somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

⌂ ভ্রমণ » দেশের প্রথম চা বাগান ( কোদালা চা বাগান ) পরিদর্শন সাথে আছে রাবার বাগানের অপূর্ব সংযোজন !

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ব্যস্তময় যান্ত্রিক জীবনের একপেশে ক্লান্তিময় মূর্হুতকে সবুঝের রঙে রাঙানোর জন্য নিরিবিলি মনোরম পরিবেশে এক আকর্ষনীয় পর্যটন স্পট হল চট্টগ্রামে রাঙ্গুনীয়ার কোদালা ইউনিয়নে অবস্থিত যুবতী লুসাই কন্যার বাহুডোরে আবৃত কোদালা চা বাগান। সবুঝ সমতল আর উঁচু-নিচু ঢেউ ঢেউ পাহাড়ঘেরা সবুজের সঙ্গে শুভ্র সকালে কিংবা পড়ন্ত বেলায় মেঘের লুকোচুরির অপূর্ব সন্ধির দৃশ্য মুগ্ধ করবে নিঃসন্দেহে আপনাকে। চা বাগানের পাশ ঘেঁষে বয়ে চলা যুবতী লুসাই কন্যার রূপ, কর্ণফুলীর মন মাতানো ঢেউ আপনার জমে থাকা সব ক্লান্তি দূর করে মুহূর্তে সতেজ করে দেবে বাজি ধরে বলতে পারি।


এছাড়াও চা বাগানের দৃষ্টিনন্দন ব্রিটিশ বাংলো, গাছের ডালে ডালে বসে থাকা বানর ও হনুমান এর উন্মুক্ত বিচরন, বাহারি রকম পাখির কিচিরমিচির শব্দ আর চা শ্রমিকদের প্রতিদিনকার ক্লান্তিহীন কর্মযজ্ঞ বিনোদনপ্রেমিকদের স্বপ্ন দেখাবে রূপকথার অজানা এক রাজ্যের। দূষনমুক্ত নির্মল পরিবেশে আপনি পাবেন ভিন্নরকম আনন্দের ছোঁয়া।


রাঙ্গুনিয়া কোদালা চা বাগান দেশের শীর্ষ চা-বাগান গুলোর মধ্যে অন্যতম। উৎপাদন ছাড়াও চা বাগানটি ইতিমধ্যেই বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে পর্যটন র্স্পট হিসেবে। চা বাগানে প্রতি দিন ছুটে আসছে শত শত ভ্রমন পিপাসু। চা বাগানে পর্যটকদের ভীড়ে মুখরিত হয়ে উঠছে সার্বিক পরিবেশ। বাগানের আর্কষনীয় মনোরম দৃশ্য ধারণ করতে ছুটে আসছে বিভিন্ন ইলেকট্রন্ক্সি চ্যানেল , টেলি ফিল্ম. চলচ্চিত্র নির্মাতারা । সুটিং হচ্ছে নানা ছবি, টেলিফিল্মের। দলবেঁধে বিনোদন পিপাসুরা ছুটে আসছে এই স্পটে। কোদালা চা বাগান এখন ব্যস্তময় এলাকায় পরিণত হয়েছে।


■ বাগান থেকে তুলে নিয়ে আসা সবুঝ চা পাতা ■


কোদালা চা বাগানের পেছনে ফিরে দেখা :
১৯৭৬ সালে তৎকালীন সরকার ব্যক্তি মালিকানায় লিজ দিয়ে চা-বাগানগুলো ছেড়ে দেন। এর মধ্যে প্লান্টাস বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে কোদালা চা-বাগান পরিচালনা করে আসছে। লোকসানের কবলে ১৯৯৩ সালে প্লান্টাস বাংলাদেশ থেকে আনোয়ার গ্রুফ চা-বাগানটি লিজ নিয়ে নেন। আনোয়ার গ্রুপও লাভের মুখ দেখতে না পাওয়ায় ২০০৪ সালে ৭ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে ব্র্র্যাক কোদালা চা বাগানের লিজ নেন। বানিজ্য মন্ত্রনালয়ের অধীনে বাংলাদেশ চা বোর্ডের আওতায় কোদালা চা বাগান সরকার থেকে লিজ গ্রহণ করে ব্রাক ২৪শ ৮৫ একর জায়গা চা বাগানের জন্য। বর্তমানে ব্র্যাক বাংলাদেশ ৮শ ৭২ একর জায়গায় চা চাষ ৯শ একর জমিতে রাবার চাষ করেছেন। এছাড়া চা ও রাবার বাগানের পাশাপাশি নানা প্রজাতির গাছের চারা বনায়ন করা হচ্ছে। এছাড়াও আগর চাষ নিম ও মুলি বাঁশের চাষও করা হচ্ছে।


■ আহ! কত শান্তি চারপাশে সবুঝ আর সবুঝ ■


■ অটোমেটিক মেশিনে পাতার ঘাঁট চলে আসতেছে পরবর্তী ধাপে প্রত্রিয়াকরণের জন্য ■


প্লান্টাস বাংলাদেশ ও আনোয়ার গ্রুপ কোদালা চা বাগান করে লাভের মুখ না দেখলেও ব্র্যাক কোদালা চা বাগান লিজ নেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার মাধ্যমে দক্ষ পরিচালনায় চা বাগানটি এখন ব্র্য্রাকের লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। দেশের চা শিল্পে কোদালা চা বাগানের চা গুনগত মান ও শীর্ষ চা উৎপাদনকারী প্রতিষ্টানে দেশে এবং বিদেশে ব্যাপক সুনাম অর্জন করে।


উল্লেখ্য, এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে বৃটিশরা কর্নফুলী নদী দিয়ে আসা যাওয়ার সময় কোদালা চা বাগানের বির্স্তীণ জায়গা দেখে চা বাগান করার উদ্যোগ গ্রহণ করে সেই থেকে কোদালা চা বাগান গড়ে উঠে। ১৮৯৪ সালে চা বাগনটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। দেশের চা বাগানের মধ্যে কোদালা চা বাগানই সর্ব প্রথম।





■ যেভাবে আসবেন কোদালা চা বাগানে:
সড়ক পথে ও নদীপথে কোদালা চা বাগানে আসা যায়। সড়ক পথে আসতে হলে চট্টগ্রাম শহর থেকে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে বিরতিহীন বাসে করে সরফভাটা গোডাউন নেমে সিএনজি যোগে সরাসরি কোদালা চা বাগানে আসা যায়। চট্টগ্রাম শহর থেকে চা বাগানের দুরত্ব ৩০ কিলোমিটার। প্রাইভেট গাড়ী যোগে চা বাগানে অনায়সে আসা যায়।
অথবা
চট্টগ্রাম শহর, বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে বিরতিহীন বাসে করে চন্দ্রঘোনা বাজার নামতে হবে। বাজারে নেমে রাস্তার দক্ষিন পাশে (হাতের ডানে) রাস্তা দিয়ে একটু সামনে গেলে নদী পার হযয়ার জন্য ফেরি ও নৌকা পাওয়া যাবে। নদী পার হয়ে আপনি সিএনজি করে সোজা কোদাালা চা বাগানে চলে যেতে পারবেন তবে এই পথে যেতে সময় বেশি লাগে।

অথবা
নদী পথে আসতে হলে চট্টগ্রাম শহর থেকে বিরতিহীন বাসে মরিয়ম নগর চৌমুহনী নেমে রিক্সা অথবা সিএনজি যোগে কর্ণফুলি পাড়ে আসতে হয়। কর্ণফুলি নদী পাড় হলেই চোখে পড়বে সুদৃশ্য কোদালা চা বাগান। অগ্রিম অনুমতি ছাড়াই মন চাইলে যখন তখন চলে আসতে পারেন কোদালা চা বাগান। থাকা খাওয়া নিজ দায়িত্বে নিজেকে গড়ে নিতে হবে। এই পথে কোদালা চা-বাগনে আসা-যাওয়ার সময় কম লাগে এবং যাতায়াত খরচ ও কম হয় তাই আমি মনে করি এই পথে যাওয়া টা উত্তম।



■ যেগুলো নিতে ভুলবেন্না :
ক্যামেরা, নিজস্ব গাড়ী, হালকা খাবার, বিশুদ্ধ পানি।


■ যে সুবিধাগুলো পাবেন :
জার্নি শেষে কোদালা চা বাগানে আসার পর তাদের নিজস্ব বাংলোতে রিফ্রেশ ও বিশ্রাম নেয়ার হওয়ার সুযোগ। ক্লান্তি কাটাতে চা বাগান থেকে তোলা সতেজ পাতার চা।



■ বাগান থেকে চাপাতা তুলে আনার পর রাখা হয় এই ঘরের মধ্যে ■



পিকনিক স্পট: চা বাগানে ভ্রমনের পাশাপাশি নদী পাড়ে রান্না করে খাওয়ার অপূর্ব সুযোগ।


■ প্রাকৃতিভাবে উৎপাদিত রাবার গাছ থেকে রাবার শুকানো হচ্ছে ■


চা বাগানে নতুন সংযোজন : পর্যটকদের আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে কোদালা চা বাগানে বিশাল জায়গা জুড়ে দৃষ্টিনন্দন কৃত্রিম লেক্। লেকে নৌকায় চড়ে পর্যটকরা চা বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।


রাবার গাছ থেকে রাবার গুলো কাঠাঁল গাছের কষের মতো সাদা সাদা হয় আর তা বাটিতে করে নিয়ে এসে এই ছাঁচে জমানো হয়। ঠিক যেন শীতকালে খেজুর গাছের রস যে ভাবে সংগ্রহ করা হয় একই রকম প্রক্রিয়ায় রাবার গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হয়।


■ রাবার প্রক্রিয়াকরনের মেশিন ■


■ রাবার গাছ ■


■ রাবার গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হচ্ছে রাবার তৈরি করার জন্য ■


সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০২১ বিকাল ৩:৫৩
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×