প্রতিটি সকাল সুন্দর স্নিগ্ধ হওয়ার কথা ছিল , কিন্তু মানুষের একেকটি দিন একেকরকমভাবে শুরু হয় । সেটাই স্বাভাবিক । অওজিন’র সকালগুলো একটু বেশিই ভিন্নভাবে শুরু হয় প্রতিদিন । প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে ভিন্ন অওজিনকে আবিষ্কার করে সে । আঠারো বছরের পর থেকেই এই ভিন্নতা ধরা পরে তার । প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই সে লক্ষ্য করে তার চেহারার পরিবর্তন । প্রথম যেদিন পরিবর্তন হয় সেদিন খুব কেঁদেছিল । তার মা প্রথমে তাকে চিনতে পারেনি । সেদিন থেকেই লেখাপড়াকে সে বিদায় জানায় । কারণ প্রতিদিন ভিন্ন চেহারার একজন মানুষকে কি আর আগেরদিনের মানুষ চিনবে । কিভাবে প্রমাণ দিবে সে ! সে যে অওজুন ।
অওজিন’র মা আর শৈশবের এক প্রিয় বন্ধু ছাড়া কেউই তাকে চিনতে পারেনা । প্রতিদিন ভিন্নরুপ , ভিন্নরকম দেখতে মানুষ হয়ে উঠে সে । প্রতিদিন তার পরিবর্তন হতে থাকে । কিন্তু একটা জিনিস পরিবর্তন হয়না তার , সেটা শরীরের ভেতরের মন । তার সুন্দর মন আছে , সুন্দর সুন্দর উদ্ভাবনী চিন্তা আছে তার মনে । সেই চিন্তাগুলোই সে বাস্তব জীবনে রুপ দেয়ার চেষ্টা করে । প্রতিদিন নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে তার চিন্তার পৃথিবী ঘুরপাক খায় । আর প্রিয় বন্ধুর সাথে সেটা নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলতে থাকে । এই উদ্ভাবনী চিন্তা মনমানসিকতাই তাকে বাঁচিয়ে রাখে পৃথিবীর মাঝে , উদ্ভুতভাবে প্রতিটি দিন শুরু হওয়ার পরেও তার মাঝে নতুন ধ্যানধারণা নিয়ে কাজ করা থেমে থাকেনা ।
যেদিন প্রথম সকালবেলা জীবনে নিজের এই পরিবর্তন খেয়াল করেছিল সেদিন সে এবং তার মা দুজন খুব কেঁদেছিল । একজন মানুষের জীবনের প্রতিদিন নতুন বিড়ম্বনা খুবই বিরক্তিকর। বাসায় অসংখ্য জুতা , জামাকাপড় । কারণ একেকদিন একেক সাইজের জামাকাপড় তার পরতে হয় । তবুও বেঁচে থাকায় এক অদ্ভুত আনন্দ আছে । সেইজন্যে এই ভিন্নতা নিয়েও বেঁচে থাকতে উদগ্রীব থাকে সে ।গতকাল যার সাথে খুব হেসে হেসে কথা হয়েছিল আগামীকালই সে মানুষটা তাকে চিনবেনা । কি অদ্ভুত ব্যাপার ! বিশেষ করে নিজের কর্মক্ষেত্রে এই বিড়ম্বনা আরও ব্যাপকভাবে দেখা দেয় ।
ফার্নিচার ডিজাইনার হিসেবেই নিজেকে গড়ে তুলতে শুরু করে, যেদিন থেকে বুঝতে পারে অওজিন নিজের এই প্রতিদিনের পরিবর্তন । একজনকে খুব ভালো লেগে যায় একসময় অওজিন’র । সেই মেয়েকে ভালোবেসে ফেলে সে এবং বিড়ম্বনাটা তখন প্রকট আকারে তার কাছে ধরা পরে । সেই মেয়ে ইয়েসো এর কথা , তাকানো , হাসি গভীরভাবে তার মনে স্পর্শ করে কিন্তু নিজের প্রতিদিনের এই অস্বাভাবিক পরিবর্তনের কথা মনে করে তার খারাপ লাগতে শুরু করে । সে যে পরেরদিনেই পরিবর্তন হয়ে যাবে আর তখন তার ভালোবাসার মানুষটিকে সে নিজেকে চেনাতে পারবে । সিদ্ধান্ত নেয় একসময় এই মেয়েকেই সে খুব ভালোবাসবে আর তাকে ভালোবাসার কথা বলবে । ভালোবাসার এক ঘোর পেয়ে বসে । গল্পের ভিন্নতা শুরু এখানেই ! পুরো প্রায় একটি দিন নিজেরা একসাথে ঘুরল এবং যখন বিদায় নিলো অওজিন তখন একটা বিষয় ঘুরপাক খাচ্ছে তার মনে , আগামীদিন কি হবে !
গল্পটা যে ভালোবাসার গল্প , ভালোবাসার মানুষের সাথে থাকা মুহূর্তগুলো খুব চমৎকার মনে হয় । সময়গুলো যেন খুব দ্রুত ছোটে । ‘দ্য বিউটি ইনসাইড’ চলচ্চিত্র নির্মাতা বেই জং ইয়ল ভালোবাসার কথা পর্দায় উপস্থাপনের এক নান্দনিক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন অনায়াসে । চমৎকার গল্প , চমৎকার ক্যামেরা এবং দৃশ্যায়নের কাজ তবুও কিছু জায়গায় মনে হয়েছে অসামাঞ্জস্যতা । প্রতিদিন যে মানুষটির চেহারা পরিবর্তন হয় সেই মানুষটা কিভাবে বিদেশে যখন গিয়েছিল ভিসা তখন কিভাবে পেয়েছিল ! তার মুখের অবয়ব সবইতো নিত্যদিন পরিবর্তনশীল । সেটা ঠিক বোধগম্য হয়নি । এই জায়গায় দুর্বল মনে হয়েছিল এই গল্প । তবে চলচ্চিত্রটির এই বিষয়টি বাদে বাকি বিষয়গুলো ছিল মনকাড়ার মতন । গল্প যেমন চমৎকার , অভিনয় তেমনি । প্রতিদিন যে নতুন নতুন চেহারার মানুষ অওজুন’কে পর্দায় দেখানো হয়েছে তাদের সবার অভিনয় ছিল সাবলীল ও মনে রাখার মতন । আর কোরিয়ান চলচ্চিত্রগুলোর সংগীতায়োজন ছিল চমৎকার , ‘ট্রু রোমান্স’ গানটি চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মনকে যথেষ্ট আন্দোলিত করবে নিঃসন্দেহে ।
চলচ্চিত্রটি ছিল রিমেক । ২০১৫ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দ্য বিউটি ইনসাইড’ এই দক্ষিণ কোরিয়ান চলচ্চিত্রটি পরিচালক বেই জং ইয়ল ২০১২ সালের ছয় পর্বে নির্মিত আমেরিকান সোশ্যাল ফিল্ম ‘দ্য বিউটি ইনসাইড’ এর গল্প অবলম্বনে নির্মাণ করেছেন । তখনকার সেই সিরিজটি ‘ ডেটাইম এমিঅ্যাওয়ার্ড’ পুরস্কার পায় চমৎকার গল্প ও উপস্থাপনের মাধ্যমে । সেটা পরিচালনা করেছিল দ্রেক দরিমাস এবং গল্পটি দ্রেক দরিমাস এর লেখা । কোরিয়ান চলচ্চিত্র নির্মাতা বেই জং ইয়ল এর ‘দ্য বিউটি ইনসাইড’ চলচ্চিত্র দিয়েই চলচ্চিত্র নির্মাতা জীবনের অভিষেক ।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১:০৮