রবীন্দ্রনাথের গানে আছে, ‘যাহা-কিছু ছিল সব দিনু শেষ করে/ডালাখানি ভরে-/কাল কী আনিয়া দিব যুগল চরণে/তাই ভাবি মনে’। কালকের কথা পরে, এখন দেখা যাক নির্বাচনের আগে সরকারের শেষ বাজেটে ‘ডালাখানি ভরে’ কাকে কী দিলেন অর্থমন্ত্রী।
**গরিব মানুষ আগের চেয়ে কম দামে পাউরুটি খেতে পারবেন এবং স্যান্ডেলের দামও কমবে তাই তারা স্যান্ডেল পরতে পারবে।
**মধ্যবিত্তদের জন্য বরং সংকট বেশি কারন যারা চাচ্ছিলেন ছোট একটা ফ্ল্যাট কিনবেন তাদের জন্য ছোট ফ্ল্যাট কেনার পরে নিবন্ধনে খরচ বাড়বে মানে কেনার কি দকার ভাড়া বাসায় থাকুন
**যাঁরা সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে পোশাকসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি করে কিছু একটা করার চেষ্টা করছিলেন, তাঁদের এখন কর দিতে হবে বিসিএস না দিয়ে নিজে কিছু করার চেষ্টা করলে তো এমন হবেই তাইনা।
**নিজের গাড়ি নেই তাইলে একটু আরামে যেতে পাঠাও-উবার আছে ইউজ করতেন ব্যয় বাড়বে এখানেও, কারন আপনাকে এত আরাম কে করতে বলছে।
**নিজে একটা পুরানা গাড়ি কিনতে চাচ্ছিলেন অনেকদিন ধরে কিছু টাকা জমিয়ে দাম বাড়বে পুরোনো গাড়ির, নতুন কিনেন তাইলে অনেকগুলা ট্যাক্স দিতে পারবেন, দেশের জন্য কিছু একটা করা উচিত তাইনা।
**করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হয়নি। অথচ মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, মানুষের প্রকৃত আয় কমে যাচ্ছে।
**পোশাক খাত কেবল ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, ফলে এই সময়ে করপোরেট কর বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত ভালো সিগন্যাল নয়।
**সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর ব্যাপারে আবারও আশার কথা শোনালেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এবারসহ মোট চারবার এ আশার কথা শোনালেন তিনি। বিষয়টি এমন দাঁড়িয়েছে যে মান্না দের সেই গানের কলি মনে পড়ে যায়, ‘আশায় আশায় তবু এই আমি থাকি, যদি আসে কোনো দিন সেই সুখপাখি’।
**
এবার দেখা যাক, উচ্চবিত্তদের জন্য কী দিলেন অর্থমন্ত্রী।
**একটু বড় আকারের ফ্ল্যাট নিবন্ধনে খরচ খানিকটা কমবে কারন উনারা তো আবার ছোট ফ্ল্যাট কেনার সামর্থ্য রাখেন না।
**তবে সত্যিকার অর্থে অর্থমন্ত্রী ‘ডালাখানি ভরে’ দিয়েছেন কেবল ব্যাংকমালিকদেরই। ব্যাংকের করপোরেট করহার কমানো হয়েছে আড়াই শতাংশ। এর ফলে তাঁদের লাভের পকেট বরং আরেকটু ভারী হবে। এ ছাড়া আয়করেও খানিকটা ছাড় দেওয়া হয়েছে বেশি আয়কারীদের।
**অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গতকাল বৃহস্পতিবার টানা দশমবারের মতো যে বাজেটটি দিলেন, তাতে বিগত ১০ বছরের একটি মূল্যায়ন আছে ঠিকই, কিন্তু ‘কাল কী আনিয়া দিব যুগল চরণে’, তার কোনো বিবরণ পাওয়া গেল না।
কিছু ভালো জিনিস
**শিক্ষা ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ, স্থানীয় বিনিয়োগ বিশেষ করে মোটরসাইকেল ও মোবাইল সেট উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি।
**বাজেটের একটা ভালো দিক হলো, যেসব ব্যক্তির একাধিক গাড়ি আছে, তাদের গাড়ির ওপর সারচার্জ বসানোর সিদ্ধান্ত।
**পলিথিন ও প্লাস্টিক ব্যাগের ওপর সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে, এতে ব্যবহার কমবে, বাঁচবে পরিবেশ।
**চাল আমদানিতে আবার ২৮ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়েছে, এতে কৃষকেরা ন্যায্যমূল্য পাবেন।
সংকটের উল্লেখ নেই
গত এক বছরেই দেশে সবচেয়ে আলোচিত ছিল দুই বিষয়। যেমন সরকারি ব্যাংক খাতের সংকট বেসরকারি খাতে ছড়িয়ে পড়া আর রোহিঙ্গা সংকট। এই দুই অধ্যায় সামান্য ছুঁয়ে গেছেন অর্থমন্ত্রী। এক জায়গায় বলেছেন, ‘দু-একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি সাময়িক উদ্বেগ তৈরি করলেও সময়োপযোগী পদক্ষেপের ফলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে।’ এর পুরস্কার হচ্ছে করপোরেট করহারে মালিকদের ছাড়। এই ছাড় পাওয়ার কারণে আমানতকারীরা সামান্যতম সুবিধা পাবেন না, কমবে না ঋণের সুদহার। অন্যদিকে, রোহিঙ্গা সংকটের কারণে দেশের মানুষের করের টাকার কত অংশ বাড়তি ব্যয় হচ্ছে, তার কোনো হিসাবই দিলেন না অর্থমন্ত্রী। অতিথি খাতে কত ব্যয় তা জানার অধিকারটাই পেলেন না সাধারণ করদাতারা।
কিন্তু দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি বেসরকারি খাত। এই খাতের বিনিয়োগের কোনো খবরের কথা উল্লেখ করলেন না অর্থমন্ত্রী। রবীন্দ্রনাথকে ধার করে বলতে পারি, ‘তোমার বীণায় সব তার বাজে,/ওহে বীণকার,/তারি মাঝে কেন নীরব কেবল/একখানি তার। কারণ, অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই ‘তার’টির অবস্থা ভালো নয়। বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বেড়েছে সামান্য।
তথ্য সুত্রঃ প্রথম আলো, বাংলা ট্রিবিউন এবং বাজেট অধিবেশন।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুন, ২০১৮ বিকাল ৪:২৪