুষেরা খারাপ ব্যাপারগুলো যতোটা সহজে গ্রহন করতে আগ্রহী; ঠিক ততোটাই অনাগ্রহী পজিটিভ কঠিন সত্যিগুলোকে মেনে নিতে। শতো পুরুষের ভীড়ে একটা মেয়ের শপিং করাটা এ সমাজে স্বাভাবিক হলেও জীবনের প্রয়োজনে একটা মেয়ের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারে যাওয়াটা দেখা হয় নিচু চোখে। বৈধ ভাবে একটি ছেলে এবং মেয়ের জৈবিক ও মনসতাত্ত্বিক চাহিদা পুরনকে এ সমাজে দেখা হয় বাকা চোখ; কিংবা তাদের ইচ্ছাকে বেধে দেওয়া নানা নিয়মের বেড়াজালে। কিন্তু ভিন্ন উপায়ে সে সব চাহিদার পুরনকে এ সমাজে ভাবা হয় র্স্মাটনেস। এ সমাজে মানুষের যোগ্যতাকে র্স্মাটনেস না ভেবে মানুষের মোড়ককে স্মার্টনেসের মাপকাঠি ভাবা হয়। এ সমাজ নারীর অগ্রযাত্রা বলতে নারীর উশৃঙ্খলতা এবং উলঙ্গপনাকে বোঝে। কিন্তু সেই নারীই যখন শালীনতার সীমার মধ্যে থেকে প্রিয়জন, পরিবার, সমাজ কিংবা দেশের জন্য কিছু করতে আগ্রহী হয়ে উঠে মহৎ হৃদয় নিয়ে; তখন এ সমাজ তাকে নিয়ে অট্রহাসিতে ফেটে পড়ে। এ সমাজ পুরুষকে টাকশাল এবং নারীকে সেক্সটয় ভাবতেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। এ এক অদ্ভুৎ সমাজ! এখানে ঘুষ খাওয়া অপরাধ নয়; বরং ঘুষ কেন খাওয়া হয়? এই প্রশ্ন তোলাটা অপরাধ। এখানে প্রশ্ন ফাঁস হওয়াটা খুব সাধারণ; কিন্তু প্রশ্ন ফাঁসের খবর প্রকাশ করাটা শাস্তিযোগ্য অন্যায়। এখানে প্রকাশ্যে পার্কে প্রেমিকার বুকে হাত রেখে অন্য জগতে ডুবে যাওয়াটা র্স্মাটনেস; কিন্তু ঘরের বারান্দায় দাড়িয়ে প্রেয়সীর কপালে চুমো খাওয়া আদিক্ষেতা এবং নিলর্জ্জতা।
.
পরিশেষ কিছু আশার আলো জ্বেলে লিখাটা শেষ করবো। আমারা এক অন্ধকার সময় পার করছি এক পঁচে যাওয়া সমাজে, এটা সত্য; কিন্তু এর পরিবর্তনের মশাল ধরতে উদগ্রীব হয়ে আছে এই প্রজন্মেরই বহু তরুণ-তরুণী। তারা চিন্তা এবং দৃষ্টিভঙ্গিতে সত্যিই এই অবস্থার পরিবর্তন চায়। তারা (তরুণরা) নারীকে শুধু সেক্সটয় না ভেবে মানুষ ভাবে। তারা (তরুণীরা) পুরুষকে মানুষ ভাবতে শেখায়; টাকশাল নয়। তারা (তরুণরা) কোন মেয়ের চেহারার ঝলকানি থেকে মনের সুন্দরতার গভীরতাকে খুজে পেতে বেশি আগ্রহী হয়। তারা (তরুণীরা) পুরুষদের মানসিক শক্তির তলোয়ার হয়; পাশে থেকে বলে, তোমার জন্যেও আমি কিছু করতে চাই। কেন তুমি একাই করবে? কেন শুধু ছেলেদেরই করতে হবে? মেয়েদের জন্য ওটাতো স্বার্থবাদী সম-অধিকার; এ নারীবাদী সমাজিক রীতি চুলোয় যাক। সুবিধাবাধ নয়; সন্মানে বাঁচতে চাই। এই পঁচে যাওয়া তরুণ প্রজন্মেরই একটা অংশ মনে-প্রানে লালন করে তাদের পরবর্তী প্রজন্ম যেন সত্যিকারের আলোর দেখা পায়। তারা তাদের সন্তানদের জীবনটাকে কঠিন করতে চায় না; বরং সমাজিক অন্ধতার ট্যাবু থেকে মুক্ত করতে চায়। ক্যারিয়ারের মিথ্যা ধোয়াশার আড়ালে সন্তানদের যৌবন স্বপ্ন এবং ইচ্ছাগুলোকে বন্দী করে দিতে চায় না। তারা স্বপ্ন দেখে তাদের সন্তান মানুষের মতো মানুষ হোক; সুন্দর একটা জীবন পাক ক্যারিয়ার আর সম্পদের পাহাড় গড়ার সমাজিক ফোবিয়ার চাপ মুক্ত থেকে। তারা তাদের সন্তাদের জীবনটাকে জীবনের খুব কাছ থেকে দেখতে দিতে চায়; তাদের জীবনের রঙগুলোকে নিজের ইচ্ছের খাচায় বন্দী না করার প্রতিশ্রুতি রেখে। বিশ্বাস করুন, এমন চিন্তা-চেতনায় বিশ্বাসী এই প্রজন্মের এসব তরুণ-তরুণীরাই একদিন পরিবর্তন আনবে আঁধারের জাল ছিড়ে। আলো আসবেই; সে দিনটা হয়তো আর বহুদূরে নয়।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৯
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×