আমার বউয়ের সাথে আমার সবকিছুতেই মিল, এমনকি আমার গলার বাঁপাশে যে ভাঁজে তিল তারও ঐকই জায়গায় তিল। হানিমুনে যাওয়ার পর থেকেই সে নিজেকে অতি বিজ্ঞানী হিসেবে আবিষ্কার করলো, আমার অজ্ঞাত আমারই শরীরের বিভিন্ন স্থানের তিল আবিষ্কার করে। আমার বাঁচোখের পাপড়ির লোমের গোড়ার তিল থেকে আরও বিচিত্র জায়গা থেকে তিল খুঁজে বের করলো। প্রতিটা তিল বের করার পর তার খেদোক্তি, 'হুহ, উনি উনার তিল কোথায় আছে তা বলতে পারে না, আমার সব বের করে দিতে হয়!'
তিলের মিলে যদি শেষ হয়ে যেত তবে কোন কথা ছিল না, তার ভাষ্যমতে আমি তাকে প্রতিটা কাজই 'কপি' করি! আমার কাউকে অনুকরন করার মতো অভ্যাস কোনকালেই ছিল না, আর প্রতিটা কাজ আমিই আগে করি তারপরও মিথ্যে এ অপবাদ দিলেই তার সাথে আমার কিছু খুনসুটি হয়। খুনসুটিগুলো এক পর্যায়ে তুই-তোকারিতে চলে যায়; যেমন- এ্যাই তুই আমাকে কপি করছ ক্যান! ঐ তরে আমি কপি করি নাআআ। এই টাইপ। তুইতোকারি মানে যে ঝগড়াঝাটি তা না, সে জিনিসটা বুঝলেন না বউয়ের বড় বোন। বিয়ের পরপর গেছি শ্বশুড়বাড়িতে নাইওর, তো এক দুপুরে বেলা করে ঘুম থেকে উঠলাম। কেন এত ঘুমালাম তা আবিষ্কার করতে পারলাম না, মনে মনে আফসোস হতে লাগলো, ধুরর নতুন জামাই তারা কী ভাববে এত দেরি করে উঠলাম! ঘুম ভাঙার একটু পরই দেখি বউ এসে হাজির, তার মুখে রাজ্যের বিরক্তি। আমাকে কিছুক্ষন শাসিয়ে গেল, সেও এতবেলা পর্যন্ত বাসি মুখে বসে আছে। আমি মুচকি হাসি দিয়ে কাছে টেনে নিলাম। একটু পরই কাজের মেয়ে টুনি হালকা কেশে ভিতরে ঢুকলো ঘর পরিষ্কার করার জন্যে। তখনই আমি নিকোটিনের অভাব অনুভব করলাম, দীর্ঘদিনের অভ্যাস বাসিমুখে সিগারেট টানার। শ্বশুড়বাড়িতে ভদ্রছেলে হিসেবে থাকার দরুণ সিগারেটও টানতে পারছি না। বউকে বললাম টুনিকে দিয়ে দোকান থেকে আমার জন্যে এক প্যাকেট সিগারেট কিনে আনতে। বউ ঝামটা মেরে বলল, 'আমাকে চুমু খেয়েও সিগারেটের স্বাদ মেটে নি তোর!'
আমি চুপসে গেলাম। বাইরে থেকে আমাদের কথোপকথন কান পেতে শুনে নিলেন বড় আপা। তিনি তত্ক্ষনাত তার বোনকে ডেকে নিয়ে বললেন, 'কীরে! জামাইর সাথে তুইতোকারি তো ভালো না। তোরা কি সবসময় এমন করিস?'
বউ হাসতে হাসতে বলে আসলো, 'আমাদের মধ্যে এসব চলেই।'
সে খানিকক্ষণ পর এসে আমাকে এসে এ ঘটনা বলে লুটিয়ে পুটিয়ে হাসতে লাগলো। আমি তাকে বললাম, 'আরে এত হেসো না, পড়ে যাবে।'
সে হাসতে হাসতেই উত্তর দিলো, 'তুমি আছো কী জন্যে তাহলে? ধরবে আমাকে।'
আমি তখন মুখ বাঁকিয়ে উত্তর দিলাম, 'হুহ, আমাকে তো কামলা পাইছোই আটার বস্তা কাঁধে নেওয়ার মতো।'
'কীহ!' তার মুখ পাংশু বর্ণ ধারণ করলো, আর আমি আসন্ন সুনামি থেকে আত্নরক্ষার্থে গোটা তিনেক লাফ দিয়ে বাথরুমে ঢুকে পড়লাম।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৮:৩৭