somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নষ্ট সমাজ ব্যবস্থা ১ঃ ফুটবল, বাংলাদ্শে আর বাস্তবতা

০৫ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কাজী সালাউদ্দিন। একসময়ের সুপারষ্টার, আবাহনীর প্রতিটি সমর্থকের কাছে তিনি ছিলেন স্বপ্নের মতো একটি নাম। তিনি বাংলাদেশের ফুটবলের দায়িত্ব নেয়ার পর অনেক আশা করেছিল মানুষ। অথচ তার গত দশ বছরের দায়িত্বকালেই ফুটবলে সবচেয়ে বড় অধ:পতন হয়েছে বাংলাদেশের। ১৪৯ স্থান থেকে নামতে নামতে ১৯৭তম ধাপে নেমেছে বাংলাদেশ। চিন্তা করা যায় ফুটবল পাগল এই ১৬ কোটি লোকের দেশের উপরে আছে এখন কুক আইল্যান্ডস্, সিচেলিস, সেন্ট লুসিয়া, আমেরিকান সামোয়া, গুয়াম আর আরুবা-র এর মতো নাম না জানা পুচকে দেশ আর দ্বীপ!

মাঝে মাঝে ভাবি দোষটা কার? কাজী সালাউদ্দিনের একার নাকি পুরোপুরি জবাবদিহীহীন এক রাষ্ট্রব্যবস্থার?

বেশ কয়েক বছর আগেও, বাংলাদেশ ফুটবল র‍্যাংকিং এ ভারতের কাছাকাছি, এমনকি কয়েকবার ভারতকে টপকে গিয়েছিলো। যেই দল ১৯৯৬ সালে ছিলো ১১০ নম্বরে, অথচ আন্তর্জাতিক ম্যাচ না খেলতে খেলতে সাবেক সার্ক চ্যাম্পিয়ন একটি ফুটবল দল আজ একেবারে তলানিতে অবস্থান করছে, র‍্যাংকিং ২১১ দেশের মধ্যে ১৯৪। অপরদিকে ভারতের অবস্থান ৯৭। এই পার্থক্য চোখে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দেখায়, যথার্থ প্ল্যান থাকলে কি পর্যায়ে উন্নতি করা সম্ভব, আর না থাকলে কি পর্যায়ে অবনমনও সম্ভব।

বিগত কয়েক বছর ধরে ভারতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে "ইন্ডিয়ান সুপার লিগ" ফুটবল। কতটা দারুণভাবে তারা এই লিগ আয়োজনে সফল হয়েছে, সেটি না দেখলে বোঝানো যাবে না। ২০১৩ থেকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই টুর্নামেন্ট। সর্বশেষ লীগে খেলেছে ১০ টি দল, যার প্রতিটিতে ছিলো ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি, বেলজিয়াম, পর্তুগাল, ফ্রান্স, ইটালী থেকে শুরু করে বিশ্বের প্রায় সব নামিদামি ফুটবল দেশগুলোর খেলোয়াড়।শুধু নাইজেরিয়া আর ঘানা নিয়ে বসে থাকেনি। দর্শকরা দলে দলে ছুটে গিয়েছে মাঠে। দারুণ উন্মাদনা নিয়ে উপভোগ করেছে ফুটবল।

এই সবকিছু সম্ভব হয়েছে ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের পরিকল্পিত উদ্যোগ আর ভারতের সব নামীদামী শিল্পপতি ও সিনেমা জগতের তারকাদের বলিষ্ঠ অংশগ্রহণের কারনে। তারা জানে কোথায় কিভাবে অর্থ লগ্নি করতে হয়। বড় বড় প্রতিষ্ঠান স্পন্সর করায়, তাদের দেশের খেলাগুলো আজ উন্নতির শিখরে পৌছে যাচ্ছে। আর বিপরীতে আমরা ধরেই নিয়েছি হয়তো যে আমাদের দৌড় ঐ ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানির পতাকা পর্যন্তই। অন্য একটি দেশের পতাকা, শো অফ করার নামে, কে কত বড় কেক কাটলো, কে কত কিলোমিটার দীর্ঘ বানালো, সেটাতেই আমাদের দুধের সাধ ঘোলে মেটে। বাফুফে জেগে জেগে ঘুমাচ্ছে, না ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে জেগে আছে বড় জানতে ইচ্ছ করে !!!!!!!!!!

তিন লক্ষ মানুষের আইসল্যান্ড, যথার্থ পরিকল্পনায় খুঁজে পায় বিশ্বকাপে যাওয়ার পথ, রুখে দেয় পরাশক্তি আর্জেন্টিনার মতো দেশকে। অথচ বিশ কোটি মানুষের দেশ, যেখানে ঘরে ঘরে ফুটবল পাগল ভরপুর, তারা কিনা তলানির দিকে ডাবল সেন্চুরির লজ্জা ঠেকানোয় ব্যস্ত। সত্যিকার অর্থেই খেলাধুলার ক্ষেত্রে, আমাদের বাংলাদেশে সম্ভাবনার সবই আছে, বাস্তবায়নের কিছুই নেই। দেশ হয়তো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে, তবুও কোমড় থেকে পা পর্যন্ত এখনও তীব্র পরিসরে গাঁটের ব্যথা বিদ্যমান।

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) এর উন্নয়নের সিঁড়ির বাস্তবতা দেখুন..
ফিফার সদস্য দেশের সংখ্যা ২১১। আর Ranking এ আছে ২০৭ টি দেশ। বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৯৭। আর মাত্র তিনটি ধাপের অপেক্ষা! তিন ধাপ নিচে নামলেই Ranking এ ২০০ ছুঁয়ে ফেলবে বাংলাদেশ!
ফুটবলে বাংলাদেশের ২০০তম স্থান লাভের দিনটির জন্য হয়তো বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না। সেটা উদযাপনের আয়োজন নিয়েই বরং আমাদের ভাবা উচিত। 
২০১০ সাল থেকে অবনতি শুরু তা এখনও অব্যাহত আছে।
২০১০ সালে ১৪৯ তম
২০১১ সালে ১৫৭ তম
২০১২ সালে ১৬৮ তম
২০১৩ সালে ১৬৪ তম
২০১৪ সালে ১৬৪ তম
২০১৫ সালে ১৮২ তম
২০১৬ সালে ১৮৫ তম
২০১৭ সালে ১৯৭ তম
২০১৮ সালে ১৯৭ তম

বাফুফের বর্তমান সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন এবং তাঁর প্যানেল পর্ষদ গত দশ বছর ধরে দেখিয়েছেন কিভাবে কত দ্রুত নিচে নামা যায় এবং আর কিভাবে ফুটবল ধংস করে যায়!! সভাপতি হওয়ার পর  'ভিশন' ঘোষণা করে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, ২০২২ সালে বিশ্বকাপে খেলবে বাংলাদেশ। শুরু হয়েছে ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপ। ২০১৮ তে এসে দেখুন বাংলাদেশের অবস্থান..



Five Countries Close To Bangladesh Ranking
Countries Ranking
American Samoa 192
Cooks island 193
Bangladesh 194
Gibralter 195
Brunei 196

Ranking Of Other SAARC Countries
Countries FIFA Ranking
India 97
Afghanistan 145
Maldieves 150
Nepal 161
Bhutan 183
Sri Lanka 200

আমরা আছি ব্রাজিল,আর্জেন্টিনা নিয়ে। আমাদের নিজের দেশের কোনো নাম নিশানা নেই। বাংলাদেশ বিশ্বকাপ খেলবে এই মুহূর্তে আমার কাছে তা ফিউচার ইম্পসিবল টেন্‌স মনে হয়। ভাগ্যিস এই জাতি ব্রাজিল-আর্জেন্টিনায় বুঁদ হয়ে আছে নচেৎ বাফুফে কর্মকর্তাদের কপালে দুঃখ থাকত।

অনেক বাংলাদেশি ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা এই দেশ গুলি কোথায় তাও জানে না? মেসি, রোনালদো এবং নেইমারের হাউজ হোল্ডিং নাম কিন্তু কতজন বাংলাদেশের ফুটবলের অধিনায়ক কে জানে? কখন শেষ বাংলাদেশ সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছে? ১৭০ মিলিয়ন ক্রীড়াপ্রেমী জনসংখ্যার একটি দেশ অবশ্যই তার অতীতের গৌরব ফিরে পেতে পারে যদি শিকড়ের মধ্যে ফুটবলকে ছড়িয়ে দিতে পারার যথাযথ পরিকল্পনা করা হয়, প্রতিভা শিকারে সঠিকভাবে কাজ করা হয় এবং কাঁচা প্রতিভাগুলি আদর্শ অবস্থায় বিকশিত হয় এবং তাদের কে নিয়ে সত্যিকারেরে কাজ করা হয়।

১৯৮০ ও ১৯৯০ এর দশকে ঢাকার বাইরে জেলাগুলো বিশেষ করে কুমিল্লা, ফরিদপুর, বরিশাল, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, যশোর, সিলেট ও ​​চট্টগ্রামের খেলার মান অনেক বেশি উচ্চতায় ছিল বর্তমান বাংলাদেশ দলের তুলনায়। খেলোয়াড়রা যেমন স্লাহুদ্দিন, এনায়েত, নান্নু, মঞ্জু, শান্তু, আমালেশ, এন কাওকোবাদ, নওশার ছিলেন এশিয়ান স্টার। থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় আসার পর আমাদের ব্রাদারস ইউনিয়ন ও আবাহনী কেসি স্বাধীনতার পর খুব ভালোভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। আসলাম, স্লাম, বাদল রায়, মোনেম মুননা, শাব্বির, ওয়াসিম, মোশিন, বাউল প্রভৃতি খেলোয়াড়দের আবির্ভূত হয়। আবাহনী ও মোহামেডান মোহন বাগানের ও পূর্ববাংলের বিরুদ্ধে এত ভাল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। ব্রাদারস ইউনিয়ন ব্যাংকক ব্যাংক এবং থাইল্যান্ড রাজবাথী ক্লাবের সমান অংশে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। ণিজের চোখে ফুটবলে মালদ্বীপের বিরুদ্ধে ৭-১ ব্যবধানে জয়ী বাংলাদেশ দেখেছি। কিন্তু এই পরিস্থিতি এখন বিপরীত দিকে চলেছে। মালদ্বীপের মত ক্ষুদ্র দেশ ও বাংলাদেশের চেয়েও এগিয়ে। ১৯৯০ এর দশকের শেষ থেকে সেই যে অধ:পতন শুরুর হলো সেটা নামতে নামতে আজ কোথায় পৌছিয়েছে!

নিজের দেশ বিশ্বকাপে নেই এই দুঃখ ভোলার জন্য অনর্থক বিভিন্ন দেশকে সমর্থন যোগাতে যতগুলো ভিনদেশী পতাকা আকাশে উঠবে প্রত্যেকটা পতাকা ফুটবল কর্তাদের গালে একেকটা চপেটাঘাতের চিহ্ন হিসেবে তাদের গালে ফুটে থাকবে !!!!!!!!

সাংবাদিকতা ইতিহাসের নজিরবিহীন ভীতিকর পরিবেশ এবং বহুমুখী সেন্সরের এই রাজত্বেও প্রায় প্রত্যেকটি অপকর্মের নিউজ পড়লে ঐ একটি চেতনাবাজ দলের নেতা কর্মীদের নাম পদবী অবশ্যম্ভাবী ভাবে চলে আসে। না জানি স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মুক্ত গনতন্ত্র চর্চা হলে আরো কি বের হয়ে আসতো!  দ্বায়টা আসলে কার ? নিজেকে কি কখনো প্রশ্ণ করেছেন ? দ্বায়টা হলো পুরোপুরি জবাবদিহীহীন এক রাষ্ট্রব্যবস্থার। যেখানে লুটপাট করলে কেউ কিছু বলার নেই। কিছু হলেই রাজাকার খেতাব দিয়ে আপনাকে থামিয়ে দিবে। আর আছে নির্লজ্জ বেহায়া মিডিয়া যারা পুরো দেশ কে বিক্রি করে দিলেও আপনাকে কিছু জানাবে না!

সালাউদ্দিনরা তাই খাওয়া দাওয়া নিয়ে পড়ে আছে, কারন কোন জবাবদিহীতা নেই।

দিন গুনতে থাকুন কবে আমরা ডাবল সেন্চুরি করবো র‌্যাংকিংয়ে আর রাস্তায় রাস্তায় আওয়ামী লীগের জনসভা হবে আর প্রধান মন্ত্রী কে ফুলের মালা দিয়ে বরন করা হবে.............................


সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভ কামনা রইল।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত @ নীল আকাশ, জুলাই, ২০১৮
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:১৬
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×