somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারী দিবসে সকল সংগ্রামী ও প্রগতিশীল নারীর প্রতি রইল শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা

০৮ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জন্মগ্রহণের পর মানব শিশু কান্না করে কেন? (১) মায়ের সঙ্গে ১০ মাস ১০ দিনের নাড়ির সম্পর্ক ছিন্ন হবার বেদনায়, (২) বাবা-মা ও সমাজের চোখে অবাঞ্ছিত হয়ে জন্ম নেওয়ার হতাশা থেকে (মেয়ে শিশু), (৩) বড় হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে পরিবারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিতে হবে এই দুশ্চিন্তা থেকে! (ছেলে শিশু)

জন্ম নিয়েই নিশ্চয়ই শিশুর মাথায় এসব ভাবনা আসে না। তবে হাস্যকর মনে হলেও বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে ২ ও ৩ নম্বর কারণকে একেবারে অবহেলা করা চলে না। একটি মেয়ে অধিকাংশ বাবা-মায়ের কাছেই এখনও অবাঞ্ছিত, অনাকাংখিত। ছেলে জন্ম নিলে সে সংসারের হাল ধরবে, আর মেয়েকে অনেক খরচ করে বিয়ে দিতে হবে—এই চিন্তা এই আধুনিক যুগেও মানুষ করে। মেয়েকে এখানে সম্পদ বলে ভাবা হয় না। পবিত্র ধর্মগুলোতেও নাকি নারীকে পুরুষের চেয়ে কম মর্যাদা দেওয়ার কথা বলা আছে। ইসলাম ধর্মমতে বিবি হাওয়ার জন্ম হয় প্রথম সৃষ্ট মানব আদমের বুকের পাঁজরের হাড় থেকে। সেদিন এক মুরুব্বি এই গল্প শুনিয়ে বললেন, পাঁজরের হাড় বাঁকা হয়, আর এজন্যই মেয়েরাও স্বভাবে বাঁকা এবং পুরুষের চেয়ে কমজোর। একথা বলেই মুরুব্বি একগাল হেসে নিলেন। আবার একই ধর্মমতে কম হলেও মেয়েরা বাবার সম্পত্তির ভাগ পায়। কিন্তু দেখুন এই দেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মাঝে বাবার সম্পত্তির ভাগ শুধু ছেলেরা পায়, মেয়েরা পায় না। তাদেরকে শুধু বিয়ের সময় সোনা-দানা এটা-ওটা দেয়া হয়। যদিও হিন্দু ধর্মে নারীকে মায়ের আসনে বসিয়ে পূজা করা হয়।

আমরা ভুলে যাই মেয়েরাও এখন পুরুষদের সাথে সমানে সমানে এগিয়ে চলেছে। বর্তমানে ফোর্বস ম্যাগাজিন প্রকাশিত বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধরদের তালিকায় রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন ও যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরেই আছেন জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মারকেল, যিনি একজন নারী এবং ২০০৫ সাল থেকে জার্মানির সর্বোচ্চ এই আসনে আছেন। আমাদের দেশের সরকারপ্রধান, জাতীয় সংসদের স্পীকার, বিরোধী দলীয় নেত্রী, অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির প্রধান একজন করে নারী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো এই দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রধান ও প্রবীণ নেতাদের একজন। উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রীতিলতা ওয়াদ্দের ও বিপ্লবী ইলা মিত্রের অবদান পুরুষের চেয়ে কম ছিল না। এভাবে বিসিএস থেকে শুরু করে প্রাইভেট জব, সামরিক-বেসামরিক সকল পেশায়, সাংবাদিকতার মতো ঝুকিময় পেশায় ভালো করে তাকালেই চোখে পড়ে মেয়েদের জয়জয়কার। রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থার প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর এমন সফলতার উদাহরণ ঢের দেওয়া যাবে। সবচেয়ে বড় কথা, শুধুমাত্র মেয়ে জাতিই মা হতে পারেন, সন্তান জন্ম দেওয়ার কষ্ট ভোগ করার সৌভাগ্য স্রষ্টা শুধু তাঁদেরকেই দিয়েছেন।

তবুও দিনকে দিন সমাজে মেয়েদের হেয় প্রতিপন্ন করা হচ্ছে। মেয়েরা ইচ্ছামতো সেজে পছন্দের পোষাক পড়ে রাস্তায় বের হতে পারছে না। শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে সকলের কুনজর থেকে বাঁচতে তখন নারী কাপুরুষের মতো আশ্রয় নিচ্ছে পর্দার অন্তরালে, সঙ্গীত সাধনা আবৃত্তিচর্চার মতো মননশীলতার বিকাশ থেকে পিছিয়ে আসছে।দিনকে দিন যেন আবার আমরা ফিরে যাচ্ছি সেই বেগম রোকেয়ার ‘অবরোধবাসিনী’র যুগে! এই দেশে, যে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নারীদের গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ ছিল, সেই দেশে? ভাবতেও কষ্ট হয় ইদানিং। আজকাল সবাই যেন শেকল ভাঙ্গার গান গাইতে ভুলে গিয়ে স্বেচ্ছায় শেকলে জড়িয়ে নিচ্ছে নিজেকে!

একদিন বেগম রোকেয়া পেরেছিলেন, আগামীর রোকেয়ারাও পারবে। সবার আগে বেরিয়ে আসতে হবে পরিবারের বাঁধা ডিঙ্গিয়ে, তারপর সমাজ, রাষ্ট্র।

মেয়ে,
তুমি সুন্দর, তাই তোমার দিকে একটি ছেলে তাকাবেই। এটা জীনগত। তোমাকেই খুঁজে নিতে হবে সেই দৃষ্টিতে কী আছে—প্রশংসা ও সম্মান, নাকি অবজ্ঞা ও কুনজর। এতে তোমার কোনো দোষ নেই। তুমি লাখে কোটিতে বীর সন্তানের জন্ম দিয়েছো, তুমি ভয় পেলে চলবে কেন?

নারী দিবসে এই পৃথিবীর সকল সংগ্রামী ও প্রগতিশীল নারীর প্রতি রইল আমার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। আপনারাই পেরেছেন এবং আপনারাই পারবেন। শুভকামনা।

লেখাঃ দেব দুলাল গুহ
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১১:১৮
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×