আমাকে কেউ গালি দিলেই কি আমি খারাপ হয়ে গেলাম? আমার সম্পর্কে বানিয়ে বানিয়ে বললেই কি সেই কথাগুলো সত্যি হয়ে গেলো? আমিতো নিজে জানি আমি কি, আমি কি করেছি আর কি করিনি, একদিন দুনিয়াও জানবে।
.
ঠিক তেমনি, আপনার ধর্মবিশ্বাস কি এতটাই ঠুনকো (দুর্বল) যে কেউ আপনার ধর্ম নিয়ে বাজে কথা বললেই আপনার ধর্ম খারাপ হয়ে যায়? আপনি তো নিজে জানেন, আপনার সম্প্রদায়ের অন্যরা জানে আপনার ধর্ম কতটা মহান, কতটা বড়। এটুকু জানাই কি যথেষ্ট নয়? আগে নিশ্চিত হোন কেউ কটু কিছু বলেছে কিনা। কেউ যদি কটু কিছু বলেও থাকে, কেন সেটাকে পাগলের প্রলাপ মনে করে কিংবা রাস্তায় একটা পাগলা কুকুর ঘেউ ঘেউ করছে ভেবে এড়িয়ে যেতে পারেন না? পাত্তা না দেওয়াটাই বুদ্ধিমান বিচক্ষণ ও ব্যক্তিত্ববানের লক্ষণ। তা না করে এই যে আপনারা বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছেন ঘটনা নিশ্চিত না হয়েই, এতে কার লাভ হচ্ছে? কেউ কি এজন্য আপনাকে বাহবা দিচ্ছে? আপনার সম্প্রদায়েরই বা ক'জন বাহবা দিচ্ছে? ভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন কি ধিক্কার দিচ্ছে না? আপনি কি তাদের কাছে আতংকের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছেন না? আপনি কি শান্তির ধর্মের প্রতিনিধি হয়েও অশান্তির বার্তা দিচ্ছেন না? তাহলে আর রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতা চালানো দানব আর আপনাদের মাঝে পার্থক্য থাকলো কোথায়? ভেবে দেখেছেন কি?
.
আর এই যে ভাই, আপনাকেই বলছি, যিনি অন্যের ধর্ম নিয়ে বাজে কথা বলছেন। কেনো রে ভাই? আপনার ধর্মেও কি কোথাও বলেছে অন্যের বিশ্বাসে আঘাত দাও? কেন শুধু শুধু আরেকজনের বিশ্বাসে আঘাত দেন? কোথাও কোনো বিষয়ে আপত্তি বা দ্বিমত থাকলে সেটা যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে আলোচনা করতে পারেন, তার মতটাকেও গুরুত্ব দিন, নিজেরটাও জানান। শুধু আপনারটাই ঠিক, বাকিদেরটা ঠিক নয়, এই ধারণা মনে পোষণ করাটাও বোকামি।
.
আমাদের কার ধর্ম কোনটা, এটা নিশ্চয়ই আমরা নিজে বেছে নেইনি জন্মের আগে। জন্ম নিয়ে যে দেখেছি তার বাবা নামাজ পড়েন, সেও নামাজ পড়তে শিখেছি। যে দেখেছি মা স্নান করে জবা ফুল দিয়ে শাখ বাজিয়ে পূজা করতে বসেন, সেও সেটাই করতে শিখেছি। সুতরাং, এই নিয়ে কেন এত বাড়াবাড়ি ভাই? আগে আমরা মানুষ হই। মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়াই।
.
একবার ভাবুন তো, আজ যাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিলেন, এই শীতের রাতে তারা বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে থাকবে কই, খাবে কী?
.
আচ্ছা, রাস্তায় বের হলে কেউ যদি আপনাকে সালাম না দেয়, আপনি কি সবাইকে ধরে ধরে মারবেন সালাম না দেয়ার জন্য? এভাবে কি মন থেকে সালামটা সে আপনাকে দেবে? শ্রদ্ধা অর্জন করে নিতে হয়। আপনি আপনার মতকে জোর করে অন্যের ওপর চাপিয়ে দিতে পারবেন না, দিতে গেলে সে আপনাকে আরও ঘৃণা করবে। আপনি তাকে বোঝানোর চেষ্টা করতে পারেন। আপনার আচরণ আপনার কথাবার্তা দেখে অন্য সম্প্রদায়ের মানুষ আপনাকে ও আপনার ধর্মকে শ্রদ্ধা করবে, মানবে। এটা মাথায় রাখবেন।
.
সবশেষে আমার নিজের লেখা কবিতা থেকেই দুটি লাইন তুলে দেই:
'কোনো ধর্মই অশান্তিরে দেয় না তো প্রশ্রয়,
বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী তুমি, জেনেছো নিশ্চয়।
*দেব দুলাল গুহ / দেবু ফরিদী।