মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আশা করি ভালো আছেন (দলের এরকম ক্রান্তিকালে কীভাবে ভালো থাকা যায় জানি না)।
আপনি হয়তো জানেন না, দেশের মানুষ আপনার উপর প্রচন্ড অভিমান করে আছে। এ অভিমান বড্ড আত্মঘাতী! তারা অবশ্য আপনাকে ভালও বাসে প্রচন্ড! সে ভালবাসা থেকেই এই আত্মঘাতী অভিমানের জন্ম।
প্রিয়জনের উপর অভিমান করে মানুষতো আত্মহত্যা পর্যন্তও করে বসে।
আপনার প্রতি ভালবাসা অবশ্য অনেকটা জাতির শুণ্যতা থেকে সৃষ্টি।
আমরা যখন '৭৫ এ বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে এতিমের মত হয়ে গিয়েছিলাম। এমন কাউকে পাচ্ছিলাম না যে ভালবেসে আমাদের পাশে দাঁড়াবে। দেশ যখন একের পর এক স্বৈরাচারদের উপর্যুপুরি ধর্ষণে মৃতপ্রায় তখন মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে দেশের রাজনীতিতে আপনার আগমন।
দেশের মানুষ এতদিন ধরে এমন একজনকেই খুঁজছিল যে তাদের কোলেপিঠে মানুষ, যে তাদের বাড়ির উঠানে খেলাধুলা করে বেড়ে উঠেছে, যাকে খুব আপন ভাবা যায় খুব সহজেই, যে দুঃখি মানুষকে জড়িয়ে ধরতে পারে গভীর মমতায়, যে স্বজনহারার পাশে বসে সহানুভূতিতে ডুকরে কেঁদে উঠতে পারে...
তাদের ভালবাসার প্রতিদান আপনি দেখেছেন।
তখন থেকেই আপনার সাথে মান-অভিমানের একটা সম্পর্ক তৈরি হয়।
শেষবার দেশের মানুষের ভালবাসায় আপনি সিক্ত হলেন দারুনভাবে, যার নজির দেশের ইতিহাসে খুব বিরল। তারা অনেক ভালবাসা, বিশ্বাস আর আশা নিয়ে আপনাকে ভোট দিয়ে কী দারুনভাবেই না পাশ করিয়ে দিল!
পুরো জাতি তখন চমকে উঠল! অভিভূত হয়ে গেল!
তারপর.।
দেখতে দেখতে কেটে গেছে প্রায় সাড়ে ৪ বছর।
এর মধ্যে দেশে কিছু অভাবনীয় ঘটনা ঘটে গেছে।
>দেশ জাতির জনক হত্যার কলঙ্ক থেকে মুক্ত হল।
>'৭১ এর জানোয়ার রাজাকারদের বিচার প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গেছে
>দেশকে ডিজিটাল করার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে এরই মধ্যে।
>ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা মোবাইল প্রযুক্তি চলে এল সাধারণের হাতের মুঠোয়!
>সাধ্যের বাইরে থাকা কম্পিউটার এখন গরীব ছাত্রটি তার টিউশনির টাকা জমিয়েই কিনে ফেলতে পারছে!
>জাদুকরী ইন্টারনেট এখন কৃষকের ছেলের মোবাইলে!
>বেকারত্ব দুরীকরণ প্রক্রিয়াও এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে।
>দেশের প্রচুর বেকার ছেলে-মেয়ে পাড়ি জমিয়েছে মধ্যপ্রাচ্য, ইয়ুরোপ, আমেরিকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে।
তাদের পাঠানো টাকা এখন দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি!
>প্রচুর অবকাঠামোগত উন্নয়ন হল- রাস্তা-ঘাট, সেতু, কালভার্ট নির্মাণ করা হল
>বিদ্যুৎ উৎপাদন ধীরে ধীরে বাড়তে লাগল
>বিদ্যুৎ পৌছে যেতে থাকল দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে
আলোকিত হতে থাকল গ্রাম, মানুষ, রাস্তা-ঘাট
>ঘৃণ্য রাজাকারদের বিচারের সর্বোচ্চ রায় হতে থাকল।
সারাদেশে মানুষ খুশির মিষ্টি খেল
এরকম আরো হাজারো সাফল্য মানুষকে সুখি করছিল।
পূরণ হতে থাকল মানুষের একের পর এক চাহিদা, স্বপ্ন, আশা-আকাংক্ষা, প্রতিশোধ
এসবই ঠিক ছিল, আমরা হতে পারতাম একটি সুখি রাজ্যে অধিবাসী, কিন্তু কিছু দুঃখজনক ঘটনা মানুষকে কষ্ট দিল খুব!
মানুষ এরকম কিছু আশা করেনি অন্তত আপনার কাছে, আপনার সরকারের কাছে।
>সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি খুন হলেন নিজের বাসায়, যার বিচার আজও হয়নি
তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই বিষয়ে বেশ বিরক্তি উৎপাদন করেছে জনগনের।
>শেয়ার বাজারে নামল এযাবৎ কালিন সবচেয়ে বড় ধ্বস। যদিও তা আস্তে আস্তে কাটিয়ে উঠা গেছে। কিন্তু কিছু মানুষের হয়ে গেলো অপরিমেয় ক্ষতি।
>পদ্মা সেতু দুর্ণীতি কে দেখা হয় আপনার সরকারের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হিসেবে। কোটি মানুষ স্বপ্ন দেখেছিল আপনি এই গুরুত্বপূর্ণ সেতুটি করে দিবেন। তারা বারবার স্বপ্নভঙ্গের কষ্ট নয়ে বাড়ি ফিরে গেছে।
এ বিষয়ে যদিও আপনার এই মেয়াদের সরকার আশ্বাস দিয়েছে যে সেতুর কাজ তারা শুরু করতে পারবে এবং জাতীয় বাজেটে এর জন্য বিশাল বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
>হলমার্কের দুর্ণীতিও আপনার সরকারের আরেকটি ব্যর্থতা
>সোনালি ব্যাংক দুর্ণীতিও জাতির মনে দাগ কেটে গেছে
এসব ব্যর্থতাও জাতি ভুলে যেতে পারতো কাটিয়ে উঠার আশা নিয়ে। কিন্তু আমাদের জন্মশত্রু জামায়াতে ইসলামি তখন আপনার পিছনে, আপনার সরকারের পিছনে লেগেছে। কারণ আপনার সরকার ততদিনে শুরু করে দিয়েছে এইসব রাষ্ট্রদ্রোহী বিশ্বাসঘাতকদের বিচার। আর বিচারের রায় ও আসতে থাকল বহুল কাংক্ষিত মৃত্যুদন্ড-ফাঁসি!
তাদের তখন বাঁচা-মরার লড়াই, তাই তারা মরিয়া হয়ে লেগেছে আপনার পিছনে, আপনার সরকারের পিছনে।
তারা ব্যর্থ করে দিতে চায় আপনার সরকার কে।
তারা দেশ জুড়ে, পৃথিবী জুড়ে আপনার সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা শুরু করে দিল। এর জন্য তারা অকল্পনীয় পরিমান টাকা জলের মত খরচ করতে থাকল।
ফলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক ব্যক্তি ও সংগঠনকেই তারা তাদের পক্ষে আনতে সমর্থ হল!
তারা তখন তৃণমূল পর্যায়ে মিথ্যা প্রচারণা করতে লাগল আপনার সরকার নাস্তিক। তারা নাস্তিকদের সাহায্য, সমর্থন দেয়, তারা ইসলামের শত্রু এইসব হাবিজাবি।
দেশের ধর্মভীরু সাধারণ মানুষদেরকে তারা তাদের ব্যপক প্রচারণার মাধ্যমে আপাতত বুঝাতে সমর্থ হল।
আপনার সরকারের বিরোদ্ধে এইসব মিথ্যা প্রচারণা সাধারণ মানুষের অবোধ ধর্মানুভুতিকে প্রচন্ডভাবে আঘাত করে।
এভাবেই আপনার প্রতি তাদের অভিমান দিন দিন বাড়তে থাকে এবং একসময় আত্মঘাতী রূপ ধারণ করে।
সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তারা অভিমান ভরে আপনার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল।
তারা এখন প্রচন্ড অভিমানে আত্মঘাতী হয়ে যাচ্ছে, তাই তারা জামায়াত-বিএনপি পন্থিদের ভোট দিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে।
যদিও তারা কখনো জামায়াত পন্থি ছিল না।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
সামনে জাতীয় নির্বাচন। তারা আত্মহত্যার চূড়ান্ত পথ বেছে নেয়ার আগেই তাদের আত্মঘাতী অভিমান ভাঙ্গুন। নয়তো স্বপ্নভঙ্গের চূড়ান্ত রূপ দেখতে হবে আমাদের!!
আপনার উপর এখনো ভরসা হারাইনি, আশার প্রদীপ এখনো জ্বলজ্বল করছে, আমরা জানি আপনি পারবেন।
আপনি পারবেন এই আত্মঘাতী অভিমানী জাতির অভিমান ভেঙ্গে তাদেরকে আবার আগের আশা, স্বপ্ন, আকাংক্ষা ফিরিয়ে দিতে, আবার তাদের মুখে হাসি ফোটাতে।
সময় খুব বেশি নেই, জাতি হাটছে তার আত্মঘাতী অভিমানের চূড়ান্ত পথে.।