একজন লেখকের জীবনটা কেমন? কেউ বলে বৈচিত্রময় সুন্দর, আবার কেউ বলে অভাব-অনটনে ভরা কষ্টের। কোনটা ঠিক সেটা লেখক নিজেই ভালো বলতে পারবেন। তবে এটা ঠিক যে, আর দশটা সাধারণ মানুষ যেভাবে জীবনকে দেখে, লেখক তার চেয়েও আরও বেশি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে, জ্ঞানের চোখ দিয়ে জীবনকে পর্যবেক্ষণ করে। এখানেই তার লেখকস্বত্ত্বার সার্থকতা।
লেখকের জীবনকে গুস্তাভে ফ্লাভার্ট তুলনা করেছেন কুকুরের জীবনের সঙ্গে! তাই বলে এই জীবন যাপনের অযোগ্য যে নয়, সেটাও জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেছেন, 'Writing is a dog's life, but the only life worth living'.
জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ তাঁর 'বলপয়েন্ট' গ্রন্থে গুস্তাভের উক্তিটির অনুবাদ করেছেন এভাবে: 'লেখকের জীবন হলো কুকুরের জীবন, কিন্তু এই একমাত্র অর্থবহ জীবন'।
আমি অনুবাদটাকে একটু অন্যভাবে করতে চাই, এভাবে: 'লেখালেখিটা হলো কুকুরের জীবন, কিন্তু শুধু এই জীবনটাই বাঁচার মতো।'
কিন্তু, কেন তিনি লেখালেখিকে বা লেখকের জীবনকে একটা কুকুরের জীবনের সঙ্গে তুলনা করলেন? উক্তিটা যিনি করেছেন, তিনিই ভালো বলতে পারবেন। হুমায়ূন আহমেদও চতুরতার আশ্রয় নিয়ে ব্যাখ্যাটি না দিয়ে এড়িয়ে গেছেন। আমি আমার স্বল্পজ্ঞানে মনে করি, কুকুরের জীবনের সঙ্গে তুলনা করাটা এক হিসেবে খুবই যুক্তিযুক্ত। সেটা কীভাবে?
একটা কুকুরকে দেখবেন রাস্তায় হাঁটার সময় নাক দিয়ে শুঁকতে শুঁকতে পথ চিনে এগোয়। রাস্তার প্রতিটি ধূলিকণার গন্ধ ওর পরিচিত। রাস্তায় চলতে গেলে, রাস্তার প্রতিটি ধূলিকণা প্রতিটি বস্তর ঘ্রাণ জানতে হয়। ঠিক তেমনি, লেখক হতে গেলে লেখার উপজীব্য প্রতিটি মানুষের সঙ্গে মিশতে হয়, কে কেমন কীভাবে কী ভাবছে তা জানতে হয়। কোন পরিস্থিতিতে মানুষটা কী করে সেটা বুঝতে হয়। সবমিলিয়ে গভীর পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়েই লেখাটা ভাষা খুঁজে পায়। এই জীবনটাই আসল, এ জীবন যাপন করে, এভাবে বেঁচে মজা আছে।
[দেব দুলাল গুহ]
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫১