somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ শবনম কাহিনী ১ - কুসুম কুসুম প্রেম (শেষ পর্ব)

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ৮:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



যারা এর আগের পর্ব পড়েন নি, তাদের সেটা আগে পড়ার জন্য অনুরোধ রইল।
আগের পর্ব এখানে পাবেনঃ Click This Link

পুলিশরা আসামি ধরার বা অ্যারেস্ট করার আগে জায়গাটা ভালো করে দেখে আসে যাতে ভবিষ্যতে কোন অ্যাকশনে যেতে সমস্যা না হয়। এটাকে রেকি করা বলে। আমি ঠিক রেকি না, তবে অনেকটা সে রকমই দোস্ত কে নিয়ে সেদিনই ঝিগাতলায় একটা বিশাল ট্যুর দিয়ে আসলাম। জিগার দোস্ত আমাকে বিশাল সাহায্য করলো। বিল্ডিং/বাসা কোনটা, কয় তলায় কোন দিকে থাকে, পারিবারিক অবস্থা কি, ভাই বোন কয়জন? মেয়ে কোন স্কুলে বা কলেজে পড়ত? বাপের পাত্তি কেমন? ইত্যাদি। তবে আসল কাজ টা হলো মেয়ের ডাক নামটা বের করা। এত দিন তো আমার ডার্লিং এর নামই জানতাম না। শবনম! আহা, কি সুন্দর নাম! যেমন চেহারা, তেমন নাম! মাশাল্লাহ! মনে মনে ভবিতব্য শ্বশুর সাহেব কে একটা বড় করে ধন্যবাদ দিলাম এত সুন্দর নাম রাখার জন্য। শবনম মনে হয় বাসায় নেই! চারপাশে এত ঘুরাঘুরি করলাম একবারও চেহারা দেখলাম না। তবে শবনমের মোবাইল নাম্বারটা কোন ভাবেই না যোগার করতে পারলাম না।

বাসায় এসে দেখি তখনও মনটা খুত খুত করছে। মেয়ের সাথে যোগাযোগ করবো কিভাবে? এটা কিছু হলো! হঠাৎ ফেসবুকের কথা মনে হলো। কিছু ইনফরমেশন তো অলরেডি জানি। শুরু হল ফেসবুক এর সার্চ অপশনের উপর অত্যাচার। টানা দুই দিন ফেসবুক ঘাটাঘাটি করে অবশেষে এই মেয়ের ফেসবুক আইডি উদ্ধার করে ফেললাম। মোবাইল নম্বর জানি না। জানলে অত কষ্ট করতাম না। ফেসবুকে ঢাকার ঝিগাতলায় যত মেয়ে আছে সব গুলির পেজে একবার করে ঢু মেরেছিলাম। ফেসবুকে খুঁজছিলাম, হঠাৎ দেখি এই মেয়ের ছবি। আহ, তাও আবার সেই পার্পল কালারের ড্রেস। কপালের নাম গোপাল! নিজের নামের বানান এখন হয়তো ভুল করতে পারি কিন্তু এই মেয়ের চেহারা ভুল করব না। অসম্ভব। শেষ নিশ্বাষ ছাড়ার আগ পর্যন্ত এই চেহারা আমি ভুল করবো না। ডাক নাম আগেই জানতাম। এবার ভালো নাম পেলাম। ইসরাত শবনম। প্রোফাইল নিক নাম ও শবনম। ভালো নামটাও পছন্দ হলো। কেমন যেন ইরানি ইরানি ভাব আছে! ইরানি মেয়েরা যেমন কিউট হয়, আমার শবনমও তেমনি কিউট!

ম্যাসান্জারে সাথে সাথেই ইনবক্স করলাম কোন রেপ্লাই আসে না। এটা কেমন কথা? মেয়ে কি আমাকে চিনতে পারেনি? সর্বনাশ! টানা ৭ দিন রাত ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকয়েস্ট পাঠাতেই থাকলাম, দেখি কতদিন ইগনোর করে থাকতে পারে? চিনবে না মানে? ফাজলামি নাকি? এই সেদিন বিয়ের প্রস্তাব দিলাম আর এত সহজে ভূলে যাবে, তাই হয় নাকি? আমি এত সহজে হাল ছাড়ছি না......

এক
শুক্রবার। আহ, ছুটির দিন। দুপুরে ভাত খেয়ে বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছি। আলসেমি লাগছে। সকালে উঠতেও দেরী হয়ে গেছে। সাধারণত ছুটির দিন গুলিতে আমি বাসায় থাকি। শুক্রবার হচ্ছে আমার এনার্জি রিকোভারী ডে। পারত পক্ষে আমি ঘর থেকেই বের হইনা। চোখটা একটু লেগে এসেছে ঠিক এই সময় মা সমন নিয়ে হাজির। কয়েকদিন আগে নাকি নিউ মার্কেটে বাসার নতুন পর্দা বানানোর অর্ডার দেয়া হয়েছে। আজকে ডেলিভারি দেবে। বাসায় পুরুষ মানুষ আমিই আছি। বাবা আর ছোট ভাই সারা মাসের বাজার করার জন্য বিহারিদের মুসলিম বাজারে গেছে। এখানে এটাই সব চেয়ে বড় বাজার। ফিরতে সময় লাগবে। মা কে না বলতে পারলাম না। চরম ফাঁকিবাজ আমি, বাসার কোন কাজই করি না। এটা না করে দিলে নির্ঘাত মা রাতের খাবার বন্ধ করে দিবে! নিতান্ত বাধ্য হয়ে কাপড় পালটে ঘর থেকে বের হলাম।

গাউছিয়ার উল্টা দিকের গেট দিয়ে ঢুকে আমি ডান দিকে সোজা হাটছি। কিছুদুর সামনে গেলে বাম দিকে একটা সর্টকাট রোড আছে পর্দার মার্কেটে ঢুকার। ছুটির দিন আর চাহিদা বেশি দেখে মনে হয় খাবার দোকান গুলি সামনে টেবিল পেতে দিয়েছে। প্রতিটা টেবিল লোকজনে ভর্তি। ভিড় পাশ কাটিয়ে কিছুটা সামনে এগিয়ে গেলাম। আরেকটু দুরেই সর্টকাট রোড। হঠাৎ সামনে তাকিয়ে আমার প্রায় হার্টফেইল করার উপক্রম! আমার কাছ থেকে দুই টেবিল সামনে আমার “নুর জেহান” বসে আছে। প্রথমে মনে করলাম ভুল দেখেছি! সারা দিন মাথার মধ্যে শবনম শবনম ঘুরে, এরকম ভূল তো হতেই পারে! খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। এক টেবিল দুরত্ব কমিয়ে আরো কাছে যেয়ে দেখে নিশ্চিত হলাম, নাহ ভূল দেখিনি। শবনম আর সাথে আরো ৩ টা মেয়ে একটা রাস্তার উপরে টেবিলে বসে আছে। ঘটনা কি? এ সময়ে এখানে কেন? ও, আচ্ছা, সামনে চটপটি আর ফুচকার বাটি রাখা। আমি দুরত্ব আরো কমিয়ে ওই টেবিলের প্রায় সামনে যেয়ে দাড়ালাম।

শবনম কেবল হাতে ফুচকা নিয়ে তাতে তেঁতুলের পানি ঢালছিল। মুখে দেবার জন্য মাথা উচু করতেই দেখে, একটু দূরে আমি হাসি মুখে ওর দিকে তাকিয়ে আছি। দুই তিন সেকেন্ড লাগলো আমাকে চিনতে। ওর মুখের এক্সপ্রেশনই বলে দিচ্ছে সেটা। হুম, যাক ভূলে যায়নি তাহলে! ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহন করেনি কেন? প্রথমে ডান হাত তুলে হাই ফাইভ দেখালাম। শবনম হতভম্ব। কয়েক পা হেটে সরাসরি সামনে এসে বললামঃ
-দূর থেকে দেখতে আপনার কষ্ট হচ্ছে, তাই কাছে চলে আসলাম। আমি আবার কারোও কষ্ট সহ্য করতে পারি না! তাছাড়া আমিও আপনাকে দেখছিলাম। এত দূর থেকে আপনাকে কতটুকুই বা দেখা যায় বলুন। তারপর কেমন আছেন? বাসার সবাই ভালো তো?

কথা গুলি বলে হাসি মুখে শবনমের দিকে তাকিয়ে আছি আমি। শবনম মনে হয় ইলেক্ট্রিক শক খেল আমার কথা শুনে। মাথা ঘুরিয়ে সাথের ৩ টা মেয়ের দিকে তাকাল। মেয়ে ৩ টাও অবাক হয়ে শবনমের দিকে তাকিয়ে আছে। ভাব গতি দেখে ৩ টাকেই বান্ধবী বলেই মনে হচ্ছে। সম বয়সি। এক সাথে ঘুরতে এসেছে। শবনম কে যা লাগছে না! ফাটাফাটি! মনে হচ্ছে আসমান থেকে একটা নীল পরীর ডানা কেটে দেয়ার পর সোজা নিউ মার্কেটে নেমে এসেছে। মেয়েটা অসহ্য রকমের সুন্দর, বেশিক্ষণ দেখলে বুকের ভিতরে সুনামি শুরু হয়ে যায়।
-আপনি আগে যে ড্রেস গুলি পড়ে আমার সাথে কথা বলেছিলেন তার চেয়েও আজকের ড্রেস টা সুন্দর। রোজ রোজ এত সুন্দর ড্রেস কোথায় পান আপনি?

এইবার শুরু হলো এ্যাকশন। শবনমের ৩ বান্ধবী প্রায় এক সাথে জিজ্ঞেস করলো, এই ছেলেটা কে? আহ, এটাই তো চাই। বল, শবনম বল, তোমার মুখ থেকেই শুনি আমি কে? দেখি তুমি আমাকে কিভাবে সবার সামনে মূল্যায়ন কর। শবনম অনেকক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থাকল। কি মনে করে সাথের তিন মেয়ের দিকে ফিরে ফিসফিস করে কি বলল, বুঝলাম না। চেয়ার থেকে উঠে আমার দিকে আবার ফিরল।
-আপনার সাথে আমি একা একটু কথা বলতে চাচ্ছি।

শবনম টেবিলের সামনে থেকে সড়ে দশ হাত দূরে যেয়ে দাড়াল। আমার সাথে কি কথা বলবে সেটা অন্য কারো সাথে শেয়ার করবে না। আমার করার কিছু নেই। হেঁটে যেয়ে ওর সামনে দাড়ালাম। শবনমের হাইট ভালো। মিনিমাম ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি হবেই। কি যে গর্জিয়াস লাগছে। মনে হচ্ছে একটা রাজকন্যা আমার সামনে দাড়িয়ে আছে! বড় করে একটা শ্বাস নিলাম।
-আপনার সমস্যা কি?
-আমার কোন সমস্যা নাই।
-আমাকে বিরক্ত করছেন কেন?
-কখন বিরক্ত করলাম? কাউকে পছন্দ করা কি বিরক্ত করা? আমি তো অতিশয় ভদ্র ভাবে আপনাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছি। একটা মেয়েকে কি বিয়ের প্রস্তাব দেয়া অপরাধ?
-কেন দিয়েছেন?
এটা কোন কথা হলো। ও বুঝে না কেন দিয়েছি?
-আপনাকে আমার খুবই পছন্দ হয়েছে সেজন্য।
-একবার দেখেই? আমার তো আপনাকে হয় নি।কি করবেন এখন?
-সেটা আমার ব্যর্থতা। আমি জানতে চাই কেন আমি ব্যর্থ? আমি আপনার সাথে কথা বলতে চাই। আমার সাথে কথা বলুন, নিশ্চয়ই আমি আপনার এই অনুভুতি পরিবর্তন করতে পারব।
-কি লাভ করে? আমি অলরেডি এনগেজড এবং আমি আমার বর্তমান সম্পর্ক নিয়ে খুবই হ্যাপি।
কি বলল এটা আমাকে ও? আমার হৃদ স্পন্দন থেমে গেল। কি শুনলাম এটা আমি? আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছি না।
-কিসের এনগেজড? কার সাথে এনগেজড? কি যা তা বলছেন এসব?
-আমার অ্যাফেয়ারের কথা বলছি। আমি গত সাত মাস ধরে একজনের সাথে এনগেজড।
-এটা হতে পারে না? শবনম আপনি মিথ্যা কথা বলছেন? বলুন আপনি মিথ্যা কথা বলছেন?
-আপনি পাগলের মতো আচরন করছেন। আপনি শান্ত আর স্বাভাবিক হন। আমি শুধু শুধু মিথ্যা কথা কেন বলব? আপনি ঠান্ডা মাথায় আমার অবস্থা বুঝার চেস্টা করুন। আপনাকে মিথ্যা কথা বললে কি আপনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন না? আমার মুখের কথা শুনেই আপনি চলে যাবেন?
-শবনম, আমি আপনাকে অসম্ভব পছন্দ করি।
-আপনি আমার নাম জানলেন কি ভাবে?
-শবনম, আমি আপনাকে ছাড়া এই জীবনে অন্য কোন মেয়েকে কখনো পছন্দ করি নি।
-আপনাকে আমার যা বলা দরকার সেটা বলে দিয়েছি। আপনার সাথে এই বিষয় নিয়ে আর কোন কথা বলতে চাচ্ছি না।
শবনম ওর কথা শেষ করে আমাকে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিল, আমি পিছিয়ে এসে আবার ওর সামনে এসে দাড়ালাম।
-শবনম আপনাকে আমার সব কথা শুনতে হবে। এভাবে আপনি আমাকে এভয়েড করতে পারেন না।
-আপনি আমাকে কি বলতে চান, সেটা আমি জানি আর জানি বলেই আবার উত্তর টা দিচ্ছি, না, কখনো না আর কোন দিনও না। আশা করি আপনি এই সব বিষয় নিয়ে আমাকে আর বিরক্ত করবেন না।

আবার আমাকে পাশ কাটিয়ে শবনম চলে গেল। আমার মাথা মনে হয় পুরোপুরি আউট হয়ে গেল, অসম্ভব অবিশ্বাসের দৃষ্টি নিয়ে শবনমের দিকে টানা পাঁচ মিনিট তাকিয়ে থাকলাম। এতটা খারাপ আমার কপাল? কিছুই ভালো লাগছে না। শবনমের সাথে আর কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। ম্যানিব্যাগ থেকে একটা ভিজিটিং কার্ড বের করে হাতে নিলাম।

-এটা আমার ভিজিটিং কার্ড। আমি আশা করছি আপনি আমার সাথে আবার কথা বলতে চাইবেন।
-সম্ভাবনা নাই। তাও দিচ্ছেন যখন, দিন।

শবনমের হাতে আমার কার্ড দিয়ে আমি চুপচাপ চলে আসলাম। আসলে বুকের মধ্যে এত বড় ঝড় চলছে, ওর সাথে আর কি কথা বলব? আপাতত ঝড় আগে থামুক, তারপর দেখি কি করা যায়!


দুই
পনের দিন পর দুপুরে অফিসে বসে কাজ করছি এমন সময় এই ম্যাসান্জের ফোন এলো। নাম দেখার সাথে সাথেই চমকে উঠলাম, ঘটনা কি? এমন সময় এই মেয়ের ফোন! বিসমিল্লাহ বলে ফোন রিসিভ করলাম। আমার মতো পাপী বান্দাদের জন্য আল্লাহই ভরসা!
-আপনি কি মাঝে মাঝেই আমার বাসার সামনে বিকাল বেলা দাড়িয়ে থাকেন?
যাক, মেয়ের চোখে তাহলে পড়েছে? কষ্টটা কাজে লেগেছে। সারাদিন অফিস করে আবার এই মেয়ের জন্য মাঝে মাঝে ডিউটি দেয়া যা তা কথা নাকি? কিন্তু এসব কথা কি এই মেয়েকে বলা যায়!
-কি যা তা কথা বলছেন? আমি আপনার বাসার সামনে কেন যাব? অফিস থেকে ফেরার সময় সম্ভবত আমাকে দেখেছেন, সেজন্য এরকম আপনার মনে হয়েছে।
-আপনার অফিস আর বাসা কোথায় ?
এই প্রশ্নের তো উত্তর তো দেয়া যাবে না। মতিঝিল থেকে ঝিগাতলা এসে কেন ঘুরাঘুরি করি এটা এই মেয়েকে এখন বোঝান যাবে না। মিরপুরে নিজের বাসার কথা তো বলার প্রশ্নই উঠে না। সুতরাং কবি এখন অবশ্যি নিরব!
-আপনাকে আমি গতকালকে বিকাল বেলা আমার বাসার সামনে দিয়ে হাটাহাটি, দাঁড়িয়ে থাকতে আর ঘুরাঘুরি করতে দেখেছি। আমার তো মনে হয় না সত্য কথা বলছেন।
বোবার কোন শত্রু নেই। সুতরাং নিরবতাই কাম্য।
-আপনার মতলব তো ভালো না। আচ্ছা, আমার বাসা কিভাবে চিনলেন ?
আসল কথা বলা যাবে না। অরিজিনাল চাপা মেরে দিলাম। একটু মেয়ের সিম্প্যাথিও নেয়া দরকার।
-ঐ যে, সেদিন নিউমার্কেটে আপনার সাথে দেখা হয়েছিল, ব্লু কালারের ড্রেসটা পড়েছিলেন। সেদিন আপনার পিছু পিছু আপনার বাসা পর্যন্ত গিয়েছিলাম চেনার জন্য। জানেন কত কষ্ট হয়েছে? মাঝে মাঝে মনে হয়েছে আপনাকে মনে হয় রাস্তায় হারিয়েই ফেলেছি! ভাগ্য ভালো ছিল দেখে মনে হয় পেয়েছি!
-বেহায়া কোথাকার, লজ্জা করছে না বলতে?
-হায় হায়, লজ্জা করবে কেন? শ্বশুরবাড়ী কোথায় চিনব না? এটা কি বললেন আপনি? আপনি যদি চান, তাহলে একদিন সময় করে এসে আপনার বাসার সবার সাথে পরিচিত হয়ে যাব। কি বলেন? কবে আসবো? আমাকে অন্ততঃ একদিন আগে জানাবেন, প্রিপারেশনের একটা ব্যাপার আছে না। হুট করে বললেই তো যাওয়া যাবে না! হাজার হোক……..। কথাটা আমি শেষ করলাম না। বিড়বিড় করে একটা গালি দিল । বাংলায় না ইংলিশে বুঝলাম না। ৫ সেকেন্ডের নিরবতা। আমি কোন কথা বলছি না। দেখি এই মেয়েকি বলে?
শবনমের বরফ শীতল কন্ঠ শুনলাম:
-আপনাকে আমি খুব ভদ্র ও ভালো ভাবে সেদিন বলেছি আমার একটা অ্যাফেয়ার আছে। খুব শিগ্রই আমরা বিয়ে করব। অযথা আমার পিছনে পিছনে ঘুরাঘুরি করে কোন লাভ নেই। আপনার সাথে আমার কোন দিনও কোন রকম সম্পর্ক হবার সম্ভাবনা নেই। আমার সামনে অযথা নিজেকে হিরো প্রমান করার চেষ্টা করবেন না। এতে কোনই লাভ হবে না।
বলে কি এই মেয়ে? আমার তো মাথা ঘুরা শুরু করেছে এইসব শুনে…..
-আমি যেন আপনাকে আর কখন আমার বা আমার বাসার সামনে না দেখি! চোখের সামনে ঘুরঘুরও করতে না দেখি! যথেষ্ট ভদ্রতা রেখে বলছি। তবে ভবিষ্যতে ভদ্রতা নাও থাকতে পারে । আশা করি এমন কোন সিচুয়েশন ক্রিয়েট করবেন না, যাতে আমি বাধ্য হই উল্টা পাল্টা কিছু করতে। আমার কিন্তু এই সব ব্যাপারে প্রিভিয়াস রেকর্ড ভালো না। আমি মাঝে মাঝে মেজাজ কোনভাবেই কন্ট্রোল করতে পারি না। এমন কিছু হঠাৎ করে বসব যে, কারো সামনে মুখ দেখাতে পারবেন না। সাবধান করে দিলাম। শেষ বারের মতো।
আমি চুপ করে থাকলাম। কি বলবো? দুই সেকেন্ড পরে লাইনটা কেটে গেল।

মোবাইলটা হাতে নিয়ে চুপচাপ বসে থাকলাম কিছুক্ষন। ভদ্রতার শেষ সীমায় দাড়িয়ে শবনম আমাকে চুড়ান্ত অপমান করলো। শেষ লাইনটা খুবই অপমানজনক। নিজের আত্ম সম্মান বোধ একটা মেয়ের জন্য অন্ততঃ এভাবে বিসর্জন দেয়ার মানে হয় না। কি করব আর কি করা উচিৎ কিছুই বুঝতে পারছিনা। ধ্যাত, দিনের বাকি সময়টা পুরোপুরি নষ্ট হলো।

ফোনে অপমানের চুড়ান্ত হবার পরও বেহায়া মনটাকে কিছুতেই পোষ মানাতে পারলাম না। মাঝে মাঝে মনটা খুব খারাপ লাগলে শবনম কে ম্যাসেঞ্জারে ফোন দেই। কিছু সময় ধরে, কিছু সময় ধরে না। মুড ভালো থাকলে কিছু কথা বলে আর মুড খারাপ থাকলে, আর কি বলব, যা ইচ্ছা তাই বলে। শবনম কে নিয়ে কি করব আর কি করব না কিছুই এখন আর কিছুই মাথায় ঢুকে না। চরম একটা অস্থিরতা নিয়ে দিন কাটছে আমার…….

তিন
এক মাস পরের কথা। কবি জন ললি'র উপন্যাস "Euphues: The Anatomy of Wit" এর ফেমাস লাইন "all is fair in love and war" হঠাৎ করেই চোখে পড়ল ইন্টারনেটে ব্রাউজ করার সময়। লাইনটা পড়ার পর মনে হলো নিশ্চয়ই আমার জন্যই এটা লেখা হয়েছে। Robert the Bruce যদি সাতবার চেষ্টা করতে পারেন, তবে আমি আরেকবার করতে দোষ কি? ফেসবুক থেকে ইউনিভার্সিটির নামটা বের করে আবার কনর্ফাম করলাম। আমার এই মেয়ের ডিটেইল ইনফরমেশন দরকার। পাড়ার এক ছোট ভাই কে পেলাম, যে এটাতে পড়ে। আজকাল কার পোলাপান বড়ই ত্যাঁদর। ট্রিট না দিলে কোন কাজ হবে না। পিজা হাটে নিয়ে বড় একটা পিজার অর্ডার দিতেই দাঁত বের করে একটা সেইরকম হাসি দিল! কাজের কথা সর্টকাটেই ভালো হয়। কোন কথা না বলে মেয়ের ফেসবুক প্রোফাইল বের করে দেখালাম। ছোট ভাই তো ব্যাপক চালাক। ডিজুস জেনারেশন কি এমনি এমনি বলে! শুধু জিজ্ঞেস করলো কার জন্য। মিষ্টি মধুর একটা হাসি দিলাম। বুদ্ধিমানদের জন্য ইসারা ই কাফি হ্যায়। দুই দিন সময় চাইল। নো প্রবলেম।

দুই দিন পরে ছোট ভাইয়ের সাথে রাস্তায় দেখা। এর কাছ থেকে যে ইনফরমেশন পেলাম তাতে তো আমার মাথা ঘুরে গেল। মেয়েতো তো বেশ গরম সাথে আবার মাথা নাকি একটু আকটু আউলা ঝাউলা। ব্যাপার না, চাঁদের ও কলংক আছে গায়ে! সব ঠিক করে ফেলা যাবে, আগে আসল ঝামেলা সলভ করি। শবনমের সাথে সামনা সামনি একা বসে কথা বলতে হবে। ও কি রাজি হবে? দেখাই তো করতে চাইবে না। কি করা যায় ভাবছি? মাথায় একটা দারুন বুদ্ধি এসেছে। নির্ঘাত এটাতে কাজ হবে। হতেই হবে! এখন সময় হয়েছে শেষ চেস্টাটা করার, যা থাকে কপালে………..

চার
ঢাকায় এখন বেশ কিছু অনলাইন ফ্লাওয়ার শপ হয়েছে। জায়গা ও সময় মতো ডেলিভারি দিয়ে আসে। পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে এরকম একটা কে কাজে লাগালাম। সকাল সকাল ৯টার মধ্যে এক তোড়া তাজা লাল গোলাপ শবনমের হাতে হাতে ডেলিভারি দিবে। ইচ্ছে করেই আমার নামটা লিখলাম না। ও আন্দাজ করতে পারে কিনা আর পারলে কি প্রতিক্রিয়া আসে দেখা দরকার। সকাল ১১ টা পর্যন্ত অপেক্ষা করব। তারপর একবার নক করতে হবে। এর মধ্যে আশাকরি কাজ হয়ে যাবে। ম্যাসাঞ্জারে অনলাইনে এই সময় টাতে থাকতে হবে। যেহেতু আগে একবার এইখানে ফোন দিয়েছে, সুতরাং এখানেই আবার ট্রাই করবে। সকাল বেলা নাস্তা করে ফোনের কাছে বসে আছি। ৯ঃ৩৫ বাজে। ফুল ডেলিভারি শবনমের হাতে সময় মতো হয়েছে এটা আমি খবর পেয়েছি। ফোন আসল ৯ঃ৪০ এ। শবনম মনে হয় এরি মধ্যে বাকি সব সোর্স চেক করে ফেলেছে। মনে হচ্ছে আমি হচ্ছি লাষ্ট অপশন। দেখা যাক মেয়ে কি বলে?
-আপনি এখনও তাহলে ট্রাই করে যাচ্ছেন? আমার কোন কথাই শুনবেন না?
মেয়ে তো দেখি ব্যাপক বুদ্ধিমতি! আমি রীতিমত মুগ্ধ হয়ে গেলাম! একেবারে কর্নফাম হয়ে ফোন দিয়েছে। এবং একই সাথে আমার অনেক কাজ ও কমিয়ে দিয়েছে। শুভর সকাল টাও আজকে শুভ দেখছি। আচ্ছা, শবনম কি আমার ডাকটা নামে জানে?
-শুভ পয়লা বৈশাখ। শুভ বাংলা নব বর্ষ।
-ফুল পাঠিয়েছেন কেন?
মেয়ে তো দেখি পয়লা বৈশাখেও ভদ্রতার ধারে কাছে যাচ্ছে না। ভদ্রতা শব্দটা এর ডিকশনারি তে নাই নাকি! আমিও ডাইরেক্ট লাইন মত চলে এলাম।
-আমি আপনার সাথে আজকে একবার দেখা করতে চাচ্ছি। আপনার একটু সময় হবে আজকে?
-আবার কি জন্য?
-আপনার সাথে সামনা সামনি কিছু কথা বলতে চাচ্ছিলাম।
-কেন? আপনার সাথে আবার আমার কি কথা?
সব প্রশ্নের উত্তর হয় না। আমি চুপ করে আছি।
-অযথা সময় নষ্ট করছেন। শুনলাম আমার ইউনিভার্সিটি তেও আপনি খোঁজ খবর নিয়েছেন। সব নিউজই আমার কাছে আসে। যেই ছেলেকে এই দায়িত্ব দিয়েছেন, তাকে আমি চিনি। ওর ক্লাসের এক ছেলে আমার পিছনে পিছনে কিছুদিন ঘুরেছিল। নিশ্চয় ভাল কিছু বলেনি। বলার কথাও না।
একটু হাসির শব্দ মনে হয় শুনতে পেলাম। আল্লাহ জানে শবনম এই ছেলেকে কি বলেছে? রোমিও তো আরও আছে দেখি, সর্বনাশ!
-তাতেও তো মনে হয় আপনি আশা ছাড়েন নি। আপনার সমস্যা কি?
-সেটা বলার জন্যই তো দেখা করতে চাচ্ছি।
-আজকে না হলে হয় না? এত থাকতে আজকে কেন?
এক তোড়া গোলাপ কিছুটা কাজ দিয়েছে মনে হচ্ছে। মেয়েটা কিছুটা সফট আজকে। আমার মন বলছে Today or never. Don't miss this opportunity to meet her! যা থাকে কপালে?
-আপনার বেশি সময় নিব না।
-দেখুন, আমি আপনাকে নিয়ে এমনিতেই যথেষ্ট বিরক্ত। অযথা আমাকে ডিস্টার্ব করছেন। আমি যা বলব তা শুনতে আপনার ভালো লাগবে না। আজকে আমি সারা দিন ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত থাকব, এর মধ্যে দেখা না করলেই আপনার জন্য ভালো হত। অন্ততঃ আজকের দিন টা বাদ দিন। দেখুন চিন্তা করে?
-আমি আপনাকে ডিস্টার্ব করলাম কখন? আমি বেশি কিছু বলব না। বেশি সময়ও নিব না। আপনি আমাকে লোকেশন আর টাইমটা বলেন।
-তারপরও দেখা করতে চান? আচ্ছা ঠিক আছে। আমি একটু পরে খোঁজ নিয়ে জানাচ্ছি। কিন্তু দেখা হবার পর যা হবে সেটার জন্য আমাকে কখনো দায়ী করবেন না।
আল্লাহ ভরসা। দেখা যাক কি হয়? নাই মামার চেয়ে তো কানা মামা ভাল!

পাঁচ
শবনম সিডিউল দিল ১৫ মিনিটের তাও আবার বাংলা একাডেমির সামনে বিকাল ৪টার সময়। এত ওপেন স্পেসে কি বলব ওকে? ইচ্ছে করেই হয়ত এই কাজ করেছে। সেভ করে শাওয়ার নিয়ে ৫ মিনিট আগেই জায়গা মত চলে আসলাম। লাল পাঞ্জাবি পড়েছি। লাল গোলাপের সাথে লাল পাঞ্জাবি। পারফেক্ট কম্বিনেশন! আজকে যে আমি ছ্যাকা খাব সে ব্যাপারে বিন্দু মাত্র কোন সন্দেহ নেই। আমি শুধু মেয়ের মনের অবস্থা একটু বুঝতে চাচ্ছি। এটার উপর বুঝে পরবর্তি অ্যাকশন।

ঠিক ৪টার সময় জায়গা মত এসে দেখি শবনম নেই। মেয়েরা সবসময় একটু দেরীই করে। এতে অস্থির হবার কোন কারন নেই। মন কে প্রবোধ দিলাম। মেয়ে যে আসতে চেয়েছে এটাই বড় কথা। প্রথম ১০ মিনিট হাটাহাটি করলাম। একটু পরে দেখি পা ব্যাথা করছে। রাস্তার পাশের আইল্যান্ড এসে বসলাম। এখানেও ১০ মিনিট বসে থাকলাম। শবনমের কোন খবর নেই। কি করা যায়? ৪ঃ২০ বাজে। শবনম কে ফোন করতে ইচ্ছে করছে না। রাস্তার পাশে দেখি ঝাল মুড়ি বিক্রি করছে। ১০ টাকার এক ঠোংগা কিনলাম। সময় কাটান দরকার। বসে বসে ঝাল মুড়ি খাচ্ছি আর চারপাশ দেখছি। এসেছি যখন এটার শেষ আমি আজকে দেখে যাব। আবার ঘড়ি দেখলাম ৪ঃ৩৫। মনে মনে ঠিক করলাম ৫ টা পর্যন্ত অপেক্ষা করব। মুড়ি শেষ, আবার এক ঠোংগা কিনলাম। বসে বসে মুড়ি খাচ্ছি আর চারপাশের দৃশ্য দেখছি। আহ, কি সুন্দর কপোত কপোতীরা বাক বাকুম করে বেরাচ্ছে আর আমার কি অবস্থা? মাথায় জিদ চেপে গেল। শবনমের আমি শেষ দেখেই ছাড়বো। দেখি কতদিন আমাকে এভয়েড করে থাকতে পারে। রাপা প্লাজায় দেখা ওর চেহারাটা চোখের সামনে ভেসে উঠল। নাহ, এত সহজ হাল ছাড়া যাবে না। শবনম কে নিয়ে কি কি করা যায় বসে বসে ভাবছি, লিস্ট করছি আর ঝাল মুড়ি খাচ্ছি। সময় যে কিভাবে চলে যাচ্ছে টেরই পেলাম না। হঠাৎ দেখি ৫ টা বাজে। আজকের মতো শবনমের জন্য বরাদ্দ সময় শেষ। এদিকে মুড়িও শেষ, যা ভালো হয়েছে। ঠোংগাটা ফেলে দিয়ে হাত রুমালে মুছে উঠে দাড়াবো সেই সময় দেখি শবনম আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ওহ মাই গড, শবনম আজকে শাড়ি পড়ে এসেছে! লাল শাড়ি। কি যে সুন্দর লাগছে! আমি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে যেন ওর দিকে তাকিয়ে আছি। চোখ সরানো যাচ্ছে না। আমার ছোট্ট এই জীবনে শবনম ছাড়া কি বা চাইবার আছে? পাঞ্জাবীর পকেটে হাত দিলাম। বড় একটা রক্ত লাল গোলাপ নিয়ে এসেছি শবনমকে দিব বলে।
শবনম মনে হয় টের পেয়ে গেল আমি করব। এক স্টেপ পিছিয়ে যেয়ে বললঃ
-হাঁদারাম কোথাকার? আপনার কি ধারনা আপনার জন্য আমি শাড়ি পরে এসেছি? তাও আবার লাল শাড়ি? এক ঘন্টা রাস্তায় বসিয়ে রেখেছি, তাও লজ্জা করে না। মানুষ এত বেহায়া হয় কিভাবে?

শবনমের লাল শাড়ি, লাল ব্লাউজ, লাল টিপ, লাল লিপষ্টিক আর হাতে কাঁচের লাল চুড়ি দেখে আমি আশে পাশের সমস্ত পৃথিবীর কথা ভূলে গেলাম। শবনমের সব কথা আমার এক কান দিয়ে ঢুকে অন্য কান দিয়ে বের হয়ে গেল। ও আজকে আমাকে যা ইচ্ছা বলুক, কিচ্ছু যায় আসে না আমার।
-আপনার জন্য আমার কোন লজ্জা করে না। কেউ কি আপনাকে কখনো বলেছে আপনি আসলে কতটা সুন্দর? শবনম আমি আপনাকে আমি পাগলের মতো ভালোবাসি। আপনি আমাকে যা ইচ্ছা বলতে পারেন, যা ইচ্ছা করতে পারেন, আমার তাতে কিচ্ছু যায় আসে না। আমার এই ছোট্ট জীবনে আপনাকে ছাড়া আমি আর কিছুই চাই না। আপনি যদি চান এই মুহূর্তে আমি আমার হৃদপিন্ড ছিড়ে এনে আপনার হাতে হাসি মুখে তুলে দিব। দেখতে চান?

এক নিশ্বাসে কথা গুলি বলে আমি নিজেই অবাক! কত কথা গুছিয়ে এনেছি ওকে বলব বলে আর কি আবোল তাবোল বলে ফেললাম। কতটা দিন ধরে যে আবেগ বুকে চেপে রেখেছিলাম সেটা শবনম কে দেখে সাথে সাথে যেন বের হয়ে আসল।
শবনম আমার আবেগের বহিঃপ্রকাশ দেখে রীতিমত ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল! আমার মনের অবস্থা যে আগের চেয়ে আরো খারাপ হয়ে গেছে এইটা মনে হয় চিন্তা করে নি। কিছুটা অপ্রস্তুত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কি বলবে মনে হয় বুঝতে পারছে না।

-আমি আপনার কথা মতো আপনাকে ভুলে যাবার চেস্টা করেছি। অনেক চেস্টা করেছি, বিশ্বাস করুন। পারলে এতটা ছোট হয়ে আপনার সামনে এসে আবার দাড়াতাম না। আপনাকে ছাড়া আমার জীবনে আর কিছুই চাইবার নেই। আপনাকে ছাড়া আমার পক্ষে সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব না। আপনি একবার, অন্ততঃ একবার আমার অবস্থা বুঝার চেস্টা করুন। আপনাকে ছাড়া আমি একেবারে শেষ হয়ে যাব। প্লিজ।
শেষ কথা গুলি বলার সময় আমার কি হলো জানি না। কি বলছি ওকে আমি নিজেও বুঝতে পারছি না। যা মনে আসছে তাই বলে ফেলছি!
-শুভ, আপনার সাথে আমার দেখা করা কোন ভাবেই ঠিক হয় নি। আপনার যে এই অবস্থা, জানলে আমি কখনোই আজকে আপনার সাথে দেখা করতাম না। আপনি নিজেকে শক্ত করুন। আমি আপনাকে কিভাবে কথাটা বলব বুঝতে পারছি না। কি বিপদে পড়লাম আমি?
শবনমের কথাবার্তার কিছুই বুঝতে পারছি না। কি বলছে এসব? আবার কি বলবে আমাকে ও?

অপলক দৃষ্টিতে আমরা একজন আরেক জনের তাকিয়ে আছি। সময় কোন দিক দিয়ে বয়ে চলে যাচ্ছে টেরও পাচ্ছি না। এখন কেমন যেন বিব্রতকর দৃষ্টি নিয়ে শবনম আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

-শবনম, পাঁচ মিনিটের কথা বলে এসেছ। বিশ মিনিট হয়ে গেছে, এখনও কথা শেষ হয় না। কার সাথে এত কথা বলছ তুমি?
আমি চরম হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে দেখি এক ভদ্রলোক এগিয়ে এসে শবনমের হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে চাইছে আর শবনম চলে যাবার ব্যাপারে কিছুটা ইতস্তত করছে। মাথা সাথে সাথেই গরম হয়ে গেল। এই হারামজাদা আবার কোথা থেকে উদয় হলো? এমনিতেই আমি আছি বিরাট ঝামেলার মধ্যে! এর মধ্যে নতুন আপদ কোথা থেকে আমদানি হলো?
-আপনি কে? শবনমের হাত ধরেছেন কেন? এত বড় সাহস কিভাবে হলো আপনার? Who are you?

আমি পাঞ্জাবির হাত ভাঁজ করে এক পা এগিয়ে গেলাম। হারামজাদাকে আজকে এখানেই খুনই করে ফেলব। ইউনিভার্সিটিতে থাকতে এক সাথে কতগুলি কে পিটিয়ে লাশ বানিয়ে দিয়েছি, এইটা তো মাত্র একটা? আমার শবনমের হাত ধরে এত বড় সাহস..
শবনম এক মুহুর্তের মধ্যে বুঝে ফেলল কি ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। দুই পা হেটে আমার সামনে এসে দাড়াল। শবনম কে সামনে দেখে আমি থমকে গেলাম। আরে ওর জন্যই তো আমি মারতে যাচ্ছি, ও আমাকে ঠেকাচ্ছে কেন?
-শুভ, কি এসব পাগলামি করছেন আপনি? নিজেকে কন্ট্রোল করুন। উনি আমার হাত ধরতেই পারেন। আপনাকে আমি আসলে বলতে পারছিলাম না। আপনার যে অবস্থা, কিভাবে বলব বলুন? গত পাঁচ দিন আগে ওর সাথে আমার আকদ হয়ে গেছে। আমাকে বাসা থেকে এখনো উঠিয়ে দেয় নি। শুভ, আমি স্যরি।

শবনমের মুখে ওর আকদের কথা শুনে আমি সাথে সাথেই জীবন্ত পাথর হয়ে গেলাম। হায় খোদা, শবনম এটা কি বলল? এটা শুনার আগে আমার কেন মরন হলো না? কি হবে আর বেঁচে থেকে এই জীবনে? কি নিঃসীম শুন্যতায় আমি ডুবে যাচ্ছি তার কোন কূল কিনারা পাচ্ছি না। ওহ, গড! সো পেইন!
-আপনি নিজেকে শক্ত করুন। প্লিজ, নিজেকে কন্ট্রোল করুন। এই শেষ বারের মতো আপনার সাথে দেখা আমার। আমি আপনার সব ভালো কিছু মনে রেখেই যেতে চাচ্ছি। প্লিজ, উল্টা পালটা কিছু করে বসবেন না। এখন আর কোন কিছুতেই, নতুন কিছু করা সম্ভব না। আমি আপনাকে বুঝতে পারি নি, এটা আমার ব্যর্থতা, আপনার না।

কথা গুলি শেষ করে শবনম কিছু সময় নিল। আমার দিকে অচেনা দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল। ওর চোখের এই অচেনা ভাষা বুঝতে আমারও কিছুটা সময় লাগলো। আমার বুকটা তছনছ হয়ে যাচ্ছে বুঝতে পেরে। বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শবনম আমাকে রেখে চলে গেল, তবে যাবার আগে আমার দিকে তাকিয়ে বলে গেলঃ
-Shuvo, I am sorry. So sorry, we met in a horribly wrong time in our life. If possible, please try to forgive me.

আমি ওর চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমার এই ছোট্ট জীবনের একমাত্র খেয়াতরীকে নিজের চোখের সামনে আমাকে রেখে চিরতরে চলে যেতে দেখলাম। আমার আজ কিছুই করার নেই। এতটা অসহায় আর নিঃস্ব লাগছে নিজেকে যা আর কখনো লাগেনি আগে। হালকা করে কানে ভেসে আসছে প্রাসঙ্গিক কিছু কথা।
-ছেলেটা কে? নাম কি? তোমার সাথে ওর সম্পর্ক কিসের? শবনম, কোনদিন তো তোমার মুখে এই ছেলের কথা শুনিনি………..

স্তব্ধ বিমূঢ় হয়ে আমি ওখানেই দাঁড়িয়ে আছি। চারপাশ দিয়ে সবাই হেটে চলে যাচ্ছে, কারো কারো গায়ের সাথে ধাক্কা লাগছে। আমার এখন কোন কিছুতেই ভ্রুক্ষেপ নেই। চাওয়া না চাওয়া, পাওয়া না পাওয়া, সব কিছু কেমন যেন চোখের সামনে বিরাট জট পাকিয়ে যাচ্ছে। এই কয়টা দিন শবনমকে ছাড়া আমি আর কোন কিছুই চিন্তা করতে পারিনি। ওকে ছাড়া তো আমি নিজের অস্তিত্বই হারিয়ে ফেলব। ওকে ছাড়া আমি বাঁচব কিভাবে? প্রিয় গানের কথা গুলি বার বার ঘুরে ফিরে মনে পড়ে যাচ্ছে…….। আমার জীবনের গল্পের সাথে এর কতই না মিল!

When I look into your eyes
I can see a love restrained
But darlin' when I hold you
Don't you know I feel the same
Nothin' lasts forever
And we both know hearts can change
And it's hard to hold a candle
In the cold November rain
We've been through this such a long long time
Just tryin' to kill the pain, oo yeah
But love is always coming and love is always going
And no one's really sure who's lettin' go today
Walking away
If we could take the time
To lay it on the line
I could rest my head
Just knowin' that you were mine, All mine
So if you want to love me
Then darlin' don't refrain
Or I'll just end up walkin'
In the cold November rain

Songwriters: Slash / Izzy Stradlin / Duff Mc Kagan / Darren A Reed / Matt Sorum / W. Axl Rose. November Rain lyrics © Warner/Chappell Music, Inc, Universal Music Publishing Group


ছয়
বাসায় এসে আমি পুরোপুরি চুপ হয়ে গেলাম। কি হলো? কেন এমন হলো? এমন তো হবার কথা ছিল না। আমি কি অপরাধ করেছি? শবনম কে আমার চেয়ে কেউ কি বেশি ভালোবাসতে পারবে? কাউকে মন প্রান দিয়ে ভালোবাসা কি অপরাধ? কারো প্রেমে পড়া কি অপরাধ? এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে কোন মেয়েকে পছন্দ করা কি পাপ?

আমি তো শবনম কে আর কখনো পাবো না। একবার চোখের দেখার জন্য হলেও না। ওর সামনে আমি আর কখনো যেয়ে দাড়াতে পারবো না। শবনমের আমাকে ফেলে চলে যাওয়ার কথা ছিলো না, চলে গেছে। আমার ওকে হারানোর কথা ছিলো না, আমি হারিয়েছি। কিন্তু পার্থক্য শুধু এইটুকু যে, এই অল্প একটু সময়ে, আমি আমার পুরো পৃথিবীটাকেই হারিয়ে ফেলেছি………

পুনশ্চঃ
শবনম আর শুভর প্রেম কাহিনীর এরকম বিয়োগআন্তক পরিনতি দেখে যাদের খারাপ লেগেছে তাদের জন্য বলছি, আমার দেখা বেশির ভাগ অসম্ভব প্রেম কাহিনীর পরিনতি বিয়োগআন্তকই হয়েছে। তবে মন খারাপ করার কোন কারন নেই। শবনম আর শুভর Awesome প্রেম কাহিনী অবশ্যই হবে। যারা ইতিমধ্যেই প্রায়শ্চিত্ত পর্বটা পড়ে এসেছেন তাদের জন্য বলব; শুভ, শবনমের পর এখনও পর্যন্ত আর কাউকে পছন্দ করতে পারেনি। আর শবনমের কি অবস্থা, সেটা তো জানেনই! শবনম তো এখন নিজেই স্বয়ংবরা!

শবনম এর তৃতীয় পর্ব পড়ার আমন্ত্রন দিয়ে গেলাম। ধন্যবাদ, আমার আর শবনম কাহিনীর সাথে থাকার জন্য।

সবার জন্য শুভ কামনা রইল!
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত @ নীল আকাশ, অক্টোবর, ২০১৮
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:১৯
৪০টি মন্তব্য ৪০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটা গাছ কাঠ হলো, কার কী তাতে আসে গেলো!

লিখেছেন নয়ন বড়ুয়া, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:০৬



ছবিঃ একটি ফেসবুক পেইজ থেকে

একটা গাছ আমাকে যতটা আগলে রাখতে চাই, ভালো রাখতে চাই, আমি ততটা সেই গাছের জন্য কিছুই করতে পারিনা...
তাকে কেউ হত্যা করতে চাইলে বাঁধাও দিতে পারিনা...
অথচ... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×