somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধার্মিকের বেশ ধরলেই সে ভালো মানুষ হয় না

১৯ শে মে, ২০১৮ রাত ১১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফরিদপুরের জনতা ব্যাংকের মোড় আর স্বর্ণকারপট্টির মাঝের রাস্তায় দুটি টং দোকানে চটপটি আর হালিম বিক্রি হয়। প্রচুর ভিড় জমে দেখি হুজুরদের দোকান দুটিতে। দাম একটু বেশিই মনে হয় আমার। এক দোকানে চটপটি ২৫, আরেকটায় ৪০। হালিম একটায় ৬০, তো আরেকটায় ৮০ টাকা। কিন্তু স্বাদ খুব ভালো। এতোদিন ঐ দোকান দুটি থেকে চটপটি খেলেও আজই প্রথম হালিম খেলাম। কিন্তু অভিজ্ঞতাটা ভালো হলো না।
.
রাত ৮টার দিকে প্রেসক্লাব হয়ে স্বর্ণকার পট্টি দিয়ে হেঁটে আসছিলাম। মনে পড়লো সকালে খাওয়ার রুটি নেই, ঢুকলাম ওয়েসিসে। ৩০ টাকায় ব্রেড নিলাম। সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পথে, ইচ্ছা হলো চটপটি খাই। গেলাম মামুনের টং দোকানে। বললাম, 'চটপটি দাও তো ভাই'। সে জানালো, 'চটপটি নাই ভাই, হালিম দেই?' একটু ভেবে বললাম, 'দাও, খাসি তো?' মামুন জানালো, 'খাসি ছাড়া আর কিছু আমি করি না ভাই'। আমি বললাম, 'ঠিক আছে, ভালো করে এক বাটি দাও তো'!
.
মামুন হালিম দিলো, এক বাটির গলা অবধি। দেখি, ভাজা পিয়াঁজ নেই, টক নেই, ডিমও নেই! জিজ্ঞেস করলাম, ব্যাপার কী! ও বললো, 'ভাই, ইফতারের আগে আগেই সব শেষ হয়ে যায়, কিচ্ছু নাই'। মনে মনে বললাম, 'তাহলে এখনও বসে আছো কেন? আছৈ যখন, কাছেই তো বাজার, নিয়ে আসতা!'
.
যাহোক, ফিরিয়ে তো আর দেয়া যায় না। আমারই উচিত ছিলো আগেই খেয়াল করা যে এসব নাই। দোকানের পিচ্চিটাকে বললাম, 'ভাই তুই ঐ পাশের দোকানটায় যা তো, ঐ দোকানির থেকে লেবু নিয়ে আয়। ওরা জানালো, লাভ নাই, লেবু নাকি দিবে না। আমি বললাম, টক ছাড়া কীভাবে খাবো? আমাকে দেখিয়ে হুজুরকে বল এক পিস লেবু দিতে। না দিলে বলবি ভাই টাকা দিয়ে দেবে। ছেলেটা গেলো লেবু আনতে, আর দোকানি আমার সাথে শুরু করলো খোশগল্প।
.
দোকানি মামুন ঐ টং দোকানি সম্পর্কে আমার কাছে অনেক অভিযোগ করলো। সে নাকি একটা ছোটলোক, অকৃতজ্ঞ। ওর ভাইকে আর ওকে নাকি সে হালিম আর চটপটি রান্না করা শিখাইছে, এখানে বসাইছে। এখন এক পিস লবণ চাইলেও দেয় না! সে আরও বললো, ডিসি স্যার নাকি একদিন এমন লেবু দেয় নাই বলে ওকে বলছে যে ওর দোকান উঠায়ে দেবে! বিশ্বাস করিনি, কারণ ডিসিদের নাম ব্যবহার করে এমন বানিয়ে কথা অনেকেই বলে ফাপর নিতে। জিজ্ঞেস করলাম, স্যার কি নিজে এসেছিলেন? সে ভুল জায়গায় চাপা মেরে ফেলেছে বুঝে চুপ হয়ে গেলো।
.
ভাললাম, যাহোক, তাই বলে ঐ দোকানি এক পিস লেবু দিলো না! ভাজা পিঁয়াজ, টক, ডিম ছাড়াই খাওয়া শেষে একশ টাকার নোট দিলাম, ২০ টাকা ফেরত পেলাম। কমিয়ে রাখার কথা বলিও নাই, রাখেও নাই। উলটো ঘুরে আসার সময় শুনলাম, পিচ্চিটা ওর মালিককে বলছে, 'কমাইয়া রাখেলন না?'
.
আমার একটু সন্দেহ হলো। ফিরে এসে এগিয়ে গেলাম ঐ দোকানটায়, বেস্ট বাইয়ের সামনে, যেটা থেকে লেবু আনতে পাঠিয়েছিলাম। গিয়ে বললাম, 'তুমি তো দাম কম রাখো ওর চেয়ে, ব্যবহারও ভালো। কিন্তু এই সংযমের মাসে তুমি হুজুর মানুষ, এক পিস লেবু দিলা না ভাই, এই তো কত লেবু!' হুজুর আমাকে অবাক করে দিয়ে বললো, 'আমার কাছে তো কেউ লেবু নিতে আসেই নাই! আসলে কি আমি ফিরাইয়া দেই এক লেবুর জন্যে?'
.
বিষয়টা মোটেই ভালো লাগলো না। ডাকালাম মামুনের দোকানের পিচ্চিকে। সে ভয়ে কাছে না এসে দূরে দাঁড়িয়ে রইলো মাথা নিঁচু করে, স্বীকার করলো সে আসলেই আসেনি। আমিও তখন খেয়াল করিনি, কথা বলছিলাম মামুনের সাথে! এই দোকানিকে বললাম, 'তোমরা দুজনই হুজুর, তোমাদের থেকে তো কেউ এমন অধর্মের কাজ আশা করে না ভাই!' সে বললো, 'আসলে নবী রসুলের পথে আইলেই আর টুপি পড়লেই হয় না ভাই। এরাই আমাগো ধর্মরে ডুবায়।' পাশে আরেকজন লোক, মধ্যবয়স্ক। বললেন, 'আমিও বিষয়টা লক্ষ কইরা আইলাম। এ কেমন কথা!' আমি বললাম, 'তোমরা দুজন এক ব্যবসা করো বলে নিজেরাই নিজেদের এভাবে দুর্নাম করছো! তোমার ধর্ম তো তোমাকে এ শিক্ষা দেয় না! কেন এসব করো ভাই? ভিন্ন ধর্মের কেউ হলে তাকে তো বসতেই দিবা না!' ফেরার পথে মামুনকে বললাম, 'তোমাকে আমার আর কিছু বলার নাই'। ভাবলাম, এই এলাকায় অনেক ভিন্ন ধর্মী হিন্দু খৃষ্টানের বাস। তারা অনেকেই গরু খায় না। এমন মিথ্যা যে বলতে পারে, সে কি খাসি বলে অন্য কিছু মিশিয়ে দিতে পারে না?
.
আমার মনে পড়ে সেই ছেলেবেলার কথা। আমার বাবা কবি বাবু ফরিদীও দারুণ হালিম রান্না করতো। বাসায় এখনও বিশাল দুটি পাতিল আছে। ঐ পাতিলে খাসির হালিম রান্না হতো। সেদিন আমরা তিন বেলাই হালিম খেতাম, আর এলাকার সবাইকে দাওয়াত করে খাওয়াতাম! সবাই খুব প্রশংসা করতো খেয়ে। বলতো, 'দাদা, চাকরি ছেড়ে একটা হালিমের দোকান দেন না কেন!'
.
এখন আমাকে হালিম রান্না করে খাওয়ানোর মানুষ নাই। ফুচকা, চটপটি, ভেজিটেবল রোল.. সব রান্না করতে পারতো বাবা। জিলা স্কুলের সামনে ছিলো চটপটির দোকান, আমি খেতে চাইতাম। একদিন বাবা বললো, 'তোকে একদিন বাসায় রান্না করে খাওয়াবো। তারপর আর বাইরে খেতে চাবি না'। আসলেই তাই, প্রাণ জুড়িয়ে চটপটি খেয়েছিলাম সেদিন। আহ, সেইসব দিন! কোথায় হারালো আমার প্রিয় শৈশব কৈশোর, সেই প্রিয় মানুষটা?

দেব দুলাল গুহ (দেবু ফরিদী)
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×