চুল কাঁটা, দাড়ি সেইভ করা আমার কাছে নিতান্তই একটা ওয়েস্ট অফ টাইম মনে হয়। যেই জিনিষ কাল বাদে পরশুই আগের মত হবে সেটার পেছনে এত ঘন ঘন সময় নষ্ট করার কি আছে আমি বুঝি না। তবুও কাছের মানুষগুলোর চাপাচাপিতে বাধ্য হয়েই ঘন ঘনই আমার এই কাজটা করতে হয়।
ক্লিন সেইভ করেছি গত পরশু। আজকে দেখা করতে গিয়েছিলাম প্রেমিকার সাথে। মেয়েটার মাথায় ছীট আছে। ব্যাপারটা আমি জেনেও মেয়েটাকে শক্ত করে ধরে রেখেছি। অনেকটা স্বার্থপরের মত, নিজের জন্য। মেয়েটার পাগলামীগুলো দেখি, সহ্য করি। এই সহ্য করাতেও একটা প্রশান্তি আছে। আমি মেয়েটাকে সামন্য পরিমান প্রয়োজন মাফিক ভালোবাসি। কিন্তু মেয়েটা ভাবে আমি তাকে প্রয়োজনের থেকে বেশি ভালোবাসি। সামান্য যে কোনো বিষয়কে বা জিনিষকে এক মুহুর্তে সৌর জগত সমান বড় বানিয়ে ফেলার একটা অদ্ভুত ক্ষমতা আছে মেয়েটার। আজকেও এমনি এক ক্ষুদ্র বিষয়কে বড় বানিয়ে নিজেই মুখ ফুলিয়ে বসে ছিলো সকাল থেকে। বিকাল ৫টার দিকে হটাত ফোন দিয়ে ধমকের সুরে বললো-
“এই, কি করো?”
“কিছু না। বসে আছি। বলো।”
“এক্ষুনি এলাকায় আসো। আমি চা খাবো। আমাকে নিয়ে ধানমন্ডি যাবা।”
“চা খেতে ধানমন্ডি যাওয়া লাগে?”
“আমি বৃষ্টিতে ভিজবো তারপর রবীন্দ্র সরবরের এলাচি দেয়া দুধ চা খাবো। জলদি আসো। না হলে আমি একাই গেলাম!”
মেয়েটা ঐদিকটার রাস্তা ঘাট তেমন একটা চিনে না, তার উপরে আবার বৃষ্টি। একা চলে গেলে কত দিনের জন্য আমার উপরে তার পার্সোনাল গজব নেমে আসবে এটা ভেবে তারাহুরা করে রেডি হলাম।
বছরের এ সময়টায় ভালো শীত না পড়লেও হালকা শীত পড়ার কথা ছিলো। কিন্তু কিসের শীত? এ তো ঝুম বৃষ্টি।
হাতিরঝিল হয়ে ততক্ষনে কাওরান বাজার যেয়ে নেমেছি। নেমেই দ্বিতীয় বারের জন্য টের পেলাম কি পরিমান বৃষ্টি হয়েছে। রাস্তার অবস্থা দেখে মনে মনে প্রেমিকাকে শুভেচ্ছা জানালাম। তার সাথে দেখা করার জন্য তার প্রেমিক আক্ষরিক অর্থেই সাত সাগর তেরো নদী পারি দিতে চলেছে। শুভেচ্ছা পাওয়ার মতই ঘটনা। আশেপাশে কোনো রিক্সা না দেখে আল্লাহর নাম নিয়ে হাঁটু পানিতে নেমে পড়লাম।
পানিতে নেভীদের মত যুদ্ধ শেষ করে ফার্মগেটে পৌঁছেই তাকে দেখতে পেলাম। চোখ বড় বড় করে সে আমার দিকে চেয়ে আছে। ঝারি খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি আমি মনে মনে। পানির কারণে আমার আসতে দেরী হওয়ায় মেয়েটার অনেকক্ষণ একা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। আমাকে অবাক করে দিয়ে সে বললো-
“তোমাকে SRK এর মত লাগছে দেখতে। আমার SRK।”
আমি যতবারই ক্লিন সেইভ করি ততবারই সে আমাকে এই কথাটা বলে। আর আমি প্রতিবারই অবাক হই। আমি মুচকি হেসে রেইনকোট পড়া মেয়েটাকে বললাম-
“তোমাকে সুন্দর লাগছে বরাবরের মত।”
কথাটা শেষ করেই ওর হাতটা ধরে হাঁটা শুরু করালাম।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৬