মুখ আর মুখোশের মধ্যে একটা সুনিবিড় কিন্তু স্ববিরোধী দ্বন্দ আছে। সময়ে একটা আরেকটার সম্পূরক সময়ে একটা আরেকটার জন্য ব্যথাদায়কও!
ছোট্ট একটা সিম্পটমঃ আবেগ, অনুভূতি, ভালো-খারাপের মিশেল কিংবা শ্রদ্ধা- সৌহার্দ এবং সমীহঘেরা কল্পজগতের চমৎকার সত্ত্বাটা যখন স্বরূপে চর্ম চোখের সামনে মর্তের মানুষ হয়ে হাজির হবে, তখন মনের চোখ আর ওই চর্ম চোখের ছবি দুটোর মধ্যে দ্বন্দ বেঁধে যাবে একরকম-
"হায় কি ভেবেছিলাম আর কি দেখলাম!"
কিংবা,
"আহা, উহাই কি সামনে হাজির! সে বুঝি এই!! এতো চমৎকার! এতো নান্দনিক! এতো অপরূপ!!"
মানুষ সুন্দর মুখ বা মুখশ্রী ভালোবাসে, কারণ সৃষ্টি এবং গঠনগত ভাবেই মানুষের মনন তথা ভেতরের সত্ত্বাটা সুন্দরের পূজারী। সৌন্দর্যবোধ আর সৌখিনতা-বোধহয় মানব জিনের দুটা অহংকারের নাম। মাটির দেহে সবচেয়ে অদ্ভুত রোমাঞ্চকর কিংবা মুগ্ধকর ব্যতিক্রমী যে মনোজ্ঞ অঙ্গাণুটা শোভা পায় কপালের ঠিক নিচটায় শক্ত করোটির ছায়ায়,- সে চর্ম চোখেই যে পুরো মানুষটার ছবি, মানুষটার মনের ছবি। কখনো স্পষ্ট, কখনো অস্পষ্ট, কখনো পানসে-ধোঁয়াটে কখনো প্রগাঢ়-প্রকট। একটা মানুষকে সম্পূর্ণ পড়া সম্ভব তার মনের পাঠোদ্ধার সম্ভব হলে, আর মনের পাঠোদ্ধার সম্ভব মনের প্রতিলিপি লেখার হাতিয়ার কিংবা মনের কলম ওই চর্ম চোখের ভাষাটুকু পড়া সম্ভব হলেই।
এইযে মানুষ তথা মন পড়বার কখনো স্বচ্ছ, কখনো ঘোলাটে কখনো ঈষদচ্ছ আয়নাটা; সেটা তার সমস্ত অনুভূতি আর দর্শন তত্ত্বগুলো এক করে লিখে রাখে কোথায়?? লিখে যে হলদে ধূসর মহা ডায়েরীটায়, নাম তার "ব্রেইন"-যার নির্দেশেই তোমার প্রতি আমার সমীহ, তোমার প্রতি আমার ভালোলাগা খারাপ লাগা কিংবা তোমাকে আমার মনে রাখা। মানুষকে তার আধপচা ক্ষয়িষ্ণু এই মাটির দেহে স্রষ্ঠার জুড়ে দেয়া ওই মহা ক্ষমতাধর আর ভয়ংকর সুন্দর অতিকায় ডায়েরীটার সূক্ষ্ম পাতায় পাতায় যে কতো কতো স্মৃতি, কতো অনুভূতি মানুষ নিজেও তা জানেনাহ।। চর্ম চোখের জড়ো করা সব অনুভবের সম্মীলন আর সমন্বয়ের সময় সে ডায়েরীর পাতার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম নিউরনীয় মার্জিন গুলোই কথা বলে।
বলে,-
"আহা সুন্দর! কতো সুন্দর!! তুমি সুন্দর তাই, ওগো চেয়ে রই অপলক..."
মুখ আর মুখোশের পার্থক্য বের করে ওই ডায়েরী বেটাই! সুন্দর মুখের জন্য ভালোলাগা আর মুখোশে ঢাকা অধরা সুন্দর সত্ত্বাটার জন্য জিজ্ঞাসু সমীহের সীমারেখাটা মনের সামনে টেনে প্রেজেন্টেশন দেয় সে ই। আর মন তখন ইচ্ছেমতো তার ইচ্ছেখাতার ঝকঝকে সফেদ সাদা পাতায় তাদের জন্য আলাদা কলাম টানে...
‘মুখ’ ও ‘মুখোশ’... ‘সুন্দর’ ও বোধহয় 'সুন্দরতম’!!
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪১