ঘটন- ১: রুপা ফার্মিসীতে গেলো। শান্ত গলায় বললো, "আরিফ ভাই, এক প্যাকেট ন্যাপকিন দেন তো।" আরিফ ভাই সেলফ থেকে এক প্যাকেট ন্যাপকিন বের করে রুপার দিকে এগিয়ে দিলো। রুপা দাম মিটিয়ে বাড়ির দিকে পা বাড়ালো।
.
ঘটনা- ২: আফিফা আরিফ ভাইয়ের দোকানে দাড়িয়ে আছে অনেক্ষণ হলো। দোকানে যথারীতি আরো কাস্টমার আছে। আরিফ ভাই ইতিমধ্যে দুই একবার জানতে চেয়েছে আফিফার কি লাগবে? উত্তরে আফিফা বলেছে, "একটু হাত ফ্রি করে নেন; তারপর বলছি।" কিন্তু ভিড় কমছে না দেখে অবশেষ অফিফা অধৈর্য হয়ে বললো, "আরিফ ভাই, একটু সাইডে আসবেন। কথা ছিলো।" আরিফ ভাই অন্য কাজ বাদ দিয়ে সাইডে গিয়ে বললো, "বলেন আপু। কি সমস্যা?" আফিফা এবার আশেপাশে চোরের মতো বার কয়েক তাকিয়ে আরিফ ভাইকে নিচু গলায় বললো, "ভাইয়া, এক প্যাকেট... ন্যাপকিন..." আফিফা কথা তার নিজের কানেই গেল কিনা কে জানে! আরিফ ভাই ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করলেন। তারপর সেলফ থেকে এক প্যাকেট ন্যাপকিন বের করে কাগজে মুড়িয়ে আফিফার হাতে দিলেন। ঐ দিকে দোকান ভর্তি লোক; নারী এবং পুরুষ। তাদের কেউবা বিরক্ত; কেউবা মুচকি হাসছে আফিফার দিকে তাকিয়ে। আফিফা দাম চুকিয়ে চোরের মতো জায়গাটি থেকে বাড়ির দিকে পা বাড়ালো। বাড়ি ফিরেই ফেসবুকে লগইন করে এক বিশাল নারীবাদী পোস্ট। লেখলো, "আমাদের সমাজের পুরুষদের মানুষিকতা আজো বদলালো না! তারা পিরয়ডের মতো একটি স্বাভাবিক ব্যাপার নিয়ে এই একাবিংশ শতকে এসেও হাসাহাসি করে! মেয়েরা যেন এলিয়েন! আচ্ছা, এদের ঘরে কি মা- বোন নেই? তারা কি এগুলো কেনে না? ইত্যাদি...
.
ঘটনা- ৩: একবার ঠোটে ইনফেকশন জনিত অসুস্থতা নিয়ে রাজশাহী মেডিকেলের আউটডোরে যাই। একজন মধ্য বয়সী পুরুষ ডাক্তার সেখানে আমার সমস্যা শুনছিলেন। ইতিমধ্যে তুলনামূলক একজন জুনিয়র নারী ডাক্তার ঐ রুমে প্রবেশ করে চেয়ের টেনে বসলেন এবং মোবাইলে থাকা কোন একটি ছবি দেখিয়ে (সম্ভবত নেট থেকে নামানো) রোগটি সম্পর্কে আলোচনা করতে থাকলেন এবং রোগটির খুটিনাটি সম্পর্কে পুরুষ ডাক্তারের কাছ থেকে জানতে চাইলনে। এরি মধ্যে তাদের আলোচনা থেকে এটা বুঝলাম, নারী ডাক্তারটির মেজাজ চরম খারাপ হয়ে আছে। কোন এক রুগী (নারী) তার কাছে এসে বলতেছে, 'আমার এই সমস্য; ঔষুধ দেন।' কিন্তু রোগটি পরিপূর্ণ প্রকাশ কিংবা দেখাতে কোন ভাবেই সম্মত হচ্ছিলো না। অবশেষ ডাক্তার তার স্লিপে "রুগী রোগ প্রকাশে ইচ্ছুক নয়" লিখে দিয়ে চিকিৎসা প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করলেন।
.
ঘটনাগুলো একটু উপলব্ধি করার চেষ্টা করুন। প্রিয় আপুরা, আর কতোদিন পুরুষদের উপর সমাজিক অসঙ্গতির দায় চাপাবেন? "নারী মায়ের জাত" এই সহানুভূতি নিয়ে পুরুষদেরকে গালি দিয়ে আর কতোদিন তৃপ্তির ঢেকুর তুলবেন? নিজের মানসিকতা তো আগে বদলান...। ফেসবুকে তো দিব্যি স্ট্যাটাস প্রসব করতেছেন, "পিরিয়ড মেয়েদের একটি স্বাভাবিক ঘটনা... ছেলেদের আসলে মানসিকতায় প্রবলেম...." ইত্যাদি। কিন্তু ডাক্তারের কাছে গিয়ে রোগ নিয়ে কথা বলতে এবং ফার্মিসীতে গিয়ে ন্যাপকিন কিনতেই আপনার এতো ঝামেলা বাধে কেন? আসলে সমস্যাটা যতোখানি ছেলেদের মানসিকতায়; তার থেকে বেশি আপনার মনে। আমি বলছিনা ছেলেরা সব সাধু। কিন্তু আপনার একসপ্রেশন যদি চোরের মতো হয়; তাহলে তো পাবলিক আড়চোখে তাকাবেই।
(ছবি- সংগৃহীত)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৯