somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নির্বাক বসন্ত [মোট ২৫ পর্ব] পর্ব-২১

০২ রা মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এর পরে নিশাত যতদিন দেশে ছিল প্রায় প্রতিদিন নিরুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস কবে শুরু হবে সেই রুটিন জানার জন্য বা ভিন্ন কোন অজুহাতে বাড়ি থেকে বের হয়ে দুই জনে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে একসময় নিশাতের যাবার দিন ঠিক হয়ে গেল। কোথা দিয়ে যে দিনগুলি চলে গেল বোঝা গেল না। মনে হলো যেন ঝরের গতিতেই দিন চলে গেল। এত দিনের সঞ্চিত যত কথা সব যেন পাখির মত মুখোমুখি বসে এক এক করে কত কি বলতে চেয়েও সব বলা হলো না কত বাকি রয়ে গেল। একদিন আরিচা ঘাটের কাছে পদ্মা নদীর পাড়ে বসে ঢলে পড়া সূর্যের দিকে তাকিয়ে নিশাত বলছিল নিরু একটা গান গাও
জানেন না আমি গান জানি না
কেন ওই যে সেদিন তোমাদের বাড়িতে কুয়োর পাড়ে বাসন মাজার সময় গাইছিলে
কবে?
সে অবশ্য অনেকদিন আগের কথা, তুমি তখন স্কুলে পড়
কি জানি আমার মনে নেই, আচ্ছা কোন গান?
নিঝুম সন্ধ্যায় শ্রান্ত পাখিরা......
হ্যাঁ ওটা আমার প্রিয় গান তবে এখন মনে নেই আর তাছাড়া সেই কবে কি গুনগুন করেছিলাম এখনও কি তাই মনে থাকে?
দেখনা চেষ্টা করে, সেদিন কিন্তু আমি তোমার পিছনে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ ধরে গানটা শুনেছিলাম, কি যে ভাল লাগছিল, আমি আজও ভুলিনি। এখনো আমার কানে সেই সুর লেগে আছে।
কি জানি আমার কিন্তু কিছুই মনে পরছে না।
আচ্ছা থাক, অনেকদিন আগের কথা মনে না থাকলে নেই। তুমি গান শিখ নিরু আমি ওস্তাদের ব্যবস্থা করে দিব।
গান আপনার এত ভাল লাগে?
হ্যাঁ নিরু, সুর আমাকে পাগল করে দেয়
আমার চেয়েও গান প্রিয়?
নিশাত স্তব্ধ হয়ে নিরুর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল
কি হলো এমন করে কি দেখছেন?
তোমাকে দেখছি! কি বললে তুমি?
আমার চেয়েও গান প্রিয়?
শোন, গানের জায়গায় গান আর তোমার জায়গায় তুমি। তোমার সাথে এই পৃথিবীর আর কোন কিছুর সাথে তুলনা করবে না কখনও
আচ্ছা ঠিক আছে আমি নিজেই গান শিখব, সেদিন আপাও বলছিল গান শিখব কিনা তাহলে ছায়া নটে ভর্তি হতে বলেছিল। ছায়া নটের টিচার আফরিন মজুমদার আপার প্রতিবেশি
তাহলে তুমি ছায়ানটে ভর্তি হও, তোমার এত সুন্দর কণ্ঠ তুমি খুব ভাল গান করবে, ছোট বেলায় বেশ গুনগুন করতে।

আবার বিদায়, আবার বিরহ। তবে এবারের বিরহ আগের দিন গুলির মত নয়। একটু ভিন্ন রকমের। এতদিন দুজনে ভিন্ন ভাবে দুজনার কথা ভাবত কিন্তু এবার তাদের চলা পথ সম্ভবত একই স্রোতে মিশে যাবার পথ খুঁজে পেয়েছে। যাবার আগে একদিন সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের এক বেঞ্চে বসে নিরুর কাঁধে হাত রেখে বলল নিরু তুমি চিঠি লিখতে পারবে?
কেন?
কেন মানে? মানুষে চিঠি লিখে কেন?
যারা চিঠি লিখে তাদের একটা নির্দিষ্ট ঠিকানা থাকে কিন্তু আপনার কি তেমন কিছু আছে? এ দেশ থেকে ওই দেশে ঘুরে বেড়ান আপনার কাছে চিঠি লিখব কোথায়? সাগরের ঠিকানায় লিখে পাঠাব আর সে চিঠি সাগর জলে ভেসে বেড়াবে? কোন সাগরের ঠিকানায় লিখব বলে যান
নিশাত এবার একটু চিন্তায় পড়ে গেল। তাইতো কোন ঠিকানায় চিঠি লিখবে?
আমি কখন কোথায় থাকি সে ঠিকানা জানিয়ে আমি লিখব আর তুমি সেখানে লিখবে। যদিও সে চিঠি আমি কবে পাব তার কোন ঠিক নেই তবুও দেরিতে হলেও আমি তোমার ছোঁয়া মাখা চিঠিটা পাব এবং আবার কিছুদিন চলার শক্তি পাব।
বেশ তাই করবেন কিন্তু আমার কাছে লিখতে কোথায় লিখবেন?
কেন, আপার বাড়িতেই লিখব
আপা কি মনে করবে?
কেন মনে করবে?
আপা আপনাকে খুব স্নেহ করে কিন্তু চিঠি পত্র দেখলে যদি বিরূপ কিছু ভেবে নেয়?
না, আপা সে সুযোগ পাবে না, তার মনে করার মত কোন কাজই আমি করব না। তোমার কাছে যে চিঠি লিখব সে চিঠি ইচ্ছে করলে তুমি আপাকেও দেখাতে পারবে, আমি এমন করেই লিখব।
তাই কি হয়?
হবে, দেখবে এতে ভালই হবে তুমি মাঝে মাঝে তোমার চিঠিগুলি আপাকে পড়তে দিও আর হ্যাঁ আমিও আপা দুলাভাইকে মাঝে মাঝে লিখব।
এমন হলে লিখতে পারেন।

এভাবেই নিশাত কয়েকটা ভয়েজ করে ফেলল। প্রতিটি ভয়েজ শেষে দেশে এসেই আগে নিরুকে চোখে দেখার জন্য ছুটে এসেছে বীণা আপার বাড়ি। আর কেউ কিছু না বুঝলেও হয়ত বীণা আপা কিছু অনুমান করেছে। এখন আর নিরুকে হারাবার ভয় নেই। যখন যে দেশেই গেছে সেখানে বন্দরে পৌছার আগেই চিঠি লিখে খামে ভরে রাখত, মুখ আটকাত না যেন পোস্ট করার আগে সর্বশেষ কথাটা নিরুকে জানান যায়। কবে কোন বন্দরে গেছে সে দেশ কেমন, সে বন্দর বা শহর কেমন, লোকজনের পোশাক আসাক থেকে শুরু করে তাদের খাবার দাবার এবং যাবতীয় বৃত্তান্ত সহ জাহাজে কবে কি করেছে কি খেয়েছে এই সব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে লিখতে লিখতে সে চিঠি কখনও বিশ পাতা পর্যন্ত হয়ে যেত। পরের চিঠি কোন ঠিকানায় লিখবে সে এজেন্টের ঠিকানা দিয়ে দিত সাথে। নিরুর চিঠির সাথে আপা বা দুলাভাইকেও কিছু লিখতে কখনই ভুল করত না। আপা বা দুলাভাইকে লিখত নিরুর চিঠিতে এ বিষয়ে বিস্তারিত লিখেছি ওর চিঠি দেখে নিবেন। দুলাভাইকে কখনও ইউরোপিয়ান মেমসাহেবদের কাহিনী লিখত। আবার মাঝে মাঝে ইয়ার্কিও করত, দুলাভাই আপনি সাথে থাকলে একজন মেমসাহেব কিনে দিতে বলতাম। যখন যেখানে গেছে নিরুর জন্য কিছু না কিছু কেনাকাটা করবেই। কখনও দেখা গেছে নিরুর জন্য যা কিনেছে তাই দিয়েই ওর এয়ার টিকেটে ফ্রি লাগেজ এলাউন্স যা পেত তার অর্ধেক হয়ে গেছে। দেশে এলে নিরুকে সেগুলি দিতে গেলে কখনও নিরু কিছুই নিত না। বলত
কেউ জিজ্ঞেস করলে কাকে কি বলব? এ নিয়ে আমি কাউকে কোন কৈফিয়ত দিতে পারব না।
নিশাত অনেক পিড়াপিড়ি করেছে। কিন্তু কোন লাভ হয়নি নিরুর ওই এক কথা। সেবার প্যারিস থেকে একটা পারফিউম এনে বলেছিল
এটাতো কেউ দেখবে না এটা অন্তত নাও।
আসলেই আপনার মাথা খারাপ।
মাথা খারাপের কি হলো?
বলে নিশাত নিরুর মুখের দিকে চেয়েছিল আর নিরু বলেছিল
এর গন্ধ আমি ঢেকে রাখব কি দিয়ে? এ কথা কবে বুঝবেন আপনি? শুধু শুধু এত খরচ করেন কেন? এসব আজে বাজে খরচ না করে টাকা জমাবেন ভবিষ্যতে কাজে লাগবে, মনে যেন থাকে
নিশাত ও কথায় কান না দিয়ে সেগুলি এনে যত্ন করে তার ওই আলমারিতে তুলে রাখত আর ভাবত নিরু যেদিন নিজে এই আলমারির তালা খুলে এগুলি নিবে সেদিনই ও ব্যবহার করবে এর মধ্যে পচে গলে যা হয় হোক এগুলি নিরুর।
গত কয়েকটা ভয়েজে নিশাতের বেশ উন্নতি হয়েছে। লন্ডনে পরীক্ষা দিয়ে সেকেন্ড অফিসার হয়েছে। পাশ করল যেদিন সেদিন মা বাবা এবং বীণা আপা দুলাভাই সহ নিরুকে একসাথে চিঠি লিখে জানিয়েছিল। বীণা আপার বাসায় ফোন করে নিরুর সাথে কথা বলেছিল। আর মাত্র আড়াই বছর পরেই চিফ মেট পরীক্ষা দিব। নিরু তুমি শুধু আমার জন্য দোয়া করবে যেন আমি সুস্থ থেকে দিনগুলি কাটাতে পারি। আর তুমিও ভাল করে পড়াশুনা করবে। আর হ্যাঁ গানের ব্যাপারে কিন্তু আলসেমি করবেনা। দেখবে একদিন আমি সব পাব। তখন তোমাকে নিয়ে শুধু ঢাকা নয় পৃথিবীর নানা দেশে ঘুরে বেড়াব। তুমি আমার পাশে থাকবে। তোমার হাত ধরে চলে যাব অনেক দূরে যেখানে চির বসন্ত থাকে সেই দেশে। আমাদের দেখে আকাশের তারারাও হেসে হেসে আমন্ত্রণ জানাবে। যেখানে থাকব শুধু তুমি আর আমি।
এমন করে তোমার কিছু মনে হয় না নিরু?
হয়, আমারও অনেক কিছু মনে হয় কিন্তু আমারযে ভীষণ ভয় করে!
কিসের ভয়? কোন ভিয় নেই। দেখবে একদিন আমাদের সব হবে।
[চলবে। এতক্ষণ নিশাতের সাথে নিরুর চায়ের নিমন্ত্রণের অপেক্ষায় থাকুন। ধন্যবাদ]
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×