মানুষের ধর্ম মানবতা, মনুষ্যত্ব। এর চেয়ে বড় কোনো ধর্ম নেই। ধর্মীয় পরিচয় পরে, আগে আমরা সবাই মানুষ। মানুষের বিপদে মানুষই পাশে থাকবে, থাকতে হয়। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিপদে মানুষ হিসেবেই তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে, ধর্মীয় কারণে নয়। এবং সেটা অবশ্যই নিজেদের সামর্থ অনুযায়ী।
.
শিখ ধর্মের অনুসারীদের ত্রাণসামগ্রী প্রক্রিয়াজনিত কারণে ৩ দিন বন্দরে আটকে থাকার পর গতকাল খালাস হয়েছে। প্রতিদিন ৩৫ হাজার শরণার্থীকে খাবার খাওয়ানোর টার্গেট নিয়ে কাজ করছেন শিখ স্বেচ্ছাসেবকেরা।
.
এটা নি:সন্দেহে প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তারা যদি ধর্মের দিকে তাকিয়ে ওদেরকে পর ভাবতো, তাহলে এমন মানবিক আচরণ করতো না। কার ধর্ম সেরা, কারটা ছোট, এই বিতর্কে না নেমে তারা অসহায় মানুষের সেবায় নেমেছে। এটাই মানুষের কর্তব্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর শিখদের যে গুরুদুয়ারি নানকশাহী আছে, সেখানেও প্রতি শুক্রবার প্রার্থনার পর যে যায়, তাকেই বিনামূল্যে পেটভরে খাওয়ায়, জানতে চায় না কার ধর্ম কী।
.
দেরীতে হলেও হিন্দু-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ভারত মুসলিম-আধিক্যের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির সংকট সমাধানে কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়েছে, বাংলাদেশের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে, ত্রাণ পাঠিয়েছে। মিয়ানমারেরও উচিত জাতিগত সংখ্যালিঘুদের ওপর এমন আচরণ বন্ধ করা এবং শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেয়া।
.
ধর্মের কথা বলে যারা সমাজে বিভেদ সৃষ্টি করে, তারা ধার্মিক হতে পারে, কিন্তু কোনোদিনই প্রকৃত মানুষ হতে পারবে না। অন্য ধর্মের বন্ধুর বাড়িতে খেলে ধর্ম থাকবে না, এই কথা যারা বলে তাদেরকে এড়িয়ে চলুন। একাত্তরে বাংলাদেশের ১ কোটি শরণার্থীকে (হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে) আশ্রয় দিয়েছে, খাইয়েছে ভারত। তখন যেহেতু বিপদের দিনে এসব ভেদাভেদ আমরা মানিনি, এখনও মানব না।
.
আমি নিশ্চিত ঐ রোহিঙ্গা শিশুটিকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, তোমার ধর্ম কী, ও উত্তর দেবে 'আমি ক্ষুধার্ত, আমাকে খাবার দাও'।
দেব দুলাল গুহ / দেবু ফরিদী
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:৩৩