somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"সংরক্ষিত সীট"- ছোট গল্প

২২ শে আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(এক)
৮ সেকেন্ডের ম্যারাথন দৌড়ে অংশ নিয়ে শেষ পর্যন্ত "সুপ্রভাত" বাসে চড়তে সক্ষম হলো নাইম। উঠেই কেমন যেনো একটু আজব লাগলো বিষয়টা ওর কাছে। বাসের সব যাত্রী কোনো এক কারনে তার দিকে তাকিয়ে আছে বিস্ময় ভরা চোখে। খুব সম্ভাব্য কারন হয়তো, বাসে একমাত্র দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তি সে নিজেই।

(দুই)
রাস্তা প্রায় গাড়ি শুন্য বললেই চলে। রামপুরা থেকে মালিবাগ আসতে সময় লাগলো ঘড়ি ধরে ৬ মিনিট। মালিবাগ থেকে এক বৃদ্ধা বাসে উঠলেন। নাইম গেট থেকে একটু সরে গিয়ে তাকে জায়গা করে দিলো উঠার জন্য। তার চোখে পড়লো মহিলাদের জন্য সংরিক্ষিত ৪টি আসনে ১জন মহিলা এবং ৩জন পুরুষ বসে আছে। বৃদ্ধা নিতান্তই বাধ্য হয়েই নাইমের পাশেই দাঁড়িয়ে রইলেন।

সামনের সীটে বসে থাকা এক আলেম ধরনের যুবক বলে উঠলো,
-এইযে আপনারা কেউ একজন উঠে ওনাকে বসতে দিন।

কেউ নড়লো না। শুধু মাত্র নিজেদের দিকে চাওয়া চাওয়ি করলেন মাত্র।

যুবক আবারো বলে উঠলো তবে এবার আরো একটু উচ্চস্বরে,
-এইযে ভাই, উঠুন। মহিলা সীটে বসে আছেন।

এবার একজন উঠলেন সীট ছেড়ে। বয়স আনুমানিক ৫২। অনুমান করার চেষ্টা করলো নাইম। লোকটি এবার ভিতরের দিকে গিয়ে দাঁড়ালেন। মহিলা সীটে বসে থাকা অন্য দুই তুলনামুলক "যুবক" ভাবলেষহীন ভঙ্গিতেই বসে রইলো।

এমন সময় অন্য এক কর্পোরেট ধরণের লোক বলে উঠলো,
-ভাই, ওই ২জনকে না উঠিয়ে এই বৃদ্ধ লোকটিকে উঠালেন?

অনেকেই তার কথায় সায় দিলেন। নাইম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে এবং শুনছে সব কিছু। বলা উচিৎ কিছু কথা। তবে নাইমের ইচ্ছা করলো না। রোজাটা খুব ভালো ভাবেই ধরেছে তাকে আজ।

(তিন)
মালিবাগ পেছনে ফেলে গাড়ি এখন কাকরাইল মোড়ে। ২টা কলেজ পড়ুয়া মেয়ে উঠলো বাসে। মহিলা সীট গুলো খালি না পেয়ে তারা দাঁড়িয়ে আছে। হাতে তাদের বেশ কিছু শপিং ব্যাগ। দেখেই বুঝা যাচ্ছে মেয়ে গুলোর এত গুলো ব্যাগ নিয়ে সীট ধরে দাঁড়াতে কষ্ট হচ্ছে।

এবার বেশ কর্কশ ভাবে বলে উঠলো নাইম নিজেই,
-হ্যালো! উঠেন!
-মানে?
-মানে আবার কি? সীট গুলা মহিলাদের জন্য বানানো হলেও আপনাদের বসার যোগ্যতা নাই। উঠেন।
-অই মিয়া। কি কইতে চান? চিনেন আমারে?
-যা বুঝচ্ছেন তাই বলতেসি। উঠেন। আপনারে আমার না চিনলেও চলবে! ভাই আপনিও উঠেন। আপনারে কি কার্ড দিতে হবে উঠার জন্য?
-ভাই, নীতিকথা বইলেন না। পুরুষদের সীটে যখন মহিলা বসে তখন তো আমরা উঠতে বলি না।

পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কলেজ পড়ুয়া মেয়েদের একজন নাইমকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-ভাইয়া, থাক। উনারা বসে থাকুক। উনারাও হয়তো....

বাক্যটি শেষ করলো না মেয়েটি। লজ্জায় মাথা নত হয়ে যাওয়ার উপক্রম নাইমের।

এমন সময় পিছন থেকে এক ট্রাফিক পুলিশ নিজের সীট ছেড়ে পাশে এসে দাঁড়ালেন নাইমের।
-এইযে ভাই। হয়েছে। এবার সীট ছেড়ে ওঠেন।

কিছু বললো না পুরুষরূপী মহিলা গুলো। সীট ছেড়ে দিয়ে নাইমের পাশে এসে দাঁড়ালো। নিচু স্বরে নাইমকে বললো,
-ভাই পরের বার নীতিকথা মানুষ দেখে বইলেন।
-আচ্ছা। তবে ভাই, ঐ ৪টি সীট মহিলাদের জন্য সংরিক্ষিত। আর এর মানে এই না যে বাকি গুলা পুরুষদের জন্য সংরিক্ষিত। বাকি সীটগুলা সাধারন সীট। যে আগে আসবে সে বসবে।

(চার)
বাস পল্টন মোড়ে চলে এসেছে। নামবে নাইম। হেল্পার তাকে বললো,
-ভাই, ভালা লাগলো আপনার কতাগুলা। বাম পা দিইয়া নাইমেন।

মুচকি একটা হাসি দিয়ে সৌজন্য দেখিয়ে বাম পা বাড়িয়ে নেমে পরে সে।

আর মাত্র ১৮মিনিট বাকি ইফতারির। আকাশের রৌদ্রজ্জল ভাবটা কমে গেছে। এই ধরণীতে অন্ধকার নেমে আসবে কিচ্ছুক্ষন পরেই। গন্তব্যের দিকে দ্রুত পা বাড়ায় নাইম। হাতে সময় মাত্র ১৮মিনিট।

>>সমাপ্ত
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×