আমাদের অনেক জাত থাকতে পারে, আলাদা ধর্ম থাকতে পারে, আমরা ভিন্ন ভিন্ন মতের ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষ হতে পারি, কিন্তু আমরা বাংলাদেশের বাসিন্দারা সবাই বাংলাদেশী। এটাই আমাদের একমাত্র পরিচয় হওয়া উচিত। জাতিতে জাতিতে বিদ্বেষ কাম্য নয়। আজ আমরা বাঙ্গালিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ বলেই আমরাই সব, বাকিরা কিছু না, এইরকম চিন্তাভাবনা নীচু মানসিকতার প্রকাশ। আমরা নিশ্চয়ই নীচু জাতি হিসেবে পরিচিত হতে চাই না।
.
মাননীয় প্রধান বিচারপতি একজন অভিজ্ঞ আইনজ্ঞ। অনেক দিন ধরেই তিনি বিচারকার্যের সঙ্গে জড়িত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার এই সরকারের আমলেই তিনি এই সম্মানজনক পদটি পেয়েছেন। আমি মনে করি তিনি এই পদের জন্য যোগ্য না হলে তাঁকে সরকার বা মাননীয় রাষ্ট্রপতি এই চেয়ারে বসাতেন না। এখন যে কথা উঠছে, তিনি নাকি রাজাকার, তিনি নাকি শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন, এই অভিযোগগুলো সত্য হলে তা তাঁকে নিয়োগ প্রদানের আগেই ভাবা উচিত ছিলো। এখন এসব নিয়ে কথা বললে বরং জনগণ বলবে রায় বিপক্ষে গেছে তাই এমন বলছে। সরকারের এতোসব সাফল্যে কালিমা লেপন হোক, সেটা নিশ্চয়ই চাই না আমরা। প্রতিপক্ষ আরও সুযোগ পাচ্ছে সরকারের সমালোচনা করার, যা কাম্য নয়।
.
আমি সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর রায়টি পুরোপুরি পড়িনি। তবু যতটুকু জেনেছি, তাতে মনে হয়েছে, প্রধান বিচারপতি আসলে রায়ের বিষয়ের বাইরে গিয়েও অনেক কথা বলেছেন, যাতে অনেকবার জাতির পিতার প্রশংসা থাকলেও এবং বিএনপির সমালোচনা থাকলেও কিছু কথা সরকারের বিপক্ষে গেছে এবং তার জন্য সরকার বিপাকে পড়েছে, বিএনপি এতোদিনে একটা ইস্যু পেয়েছে আন্দোলন করার। আমার নিযুক্ত লোক, তিনি যত মেধাবি আর যোগ্য হন না কেন, আমারই সমালোচনা করলে আমার খারাপ তো লাগবেই, অন্তত এই দেশের প্রেক্ষাপটে। এজন্য নির্ধারিত সাংবিধানিক পন্থায় প্রতিবাদ জানানো যায়। কিন্তু তাই বলে আমরা যেন তাঁকে মালাউন বলে গালি না দেই, তাঁর জাতিস্বত্বা নিয়ে কটু কথা না বলি। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, এই মানুষটির দৃঢ় অবস্থান, সাহস ও মেরুদন্ড আছে বলেই স্বাধীনতার এতো বছর পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছাপূরণ হয়েছে, দেশবাসীর আকঙখা পূরণ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। এজন্য তাঁকেও অনেক রিস্ক নিতে হয়েছে, এমনকি গোটা মনিপুরী জাতিই রিস্কে আছে। আবার বলা হচ্ছে, তিনি নাকি পাকিস্তানের তুলনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে হটিয়ে দেয়ার ভয় দেখাচ্ছেন। অথচ এমন কিছু তিনি বলেননি, ভুলভাবে এসেছে বলে জানিয়েছেন এটর্নি জেনারেল। তিনি একটা উদাহরণ দিয়েছেন মাত্র। প্রথম আলোর নিউজে একজনের মন্তব্য তুলে দেই, 'উনিতো পাকিস্তানের সাথে তুলনা করেননি,
পাকিস্তানের বিচার বিভাগের স্বাধীনতার সাথে তুলনা করেছেন...'
.
আমার মনে হয়, সব ভেদাভেদ ভুলে নির্বাহী বিভাগ আর বিচার বিভাগের ভেতর সম্প্রতি সৃষ্ট এই অসন্তোষ অচিরেই দূর হয়ে দেশ গড়ার কাজে, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার কাজে মনোনিবেশ করা দরকার।
দেব দুলাল গুহ / দেবু ফরিদী
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ২:০৬