somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার ভ্রমে বনলতা

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সেইদিন পড়ার টেবিলে বসিয়া ভাবিতেছিলাম "বনলতাকে" নিয়া একটা কবিতা লিখিবো। ক্ষনকাল পরে ভাবিলাম কবিতা লিখিয়া এখন আর কি হইবে? এখন কি আর আমার "বনলতা" আমার কবিতা দেখিতে পাইবে? আমার কবিতা কি তাহার হৃদয় স্পর্শ করিবে? নাহ! করিবেনা। হয়তো এখন আমাকে নিছক পাগল বলিয়াই গণ্য করিবে আর মুখ টিপিয়া হাসিবে। যেই বিষাক্ত হাসিতে আমি খুন হইয়াছিলাম। কি করিবো? কিছুদিন ধরিয়া মনটাকে কিছুতেই স্থির করিতে পারিতেছিনা। মনে হয় যেন মৃত্যুর দুয়ারে ঝাপাইয়া পরি। অবশ্য সে চেস্টা কি আর আর করি নাই? যাহোক আমার সকল ইচ্ছার কথা প্রকাশ করিলে সভ্যতা আমাকে উন্মাদ উপাধি দান করিবে। গত ৪-৫ দিন ধরিয়া আফিমের নেশায় বুদ হইয়াছিলাম। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষতের সৃষ্টি করিয়াছি। এটাও বোধ করি পাগলের কাজ। বিশ্বাস করো তবুও তোমাকে কিঞ্চিত ভুলিতে পারি নাই। তবে, আমি তোমাকে ভুলিতে চাই, খুব করিয়া ভুলিতে চাই। যেন কিছুতেই আমার হৃদয়ে তুমি প্রবেশ করিতে না পারো। ভাবিতেছি বনলতাকে আজ একখানা পত্র লিখিবো। কিন্ত, লিখিয়াই বা কি হইবে? আমিতো বনলতার ঠিকানাও জানিনা। ভাবিয়া নিলাম কোন এক কালবৈশাখীর ঝড়ো বাতাসে পত্রখানা উড়াইয়া দিবো অথবা কোন এক গোধুলী বিকেলে কাগজের নৌকায় বোঝা করিয়া জলে ভাসাইয়া দিবো। তাই ভাবিয়াই বনলতাকে চিঠি লেখা শুরু করিয়াছি।
প্রিয়তম "বনো",
লিখিবোনা লিখিবোনা করিয়া নিজের মধ্যে এক চরম দুঃসাহস লইয়া তোমাকে আজ পুনঃবার লিখিতেছি। বোধ করি কুশলেই আছো। কারন ভাগ্যবিধাতা স্বার্থপর, প্রতারক, বেইমানদের ললাটে সুখের রেখা টানিয়া পৃথিবীতে পাঠাইয়াছেন। তাই আর জানিতে চাইবোনা কেমন আছো। তবে বিদায়বেলা তোমার দু'ফোটা অশ্রুও আমায় দিলেনা সে কথাটা আমাকে প্রচন্ডভাবে ভাবিয়ে তোলে। ওহ! হ্যা, যেই হেতু নিয়া তোমাকে এত ঘটা করিয়া লেখা। দীর্ঘ ৪ টা বছর আমাকে জ্বলিয়েছ- কত আহ্লাদ, আবদার, আর অবুঝ ভালোবাসা (যদিও তোমার চাতুরতা)। এমনকি বাথরুমে গেলেও মুঠোফোনের এই প্রান্তে আমাকে অবস্থান করিতে হইতো। কখনো গভীর রাতে আমার কাচা ঘুম আবার কখনোবা কাকডাকা ভোরে ইথারে ভাসিয়া আসা তোমার কন্ঠ আমাকে জাগাইয়া দিতো। বনলতা বিশ্বাস করো কখনো রাগ করিতে পারিনাই তোমার উপর। খুব জ্বালিয়েছ ৪ টা বছর। কিন্ত এখন আর তোমার জ্বালাতন আর ভালো লাগেনা। হাটিতে-বসিতে, নিদ্রায়-অনিদ্রায় সব জায়গায় কেবল তোমাকেই অনুভব করি। আজ তুমি আমার নাই এ কথাটা কেন যেন কিছুতেই মানিতে পারিতেছিনা। আচ্ছা আমাকে যদি একা ফেলাইয়া চলিয়া যাইবে তাহা হইলে আমার হৃদয় হইতেও প্রস্থান করিতে। কেন হৃদয় হইতে এখনও প্রস্থান করিতেছনা? সর্বদা আমার মস্তিস্কে কেন তোমার বিচরণ? চিঠি লিখিবার মধ্যে হঠাত জানালার পর্দাটা বাতাসের আঘাতে পতাকার মত পতপত শব্দ করিতেছে। পিছন ফিরিয়া তাকাইতেই দেখি প্লাস্টার খসা পুরোনো দালানের ভাঙ্গা ভেন্টিলেটরের ফাকা হইতে একফালি রোদ আলো হইয়া রুমে প্রবেশ করিলো। খানিক বিস্মিত হইলাম। এমন আলো কখনো দেখিয়াছি বলিয়া আমার স্মৃতিতে নাই। মনে হইতেছে নাগমনির জ্যোতি আমার সম্মুখ হইতে রুমের দরজা দিয়া বাহির হইবার সময় গায়ে হালকা উষ্ণ বাতাসের ঝাপটা দিয়া গেলো। অবাক হইতে অবাকতর হইয়া অপলক দৃষ্টিতে চাহিয়া রহিয়াছি। আসলে কি এই জিনিসটা? পাশের ঘরেই মা। তাকে ডাকিবার সিদ্ধান্ত নিতেও যেন বিব্রত হইলাম। কাল বিলম্ব না করিয়া আমিও আলোটার পেছনে ছুটিলাম। ঘর হইতে বারান্দায় বাহির হইতেই আমি স্তব্ধ হইয়া গেলাম। পায়ের তলা হইতে শরীরের প্রতিটা কোষ যেন শিরশিরাইয়া উঠিতে লাগিলো। হৃদপিন্ডের গতি যেন হাজার গুন বৃদ্ধি পাইলো। শরীরের প্রতিটা শিরা-উপশিরায় রক্তপ্রবাহ যেন প্রবল হইয়া উঠিয়াছে। মস্তিস্কের মধ্যে কেমন যেন একটা ভো ভো আওয়াজ। কি করিবো বুঝিতে পারিতেছিনা। আনন্দিত হইবো নাকি চিৎকার করিয়া কাদিয়া উঠিবো। কারন চোখের সম্মুখে দাড়িয়ে আছে স্বয়ং বনলতা। আমি নির্বাক। হঠাতই বনলতা বলিয়া উঠিলো
-কেমন আছো?
-নিজেকে কেন এত কস্ট দিতেছশ
-শরীরে কেন এত ক্ষতের সৃস্টি করিতেছ?
-আমিতো স্বার্থপর, প্রতারক, বেইমান তোমার বিশ্বাসকেতো আমি টুকরো টুকরা করিয়াছি। দয়া করে আমায় মুক্তি দাও, তুমিও মুক্ত হয়ে যাও এই মায়ার বাধন হইতে।
এবার আমি আর স্থির থাকিতে পারিলাম না। গগনগ্রাসী চিতকার দিয়া কাদিতে আরম্ভ করিলাম। মা ঘর হইতে বাহির হইয়া আমার পেছনে আসিয়া জানিতে চাহিলো কি হইয়াছে? আমি সজোরে মাকে জড়াইয়া ধরিলাম আর বলিলাম মা, মা আমার বনলতা আসিয়াছে।
-কোথায় বনলতা?
আমি যখন অঙ্গুলি নির্দেশনা দিয়া বলিতে যাইবো "এইতো আমার বনলতা" তখনই অবাক হইলাম সেখানে আমার বনলতা নাই।
মা বলিলো। বাবা বনলতা আর তোর নাই। এটা স্বীকার করিয়া নে।
আমাদের সম্পর্কটা ৪ বছরের। সেই ২০১৩ এর দিকের শুরুটা ছিলো। কত ভালোবাসা, আহ্লাদ, আবদারে সব সময় মাতিয়া থাকিতাম। আমার বন্ধুরা সব সময় কত কি বলিতো। বনলতাই নাকি আমার ধ্বংসের কারন হইবে। যে বনলতাকে আমি অন্ধের মত ভালোবাসি সেই বনলতাই নাকি একদিন আমাকে অন্ধ প্রমান করিবে। কিন্ত আমরাতো জানিতাম দুজনের ধর্মটা পৃথক হইলেও একে অপরকে কতটা ভালোবাসিতাম। এক মুহুর্ত আমাকে ছাড়া থাকিতে পারিতোনা আমার বনলতা। নাহ! পরের দৃশ্যগুলো আর ভাবিতে পারিতেছিনা। এইতো মাস সাতেক আগের কথা। কি কান্নাটাই না কাদিয়াছিলো। অনেক বুঝাইয়া কারনটা জানিতে পারিয়া মনে হইতেছিলো ৩৩ হাজার ভোল্টের বৈদ্যুতিক শক খাইয়াছি। (কারনগুলো না হয় নাই বলিলাম, বলিবার কিঞ্চিত প্রবৃত্তিও নাই হৃদয়ে)। জোর করিয়া ওকে বলিলাম সব ভুলিয়া যাও। আমিতো আছি। তোমাকে ঠিক আগের মতই ভালোবাসি। তারপরে মাস তিনেক ভালোই কাটাইয়াছিলাম হাসিয়া খেলিয়া।। কিন্ত শেষের মাসটা তাহার আসল চেহারা জ্বল জ্বল করিয়া জ্বলিয়া উঠিলো আমার সম্মুখে। ভালোবাসার আহুতি দেয়ার ক্ষণ উপস্থিত। দিনের পর দিন আমার ভালোবাসাকে পদপিস্ট করিতে আরম্ভ করিলো। যেদিন বনলতা আমার জীবন হইতে হারাইয়া যায় সেইদিন খুব আকুতি করিয়াছিলাম। চিতকার করিয়া কাদিয়াছিলাম। কিন্ত পাষানী বনলতার হৃদয় ভেদ করিতে ব্যর্থ আমার গগন গ্রাসী কান্না। আমি পাগল প্রায়। দিনের পর দিন যোগাযোগের কত প্রয়াসই না করিয়াছি। লক্ষবার মুঠোফোনে কল দিয়াছি কিন্ত ও প্রান্তে দু একবার কল ওয়েটিং থাকিলেও আমি কোন উত্তর পাইনাই। অতীত ভুলে গিয়াছে, বনলতা থেকে ক্রমশ অকৃতজ্ঞে রূপান্তরিত হইলো। তবে ভাগ্যবিধাতার দরবারে বিচার পাতিয়া রাখিয়াছি। অপেক্ষা কেবল এক কঠিন রায়ের।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ২:২৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটা গাছ কাঠ হলো, কার কী তাতে আসে গেলো!

লিখেছেন নয়ন বড়ুয়া, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:০৬



ছবিঃ একটি ফেসবুক পেইজ থেকে

একটা গাছ আমাকে যতটা আগলে রাখতে চাই, ভালো রাখতে চাই, আমি ততটা সেই গাছের জন্য কিছুই করতে পারিনা...
তাকে কেউ হত্যা করতে চাইলে বাঁধাও দিতে পারিনা...
অথচ... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×