ব্রিটেনের ’অফিস ফর ন্যাশনাল স্টাটিসটিকস’ পরিচালিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০৩১ সাল নাগাদ ব্রিটেনে বৈধ মা-বাবার সংখ্যা ব্যাপক হারে কমে যাবে। রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, বিগত এক দশকে বিবাহ হীন জুটির সংখ্যা ৬৫ ভাগ বেড়ে ২.৩ মিলিয়নে দুই. ব্রিটেনে নারী নির্যতনের চিত্র
দাঁড়িয়েছে। শুধু লন্ডনের পরিবার গুলোর মধ্যে সিঙ্গেল মাদার বা স্বামীহীন মায়ের পরিবার রয়েছে ২২%। যা ব্রিটেনের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে বেশী। ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের এক জরিপে দেখা যায় যে, পুলিশ বিভাগে পুরুষ সহকর্মীদের দ্বারা মহিলারা ব্যাপক হারে যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। ঐ গবেষণায় ৮% মহিলা পুলিশ তাদের সহকর্মী কর্তৃক যৌন নির্যাতনের শিকারের বিষয়টি রেকর্ড করে । ১৯৯২ সনে ’পুলিশ রিভিউ’ ম্যাগাজিনে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হলে দেখা যায়, পুলিশের মধ্যে ৮ শতাংশ মহিলা পুলিশ সরাসরি যৌন নির্যাতনের শিকার হন এবং বাকী ৯২ ভাগকে কুৎসিত ও অশ্লীল কথাবার্ত দ্বারা উত্ত্যক্ত করা হয়।
ব্রিটেনে ৫০ লাখ শ্রমিকের মধ্যে ৭% মহিলা হলেও তাদের জন্য বীমা সুবিধা, অসুস্থ ও বেকার ভাতার ব্যবস্থা নেই। এক জরিপে দেখা যায় প্রতি ১০ জন নির্যাতিত মহিলার ৩ জনই স্বামীকর্তৃক শারীরিক নিপীড়নের স্বীকার। লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকার তথ্য মতে ইংল্যান্ডে প্রতি আধুনিকা নারীদের ধর্ষিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রতি পাচঁজনের একজন। সেখানে ২০ জনের মধ্যে একজন নারী ধর্ষিত হয় এবং ১০০ ধর্ষকের মধ্যে একজন ধরা পড়ে। ইউরোপিয়ান উইমেনস লবির প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী বিটেনে ৪০-৫০% নারী তার পুরুষ সহকর্মীর কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের যৌন হয়রানির শিকার হয়।১৯৯১ সালে ব্রিটেনে ৮০ সালের চেয়ে ৯% এবং ৯০ সালের চেয়ে ৩% বিবাহ বিচ্ছেদ বেড়ে যায়। ১৯৯১ সালে ব্রিটেনে মোট বিবাহ বিচ্ছেদের সংখ্যা দাড়ায় ১ লাখ ৭১ হাজার ১ শ। সে দেশে জন্মগ্রহণকারী প্রতি ৩ জন শিশুর মধ্যে ১ জন নারী-পুরুষের বিবাহ হীন দৈহিক সম্পর্কের ফসল।
১৯৯০ সালের গোড়ার দিকে ব্রিটেনের তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার এক সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেছেন যে, ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত নারী-পুরুষের অবৈধ মেলামেশার কারনে ব্রিটেনে ৪ লাখ অবৈধ সন্তান জন্মগ্রহণ করে। আরো আশ্চর্য্যে বিষয় হলো যে, ব্রিটেন ও আমেরিকায় স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের কমপক্ষে ৭৫ ভাগ যৌন সম্ভোগে লিপ্ত হয়। আবার অনেকে এ অবস্থায় কুমারী মাতায় পরিণত হয়। আর লিভ টুগেদার তো তাদের সভ্যতারই অংশ।
তিন. পাশ্চাত্য দেশে যৌন নিপীড়নের খতিয়ান
ফ্রান্সে যুবক যুবতীদের ব্যভিচারকে কোনো অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় না। সেখানে যদি কোন যুবক তার স্ত্রী ব্যতীত অন্য নারীকে বান্ধবী হিসেবে গ্রহণ করে তা গোপন করার কোন প্রয়োজনবোধ মনে করে না। কারণ ফরাসি সমাজে এটা পুরুষের জন্য স্বাভাবিক ব্যাপার বলে মনে করা হয়। সে কারণে সে দেশে বিয়ে হওয়ার কয়েক ঘন্টা পরই বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে থাকে। ফ্রান্সের এক মন্ত্রী বিয়ে করার মাত্র ৫ ঘন্টা পর স্ত্রীকে তালাক দেয় বলে জানা যায়। ফ্রান্সে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা এতটাই প্রকট যে, সেন নগরীর একটি আদালতে একদিনে ২৯৪ টি বিবাহ বিচ্ছেদের রায় হয়। বিবাহ বিচ্ছেদের নতুন আইন প্রবর্তনের পরও ফ্রান্সে বার্ষিক বিয়ের হার দাড়ায় মাত্র ৬.৩%।
কানাডার নিরাপদ শহর বলে পরিচিত টরেন্টোতে পরিচলিত এক জরিপে দেখা যায় যে, সেখানে ৯৮ ভাগ নারী কোন না কোনভাবে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়। কানাডার শতকরা ৫৪ ভাগ নারী ১৬ বছরে পদার্পণের আগেই যৌন নির্যাতনের শিকার হয়।
পাশ্চাত্যের স্কুল-কলেজগুলোর ওপর পরিচালিত এক জরিপ থেকে দেখা গেছে, শতকরা ২৩ থেকে ৪৪.৮ ভাগ ছাত্রী তাদের ছেলে বন্ধুদের দ্বারা যৌন নিপীড়নের শিকার হয়। পাশ্চাত্যে যত যৌন নির্যাতনের ঘটনা পুলিশের কাছে রিপোর্ট করা হয়, তার মধ্যে তিন ভাগের এক ভাগ ঘটে ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের ওপর। অবাধ নারী স্বাধীনতার ফলে পশ্চিমা নারীদের দুর্দশা দেখে স্বয়ং পাশ্চাত্যের অনেক চিন্তাশীল ব্যক্তি উদ্বিগ্ন-উৎকন্ঠিত। উনবিংশ শতাব্দির শেষভাগ থেকেই সেখানকার চিন্তাশীল-গবেষকরা পাশ্চাত্য সমাজের পরিবার প্রথা, সমাজিক রীতি ও সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশংকা প্রকাশ করেছেন।