somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোলকাতার দোকান থেকে ৫০০ মিষ্টি কেনার বৈপ্লবিক গল্প!

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৫:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মিষ্টি কিনতে গেলাম কোলকাতার এক দোকানে।বিরাটি অঙ্গনা মোড়ের মিষ্টির দোকানিকে শুধালাম, 'দাদা, কিলো কতো?' দোকানি দাদা হা করে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে। পরক্ষনেই বুঝে গেলেন, 'ওম্মা! দাদা নির্ঘাত বাংলাদেশ থেকে এয়েচেন'। কাজেই, উত্তর দিলেন, 'দাদা, একানে তো কিলো দরে বিক্রি হয় না, পিস পিস হয়'।

আমি বললাম, 'বুঝতেই পারছেন, বাংলাদেশ থেকে এসেছি! এবার এক কাজ করুন, ৫শ দিন।' আমি যে মিষ্টিটা দেখাচ্ছিলাম, সেটায় রস আছে। তাই দেখে দোকানি বললো, 'এটা বেশিদিন রাখা যাবে না, নষ্ট হয়ে যাবে'। অর্থাৎ, ওরা এই ৫০০ মিষ্টি অনেকদিন রেখে খায়। দোকানির আন্তরিকতা দেখেও মুগ্ধ হলাম, লোকটা বাটপার নয়। বেশ, বললাম, 'এই যে, এই ছানার সন্দেশগুলো দিন।' দোকানি বললো, 'তাহলে ওজনে যা হয় সেই মতে দিয়ে দিচ্চি'।

তারপর ৫শ মিষ্টি নিয়ে ছুটলাম গন্তব্যে। প্যাকেট মিষ্টি দেখে সবাই খুশি। আমাকেও খেতে দিলো। খেয়ে বুঝলাম, এক পিস খেলে আর খাওয়া লাগে না, অমৃত! আরও একটি দিতে চাইলে আমি না বলে দিলাম।

কোলকাতার চায়ের কাপ ছোট বলে আমরা অনেকেই হাসাহাসি করি। অথচ সেদিন সকালে ফরিদপুর থেকে জার্নি করে বিকেলে দমদম এসে এই এক কাপ চা খেয়েই চোখের সব ঘুম দূর হয়েছিলো! কাপ ছোট হলে কি হবে, খুব ঘন চা, ভালোই লাগে খেতে। ছোট কফির কাপে ৫ টাকা, আর মাটির পাত্রে ৬টাকায় চা খেলাম। এক পিস কোন আইসক্রিম, দাম মাত্র ১০ টাকা, দুপুরে একটা খেয়ে রাতে আবার প্রায় ১ মাইল হেঁটে গিয়ে আরেকটা খেয়েছি! এখানে অনেক কিছুর দাম আমাদের চেয়ে কম, তাই ওরা বলে এখানে টাকা রোজগার করাও নাকি অনেক কঠিন!

আর বাস ভাড়া শুনলে অবাক হতে হয়, এতো রিজনেবল। সেটা তো গতকালই বললাম। হলুদ ট্যাক্সি আছে, সেই পুরাতন অ্যাম্বাস্যাডর, কোলকাতার ব্র্যান্ড! আছে উবার আর অলোও। রিক্সা আছে, ক্রিং ক্রিং নেই, আছে প্যাপু প্যাপু! টেনে নেওয়া রিক্সা এখনও চোখে পড়েনি, কোথায় পাবো? ভিআইপি রোডের ফুটপাতগুলো উঁচু উঁচু, যাতে ক্যালরি খরচ বেশি হয়। বাসগুলোতে পিচ্চি পিচ্চি বাচ্চারা যেভাবে স্মার্টলি ওঠানামা করে, দেখে ভালো লাগে। ওরা ভীষণ চটপটে।

আজ এক নার্সারি পড়ুয়া বাচ্চাকে নিয়ে ওর মা বাসে উঠলো। বাচ্চাটা নিজেই বাসের ব্রেকের তালে ভারসাম্য রাখছে দেখে অবাক হলাম। সামনেই বাসের ইঞ্জিন কভার, যা টপকে সিটে যেতে হবে। বাচ্চাটার মা বললো, 'কাম অন! গেট আপ!' আর অমনি বাচ্চাটা ইঞ্জিন কভারে উঠলো, আমি হাত ধরলাম, ও সিটে গিয়ে বসলো। তারপর ওর মা ওর পাশে বসলো। তারপর বাচ্চাটার বায়না, 'মোবাইলটা দাও না!' মা বকা দিলো, আবার মোবাইলও দিলো। মোবাইল নিয়েই তারপর সে ইউটিউবে স্পাইডারম্যানের কার্টুন দেখা শুরু করে দিলো! স্কুলের কাছে আসতেই আবার ঝটপট নেমেও গেলো। আমি তুলনা করছি না, আমার দেশের বাচ্চারাও চালু, কিন্তু ওদের ভালোটাকেও ভালো বলতে হবে। বাচ্চাটার ইনোসেন্ট হাসি এখনও চোখে ভাসছে! আর ভাসছে কালকের বাসের ঐ মেয়েটির মুখ।

লেখাঃ দেব দুলাল গুহ
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০৪
২০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×