somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভিন্ন রকমের জন্মদিন আয়োজনের দৃষ্টান্ত

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কতো রকমভাবেই তো পালিত হয় জন্মদিন। কেক কেটে মোমবাতি নিভিয়ে যে আয়োজন হয়, সেটাই বেশি প্রচলিত। অথচ খাঁটি বাঙ্গালি উদযাপন কিন্তু এটা নয়। আমরা দিনদিন হারিয়ে ফেলছি বাঙ্গালিয়ানা। আমার মনে পড়ে ছোটবেলার কথা। কারণ, আমার জন্মদিন পালনের বিষয়টাই ছিলো ব্যাতিক্রম, একটি দৃষ্টান্ত। ভালো লাগলে এভাবে জন্মদিন পালন করতে পারেন আপনারাও।
.
১৯ বছর বয়স পর্যন্ত বাবাকে পেয়েছি, প্রতিবারই পালিত হয়েছে আমার জন্মদিন। কিন্তু জন্মদিনে কেক কাটা হোত না কখনই। বাবার মতে ওটা আমাদের সংস্কৃতি নয়। আমার জন্মদিনে তাই আয়োজিত হোত 'শিশুভোজ'। এলাকার সব বাচ্চাদেরকে নিমন্ত্রণ করা হোত তাদের মাসহ। জন্মদিনের নিমন্ত্রণপত্রে আমার নিজের হাতে লেখা থাকতো-- 'লৌকিকতা বর্জনীয়'।
.
জন্মদিনের দিন সবাই আমাদের বাসায় আসতো। কতজন আসতো তার কোন হিসেব থাকতো না। ধারদেনা করে হলেও বাবাকে দেখেছি এই অনুষ্ঠান আয়োজন করতে। বড় বড় পাতিল-কড়াইয়ে রান্না হোত। দূর-দূরান্ত থেকেও মানুষ আসতো। রাস্তা থেকে রিকশায় করে ভিখারী নিয়ে আসতেও দেখেছি বাবাকে। 'লৌকিকতা বর্জনীয়' কথাটা লেখা থাকার পরেও অনেকেই অনেক উপহার নিয়ে আসতো। সেইসব উপহার থেকে শুধু ফুল আর শিক্ষার উপকরণ বাদে বাকি সব উপহার ফিরিয়ে দেয়া হোত। শুধু মানুষের ভালোবাসা, দোয়া/আশীর্বাদ প্রার্থনীয় ছিল।
.
ছোটবেলায় কখনও খারাপ লাগেনি এজন্য। আমার হাতের থেকেও উপহার ফিরিয়ে দেয়া হতো। ওদিকে, সৎপথে চলতো বলে বাবা খুব হিসেবী ছিলো। চাইলেই অনেক কিছু পেতাম না। এমন দামি সব পোষাক, খেলার সামগ্রী ফিরিয়ে দিতে গিয়ে কখনও খারাপ লাগতো না? একদম ছোটবেলায় একটু লাগতো। কিন্তু বাবা খুব সুন্দর করে বুঝাতো, কেন ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে এসব। বাবা বলতো, 'যখনই কেউ দামি উপহার দিয়ে খাবে, তখন সে উপহারের সাথে খাবারের মান মিলিয়ে দেখবে, আর মনে মনে হিসেব মেলাবে- উপহারের টাকাটা উঠে এলো কিনা এই ভেবে। উপহার দিতে না হলে এই হিসেবের বালাঈ থাকবে না, মানুষ শুধু তোমাকে ভালোবাসা দেবে'।
.
একটু বড় হয়েই বাবার নীতি ও আদর্শকে ভালোবাসতে শুরু করলাম, বুঝলাম। এভাবে ধীরে ধীরে বিলাসিতাকে বিদায় দিতে শিখেছিলাম, বাবাকে নিয়ে গর্ব হোত, এখনও হয়। ছোট থেকেই বিলাসিতাকে ত্যাগ করেও কষ্টের মাঝে হাসিমুখে ভালো থেকেছি। জিলা স্কুলে প্রথম সারির ছাত্র ছিলাম। দোচালা টিনের ঘরে গরমে সেদ্ধ হয়ে ঘেমে নেয়ে উঠেও ক্লাস এইটে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিলাম। স্কুলের কোন স্যারের কাছে পড়ার সুযোগ হয়নি। প্রথম বাসায় স্যার এলেন ক্লাস টেনে, এসএসসিকে সামনে রেখে। আমার জন্য বাবা তার সবকিছুই বাজি রাখতো, সবরকম চেষ্টা থাকতো আমাকে মানুষ করার। অন্যদেএ বলতে শুনেছি, 'আমার সর্বস্ব দিয়ে ওর (মাথার) মধ্যে পুঁজি ভরে দেবো। এরপর ও ঠিকই করে খেতে পারবে, অনেক বড় হবে'।
.
আজ মনে হয়, বাবা সেই সৎপথে মাথা উঁচু করে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার শিক্ষাটা না দিলে, আজ বাবাহীন এই ৯টি বছর মাকে নিয়ে এই দুর্দিনের পৃথিবীতে হয়তো টিকে থাকতে পারতাম না। বাবার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।
.
#কবি_বাবু_ফরিদী

>> দেব দুলাল গুহ
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:০১
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×