ধরেন, একশ লিটার জ্বালানীতে একটা বিমান চৌদ্দশ মাইল পথ পাড়ি দিতে পারে। তো বিমানটির গন্তব্য ঢাকা টু নিউয়র্ক; যার দূরত্ব পনেরশ মাইল। তাই বিমানটিকে দুবাই বিমান বন্দরে যাত্রা বিরতি করতে হবে এবং পুনরায় জ্বলানি ট্যাংক পূর্ণ করতে হবে। তাহলেই বিমানটি নিউর্য়ক পৌছাতে পারবে। কিন্তু সমস্যা হলো এই যাত্রা বিরতিতে প্রায় দুই ঘন্টা সময় নষ্ট হবে।
.
এখন ধরেন বিমানটি ঢাকা থেকে একশ লিটার তেল নিয়ে যাত্রা শুরু করলো। সব কিছু ঠিকঠাক; বিমান তার গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দুবাই বিমান বন্দরের কাছে পৌছার পর পাইলটের মনে হতে থাকলো প্রায় দু’টা ঘন্টা সময় নষ্ট করা অর্থহীন। এই জ্বালানিতেই সে ঠিক নিউর্য়ক পৌছাতে পারবে; উপরন্ত আরো প্রায় দুই ঘন্টা আগে পৌছানো যাবে। তাই পাইলট যাত্রা বিরতি না করে ফ্লায়িং অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন। তার এই উচ্চাকাঙ্খী সিদ্ধান্তে বিমানটি এখন গন্তব্য থেকে মাত্র পঞ্চাশ মাইল দূরের আকাশে।
.
এখন আপনি কি ভাবছেন? বিমানটি কি পারবে তার গন্তব্যে নিরাপদ ভাবে পৌছাতে? গল্পের এ পর্যায়ে এসে আপনিও নিশ্চয় মানসিক ভাবে চরম উত্তেজিত? ভাবছেন আর তো মাত্র পঞ্চাশ মাইল। প্রার্থনা করছেন বিমানটি যেন নিরাপদে পৌছে যেতে পারে...
.
বিমানটি এখন নিউর্য়ক বিমানবন্দর থেকে মাত্র দশ মাইল দূরে।
এবার আপনি আরো উত্তেজিত। আর মাত্র দশটা মাইল! পারবে তো বিমানটি? আপনি প্রার্থনারত...
.
গল্পের এ পর্যায়ে এসে আপনার প্রার্থনার বিপরীতে গিয়ে দুঃসংবাদ শোনাতে হচ্ছে। বিমানটি তার উচ্চতা এবং গতিকে ব্যবহার করে নিউর্য়ক বিমানবন্দর থেকে মাত্র দশ মাইল দূরে ঠিকই; কিন্তু সেটি মাটিতে; মুখ থুবড়ে পড়ে আছে ছিন্নভিন্ন হয়ে। বিমানটিতে আগুন জ্বলছে; যাত্রীরা সবাই নিহত!
.
কি, এখন আপনার খুব কষ্ট হচ্ছে? দুঃখ হচ্ছে এটা ভেবে যে নিশ্চিত বিপদ হতে পারে এটা যেনেও পাইলট কেন এমন অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত নিলো?
.
আচ্ছা, এই পাইলটের জায়গায় এখন নিজেকে এবং বিমানের জায়গায় জীবনটাকে একবার কল্পনা করুন তো। আপনি-আমি কি এই পাইলটের মতোই এমন অদূরদর্শী নয়? জীবনে প্রতিনিয়ত কি আপনি-আমি এমন অনেক ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না? আমরা সাফল্য এবং সুখের সন্ধান পেতে মরিয়া এবং তা খুব দ্রুত। এর জন্য আমরা বিসর্জন দিচ্ছি নীতি-নৈতিকতা, স্নেহ-মায়া-মমতা, মূল্যবোধ এবং পারিবারিক বন্ধনকে! ভুলে যাচ্ছি ধর্মীয় অনুশাসন এবং স্রষ্টাকেই! কিন্তু আমারা এটা মনে রাখছি না যে জীবনের জ্বালানী কিংবা ফুয়েল এগুলোই! এসব বিসর্জন কিংবা ভুলে যেয়ে অথবা এগুলেকে দূরে সরিয়ে রেখে আমরা হয়তো সাফল্যের খুব কাছে যেতে পারবো কিংবা সুখকে ছুঁতেও পারবো; কিন্তু তা হবে সাময়িক। চূড়ান্ত বিচারে আমরা বিমানটির মতোই একটি সময় মুখ থুবড়ে পরবো। হতাশা আমাদেরকে ঠিক গ্রাস করে নেবে। অথচ আমরা বিমানের পাইলটের মতোই প্রতিনিয়ত অপরিনামদর্শী সিদ্ধান্ত নেয়; জুয়া ধরি জীবনকে নিয়ে। আর তাই আজ সমাজের পরতে পরতে এতো দুঃখ, হতাশা এবং বিষাদ! হাজারো মানুষের ভিড়ে অধিকাংশ মানুষ আজ বড্ডো একা!
.
আসলে লাটাইয়ের বন্ধন ছিন্ন হলে ঘুড়ি আরো উচ্চতায় যেতে পারে; এটা হয়তো সত্য। কিন্তু তা সময়িক। তাকে ঠিক ফিরে আসতে হয় মৃত্রিকার বুকে কিংব নিশ্চিহ্ন হতে হয় বায়ুমণ্ডলে। জীবনটাও ঠিক তেমনই।
(ছবি: সংগৃহীত)
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১:১১