somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সঙ্ঘবদ্ধ ভ্রমণ চক্র

০৫ ই মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ধরে নিয়েছিলাম আগে আগে পৌঁছে ঘুমাবো। তারপর সকালে বের হবো ঘুরতে। কিন্তু আমাদের কাডির ভাইয়ের রাস্তার অবস্থা বলে সময় নষ্ট না করে বরং মমতাজের গান হুনি--- বুকটা ফাইট্টা যায়!
তার উপ্রে কামাল ভাইয়ের ডিপারমেন্ট খুবই সফলভাবে যানজট দীর্ঘায়িত করতে সক্ষম--- এ সব দেখতে দেখতে শ্রী মঙ্গল পৌছানোর নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ঘণ্টা তিনেকের বেশি হয়ে গেলো।
ফাঁকে উজান ভাটির দোতলায় বসে আছি খাবারের জন্য। গরুর গোশত, মাসকলাইয়ের ডাল সাথে একটা সবজি দিয়ে রাতের আহার শেষান্তে আমরা আমরা রমেশ কাগুর শ্যামলী পরিবহনে চেপে বসলাম--- ড্রাইভার খুবই ভদ্রোচিতভাবেই গাড়ি চালিয়েছেন---তার জন্য ধণ্যবাদ দেবার চে আমাদের দেরী হয়ে যাওয়া নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম।
রাত দু'টার কিছু পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বাসটা থামলো--- মৌলভীবাজার রোড়ে। একটা সিএনজির দেখা মিলল--- ভাড়া ৫ শটাকা। দিবসে এর ভাড়া ১২৫ টাকা। কিন্তু জঙ্গলের ভিত্রে দিয়ে নিরাপত্তা সঙ্কটের কারণে রিস্ক লইয়া যাইতে হপে বলে ভাড়া বেশি দিতে হবে; এক কথায় কবুল।
ঠান্ডা বাতাস বইছে, চা বাগানের ভেতর দিয়ে সিএনজি ছুটছে; লাউয়াছড়ার সীমানায় মেছো বাঘ, দু চারটা বানর দেখতে দেখতে পৌছে গেলাম হিডের বাঙলোয়। রাত তখন তিনটা ২০ ।
উত্তম দা লোক বসিয়ে রেখেছেন; সিএনজি থামার আগেই টর্চ লাইটের আলো এসে পড়লো--- আমরা নেমে, সোজা গেলাম ঘুমুতে। বাঙলোর আগের মত থেকেছে ঠিকই তবে এখন এসি লেগেছে।
ঠাণ্ডায় জমে যাবার জোগাড়; তাই এসি বন্ধ করে লেপ জড়িয়ে ঘুমুতে গেলাম। সকাল বেলা এসে পৌছানোর কথা--- বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে যাচ্ছে মে মাসের প্রথম দিনের সকাল।
রীতি সাড়ে ১০ টার মধ্যে দুখান ছাতা হাতে পৌছালো বাঙলোয়। বাইরে বারান্দায় বসে সিদ্ধ রুটি, আলু ভাজি আর ডিম পোস দিয়ে সকালের নাশতা করতে করতে পিঙ্ক কলারে পুরনো আমলের একখানা জিপ এসে হাজির।
শিপু জানালো এ ধরণের জিপ কাগু এরশাদরে সময় দেশে আনা হয়েছিল। আমরা সাকুল্যে ৮ জন। তার মধ্যে আমার দুই পুত্র আছে। তারা সাধারণত শান্ত থাকার বিষয়টা মাথায় রাখতে পারে না।
ঝুম বৃষ্টি নেমে এলেও আমাদের পিঙ্ক কালারের জিপ গাড়িটা ছুটে চলে ভানু গাছ থেকে কমলগঞ্জের ন্যাশনাল টি গার্ডেনের দিকে। বছর ৭-৮ আগে আমরা (লিনা এবং আমি) যখন সেখানে যেতাম--- পুরই সুনসান নীরবতা ছিল। রাস্ত ছিল কাদামাখামাখি।
এখন সায়েবি সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। বিটুমিনের ছোঁয়া পেয়েছে ব্রিটিশ আমলে গজানো চায়ের বাগান। এর মধ্যে আমাদের গাইড হবার আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে আসলো শঙ্কর।
ঠিক আছে চলো---
এগিয়ে যেতে যেতে শঙ্কর একটা পাতা বের করে আনলো--- থাই সুপের সাথে আমারা এ ঘাসের সাক্ষাৎ পাই। সেটা রীতির হাতে দিয়ে আমরা হাঁটছি।
এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেলো। তারপর কড়কড়ে রোদ্দুর। শাপলপাতা বিছিয়ে থাকা মাধবপুর লেকের উপ্রে নীল রঙের শাপলা ফুল। দৃশ্যটা অসাধারণ। সবুজের আল পথে, টিলার উপর চা বাগানের ফাঁকে দাঁড়িয়ে থেকে আমরা লেকের রূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে ছবি তোলার কাজটাও সেরে নিচ্ছিলাম।

ইশতিয়াক আর শিপুর হাতেই ছবি তোলার দায়িত্ব অর্পন করে আমরা পোস দিয়ে যাচ্ছি।

ঘন্টা দুয়েকের ভ্রমণের ফাঁকে সবাই একবার করে বলে নিলো লেকটা আসলেই সুন্দর।

বড়শি পেতে বসে থাকা কিশোরের গা ঘেঁষে লেক এলাকা ছেড়ে আসার পর ন্যাশনাল টি গার্ডেনের নিজস্ব চা পাতায় বানানো গাঢ় লিকারের চা খেয়ে ফিরছি।

অবশ্য চায়ে মন নেই রিংকির। ঠাণ্ডা কিছুর জন্য অপেক্ষা করছে লিনাও। ইশতিয়াক বরাফাচ্ছাদিত এক বোটল পানি নিয়ে আসলো!

দুপুরের খাবারের পর পিঙ্ক কালারের গাড়িতে বসার জন্য অস্থির নাকিবের ডাকে সাড়া দিয়ে আমরা ছুটলাম লাউয়াছড়া রেইন ফরেস্ট। টিকিট কাটার পর হাঁটা--- রেললাইনে এসেই ইশতিয়াক স্ত্রীর ছব্বি খিঁচা শুরু করলো। আমাদের ছবিব খিঁচার দায়িত্বটা শিপুর হাতেই ছিল।

বিকালের পড়ন্ত সূর্য়ের আলোয় লাউয়াছড়া রেইন ফরেস্ট এক কথায় অসাধারণ। রেল লাইন ধরে হাঁটা আর ছবি তোলার ফাঁকে একটা ট্রেন ছুটে এলা--- হিশ ঞিশ শব্দ তুলে বনের ভেতর ছুটে চলা ট্রেনের দৃশ্যটা বিজ্ঞাপন চিত্রে দেখাও হলেও এবারই প্রথম আমরা সবাই এক সাতৈ তা দেখলাম।

সন্ধ্যার একটু আগে আমরা চলে এলাম টি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের কাছের টি গার্ডেনে।

সেখানে এসে আবিষ্কার হলো জোঁক চুষে নিয়েছে শিপুর রক্ত। এর ফাঁকেও আমরা ছবি তুলে, চা বাগানে খানিক সময় কাটিয়ে ছড়ার ছুটন্ত পানির শন শন আওয়াজ কানে তুলে শ্রীমঙ্গল শহরের আসলাম।

উদ্দেশ্য বৈকালিক নাশতা!

পাশে 'শশুর বাড়ি' নামীয় যে রেস্টুরেন্ট যাত্রা করেছে--- সেটা জানতাম। এর দ্বিতল ভবনের নিচে ফরেনারের সাথে দেখা। তারা নিচে বসলেন আমরা ছেলেপুলে নিয়ে দোতলায় উঠলাম--- লাচ্ছিটা দারুন, অন্থনও ছিল। দই দুটো নাজিব নাকিবের জন্য আনা হলেও একটা নষ্ট করে রেখে দিয়েছে ওরা।
সন্ধ্যার কিছু সময় পর আমরা ফের বাঙলো। একটু রেস্ট; একটু আড্ডা রাতের খাবার--- তারপর আবার ঘুমুতে যাওয়া। রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। ভোরে ঘূম ভাঙার পর সে বৃষ্টি উপভোগের গল্প শুনলাম রিংকির কাছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী পরের দিন মাধবকুণ্ড যাবার কথা। সেটা রদ করে আমরা সিলেটই ফিরতে চাইলাম। লক্ষ্য রাতার গুল।
ঘুমের পর সকালে নাশতার আয়োজন। সেই রুটি , ডাল আর ডিম ভাজি। চা সেরে নিয়ে আমরা গুছিয়ে বেরুতে চাইলাম। সিএনজি ভাড়া করা হলো। যথারীতি আমরা শ্রীমঙ্গল শহরে।

হবিগঞ্জ সিলেট এক্সপ্রেস আমাদের বয়ে নিচ্ছে-- বিরতিহীন এ সার্ভিসে আমরা সিলেট শহরে এসে দাঁড়ানোর পর হেরিটেজ হোটেল আমাদের গন্তব্য!
তার আগে পানসি রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার--- যদিও তখণ চার টা পার হয়ে গেছে। তাতে কি লাঞ্চ তো লাঞ্চই! চিংড়ির কারি, মুরগির রোস্ট , মাছ, ভাজি ভর্তার সমাহারে খাবার শেষে হোটেলে ফিরে ফ্রেশ হবার পর আমরা সন্ধ্যার দিকে গেলাম সার্কিট হাউসে।
রীতির সিলেটি বন্ধূদের সাথে আড্ডা হলো ঘণ্টা দুয়েক। এর মধ্যে নাকিবের রেড কালারের আমব্রেলা লাগবে--- যাবার পথে রীতি টুক করে নেমে সেটিও কিনে হাতে তুলে দিলো।

পানসি--- সেই রক্কম ভিড়। সেই ভিড় ঠেলে রাতের খাবারের সাথে সাথে হাছন রাজার যাদুঘরের দ্যাখা মিলল--- বাইরে থেকে। রাতের হোটেল ফিরে লম্বা ঘুম।

সকালে কালো মাইক্রোবাসে আমরা চড়ে বসলাম--- গন্তব্য বিছানাকান্দি। গোয়াইনঘাট--- হাদার পাড় হয়ে নৗকায় চেপে বসলাম। পানি আর নাজিব দুটোরই বন্ধুত্ব পুরনো।

নাজিব বিছানাকান্দির পথে ভিজে নেয়ে একাকার। পাহাড়ের ছায়ায় নদীর জলে পাথরের সাথে জমছে আমাদের ভ্রমণ যাত্রা।

বিছানাকন্দি পৌছে নাজিবকে একবার নামানোর পর তুলে আনাটা ছিল চ্যালেঞ্জ। ঘণ্টাখানেক ভেজার পর আমরা উঠতে চাইলাম। পাহাড়ের ওপর থেকে নেমে আসা ঠাণ্ডা জলের ধারা মিশে যাচ্ছে নদীর জলে। জলের তলে জমে থাকা পাথর তুলে নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। সৌন্দর্য হানি হচ্ছে --- এ নিয়ে হা পিত্যেশও করলাম।
এখানে সরকার বাহাদুরের নজর পড়লে ভালো আয় ইনকাম করাও সহজ হতো্ বলে মত দিলাম।

কিন্তু এটা তো সত্যি এ রকম একটা ছোটখাটো বিছানাকান্দি নিয়া ভাবনার মত সময় সরকারের নেই। তবে বেসরকারি উদ্যোক্তারা ভাবতে পারে। ট্যাকা থাকলে নিজেই ভাবতাম!

ফিরছি--- ফিরে যেতে হয় বলে।
সন্ধ্যায় হোটেলে এসে হতে- পা ছড়িয়ে একটু বিশ্রাম নেবার পর রাত্রিকালীন দাওয়াতে আমরা।

রীতিদের বাসায় রাতের খাবারের নেমতন্ন। সাতকড়ায় পাকানো গরুর গোশত, ছোট মাছের বড়া, গোশতের কোপ্তা, মুরগির রোস্ট, মাছ ভাজি, বড়ইর আচার--- মতিচুরের লাড্ডু, মিষ্টি --- খাদ্য গ্রহণ শেষ করে উঠে দাঁড়ানো কষ্টকর হলেও উঠতে হলো।

বাস সাড়ে ১১ টা। কিন ব্রিজের উপর দিয়ে আমরা সিএনজি করে চলে এলাম শ্যামলী বাসের কাউন্টারে। ---- ছুটলো বাস উল্কার বেগে। এটাই যেন নিয়ম--- জীবন নিয়ে জুয়া।

আনন্দঘন সময়গুলো দ্রুত ফুরিয়ে যেতে থাকে--- স্মৃতির পাতায় জমতে থাকে প্রতিটি ভ্রমণ আর বয়স বাড়তে থাকে। আমরা বুড়িয়ে যেতে থাকি! কী দারুন আহা কী দারুণ । আহা কী দারুণ জীবন!
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৩
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রোএক্টিভিটি এবং কম্পাউন্ড ইফেক্ট: আমার গুরুত্বপূর্ণ দুইটি শিক্ষা

লিখেছেন মাহদী হাসান শিহাব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১১



আমার গুরুত্বপূর্ন দুইটা লার্নিং শেয়ার করি। এই দুইটা টুল মাথায় রাখলে দৈনন্দিন কাজ করা অনেক সহজ হয়। টুল দুইটা কাজ করতে ও কাজ শেষ করতে ম্যাজিক হিসাবে কাজ করে।

এক.

স্টিফেন কোভের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

লিখেছেন সায়েমার ব্লগ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৩

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ
ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

১।
যৌন প্রাকৃতিক, জেন্ডার নয়।জেন্ডার মানুষের সৃষ্টি (social, cultural construction)। যৌনকে বিভিন্ন সমাজ বিভিন্ন সময়ে যেভাবে ডিল করে, তাঁকে ঘিরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্মৃতির ঝলক: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনুভূতি এবং মনের শান্তির খোঁজে

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০১



সরল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সংমিশ্রণে একটি ঘূর্ণায়মান পথ জুড়ে ঘুরে বেড়ানোর অবস্থানে আমি খুব শান্তি অনুভব করি। নদীর জল ছুঁয়ে পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সঙ্গে এক আন্তরিক সংযোগ অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×