কী মারাত্মক এক নাটকই না মঞ্চস্থ হলো! ভাগ্যক্রমে এ যাত্রায় ষড়যন্ত্র সফল হয়নি।
হিন্দুদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান হোলির দিন কিছু বহিরাগত ঢুকে গেলো, জোর করে রঙ মেখে দেয়া হলো হিজাবী তরুণীর মুখে। সবাই দেখে ভাবলো, পর্দানশীল নারীর সঙ্গে হিন্দুরা ধর্মের নামে সবার সামনে অসভ্যতা করছে! অথচ, পরে দেখা গেলো সেই বখাটে ছেলেগুলো আসলে মুসলিম। গ্রেপ্তার তিনজনের তিনজনই মুসলিম। পুলিশকে অন্তর থেকে ধন্যবাদ জানাতেই হয় এই সময়োচিত পদক্ষেপের জন্য। সরকার সফলভাবে আরেকটি নাসিরনগরের মতো হামলার ঘটনা ঘটার আগেই রুখে দিলো।
৯০%+ মুসলিমের এই দেশে এমনিতেই সংখ্যালঘুরা সবসময় থাকে এক চাপা আতংকে। কখন কি বলে বা করে আবার কোন বিপদে পড়ে! কে না আবার হুমকি দিয়ে বসে, দেশ ছেড়ে পালাতে হয়, অন্যদেশে আশ্রিত হতে হয়! সেই দেশে কোন হিন্দুর এতো সাহস যে সে একজন পর্দানশীল নারীর মুখে রঙ দেয়? এটা কি আদৌ সম্ভব? অথচ এটাই যেন সবাইকে গিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হলো! ৮-৯ বছরের কাছের বড় আপুটিও বিষয়টি ভুল বুঝলো। অথচ সামান্য কমন সেন্সটুকু ব্যবহার করলেই সে বুঝতো এটা নিছক প্রপাগেন্ডা মাত্র।
এমনিতেই রঙ খেলা অনেকটাই কমে গেছে এখন। আমাদের ছেলেবেলায় ফরিদপুরে হোলির দিন ঘোড়ায় বর-কনে সাজিয়ে আনতো, সাথে থাকতো ব্যান্ড-পার্টি বা মাইক। এলাকায় এলাকায় ঘুড়তো সেই দল। অন্যদলকে দেখলে রঙ ছিটিয়ে দিত। যারা রঙ খেলতে চাইতো, তারা বাইরে বের হতো, খেলতো। সেজেগুজে আসার খরচ বাবদ প্রতি বাড়ি থেকে চাঁদা তুলতো। অবশ্য কিছু ছেলেপেলে সবসময়ই থাকে ত্যাঁদড় প্রকৃতির, তারা রাস্তায় কাউকে পেলে বা ঘরের জানালা দিয়ে জোর করে রঙ দিয়ে দিতো। মুরুব্বিরা তাদের বকে দিতেন। সারাদিনের কালেকশনের টাকায় রাতে সবাই মিলে খিচুরি রান্না করে খেত। এই এক আনন্দ ছিল তখন, পড়ুয়া ও ঘরকুনো থাকার কারণে কোনোকালেই যার অংশ ছিলাম না আমি। ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে কেউ কোনোদিন আমার গায়ে রঙ দেয়নি। অথচ এখন এসব কিছু হয় না বললেই চলে। যাও একটু চলে পুরান ঢাকায় ও মফস্বলে, তাও বন্ধ করার ষড়যন্ত্র চলছে কি?
আচ্ছা, রঙ যে খেলবে না সে না খেলুক, যে খেলতে চায় সে খেলুক। এখানে জোরাজুরির কি আছে? হিন্দুদের হোলি খেলায় কোনো বিধর্মী স্বেচ্ছায় রঙ খেলতে গেলেই কি তার ধর্ম যায়? হিন্দু ছেলেটিও তো ঈদের সময় তার মুসলিম বন্ধুটির বাসায় সেমাই-জর্দা খায়, খাশির মাংসও খায় গরুর গোসত খাওয়া বন্ধুর পাশে একই টেবিলে বসে। তাতে কি তার ধর্ম যায়? ধর্ম কি এতই ঠুনকো একটা বিষয়? একটু রঙ খেললেই বা একজনের বাড়িতে আরেকজন একবেলা খেলেই সারাজীবনের নামাজ-কালাম কিংবা পূজা বৃথা হয়ে যায়?
http://www.bdlive24.com/home/details/175538