যাকে কেউ 'স্যার' বলে সম্বোধন করে না, তাকে প্রাইভেট ব্যাংক আর মোবাইল ফোনের কাস্টমার কেয়ার সার্ভিস স্যার বলে ডাকে। হটলাইনে কল করতেই ওপার থেকে বিনয়ী ভঙ্গিতে ছেলেটি বা মেয়েটি জানতে চায়, 'স্যার, আপনাকে কীভাবে সাহায্য করতে পারি?' একজন রিক্সাচালক ফোন করলেও তারা তাকে স্যার বলেই ডাকবেন, এটাই নিয়ম। কারণ, সেও তাদের একজন সম্মানিত কাস্টমার।
.
আগে এসএমএসেও 'ডিয়ার স্যার' কথাটি লেখা থাকতো, কিন্তু এখন সেখানে গ্রামীনফোন এয়ারটেল ইত্যাদি লেখে 'ডিয়ার কাস্টমার'! আপনার মতো আমিও আশাহত হই, স্যার থেকে ডিরেক্ট কাস্টমার? সাহেবি ভাবখানা মুহূর্তেই উবে যায়!
.
রাজনীতিতে আর সাংবাদিকতায় সিনিয়ররা হচ্ছেন 'ভাই', তাঁদেরকে দেখলে আদাব সালাম দেওয়া আর হাত মেলানো মানে তাঁদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন। কিন্তু সরকারি চাকরিতে বিশেষ করে ক্যাডার সার্ভিসে বড়দের অবশ্যই 'স্যার' বলে সম্বোধন করতে হবে, নচেৎ শৃঙ্খলা ভঙ্গ হবে। এমনকি জুনিয়র সিনিয়রের দিকে হাত মেলানোর উদ্দেশ্যে আগে হাত বাড়িয়ে দিতে পারবে না, এটা অশোভন। সিনিয়র হাত বাড়ালে তবেই জুনিয়র হাত মেলাবেন।দারুণ নিয়ম। আর যারা শিক্ষকতায় আছেন, তাঁরা তো উঠতে বসতে 'স্যার' ডাক শুনতে অভ্যস্ত! তবে নিজ এলাকায় পোস্টিং হলে সমস্যা। এলাকার ভাই-ব্রাদারদেরকে দিয়ে স্যার বলাতেও ইচ্ছা করে না, আবার না বলালেও ইজ্জত থাকে না! এলাকার মুরুব্বিরা কেউ কেউ ডাকে 'মাস্টর' বলে। তাঁদের ভাষ্য, 'সেদিনের পিচ্চি, আমার মাইয়ার মাস্টর হইছে, তাতে কি, স্যার ক্যান ডাকতে হইবো?'
.
আমি শুধু ভাবি, আহ, আমার যদি একটা আলাদীনের চেরাগ থাকতো! প্রদীপটা ঘষা দিলেই যদি বিকট এক দৈত্য এসে সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করতো, 'মুহাহাহাহা... স্যার, বলেন কীভাবে আপনার সেবা করতে পারি?' আমি তখন ব্যাটাকে জম্পেশ একটা ধমক দিয়ে বলতাম, 'তুমি তো মিয়াঁ আদব কায়দা শেখো নাই! স্যারের সামনে কেউ এভাবে হাসে? যাও মিয়াঁ, ফাউন্ডেশন ট্রেনিং কইরা আসো! আর, আরেহ আরেহ, ফরমাল ড্রেস কই তোমার?'
দেব দুলাল গুহ / দেবু ফরিদী
তবে আমেরিকা থেকে প্রকৌশলী সুকোমল মোদকদা জানিয়েছেন,
আমেরিকাতে মানুষ বসদেরকেও স্যার বলে না। স্যার শব্দটা এখানে খুব অল্পই ব্যবহৃত হয়। বসদেরকে ও জুনিওরদেরকে আমরা সবাই নাম ধরে ডাকি। কারণ তারা বেশী পরিচিত।
অল্প পরিচিতদেরকে মিঃ লাস্ট-নাম ধরে ডাকাটাই প্রচলন। তবে তার/তাঁর যদি বিশেষ অর্জিত পদবি থাকে যেমন ডঃ, প্রফেসর (অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, আসোসিয়েট প্রফেসর, বা প্রফেসর সবাই এই কাতারে পড়ে), স্যার (নাইট উপাধিপ্রাপ্ত্ বা অনুরূপ কোন পদবি তাহলে তাঁকে কম ঘনিষ্ট সবাই সামনে বা আড়ালে ডঃ লাস্ট-নাম বা প্রফেসর লাস্ট-নাম বলে ডাকে। বৃটিশ নাইট উপাধীপ্রাপ্তদের অবশ্য স্যার লাস্ট-নাম বলে সম্বোধন করতে হয়। প্রেসিডেন্টকেও মিঃ প্রেসিডেন্ট বলে সম্বোধন করতে হয়। প্রেসিডেন্ট ওবামা সামনে না থাকলে তাঁর প্রসঙ্গে বলতে হবে "প্রেসিডেন্ট ওবামা" আর তাঁর সামনে তাকে উদ্দেশ্য করে কথা বললে বলতে হবে মিঃ প্রেসিডেন্ট।
স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের শিক্ষককে মিঃ লাস্ট-নাম ধরে ডাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের শিক্ষককে প্রফেসর লাস্ট-নাম বা ডঃ লাস্ট-নাম ধরে ডাকে। সামনাসামনি কখনও কখনও শুধু প্রফেসর বলে সম্বোধন করে।
কোন ছেলে যদি তার বাবাকে মিঃ লাস্ট-নাম হিসাবে ডাকে তার অর্থ সে বাবা-ছেলের সম্পর্ক অস্বীকার করে দূরের কাওকে যেমন মিঃ লাস্ট-নাম হিসাবে ডাকা হয়, সে তেমনি সম্বোধন করছে। এই ক্ষেত্রে মিঃ শব্দটা একটা গালি।
আমেরিকাতে কাস্টমার সাপোর্ট বা হোটেল রিসেপশনে অনেক সময় তাদের অপরিচিত কাস্টমারকে "স্যার" সম্বোধন করে যেটা সম্প্রতি আমাদের দেশেও গেছে।
আমেরিকাতে স্যার মানে তৈলবাজি নয়।
অনুরূপভাবে ম্যাডামের ক্ষেত্রেও একই রকম নিয়ম। তবে ম্যাডাম শব্দটা অনেক সময় "মিসেস লাস্ট-নাম" কে প্রতিষ্ঠাপন করে যেমন করে বাংলাদেশে "স্যার" "মিঃ লাস্ট-নাম" কে প্রতিষ্ঠাপন করে।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:১০