কোলকাতার রাস্তাগুলো সুন্দর, ছিমছাম, পরিষ্কার। গাড়িগুলো সব ট্রাফিক আইন মেনে চলেছে, বাতি লাল হলে থামছে আবার সবুজ হলে চলছে। ধুলাবালি নেই বললেই চলে, দূষণ নেই! যানজট খুব একটা চোখে পড়ছে না এদিকটায়। বাস সার্ভিস খুবই সস্তা বলে মনে হলো। মানুষগুলো অধিকাংশই হেল্পফুল। তবে ওদের বাংলা আর আমাদের বাংলার যে পার্থক্য, কথা শুনে তা বুঝতে পারা যায়। বাটপারগুলো এটা বুঝে ফেললেই সমস্যা, নানাভাবে বিপদে ফেলে টাকা ঝারার ধান্দা করবে!
এই শহরে কেউ মনে হয় শুয়ে বসে থাকে না। সবাই আছে দৌড়ের ওপর। সবাই কাজপাগল। বাসে ভিড়ের মধ্যে বয়ষ্ক মহিলারাও রড ধরে ঝুলছে। জিন্স টিশার্ট পড়া স্মার্ট আর সুন্দরী মেয়েগুলোর পরাণে কোনো ভয়-ডর নেই। যেখানে খুশি একা একা চলে যাচ্ছে, অনেক রাতেও একা একা হাঁটছে। ওদের স্বাধীন চলাচল দেখতে ভালোই লাগে। বাসের কন্ডাক্টর নতুন মানুষ পেয়ে এক টাকাও বেশি রাখছে না। কেউ টাকা না দিয়ে বাসে চড়ছে বলে মনে হলো না। সবাই নিজ দায়িত্বে টিকিট কাটছে।
কোলকাতার মেয়েরাও সুন্দর। স্মার্ট, চেহারায় যেন বংশের আভিজাত্যের ছাপ। আজ একটি মেয়ের আচরণে রীতিমত মুগ্ধ হলাম। নিতান্তই অল্পবয়সী, স্কুল বা কলেজ থেকে ফিরছিলো। নিউ টাউনের শঙ্কর নেত্রালয় থেকে ফেরার পথে মা আর আমি ভাবলাম, যাবার সময় তো ট্যাক্সিতেই গেলাম, এখন নাহয় বাসে গিয়ে দেখি।হাসপাতালের অভিজ্ঞতা আরেকদিন শেয়ার করবো। তো, বেশ কিছুক্ষণ পর ডিএন ২ বাই ১ বাসটি এলো। উঠলাম। ওমা, বাসে সে কী ভিড়! এমন ভিড়ে আমি অভ্যস্ত হলেও মা তো নয়! বসার জায়গা নেই। রড ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে মায়ের খুব কষ্ট হচ্ছিলো। এমনিতেই শরীরটা খারাপ, তার ওপর আবার চোখের সমস্যা। মাকে আমিই ধরে রাখছিলাম। এই দেখে আমাকে অবাক করে দিয়ে মায়ের সামনে বসা স্কুলপড়ুয়া (নাকি কলেজ?) মেয়েটি উঠে দাঁড়িয়ে মাকে সিট দিলো। ড্রেসটা সুন্দর-- সাদা টাইটফিট জামা, ব্লু প্যান্ট ইন করা আর একটা টাই গলায়। আমি শুরুতে ভেবেছিলাম ও মনে হয় নেমে যাবে। পরে দেখি তা নয়, উঠে গিয়ে আমার পাশে দাঁড়িয়ে গুরুজনকে জায়গা করে দিলো। আমি মুগ্ধতা নিয়ে তাকালাম এবং মনে মনে ওকে ধন্যবাদ দেয়ার উপায় খুঁজতে লাগলাম। এমনিতেও মেয়েটি একটু পরপর আমার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছিলো। এখন আমি আগ বাড়িয়ে ধন্যবাদ দিলে ও হয়তো অন্য কিছু ভেবে বসতেও পারে।তাই চুপ রইলাম।
কিছুক্ষণ পর আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, তার সামনের সিটটা খালি হলো। এখানে আশপাশ থেকে সিট দখলের জন্য ঠেলাঠেলি দেখলাম না, সামনের জনকেই সিট ছেড়ে দেয়া হয়। আমি করলাম কি, নিজে না বসে আমার পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললাম, 'তুমি বসো'। ওদের ওখানে অপরিচিতকে 'আপনি' না ডেকে 'তুমি' বললে ওরা কিছু মনে করে না, বরং আরও আন্তরিক মনে করে খুশি হয়। মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পেরে সিটে গিয়ে বসলো।
এভাবেই আমি ওকে ধন্যবাদ জানালাম। পরে ওর ফোন আসাতে বুঝলাম, ও আসলে হিন্দিতে কথা বলে, হয়তো বাংলাটাও বোঝে। বাকিটা পথ মেয়েটি আমার মায়ের পাশে বসে আর আমি সামনে দাঁড়িয়ে গেলাম। কোলকাতার মেয়েদের সম্পর্কে খুব সুন্দর ধারণা দিলো ও আমাকে। নাম জানা হয়নি। আর কোনো কথাও হয়নি।
ও কোলকাতার মেয়ে্
তোমায় ধন্যবাদ।
[ অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল নাই, তাই ছবি তুলতে পারছি না। মনটা খারাপ। ]
লেখাঃ দেব দুলাল গুহ।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৩:১২