somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন নভেরা ও তার অজানা কথা।

০৭ ই মে, ২০১৫ সকাল ৭:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চলে গেলেন শহিদ মিনারের নকশাকারীর অন্যতম সহযোগী ও বাংলাদেশের ভাস্কর্য শিল্পের অগ্রপথিক নভেরা আহমেদ। ৬ ই মে রাতে ঘুমের মাঝেই তিনি মারা যান।তার নামেত অর্থ হচ্ছে নতুন জন্ম। তিনি ১৯৩৯ সালে সুন্দরবনের পাশে জন্মগ্রহণ করেন। তবে তার পৈতৃক নিবাস ছিল চট্টগ্রাম। তার বাবার চাকরির সুবাদে তার ছোটবেলা কেটেছে কলকাতায়।তিনি ছোটবেলা থেকেই নাচ গান শেখার পাশাপাশি মাটি দিয়ে পুতুল বানাতেন।তিনি কলকাতা থেকে মেট্টিক পাশ করেন। পরবির্তিতে১৯৫১ সালে তিনি লন্ডনের ক্যাম্বারওয়েল স্কুল অব আর্টস এন্ড ক্রাফটস কলেজে মডেলিং ও ভাস্কর্য শিল্পের উপর ৫ বছরের ডিপ্লোমা করেন। ডিপ্লোমা শেষে ইতালির ভেনাস ও ফ্লোরেন্স এ এ থেকে তিনি ভাস্কর্যবিদ্যা শিখেন।আমরা শুধু শহিদ মিনারের নকশাকারি হিসেবে হামিদুর রহমান কেই জানি কিন্তু তার অন্যতম সহযোগী ছিলেন এই নভেরা। তিনি আর হামিদুর মিলেই প্রথম নকশাটা করেন। যদিও পরবর্তীতে তা কিছুটা চেঞ্জ হয়। তাই ১৯৫৮ সালের ৩১ ফেব্রুয়ারি এর পাকিস্তান দ্য অবজারভার এর প্রথম পাতায় লেখা হয়েছিল" … The memorial
has been designed by Mr. Hamidur Rahman
in collaboration with miss Novera Ahmed….' কিন্ত কোন এক অজানা কারনে সরকারি কাগজ থেকে তার নাম চলে যায়। তিনি সারাজীবন দেশের কাছে অবহেলিত ই ছিলেন। যদিও ১৯৯৭ সালে তাকে একুশে পদক দেওয়া হয় কিন্তু তার অবদান আমরা ভুলেই গেছি। তাই সৈয়দ
শামসুল হক তাঁর হৃৎকলমের টানে
সংকলনটিতে এ-প্রসঙ্গে
কয়েকবার লিখেছেন। এক
জায়গায় তিনি বলেছেন, ‘…
হামিদুর রহমান চিত্রকর, ঢাকার
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের
পরিকল্পনাকারী শিল্পী
দু’জনের একজন, অপরজন ভাস্কর
নভেরা আহমেদ।’ সৈয়দ হক আবার
লিখছেন, ‘… মনে পড়ে গেল
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের
নকশা করেছিলেন যে দু’জন
তাদের একজনের কথা আমরা
একেবারেই ভুলে গিয়েছি।
প্রথমত আমরা একেবারেই জানি
না এই মিনারের নকশা কারা
করেছিলেন, যদিও বা কেউ জানি
তো জানি শুধু শিল্পী
হামিদুর রহমানের নাম, খুব কম
লোকে চট করে মনে করতে পারে
যে হামিদের সঙ্গে আরো একজন
ছিলেন – হামিদের সঙ্গে
ছিলেন বলাটা ভুল, বলা উচিত
দু’জনে একসঙ্গে এই
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের
রূপটি রচনা করেছিলেন। অপর সেই
ব্যক্তিটি হচ্ছেন নভেরা
আহমেদ।’ সৈয়দ হক আবার লিখছেন,
‘… কিছুদিন আগে শিল্পী
হামিদুর রহমান… ঢাকায় এসে
টেলিভিশনে এক সাক্ষাৎকার
দেন… এ সাক্ষাৎকারে হামিদ
নভেরার নাম করেননি। চলচ্চিত্র
ও প্রকাশনা দফতরের একটি
প্রামাণ্যচিত্রেও হামিদের
বক্তব্য আমরা শুনেছি শহীদ
মিনার সম্পর্কে, কিন্তু
তাকে শুনিনি নভেরার কথা
উল্লেখ করতে।…’
এছাড়া তিনি ই ছিলেন বাংলাদেশ এর ভাস্কর্য শিল্পের অগ্রপথিক। তার চিত্র প্রদর্শনী বাংলায় ভিন্নমাত্রার রং দিয়েছে। তার সম্পর্কে রবিউল হুসাইন
‘ভাস্কর্যে
মুক্তিযুদ্ধ’প্রবন্ধে
লিখেছেন, ‘আমাদের দেশে
স্থাপত্য ভাস্কর্যের
সর্বপ্রথম উদাহরণ হচ্ছে শিল্পী
হামিদুর রাহমান, ভাস্কর নভেরা
আহমেদ এবং স্থপতি জাঁ
দেলোরা কর্তৃক নকশাকৃত
ভাষা আন্দোলনের কেন্দ্রীয়
শহীদ মিনার।’
তার প্রথম ভাস্কর্য চাইল্ড ফিলোসফার এর জন্যই তিনি প্রথম পুরুষ্কার পান। এছাড়া তার "এক্সট্রেমেটিং এঞ্জেল" অনেক জনপ্রিয় একটা ভাস্কর্য। ত্তিনি সারাজীবননে প্রায় ৩৩ টি ভাস্কর্য তৈরী করেন যার মাঝে 'পরিবার'(১৯৫৮) 'ইকারুস '(১৯৬৯), 'যুগল' (১৯৬৯) উল্লেখযোগ্য।
শেষ জীবনে তিনি অনেক কষ্ট পেয়েছেন।হুইলচেয়ারে কাটিয়েছেন নিজের শেষ সময়। গত ৫৫ বছর ই অভিমান করে ছিলেন প্যারিসে।তবে তার দেশপ্রেম একটুও কমেনি। জীবনের শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশি পার্সপোর্ট নিয়ে ওখানে ছিলেন। ছিলেন বাংলাদেশি নাগরিক হয়ে। ওই দেশের নাগরিকতা নেননি।
ওপারে তুমি ভাল থাক নভেরা, শেষ বেলায় এটাই আমাদের সবার প্রার্থনা।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০১৫ সকাল ৯:৫৬
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×