ঘুমের মধ্যেই শুনতে পেলাম খচখচ শব্দ। কান সজাগ করেই বুঝলাম, লেজ নাড়িয়ে ঘরময় ঘুরে বেড়াচ্ছেন ইঁদুর মশাই। আর যখন যা খুশি দাঁত দিয়ে কেটে ফেলছেন। ঘুমটা ভেঙে গেলো। লাইট জ্বালানোর ইচ্ছেটা আলসেমিতে মারা গেলো। মোবাইলের আলোতেই দেখি, টেবিলের ওপর রাখা লেক্সাস বিস্কুট প্যাকেটসহ প্রায় অর্ধেকটা খেয়ে ফেলেছে সে! অত:পর লাইট জ্বেলে পানি খেয়ে মশারির ভেতরের মশা মেরে তারপর আবার ঘুুমানোর চেষ্টা, আশা করছি সফল হবে!
.
আমার জায়গায় আজ হুমায়ূন আহমেদ থাকলে তিনি এত অল্প কথায় এই ঘটনাটিকে ছেড়ে দিতেন না, আমি নিশ্চিত। তিনি গল্প বানাতেন। সেই গল্পে রহস্য থাকতো, অদ্ভুত চরিত্ররা থাকতো। ‘দেবী’র মতো আরেকটা রহস্যঘেরা অনন্য উপন্যাসই হয়তো লিখে ফেলতেন তিনি। নিজেই সাপ ডেকে কামড় খাইয়ে আবার ওঝা হয়ে ঝাড়তেন (পড়ুন মিসির আলী হয়ে রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা করতেন)। মাঝে কিছু সরল বাক্যালাপ থাকতো, অদ্ভুত কিছু কান্ডও থাকতো। অতিরিক্ত সুন্দরী মেয়ে থাকতো রূপার মতো, যারা হিমুর মতো পকেটহীন হলুদ পাঞ্জাবি পড়ে রাস্তায় রাস্তায় রাত-বিরাতে হেঁটে বেড়ানো এলোমেলো ছেলেরই প্রেমে পড়তো। অতি অবশ্যই এমন কোনো মহিলাও থাকতেন, যিনি অসহ্য গরমে গায়ে কোনো জামা-কাপড় রাখতে পছন্দ করেন না!
মোদ্দাকথা, হুমায়ূন আহমেদের কথার যাদুতে একটি অতি সাধারণ গল্পও হয়ে উঠতো অসাধারণ, বিশেষ করে তরুণদের কাছে। এখানেই তিনি মহান কথাশিল্পী।
.
হুমায়ূন আহমেদের সাথে পরিচিত হই কলেজে পড়াকালীন সময়ে। ছোট থেকে কড়া শাসনে বড় হয়েছি। পাঠ্যবই বাদে উপন্যাস পড়ায় অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা ছিলো, এমনকি বাবার লেখা উপন্যাসও ভার্সিটিতে ওঠার আগে পড়ার অনুমতি মেলেনি (লুকিয়ে একটা পড়েছিলাম যদিও!)। হিমুর বইগুলো পড়লাম কলেজে পড়াকালীন, হোস্টেলের বন্ধুরা বইমেলা থেকে কিনে আনতো, আমি নিয়ে নিয়ে পড়তাম। ভালো লাগতো, আবার কিছু লেখা পড়ে মনে হতো তাঁর মতো বড় মাপের লেখক এতোটা নিরাশ কেন করলেন? হিমুর কাহিনী পড়ে কত ছেলেই না নিজের জীবনের প্রতি উদাসীন হয়ে রাতের রাস্তায় হেঁটেছে! আমিও হেঁটেছি। কিন্তু রূপার মতো কাউকে পাইনি। উলটো দেখা গেছে রেজাল্ট খারাপ করেছি। তখন মনে হয়েছে গল্পগুলো অবাস্তব, তবুও পড়তে ভালো লাগতো। তরুণ প্রজন্মকে তিনি বই কিনিয়ে পড়িয়েছেন, বইমেলায় টেনে এনেছেন। এটাই একজন গল্পকার ঔপন্যাসিক হিসেবে তাঁর সার্থকতা।
.
১৩ নভেম্বর ছিল হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন। তাঁর মৃত্যুদিন ১৯ জুলাই। অবাক করা বিষয়, আমার বাবা সব্যসাচী লেখক ও কবি বাবু ফরিদীর জন্মদিন একদিন আগে (১২ নভেম্বর), কিন্তু মৃতুদিবস একদিন পরে (২০ জুলাই)! তাই দিনগুলো বেশি স্মরণীয় আমার কাছে। আমি দুজনেরই আত্মার শান্তি কামনা করি। তাঁরা বেঁচে থাকুন তাঁদের কর্মের মাঝে।
.
প্রিয় অভিনেত্রী Meher Afroz Shaon তাঁর স্বামীকে বাঁচিয়ে রাখার মতো অনেক কিছুই করছেন, আরও করবেন বলে আমার বিশ্বাস; যেমনটি করছেন হুমায়ূনপুত্র নূহাশও। ভালো থাকুন মিসির আলী, ভালো থাকুন হিমু, বাকের ভাই! ভালো থাকুক হুমায়ূন আহমেদের অনন্য সৃষ্টিগুলো।
+দেব দুলাল গুহ(দেবু ফরিদী)