লেখাটি সম্পূর্ণ পড়বেন। নিচে শুধু বিষয়ভিত্তিক বই নয় সাথে দেওয়া আছে কোন বিষয়ে কি কি পড়বেন। প্রতি বিষয়ের বইয়ের তালিকার সাথে দেওয়া আছে পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন।
আমার মুখস্তবিদ্যা তেমন একটা ভালো না। আর জীবনে সিরিয়াসলি পড়াশুনাও তেমন একটা করি নাই। যদিও আমাদের জীবনে বিশ্ববিদ্যালয় এডমিশন টেস্টটাকেই আমরা সবচেয়ে বেশী টাফ মনে করে থাকি এবং আমিও তাই ভাবতাম। কিন্তু আমার মনে হয় এরচেয়ে লাইফে প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষা বিসিএস। মাঝে সিনিয়র ভাইদের কাছে শুনতাম যে বুয়েটিয়ান রা সরকারী চাকুরী তথা বিসিএস এর দিকে তেমন একটা ঝুকে না। তখন খারাপই লাগতো যে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠের শিক্ষার্থীরা যারা দেশে আছেন বা থাকবেন তারা কেন সবচেয়ে সম্মানজনক চাকুরী বিসিএস জব করে না।
ইদানিং ভালো লাগছে গত বেশ ক বছর ধরেই বুয়েটিয়ানদের সংখ্যা বিসিএস জবে অনেক বেড়েছে। বিসিএস পরীক্ষা মোট ৩ ভাগে হয়ে থাকে। বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার জন্য বা যোগ্যতা অর্জনের জন্য প্রাক-বাছাই পরীক্ষা বা বিসিএস প্রিলিমিনারীতে অংশগ্রহণ করতে হয়। এইটা বিসিএস পরীক্ষার সবচেয়ে কঠিনতম ধাপ [আমার মনে হয়]। ২০০ টি অবজেকটিভ দাগাতে হবে ১২০ মিনিটে বা ২ ঘন্টায়।
প্রিলিতে পাস করলে লিখিত পরীক্ষায় মোটামুটি সবাই পাশ করেন কারণ ৫০% নম্বর পেলেই পাশ ধরা হয়। পূর্বের নিয়ম অনুসারে, লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয় ৯০০ নম্বর লিখিত পরীক্ষায় আর টেকনিক্যাল ফিল্ডে দিলে বিষয় ভিত্তিক আরো দিতে হয় ২০০ নম্বরের পরীক্ষা। বাংলা ১ম + ২য় = ২০০ নম্বর; ইংরেজী ১ম + ২য় = ২০০ নম্বর; বাংলাদেশ বিষয়াবলী ১ম + ২য় পত্র = ২০০ নম্বর; আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী ১০০ নম্বর; সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি = ৫০ + ৫০ = ১০০ নম্বর এবং গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা = ৫০ + ৫০ = ১০০ নম্বর। আর যে যেই বিষয়ে টেকনিক্যাল ক্যাডারে পরীক্ষা দিবে তাদের জন্য সেই বিষয়ে দুই পত্রে ২০০ নম্বরের পরীক্ষা [সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ১ম + ২য় পত্র = ২০০ নম্বর]
নতুন নিয়মে অবশ্য বিসিএস এর বিজ্ঞপ্তি হলে সেখানেই বিস্তারিত উল্লেখ থাকবে মোট কত নম্বরের উপর লিখিত হবে, কোন কোন বিষয়ে কত নম্বরের পরীক্ষা দিতে হবে।
লিখিত পরীক্ষায় ৬৫% পেলে ক্যাডার নিশ্চিত। আর এরপর সবচেয়ে কঠিন ধাপ ভাইবা। কারণ প্রথম দুইধাপ কস্টে শিষ্টে পার হলেও ভাইবা তে অনেকেই বাদ পড়েন/ পড়েছেন।
যেসব ছোট ভাই ও বোনেরা আগে থেকেই বিসিএস চাকুরী করবে বলে ঠিক করেছে তাদের জন্য আমার লেখাটি কাজে লাগবে বলে আশাকরি। প্রিলিতে কিভাবে ভালো করা যাবে তা নিয়ে একটা গাইডলাইন। কাজে লাগবে আশাকরি। গাইড লাইনটি ফলো করলে হয়তো প্রথমবারেই এই প্রিলি বাধা পার হওয়া যাবে।
বিষয়ভিত্তিক আলাদা আলাদা গাইডলাইন দেওয়া আছে।
নিচের লিংকগুলো দেখুনঃ
১) বিসিএস প্রিলির জন্য বাংলা বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন
২) বিসিএস প্রিলির জন্য ইংরেজী বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন
৩) বিসিএস প্রিলির জন্য গণিত বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন
৪) বিসিএস প্রিলির জন্য বিজ্ঞান বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন
৫) বিসিএস প্রিলিতে বাংলাদেশ বিষয়াবলীর জন্য পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন
৬) বিসিএস প্রিলিতে আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীর জন্য পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন
৭) বিসিএস প্রিলিতে মানসিক দক্ষতায় যা যা পড়বেন
৮) কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি
কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেগমেন্টে দুটিতেই ডিটেইল ভাবে বলে দেওয়া আছে কি কি পড়তে হবে। যেকোন গাইড বই নিয়ে এই টপিকগুলো পড়ে ফেলুন। বিষয়গুলো প্রাথমিক লেভেলে জানলেই হবে, খুব ডিটেইলে যাব্র প্রয়োজন নাই। পূর্বের বছরগুলোতে এই সেগমেন্টে আগর প্রশ্নগুলো রিভিউ করুন। কমন পড়বে ইনশাআল্লাহ। আর সমসাময়িক বিভিন্ন ব্যাংক, বীমা ও সরকারী প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশ্ন এসেছে সেই প্রশ্নগুল পড়লেও কমন পাবেন।
এছাড়া এই বিষয়ক নিচের বইগুলো দেখতে পারেন
১) বিসিএস অ্যাসুরেন্স ডাইজেস্ট
২) মাধ্যমিক কম্পিউটার বিজ্ঞান
৩) কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স
৪) প্রফেসর’স এর জব সল্যুশন
আর সবশেষ ভরসা ইন্টারনেট। টপিক ওয়াইজ সার্চ দিলে আপনার চেয়ে বেশি আর কেউ জ্ঞানার্জন করতে পারবে না।
৯) ভূগোলো, পরিবেশ ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা
সিলেবাসে নতুন করে উল্লেখ থাকলে এর আগে ভূগোল ও পরিবেশ বিষয়টি ছিল বিজ্ঞানের অধীনে। দূর্যোগ ব্যবস্থাপনাটি ছিল সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলীতে। যেহেতু নতুন সিলেবাসে এই সেগমেন্টটি আলাদা ভাবে উল্লেখ আছে তাই এর বিশ্লেষণের প্রয়োজন। এই সেগমেন্টে মোট ১০টি প্রশ্ন আসবে।
সবচেয়ে ভালো হয় এই বিষয়ক পূর্বে বিসিএস প্রিলি পরীক্ষা যে প্রশ্নগুলো এসেছে
নিম্নে উল্লেখ আছে ভূগোল, পরিবেশ ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা সিলেবাসে কি কি আছে।
১) বাংলাদেশ ও আঞ্চলিক ভৌগোলিক অবস্থান, সীমানা, পারিবেশিক, আর্থ-সামাজিক ও ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বঃ
বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান, পৃথিবীর ভৌগোলিক অবস্থান, বাংলাদেশের সীমানা, পরিবেশিক প্রভাব, আর্থ-সামাজিক ও ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব ইত্যাদি
২) আঞ্চলিক ভৌত পরিবেশ (ভূ-প্রাকৃতিক), সম্পদের বন্টন ও গুরুত্ব
পাহাড়-পর্বত, ভূ-প্রকৃতি, সমতল, কোথায় কোথায় ভূ-প্রাকৃতিক সম্পদ আছে, এর গুরুত্ব ইত্যাদি
৩) বাংলাদেশের পরিবেশ; প্রকৃতি ও সম্পদ, প্রধান চ্যালেঞ্জসমূহ
বাংলাদেশের পরিবেশ, কোন জেলায় কোন প্রাকৃতিক সম্পদ জন্মে, খনিজ পাওয়া যায় এসব।
৪) বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক পরিবেশ পরিবর্তনঃ আবহাওয়া ও জলবায়ু নিয়ামকের সেক্টরভিত্তিক (অভিবাসন, কৃষি, শিল্প, মৎস্য ইত্যাদি) স্থানীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রভাব।
এই অংশে মূলত জলবায়ু পরিবর্তন, বিভিন্ন সম্মেলন, সম্মেলনে আলোচ্য সিদ্ধান্ত, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক জলবায়ুর প্রভাব, বিভিন্ন সেক্টরের উপর জলবায়ুর প্রভাব এসব।
৫) প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও ব্যবস্থাপনাঃ দুর্যোগের ধরন, প্রকৃতি ও ব্যবস্থাপনা
এই অংশে পড়বেন বাংলাদেশে কি কি ধরনের দূর্যোগ হয়, কতসালে কোন কোন দূর্যোগে বাংলাদেশের হয়েছিল, দূর্যোগকে কিভাবে মোকাবেলা করা হয়েছে, সরকারি ভাবে কি কি ব্যবস্থাপনা করা হয়েছে, দুর্যোগের পিছনে কারণ ও দূর্যোগ মোকাবেলায় করণীয়, সর্তর্কীকরণ, ঘুর্ণিঝড়ের সংকেতসমূহের অর্থ, অতীতের ঝড়গুলোর নাম ও নামের অর্থ এইসব।
১০) নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন
সিলেবাসে পয়েন্ট করা হয়েছে যে - সুশাসন থাকলে সমাজে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ বজায় থাকবে। আবার মূল্যবোধের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব। এজন্য নৈতিকতাকে শিক্ষার কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করলে সেটা সুদূর ভবিষ্যতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করবে। এখানে কমনসেন্সের উপর থেকেই প্রশ্ন হবার সম্ভাবনা বেশী।
পড়ার কোনও শেষ নাই ... জানার কোনও শেষ নাই। উপরের বইগুলো বিসিএস প্রিলিতে ভালোভাবে চান্স পাবার জন্য যথেষ্ট সাহায্য করবে।
এরপরের লেখায় বিষয় ভিত্তিক ডিটেইল বিষয়াবলী উল্লেখ্য করে দিব ... কোন বিষয়ে কি পড়া উচিত।
ধন্যবাদ।
Find / Follow me on Facebook:
https://www.facebook.com/neelchy
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:০২