প্রিয়তমা,
অবাক হইতেছ?অাজও কেন প্রিয়তমা বলিলাম। পত্রের শুরুতে সম্বোধন করিতে হয় বলিয়াই প্রিয়তমা শব্দখানা উপরে স্থান করিয়া লইলো। যাহা হোক; কেমন আছো? বোধ করি ভালোই আছ। সময়ের স্রোতে চলিতে চলিতে আজ প্রায় পাঁচ বছর গত হইলো। মনে পড়ে? আজ হইতে পাঁচ বছর পূর্বে তুমি সু্খের নেশায় মত্ত হইয়া আমার হৃদয়কে পদদলিত করিয়া অন্য কাহারো হাত ধরিয়া পাড়ি জমিয়েছিলে। একবার পিছু ফিরিয়া তাকাইবারও বোধ করো নাই সেইদিন। কি করিয়া পিছু ফিরিবে? তুমি যে রঙীন স্বপ্নে বিভোর ছিলে। জানো? সেইদিন খুব কস্ট পাইয়াছিলাম। শরবিদ্ধ আহত পাখির ন্যায় ডানা ঝাপটাইয়াছিলাম। চিৎকার করিয়া কাদিয়াছিলাম। আমার গগনগ্রাসী কান্না আকাশ ভেদ করিলেও তোমার কান পর্যন্ত পৌছাইতে ব্যার্থ হইয়াছিল। কি করিয়াই বা পৌছাইবে তোমার সমস্ত ইন্দ্রিয় তো মহান স্রস্টা সেইদিন বন্ধ করিয়া দিয়াছিল।
কি এখন মনে পড়িয়াছে? সেইদিন তুমি আমার সহিত কত নিষ্ঠুর নির্মম নির্দয় ব্যবহার করিয়াছিলে। তখন আমার মনে হইতেছিল আমি যে তোমাকে চিনি, যে তোমাকে এতকাল ধরিয়া ভালোবাসিয়াছি ; এই তুমি যেন সেই তুমি নও। আমি সেইদিন বধির হইয়া গিয়াছিলাম। আমার ইন্দ্রিয়গুলো যেন নিস্ক্রিয় হইয়া গিয়াছিল। অবশ্য এ নিস্ক্রিয়তা যেন চিরকালের তরে হইলেই ভালো হইতো। মনে মনে সেইদিন হইতেই নারী জাতির প্রতি ঘৃনা ধরিয়া গিয়াছিল। কিন্ত সেই ঘৃনাটা চিরস্থায়ী করিতে পারি নাই কারন, আমার গর্ভধারীনীও একজন নারী।
তুমি যেইদিন চলিয়া গেলে। সেইদিন হইতেই আমার আকাশটা যেন কালো মেঘে ছাইয়া গিয়াছিলো। আফিমের উটকো গন্ধ সেইদিন আমাকে খুব আকৃষ্ট করিয়াছিলো। ক্রমেই যেন এক অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হইয়াছিলাম। সারাবেলা যেন আমার কাটিত নেশার ঘোরে। লেখাপড়াটাও উচ্ছন্নে গেল। এক অনিশ্চিত জীবনের দখলদার হইয়া গেলাম। তোমায় নিয়া নিয়া স্মৃতিচারণ করিতে করিতেই সময়রা আমায় বুড়ো আঙ্গুল দেখাইয়া চলিয়া গেল।
মনে আছে, তোমাকে যেইদিন ভালোবাসার মালা পড়াতে গিয়াছিলাম ; যদিও আমি খুব সাধারন তবুও কোন নারী আমার হৃদয়কে কখনো স্পর্শ করিতে পারে নাই। তুমিই প্রথম কোন নারী যে আমার হৃদয়ে দাগ কাটিয়াছো তবে তাহার ভবিষ্যত ক্ষত সৃষ্টি করিবে তাহা জানিলে কখনো তোমাকে ভালোবাসার মালা পড়াতে যাইতাম না। তোমার পাগলকরা হাসি আমাকে বরাবরই আকর্ষিত করিত। যদিও ক্ষনকাল পরে জানিলাম ছলনাময়ীদের হাসি নাকি সব সময়ই মোহনীয় হয়। যাহাই হোক; তোমার সম্মুখে ভালোবাসা নামক মামু বাড়ীর আবদার নিয়া হাজির হইবার কথাটা খুব মনে পড়িতেছে। খুব ভীত-সন্ত্রস্ত হইয়া তোমার সম্মুখে চক্ষু নিচু করিয়া কয়েকটি রক্তিম তাজা গোলাপ লইয়া তোমায় প্রেম নিবেদন করিয়া তোমার চোখের পলকে উধাও হইয়াছিলাম। তাহার পরে দীর্ঘ সাতদিনে তুমি আমাকে খুজিয়া পাইলেনা। হঠাত একদিন কলেজ যাবার পথে তোমার সাথে দেখা। খানিক এড়াইয়া যাইবার চেষ্টা করিলেও তুমি ডাকিয়া আমার সাইকেল থামাইলে। তাহার পরে সাইকেলটার খুব প্রসংশা করিলে। আমার সহিত সাইকেলে চড়িয়া কলেজ যাইবার ইচ্ছা পোষণ করিলে। যাহা বলিলে তাহাই করিলে। কিছুদুর যাইতেই সাইকেল থেকে নামিয়া আমাকে নামাইয়া গালে "থাস" করিয়া থাপ্পর মারিয়া বলিলে "সেইদিন পালাইলে কেন? এ থাপ্পরটা তো সেইদিনই মারিতে চাহিয়াছি"। সময় কাটিয়া গেল। হঠাত রাত ১২ টার দিকে একটা ছোট্ট এস এম এস। অতঃপর আমাদের ভালোবাসার কাব্য রচনা।হাহাহাহ!!! কি হইবে সেইসব কথা মনে করিয়া। সেইসব তো এখন কেবল ধূসর স্মৃতি।
শুনিয়াছি, সেইদিন তুমি যে সুখের আশায় আমাকে ত্যাগ করিয়াছিলে সে সুখও নাকি তোমাকে ফাকি দিয়াছে। কি করবে বলো। আমার মত তুমিও যে পোড়া কপাল নিয়া জন্মাইয়াছিলে। দুখ করোনা সবার কপালে তো আর সুখ নামক জিনিসটা সহেনা। এই আমাকে দেখ পারিয়াছিলাম কি সুখি হইতে?
বিশ্বাস করো, সেইদিন আমি খুব কস্ট পাইয়াছিলাম। কিন্ত ভ্রুনাক্ষরেও চাইনাই তোমার সাজানো সংসারে কোন অশুভ ছায়া পরুক। তাইতো তোমাদের হইতে আমাকে লুকাইয়া রাখিয়াছিলাম। তোমার কোন উপর আমার কোন অভিযোগ অভিমান নাই। কি করিয়াই বা থাকিবে? অভিমান বা অভিযোগ করিতে হইলে তো অধিকার থাকিতে হয়। আমি তো তাহা হারাইয়া ফেলিয়াছি, না! হারাইনাই তাহা তুমি কাড়িয়া লইয়াছিলে। হঠাত একদিন বাসে উঠতেই প্রথম সিটটায় অনাকাংখিতভাবে অনিচ্ছা সত্যেয় তোমাকে নয় তোমাদের দেখিয়াছিলাম। তোমার চোখে চোখ পড়তেই যেন আমার বুকের মধ্যে যেন শেল বিধিয়া গেল। শরীরটা কেমন যেন একটা ঝাকুনী দিয়াছিলো। যদিও নেশায় বুদ হওয়া আমি, মুহুর্তে নেশা কাটিয়া গেল। পরক্ষনেই তুমি চোখ সরাইয়া নিলে। সেইবারের সেইটাই ছিলো আমাদের শেষ দেখা।
হুম! আমি? বেশ চলছে। মাথার উপর ছায়া যিনি আমার পরম পূজনীয় পিতা তাহার আপ্রান প্রচেষ্টায় স্বাভাবিক হয়ে লেখাপড়াটা শুরু করিয়াছিলাম। ক্ষনকাল পরে তিনিও আমাদিগকে ছাড়িয়া পাড়ি জমান ঐ না ফেরার দেশে। তারপর থেকেই শুরু হইলো আমার জীবনযুদ্ধ।ছোট একটা চাকুরী করিতেছি এখন। মা ছোট ভাই সংসার এইসব নিয়া বেশ কাটিতেছে।
বিয়ে? না! এখনো করি নাই। পণ করিয়াছিলাম কখনো কোন নারীর দিকে আর কখনো দৃষ্টিপাত করিবোনা। কিন্ত আমার সেই দম্ভ কি করিয়া যেন চূর্ন করিয়া এক অষ্টাদশীর রাজকন্যা আমার ছোট্ট হৃদয়ে তাহার জন্য জায়গা করিয়া লইলো। আমি টেরও পাইনি। কি করিয়া বা পাই বলো। নারীদের তো স্বয়ং ভগবানও বুঝিতে পারেন নাই। আমিতো এক সামান্য মানবমাত্র। হুম! সে অষ্টাদশীর রাজকন্যাকে ভালোবাসি। তবে তোমাকে যতটা ভালোবাসিয়াছিলাম ততটা নয় তাহা হইতে যোযন কোটি গুন বেশী ভালোবাসি। হাহাহাহা!! কি ভাবছো? কেন তাহাকে এতটা ভালোবাসি? শুনিবে আমার সেই সহস্রযুগের সাধনায় পাওয়া অষ্টাদশী রাজকন্যার কথা? না! তাহার বর্ননা করিবোনা কারন, তাহার কথা বর্ননা করিতে গেলে হাজারো শব্দের মিলনে সুন্দর কিছু পংক্তির দরকার। যাহা আমার অনুর্বর মস্তিস্কে কোনক্রমেই আসিতেছে না। যদি কখনো সাহিত্যিক বা কবি হইতে পারি তবে আমার সেই রাজরানীরর কথা বর্ননা করিবো। তাহার জন্য না হয় ক্ষনকাল অপেক্ষা করো। তবে শোনো তাহার হাসিতে কোন ছলনা নাই, হৃদয়ে নাই কোনো কপোটতা। আমি স্বার্থপর তাইতো তাহার নিস্পাপ হৃদয়ের সহিত মিলন ঘটাইয়া শুদ্ধ হইবার চেষ্টা করিতেছি।
আজ আর লিখবোনা। মস্তিস্কের কালি ক্রমশ শুকাইয়া যাইতেছে। লিখিবার শক্তিও হ্রাস পাইয়াছে। তবে তাহা পুনরিজ্জিবিত করিবার প্রয়াস করিতেছি।
জানিনা কোথায় কেমন আছ? তবে বোধ করি ভালোই আছ, ভালোই থাকিবে। আর হ্যা আমাদের জন্য আশির্বাদ করিও। তোমাকে নিয়া যে সুখের নীড় রচনা করিতে চাহিয়াছিলাম তাহা অপেক্ষা যোযনকোটি গুন সুখের নীড় গড়িতে পারি আমার অষ্টাদশীকে নিয়া। বিদায় সব সময় বেদনাময় হয় তবে তোম হইতে বিদায় ততটা বেদনায় বিদীর্ন হয়না। জানিনা কেন। যাহাই হোক। ভালো থাকো সবসময়। সেইদিনের মত আজও এই আশির্বাদ।
ইতি,
সেই আমি।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২২