somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্রাজিলের জার্সির রং কেন হলুদ, তা জানেন?

০১ লা জুন, ২০১৮ রাত ৮:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্রাজিল দলের হলুদ জার্সির ডিজাইনার লেখক ও সাংবাদিক আলদের গার্সিয়া শিলে। ছবি: টুইটার

ফুটবলে হলুদ জার্সি মানেই ব্রাজিল। ঐতিহ্যবাহী এই জার্সির মাহাত্ম্য ব্রাজিলের খেলোয়াড় থেকে ভক্ত—সবার কাছেই অন্য রকম। কিন্তু ব্রাজিলের জার্সির রং কেন হলুদ, তা জানেন?
‘ব্রাজিলিয়ানদের জন্য হলুদ জার্সিটা পূজনীয়, গায়ে যখন হলুদ জার্সিটা ওঠে তখন শুধু গর্ব না, একটা দায়িত্বও চলে আসে, যা প্রতিটা খেলোয়াড়ের গায়ে শিহরণ জাগায়।’—বিখ্যাত হলুদ জার্সিটার মাহাত্ম্য বর্ণনায় কার্লোস আলবার্তো। জুলে-রিমে ট্রফি তাঁর হাত ধরে পাকাপাকিভাবে ব্রাজিলের ঘরে স্থায়ী হয়েছিল।

বিশ্বকাপে কিছু না কিছু নতুনত্ব থাকে প্রায় সব দলের জার্সিতেই। কিন্তু পাঁচবারের বিশ্বজয়ী ব্রাজিলের জার্সিতে লাগেনি কোনো পরিবর্তনের ছোঁয়া। সেই হলুদ রং আর তার মাঝে হালকা সবুজের আভা। সাও পাওলো, সান ডিয়াগো থেকে শুরু করে ঢাকার গলি-উপগলি তস্য গলিতে এই জার্সির একটাই রং—হলুদ। বাচ্চা থেকে বুড়ো সবাই জানে হলুদ জার্সি মানেই ব্রাজিল।

অথচ এই হলুদের পথচলা মোটেও সহজ ছিল না। এই হলুদ জার্সির আগের গল্পটা প্রতিটি ব্রাজিলিয়ানের জন্য আক্ষেপের। সেই দিনটা ভুলে থাকতে পারলেই তাঁদের শান্তি। কিন্তু ভুলবে কীভাবে, সেটা যে ‘মারাকানাজ্জো’—প্রতিটি ব্রাজিলিয়ানের হৃদয়ে চিরকালীন দুঃখ। ১৯৫০ সাল, মারাকানায় দুই লাখ মানুষ সাক্ষী হতে চেয়েছিলেন বিশ্বকাপ জয়ের। উরগুয়ের বিপক্ষে সেই ম্যাচে জয় নয়, ন্যূনতম ড্র পারত ব্রাজিলকে প্রথম বিশ্বকাপ এনে দিতে। কিন্তু আলসিদেস ঘিঘিয়ার সেই গোলে ব্রাজিলিয়ানদের স্বপ্ন চূর্ণ হয়, তাঁদের হৃদয়ে গড়ে ওঠে চিরকালীন দুঃখের সৌধ।

১৯৭০ বিশ্বকাপে পেলের হলুদ জার্সি। পরে তা নিলামে বিক্রি হয়ে যায়। ছবি: সংগৃহীত
১৯৭০ বিশ্বকাপে পেলের হলুদ জার্সি। পরে তা নিলামে বিক্রি হয়ে যায়। ছবি: সংগৃহীত
সেই হারের স্মৃতি, সেই দল, এমনকি সেই সাদা জার্সি, নীল শর্টস আর সাদা মোজা; সব ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করে ব্রাজিলিয়ানরা। তখন ব্রাজিলের সেই সাদা জার্সিতে ছিল না দেশের কোনো ছাপ। পতাকার সবুজ রঙে যে বিশাল বনভূমি, সোনালি হলুদে যে খনিজ সম্পদের চিহ্ন, নীল পৃথিবী ও সাদা তারায় যে রিও ডি জেনিরোর সুবিশাল আকাশকে বোঝানো হয়—কিছুই ছিল না ব্রাজিলের সেই সাদা জার্সিতে। আর তাই ব্রাজিলিয়ানদের ‘মারাকানাজ্জো’ দুঃখে এই জার্সি হলো বলির পাঁঠা—তারা ভেবে নিল এই জার্সিটাই ‘অপয়া’!

১৯৫৩ সাল, পত্রিকায় খবর বেরোল ডিজাইনারদের কাছ থেকে ব্রাজিলের জার্সির ডিজাইন নেওয়া হবে। ডিজাইন নানা রঙের হলে চলবে না। থাকতে হবে দেশের ছাপ। নিজেদের জাতীয় পতাকার মতো। আর ডিজাইনগুলোর মধ্যে সেরা জার্সি পরেই ১৯৫৪ বিশ্বকাপের মাঠে নামবে ব্রাজিল দল।

১৯৫০ বিশ্বকাপের ব্রাজিল দল। খেলোয়াড়দের গায়ে সাদা জার্সি। ছবি: সংগৃহীত
১৯৫০ বিশ্বকাপের ব্রাজিল দল। খেলোয়াড়দের গায়ে সাদা জার্সি। ছবি: সংগৃহীত
ব্রাজিলিয়ান লেখক আলদের গার্সিয়া শিলে তখন ব্রাজিল সীমান্তে উরুগুয়ের কাছাকাছি রিও গ্রান্দে দো সুলের পেতোলাস নামক এক ছোট্ট গ্রামে সংবাদপত্রের ‘ইলাস্ট্রেটর’। শত চেষ্টার পর শিলে বুঝলেন এটা সম্ভব। সেদিনের স্মৃতি শিলির কাছে অমলিন, ‘শেষ পর্যন্ত আমি বুঝতে পারলাম, জার্সিটা আসলে হতে হবে হলুদ। নীল শর্টসের সঙ্গে এর থেকে ভালো কিছু হয় না। মোজা সাদা হতে পারে। আর জার্সির গলার কাছের অংশটা হতে পারে সবুজ।’ ৪০১টি ডিজাইন জমা পড়েছিল, সেখান থেকে সবার চোখে পরে শিলের হলুদ জার্সিটাই। দ্বিতীয় জার্সিও ছিল সাধারণ। সবুজ জার্সি, সাদা শর্টস আর হলুদ মোজা।

শিলের সেই হলুদ জার্সিতেই সুইজারল্যান্ডের পথে উড়াল দিল ব্রাজিল। ১৯৫৪ সালের মার্চে জয় দিয়েই শুরু হলো হলুদ জার্সির পথচলা। সেবার পুসকাস-হিদেকুটিদের হাঙ্গেরির কাছে হেরে ব্রাজিলের অভিযাত্রা থেমে গেল কোয়ার্টার ফাইনালেই। চার বছর পর সুইডেন বিশ্বকাপের ব্রাজিল দলে ছিলেন পেলে, গারিঞ্চা, দিদি, মারিও জাগালো, ভাভাদের মতো খেলোয়াড়। এবার হলুদ জার্সি পরে ফাইনালে উঠল তাঁরা। কিন্তু ফাইনালে শেলির সেই হলুদ জার্সি চাইলেও গায়ে চাপাতে পারেননি পেলে-গারিঞ্চারা।

সুইডেনেরও তো হলুদ জার্সি! ব্রাজিল তাই হলুদ জার্সি পরে মাঠে নামবে কীভাবে? কিন্তু ভাভা-জাগালোদের কেউ-ই সেই ‘অপয়া’ সাদা জার্সি গায়ে চাপাতে রাজি নন। তাই স্টকহোমের এক দোকানে গিয়ে কিনে আনা হলো ২২ নীল জার্সি। আর তাতে বসিয়ে দেওয়া হলো ব্রাজিল দলের লোগো। সেই জার্সিতেই বিশ্বজয় হলো। ’৬২ বিশ্বকাপের ফাইনালটা হলুদ জার্সি পরে জিতেছে ব্রাজিল। তবে গ্যালারির দর্শক ছাড়া বাকিদের কেউ বুঝতে পারেনি অসাধারণ সেই দলটার গায়ে ছিল হলুদ জার্সি।

ব্রাজিল দলের হলুদ জার্সির ডিজাইনার লেখক ও সাংবাদিক আলদের গার্সিয়া শিলে। ছবি: টুইটার
ব্রাজিল দলের হলুদ জার্সির ডিজাইনার লেখক ও সাংবাদিক আলদের গার্সিয়া শিলে। ছবি: টুইটার
সে সুযোগ এল ৮ বছর পর। ১৯৭০ টুর্নামেন্ট ছিল টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা প্রথম রঙিন বিশ্বকাপ। রঙিন বিশ্বকাপে টিভি পর্দায় প্রথমবারের মতো দেখা গেল ‘হলুদ ব্রাজিল’কে। সর্বকালের সেরা ব্রাজিল দলকে, তর্কাতীতভাবে সর্বকালের সেরা ফুটবল দলকে। কার্লোস আলবার্তোর অধীনে সেই দলের প্রতিটি খেলোয়াড় নিজেদের পজিশনে ছিলেন সেরা। ফাইনালে ইতালির বিপক্ষে প্রথমার্ধে ১-১ গোলে সমতায় থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধে ব্রাজিলের খেলা দেখে যে কেউ মুগ্ধ হতে বাধ্য। ফাইনালটা শেষ পর্যন্ত ৪-১ গোলে জিতেছিল ব্রাজিল। জুলে–রিমে ট্রফিটা চিরতরে জিতে শেলির জার্সিকে পরিপূর্ণতা দিয়েছিলেন পেলে-টোস্টাওরা।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০১৮ রাত ৮:৩৮
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×