সেদিনের ঘটনা। মাকে ফরিদপুরে ডাক্তার দেখাবো বলে পরিচিত এক সার্জারির ডাক্তারের কাছে ফেসবুকে জানতে চাইলাম মেডিসিনের ডাক্তার কাকে দেখানো যায়। তিনি যার নাম বললেন, তাঁর নামটি ইংরেজিতে বেশ ক'বার লেখা হয়েছে মেসেঞ্জার অ্যাপে। তো, সেদিনই দেখি সেই মেডিসিনের ডাক্তারের ফেসবুক আইডি আমার বন্ধু সাজেশনে চলে এসেছে! তখন অবাক না হয়ে ৩-৪টা মিউচুয়াল ফ্রেন্ড দেখে ভেবেছিলাম, কাকতালীয় ব্যাপার মনে হয়। কিন্তু আজ কেন জানি বিষয়টা ফেসবুকের ইচ্ছাকৃত বলেই মনে হচ্ছে। খুব সম্ভবত ফেসবুক ঐ নামটি সার্চ দিয়ে আমার মিউচুয়াল ফ্রেন্ড ধরে তাঁকে খুঁজে এনে আমার সামনে দিয়েছে।
মেসেঞ্জার অ্যাপে তো এখন আপনার মোবাইলের এসএমএসও দেখাতে ও দেখতে চায়। মোবাইলের কন্টাক্ট লিস্ট দেখে ফেসবুক আইডি খুঁজে দেয়ার ধারণাও পুরাতন হয়ে গেছে। অ্যামাজন বা গুগলে আপনি যে বিষয়ের ওপর খোঁজেন, দেখবেন আপনি যেই ওয়েবসাইটেই যান না কেন, সেখানে সেই বিষয়ের বিজ্ঞাপনই বেশি বেশি দেখায়। একে বলে 'গুগল অ্যাড সেন্স'। ফেসবুকে আপনি যে টপিকগুলো পছন্দ করেন, তার ওপর ভিত্তি করে আপনাকে নতুন চয়েজ দেয়া হয়। একটু খেয়াল করলেই দেখবেন।
যদি আপনি শুধু মেয়ে আইডি পেলেই অ্যাড পাঠান, তবে আপনার ফ্রেন্ড সাজেশনে দেখবেন একের পর এক অজানা মেয়ের আইডি! আপনি জিমেইলে 'I have attached a file' লিখে কোনো ফাইল যুক্ত না করেই মেইল সেন্ড করতে গিয়ে দেখুন। দেখবেন, জিমেইল আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, 'তুমি লিখেছো ফাইল অ্যাটাচ করেছো, কিন্তু করোনি, করবে এখনি?' তার মানে, গুগল আপনার লেখা প্রতিটি লাইন প্রতিটি শব্দ পড়ছে, আপনার কোনো প্রাইভেসি থাকছে না!
এভাবে, দিন দিন আমরা বন্দি হয়ে যাচ্ছি প্রযুক্তির কাছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা আমাদের পছন্দ-অপছন্দের লিস্ট তুলে দিচ্ছি উন্নত দেশের প্রযুক্তি জায়ান্টদের কাছে। এরপর এসব জায়ান্টরা কোনো গোপন চুক্তির মাধ্যমে 'Jason Bourne', 'I. T.' কিংবা 'Source Code' বা 'Eye in the sky' এর মতো ছবির স্টাইলে তা উন্নত বিশ্বের কোনো সিক্রেট ইনটেলিজেন্ট এজেন্সির হাতে তুলে দিচ্ছে কিনা তা কে জানে?
সেয়েন্স ফিকশন ছবিগুলোই হয়তো একদিন সত্যি হবে। তখন হয়তো কোনো সুপার কম্পিউটার দুনিয়ার সব ক্ষমতা নিজের কব্জায় নিয়ে মানুষকেই তার গোলাম বানিয়ে ফেলবে! আর, মানুষের কল্পনাশক্তির প্রশংসা করতেই হয়; সেইসব সায়েন্স ফিকশন ছবির গল্পকারদের আশংকাই হয়তো সত্যি হতে চলেছে!