somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অথচ তিনি পরীক্ষায় ফেল করেছিলেন .... আনিসুল হক (কপি পেস্ট)

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাবিরুল ইসলামের বক্তৃতা শুনছিলাম। ২৩ বছরের তরুণ, সিলেটের বিশ্বনাথে পৈতৃক বাড়ি। জনম, বেড়ে ওঠা ব্রিটেনে। পৃথিবীর তরুণতম উদ্যোক্তাদের একজন, ১৪ বছর বয়স থেকে তিনি নিজের উদ্যোগে ব্যবসা করা আরম্ভ করেন। তিনি পৃথিবীর কনিষ্ঠতম কোটিপতিদের একজন। ২০১০ সালে তিনি নির্বাচিত হয়েছেন বিশ্বের কনিষ্ঠতম ২০ শিল্পোদ্যোক্তাদের একজন হিসেবে।
১৭ বছর বয়সে তিনি বই রচনা করেন, দ্য ওয়ার্ল্ড অ্যাট ইয়োর ফিট। এখন তিনি ১০ লাখ তরুণের সামনে বক্তৃতা করার কর্মসূচি নিয়ে ঘুরে বেড়াচেছন দেশ-বিদেশ, আট লাখ ৮৫ হাজারের সামনে কথা বলা এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে।
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তিনি এসেছিলেন প্রথম আলো কার্যালয়ে। সিএ ভবনের মিলনায়তনে তরুণদের উদ্দেশে কথা বলছিলেন। বসে বসে তাঁর কথা শুনছিলাম।
তিনি বলেন, ‘মা-বাবারা চান, ছেলেমেয়ে ডাক্তার হবে। পৃথিবীর সবাই যদি ডাক্তার হয়, রোগী হবে কে?’ তিনি বলেন, ‘আপনাদের মধ্যে যাঁরা বাবা-মা হয়েছেন, তাঁদের বলি, নিজের অপূর্ণ স্বপ্ন ছেলেমেয়েদের ওপরে চাপিয়ে দেবেন না। পৃথিবীর ৭০০ কোটি মানুষ ৭০০ কোটি রকম। প্রত্যেকেই আলাদা। প্রত্যেকের উচিত নিজেকে আবিষ্কার করা।’
এই কথাটিই অধ্যাপক আবদুলস্নাহ আবু সায়ীদ বলেছিলেন, স্বপ্ন নিয়ে পাতায় তাঁর সেই উক্তি আমি প্রকাশও করেছিলাম, ‘আমাদের অভিভাবকেরা একেকজন প্রতিভার ঘাতক, যে ছেলেমেয়ের আইনস্টাইন হওয়ার কথা, বাবা-মা তাকে বানাতে চান ইঞ্জিনিয়ার, যার রবীন্দ্রনাথ হওয়ার কথা, অভিভাবকেরা তাকে বানিয়ে ফেলেন ডাক্তার।’
সাবিরুল বাংলাদেশ সম্পর্কে যা বললেন, তা আমরাও বলে আসছি। মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলছেন। ইউরোপে-আমেরিকায় ছবি আকাঁর ক্যানভাসটা পূর্ণ হয়ে গেছে। ওখানে আর কারও কিছু করার নেই। বাংলাদেশে ক্যানভাসটা অর্ধেকটাই খালি। প্রত্যেকে একটা করে তুলি হাতে নিয়ে নিজের মতো রং লাগাতে পারে, অংশ নিতে পারে নিজের স্বপ্নের দেশ আঁকার কাজে। আসলেই আমরা এমন সৌভাগ্যবান, আমরা এমন একটা সময়ে এই দেশে আছি, যখন আমরা যে ভালো কাজটাই করি, সেটা জমা হচ্ছে দেশের অ্যাকাউন্টে, আমরা একটা দেশ গড়ছি। এই রকমের সৌভাগ্য আর কটা প্রজনম পাবে?
সাবিরুলের কথা শুনি। আর নানা কথা মনে হয়। বিল গেটসের একটা উক্তি পাওয়া যায় ইন্টারনেটে। জানি না, কথাটা আদৌ তিনি বলেছিলেন কি না। উক্তিটা হলো, ‘আমি কয়েকটা পরীক্ষায় ফেল করেছিলাম। আমার এক বন্ধু সবগুলো পরীক্ষায় পাস করেছিল। সেই বন্ধুটা এখন আমার প্রতিষ্ঠানে ইঞ্জিনিয়ারের চাকরি করে।’
বিল গেটস যে পরীক্ষায় ফেল করেছিলেন, সেটা সত্য। আর তিনি হার্ভার্ডের ঝরেপড়া ছাত্র। মানে যিনি পড়া শেষ করেননি। পরে কিছুদিন আগে বিল গেটসকে ডেকে নিয়ে হার্ভার্ড সম্মানসূচক ডিগ্রি দিয়ে নিজেরাই সম্মানিত হয়েছে। বিল গেটসের এই উদ্ধৃতিটা কিন্তু একেবারেই নির্ভেজাল, তিনি বলেছেন, ‘I really had a lot of dreams when I was a kid, and I think a great deal of that grew out of the fact that I had a chance to read a lot’ ‘আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন আমার সত্যি সত্যি অনেক অনেক স্বপ্ন ছিল। আর এ স্বপ্ন তৈরি হয়েছিল, কারণ আমার অনেক অনেক পড়ার সুযোগ ঘটেছিল।’
পড়ার কোনো বিকল্প নেই। আমি যখন সত্যজিতের পথের পাঁচালী দেখি, তখন অপু কেমন, দুর্গা কেমন, রেলগাড়ি কেমন, তার ছবি সামনে থাকে, কিন্তু যখন বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালী দেখি, তখন আমার কল্পনা দিয়ে আমি অপুকে দেখি, দুর্গাকে দেখি, কাশবন দেখি, রেলগাড়ি দেখি। তখন কোথাও আমার হারিয়ে যাবার নেই মানা মনে মনেৃ
এফ আর খান। ফজলুর রহমান খান। বিশ্ববিখ্যাত স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার। তাঁকে বলা হয় স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আইনস্টাইন। ঢাকা থেকেই পড়াশোনা করেছেন, সেই প্রতিষ্ঠান থেকে, যা আজ বুয়েট নামে পরিচিত। আমেরিকায় গেছেন। আরও পড়াশোনা করেছেন। উঁচু ভবন নির্মাণের বিষয়ে নতুন ধারণা দিয়ে তিনি অমর হয়ে আছেন। শিকাগো শহরের সিয়ার্স টাওয়ার তাঁর বানানো। বহুদিন সেটাই ছিল আমেরিকার সবচেয়ে উঁচু ভবন। ফজলুর রহমান খান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গড়ার জন্য অনেক শ্রম দিয়েছিলেন।
সিয়ার্স টাওয়ারের নিচে এফ আর খানের নামে সড়ক আছে। সেই সড়কে আছে তাঁর ধাতব ভাস্কর্য, আর সেখানে ধাতুর অক্ষরে খোদিত আছে তার বাণীত‘একজন প্রযুক্তিবিদের তাঁর আপন প্রযুক্তিতে হারিয়ে যাওয়া উচিত নয়। তাঁকে অবশ্যই জীবনকে উপভোগ করতে পারতে হবে। আর জীবন হলো আর্ট, সংগীত, নাটক এবং সর্বোপরি মানুষ।’
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রকৌশলীদের একজন বলছেন আর্টের কথা, সংগীতের কথা, নাটকের কথা, আর সবার ওপরে বলছেন মানুষের কথা।
আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে ছুটছি ইঁদুরদৌড়ে। প্লে গ্রুপে ভর্তি করানোর জন্যও কোচিং, অভিভাবকেরা গলদঘর্ম, এ কোচিং থেকে ও কোচিং। জিপিএ-৫ পেতেই হবে। শুনেছি, বাচ্চারা আর ইংরেজি গল্প বা কবিতা পড়ে না, ওয়ার্ডওয়ার্থের ড্যাফোডিল কিংবা তলস্তয়ের থ্রি কোশ্চেনস আর তাদের পাঠ্যবইয়ে নেই, এখন সাহিত্য নয়, পড়তে হয় শুধু স্ট্রাকচার। সর্বনাশ। একটা কৌতুক প্রচলিত আছে। ‘তোমার বাবার নাম কী?’ ‘তিনটা নাম বলেন। আমি সঠিক নামটাতে টিক দিয়ে দিচ্ছি।’
আমার আববার কথা মনে পড়ছে। তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পড়াতেন শিশু মনোবিজ্ঞান। বাসায় আববা ঘুরঘুর করতেন আর বলতেন মনীষীদের উক্তি, শিশুকে প্রকৃতির বুকে ছেড়ে দাও। প্রকৃতিই শিশুকে শিক্ষা দেবে।
আমরা তা-ই করেছি। বর্ষাবিষ্ফোরিত নদীতে গিয়ে কখন যে সাঁতার শিখেছি, জানিও না। একদিন নৌকা বেয়ে পাঁচ-ছয় বছর বয়সে আমার এক সমবয়সী বন্ধুসমেত চলে গিয়েছিলাম করতোয়া নদীর ওই পারে, নদীর তীরে পড়ে আছে একটা ডিম, হাঁস পেড়ে রেখেছে, সেই ডিম এনে...
আব্বার ছিল ডায়াবেটিস। তিনি মিষ্টি খেতে পারতেন না। আমাদের ভাইবোনদের নিয়ে যেতেন রংপুরের বড় মিষ্টির দোকানটায়। অর্ডার দিতেন, বড় বড় মিষ্টি দাও। তখন ছয় টাকা করে ইয়া বড় মিষ্টি পাওয়া যেত। আমরা মিষ্টি খাচ্ছি। আববা দেখতেন। আববার মিষ্টি খাওয়া হয়ে যেত।
আববা মারা গেছেন, আমি যখন বুয়েটে ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। আববার মৃত্যুর কথা ভেবে আমি এখনো কাঁদি। তিনি ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলেন, আমার ছেলেমেয়েদের কেউ মারতে পারবে না। আর ওরা যা করতে চায়, তা-ই করতে পারবে।
আববার পাঁচ ছেলেমেয়ে কেউই তো বখে যায়নি। তিনি বলতেন, অলসভাবে শুয়ে-বসে থেকো না। অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। বই পড়ো। শোনো, পৃথিবীতে কোনো খারাপ বই নেই।
আমরা একটা কাজ করতে যাচ্ছি। আজকের দিনটা খুবই একটা বিশেষ দিন আমার জন্য, আমাদের কারও কারও জন্য। আমরা আজ বাজারে দিলাম কিশোর আলো। কিশোরেরা একটু দৌড়ঝাঁপ করুক, বইপত্র পড়ুক, যা খুশি তাই করুক। শুধু জিপিএ-৫ পেলেই হয় না। জগৎটাকে বড় করে নিতে হয়। নিজের মনটাকে সুন্দর করতে হয়। আর কল্পনাকে বাড়তে দিতে হয়। স্বপ্ন দেখতে পারতে হয়।
কিশোর আলোয় আমরা শিশুদের স্বপ্নের সলতেয় অগ্নিসংযোগ করে দিতে চাই। আপনাদের শুভেচ্ছা, পরামর্শ আর অংশগ্রহণ চাই।
আনিসুল হক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×