somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নীল মনি
ভীষণ কঠিন পোড়ামাটিকে আবার সেই কাদামাটিতে ফিরিয়ে আনা,ভীষণ কঠিন আঘাত দেয়া শব্দমালা গুলো ফিরিয়ে নেয়া।ভীষণ কঠিন নিজের সম্পর্কে কিছু বলা।যে চোখ দেখিনি সে চোখ কেমন করে বিশ্বাস করবে জানি না।যে কখনো রাখিনি হৃদয়ের উপর হৃদয়;সে কেমন করে বুঝবে আমায়!

"সেফটিপিন"- গ্রন্থের রিভিউ

২১ শে মে, ২০১৮ সকাল ১১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রতিবাদের প্রীতিলতা
শিরোনামটা প্রায় ধার করা। কবি ও কথাশিল্পী রুবাইদা গুলশানের অণুগল্পের বই সেফটিপিন। বইটির প্রথম গল্প ও সেফটিপিন গল্পের নায়িকা মৌনতা। মৌনতা নিজেকে ভাবেন প্রীতিলতা। এখান থেকেই শিরোনাম। বইটির নামকরণ বেশ মানানসই। নামকরণই ইঙ্গিত দেয় অব্যক্ত মুগ্ধতাবোধের। অপার রহস্যের। সেফটি পিন না সেফটিপিন?
লেখকের গল্পটা দেখা যাক- ‘প্রতি সপ্তাহে ডজনখানেক সেফটিপিন লাগে, স্কার্ফভর্তি সেফটিপিন লাগাতে লাগাতে হাতে ফুটে যায় মৌনতার। ইশ!
পাবলিক বাসে কলেজ থেকে বাসায় ফিরছে মৌনতা। মৌনতা জানালার কাচ সরিয়ে বাইরে তাকিয়ে ভাবে- তার নাম হওয়া উচিত ছিল প্রীতিলতা। হাতের মুঠোর মাঝে রাখা সেফটিপিনটা জানালা দিয়ে ফেলে দিল। এটা আর রাখার প্রয়োজন নেই।
মৌনতা মনে মনে হাসে আর ভাবে-এই সেফটিপিন দিয়ে একটু আগে সে কিভাবে অপারেশন করল। উপায় ছিল না। বারবার বলা সত্ত্বেও লোকটা যে তার নিজের কনুই সামলে রাখতে পারছিল না। সেফটিপিন ফুটিয়ে দিয়ে মৌনতা বুঝিয়ে দিল- পাপ পাপই, হোক ছোট কিংবা বড়!’
সমাজে নারীকে প্রতিনিয়ত বাজে অভিজ্ঞতার ওপর পা ফেলে চলতে হয়। কখনো কখনো আত্মরক্ষায় নিতে হয় কৌশলী আশ্রয়। ভরা পূর্ণিমাকে লুকিয়ে রাখতে হয় ঘোর অমাবস্যায়। মমতাময়ী নদীর জল উপচানো ঢেকে রাখতে হয় রহস্যময় আবরণে। বুক পকেটের হাসনাহেনার মাদকতা শুকিয়ে নিতে হয় নিষ্ঠুর রোদের ভালোবাসায়।
‘আমার চক্ষে পুরুষ রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই’ তবুও সমাজের বাস্তবিক ইমেজে জোর দিয়েছেন লেখক রুবাইদা গুলশান। সমাজের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যায় আলো ফেলেছেন নিবিড়ে। দক্ষতায়। যা পাঠককে নতুন স্বাদ নিতে উৎসাহিত করে। সস্তা জনপ্রিয়তার স্থুল মোহে বুঁদ না হয়ে থাকা লেখক। তার জ্বলজ্বলে প্রমাণও মিলে সেফটিপিনের শেষ লাইনে- ‘পাপ পাপই, হোক ছোট কিংবা বড়!’ লেখকের কিছু গল্পে অন্যদের থেকে ভিন্ন রকম গন্ধের আভাস- বললেও বাড়িয়ে বলা হবে না।
মিথ্যার পঙ্কিলতা থেকে মানুষকে ডাকেন সত্যের পথে। মানবিকতার পথে। মাত্র কয়েক লাইনের এই অণুগল্পটি পাঠ করলেই বুঝতে পারবেন, হৃদয়ের সমস্ত নিবিড় নির্যাস পারঙ্গমতার সঙ্গে কলমে ঢেলে দিয়েছেন লেখক। তার কিছু গল্প পাঠককে নেশাগ্রস্ত করে। স্বপ্নবিলাসী করে। সাহসিকতার বয়ান শোনায়। শোনায় অধরা ভালোবাসার ছোঁয়া। কিছু গল্পে তিনি ভালোবাসাকে গতানুগতিক আশ্রয় দেননি। বলা যায় ভদ্রতার সঙ্গে ফিরিয়ে দিয়েছেন। ‘চিরকুটের ফুল’ পাঠ করলে তার রহস্য বুঝতে পারবেন পাঠক। তিনি গল্পের সঙ্গে, গল্পের মায়াজালে মিশে যান কিন্তু একটা অভেদ্য দেয়াল রেখে; যেখানে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত।
বাঁশ, শুভ্রাণু, ছোঁয়া, তারার ফুল, দূরত্বের শেষ প্রহরে গল্পগুলো ভালো লাগবে। পাঠক হেসে উঠবে। চোখ মুছবে। একটা সময় হয়তো বলে উঠবে- ‘এ তো আমারই গল্প। আমারই জীবন।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের সাবেক কৃতী শিক্ষার্থী রুবাইদা গুলশান। ধর্মান্ধতা, অন্ধত্ব, গোঁড়ামি, কুসংস্কার, সাম্প্রদায়িকতা এবং প্রতিক্রিয়াশীলতাসহ যাবতীয় অন্ধকারের বিরুদ্ধে তীব্র লড়াই করতে জানেন তিনি এবং বিজয়ীও হন। তিনি বোঝেন সমাজ, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও বহমান নষ্ট সময়ের রাজনীতি। বর্তমান ঘুণেধরা সমাজের দিকে নজর দিলেই তার উপলব্ধির সত্যতাই দৃশ্যমান হবে। গল্পের আড়ালে জ্বলজ্বল করে অলিখিত দর্শন; যা চেতনে অবচেতনে আমাদের প্রভাবিত করে। উৎসাহিত করে।
রুবাইদা গুলশানের লেখার ভাষা, পটভূমি, ব্যাখ্যা এবং প্রকাশে কিছুটা স্বকীয়তা লক্ষণীয়। তিনি ব্যবহার করেছেন সহজ-সরল ও যতটা সম্ভব ছোট বাক্য। এজন্য তাকে বলা যায় ‘সার্থক’ চিত্রী।
জীবন-জীবিকার তাগিদে একজন লেখককে ‘অর্ধেক জীবন’ বিলিয়ে দিতে হয়। এতকিছুর পরেও তাকে নতুন করে ভাবতে শিখতে হবে। নতুন নতুন চিন্তার আলো টানতে হবে। বিশ্বসাহিত্যের পাতায় চোখ ফেলতে হবে পরম মমতায়। প্রজাপতির মুগ্ধতায়। জানতে হবে- কেন আমার গল্প অন্যদের থেকে পিছিয়ে কিংবা এগিয়ে? সেফটিপিনের সমাপ্তি শুনবেন?
বিকেলের চিরল রোদ্দুরে; সূর্য এখন পশ্চিমে।/সাথে চলছে পাহাড়িকন্যা; লজ্জাবতী সে যে।/কনে দেখা আলো মেখে চলে যায় দূর দিগন্তে/দেখে আসি শালের বনে;/কেমন করে উঠেছে চাঁদ সে বেঁকে।/প্রশান্ত নিঃশ্বাসে বনানীর তুমুল অভিসারে নির্ঝর সংগীতে,/আহা! কতকাল ধরে আহা!/কতকাল তোমারি অপেক্ষায়!

© জিয়া হক
প্রতিদিনের সংবাদ -এ প্রকাশিত
সেফটিপিন
রুবাইদা গুলশান
প্রকাশনী : মূর্ধন্য
প্রচ্ছদ : মোস্তাফিজ কারিগর
মূল্য : ১৮০
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০১৮ সকাল ১১:৫৭
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×