somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'৭১ এর গন্ডগোল ও ১৫ জুলাই '১৩

১৬ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

" '৭১ সালে এদেশে ভারতের চক্রান্তে পূর্ব পাকিস্তান আর পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে একটা ভাল রকম গন্ডগোল হয়। মালাউনদের ষড়যন্ত্রে বিভক্ত হয়ে যায় দুটি মুসলিম সাম্রাজ্য!!"

এটা ছোটবেলায় শুনতাম, পাড়ার সাদা চুল-দাড়িওয়ালারা এটা বলত।

আমার মা বলতেন 'সংগ্রাম', বাবা 'যুদ্ধ'
আমি অবশ্য একে এখন গন্ডগোল বলি। 'তার অনেক কারণ রয়েছে'।

বাবা অবশ্য ওই গন্ডগোলে এদেশীয় "লাঠিয়াল" ছিলেন। তখন তাঁর কতই বা বয়স, আমার চেয়েও অনেক ছোট, ১৭ কী ১৮ বছর।
এটা অবশ্য বাবার কাছ থেকেই শোনা।

সে বছর মানে ওই গন্ডগোলের বছর (বা পরে বছর হবে) বাবার ছিল 'মেটিক' পরীক্ষা।
দেশে তখন জল-স্থল-অন্তরীক্ষ কাঁপানো গন্ডগোল!

রেডিওতে 'শেখ সাহেব' এর রক্ত কাঁপানো 'হুমকি-ধামকি' শুনলেন। তখনো বুঝতে পারছিলেন না কী হতে যাচ্ছে পরবর্তিতে।
২৫ শে মার্চের গন্ডগোলের ভয়াবহ শুরুর খবর পেলেন। মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয়া শেষ এর প্রতিশোধ নিতেই হবে।

এলো ২৬ শে মার্চ! রেডিওতে 'শেখ সাহেব' এর পক্ষ থেকে স্বাধিনতের ডাক পেলেন।
আর দেরি করা চলে না। বাবা সিদ্ধান্ত নিলেন তিনিও গন্ডগোলে যাবেন-'লাঠিয়াল' হবেন।
যেই ভাবা সেই কাজ। আমাদের বাড়ির ৩/৪ কিলোমিটার পরেই ছিল ভারত সীমান্ত। ওইদিকেই নাকি এদেশীয় 'লাঠিয়াল'দের ঘাঁটি। খোঁজ-খবর করে চলে গেলেন ওইখানে 'মারামারি' শিখতে।
মারামারির 'গেরিলা স্টাইল' শিখে নিয়ে নেমে পড়লেন 'মারামারি' করতে। সম্মুখ সমর!

পৃথিবীরে দীর্ঘতম ভয়ানক ৯ টি মাস!
সাথের 'লাঠিয়াল'দের অনেককেই মরে যেতে দেখলেন। অনেককেই পঙ্গুত্ব বরণ করত দেখলেন। নিজে বেশ কয়েকবার নিশ্চিত মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এলেন।

"বিপন্ন বিস্ময়'এ দেখলেন এদেশীয় কিছু মানুষের বিপরীত কর্মকান্ড!!
তারা এলাকায় শান্তি ও ইসলাম প্রতিষ্টা করা জন্য 'শান্তি বাহিনী' প্রতিষ্ঠা করেছে। তাদের বাড়ির ছাদে পতপত করে উড়ে 'চাঁদ-তারা খচিত পতাকা'! তারা ভীষণ রকম বৈরি হয়ে উঠল 'লাল-সবুজ পতাকা'র! 'লাল-সবুজ পতাকা'বাহীদের তারা ধরে ধরে পশ্চিম পাকিস্তানের মিলিটারিদের হাতে তুলে দেয়। তাদের ঘর-বাড়ি লুট করে জ্বালিয়ে দেয়। আর মেয়েদের ধরে পাঠিয়ে দেয় পশ্চিম পাকিস্তানের নওজোয়ানদের খেদমতে! যতরকম খারাপ কাজ আছে তারা করতে থাকে ধর্মের বর্ম পরে।

ওই গন্ডগোলে 'মালাউন'দের অবস্থা হয়ে পরে অত্যন্ত নাজুক। যেহেতু তারা ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য লড়ছে তাই তারা 'মালাউন'দের মনে করে ইসলামের প্রত্যক্ষ শত্রু।
তাদের সামনে শত্রু তখন দুইটা
১। এদেশীয় লাঠিয়াল বাহিনী আর
২। 'মালাউন' গোষ্ঠি

তাদের শত্রুকে তারা এক চুল পরিমান ছাড় দেয়নি। শত্রুর ঘর-বাড়ি লুটপাট, জ্বালাও পোড়াও, হত্যা-ধর্ষণ হেন কাজ নেই যা তারা তাদের শত্রুর সাথে করেনি।
জানা যায় এইসব দেশীয় বিশ্বাসঘাতকদের নাটেরগুরু "গোলাম আজম"!

এর পাল্টা জবাব দিতে 'লাঠিয়াল'রা প্রতিজ্ঞা করল। অনেককেই তারা হত্যা করল, তবে তারা সংখায় মোট পরিমানের তুলনায় অতি নগণ্য। তারা তাদের "বিশ্বাসঘাতক নিধন" মিশনের সমাপ্তি করতে পারেনি।

১৬ ই ডিসেম্বর। স্বাপ্নের সোনার হরিণ ধরা দিল।
উচ্ছ্বাসে ফেটে পরল চারদিক।

বিধ্বস্ত একটি দেশ, হাজার স্বপ্ন ও সমস্যা। নেই প্রয়োজনীয় অর্থ। দক্ষ লোকবল। বিশ্বাসঘাতকেরা মাথা চাড়া দিয়ে উঠা শুরু করেছে।

১৯৭৫, ১৫ ই আগস্ট! সমস্ত আয়োজনের কেন্দ্রবিন্দু পরিবারটিকে ধুলোয় মিশিয়ে দেয়া হল।

বন্ধুবেশী ঘাতকদের উত্থান শুরু হল একের পর এক।
'৭১ এর বিশ্বাসঘাতকদের প্রতিষ্ঠা শুরু...

১৯৯২। বিশ্বাসঘাতকদের নাটেরগুরুর ফাঁসীর দাবিতে উত্তাল সারা দেশ। গণআদালতে রায় হল ফাঁসী।
আয়োজকদের দেয়া হল 'রাষ্ট্রদ্রোহী' খেতাব ও মামলা।
নাটেরগুরু পেল রাষ্ট্রিয় নিরাপত্তা।

আন্দোলনের সাফল্য ছিল এই, গনমানুষের মনে একটা ধারণা বদ্ধমূল করে দেয়া গেছে যে বিশ্বাসঘাতকেরা এই দেশের কেউ না। তাদের বিচার করতে হবে এবং ফাঁসী দিতে হবে।

একটা রাষ্ট্রিয় ভুল। তারপর এদের উত্থান আর কেউ ঠেকাতে পারেনি।

২০০১। বিশ্বাসঘাতকদের গাড়িতে উঠল জাতীয় পতাকা। সংসদে পেল আসন!

এদেশীয় 'লাঠিয়াল'দের গালে দেয়া হল প্রথম রাষ্ট্রিয় চপেটাঘাতটি!!

২০০৮। বিশ্বাসঘাতকদের বিচার করার প্রতিজ্ঞা করে ক্ষমতায় এলো '৭৫ এর ধুলোয় মিশে যাওয়া পরিবারটি বেঁচে যাওয়া দুটি প্রাণীর একটি।

মানুষ আবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করল। বিশ্বাসঘাতকদের বুঝি এবার ফাঁসীতে চড়ানো যাবে।
শুরু হল বিচার...

সমস্ত বিতর্কের উর্ধে থাকার জন্য বিচার প্রক্রিয়াটি করা হল আন্তর্জাতিক মানের, স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ।

আশানুরূপ রায় আসতে শুরু করল।
খুশিতে ফেটে পড়ল সারা দেশ।
কিন্তু...
একজন দাগী অপরাধীকে দেয়া হল নিম্নতম শাস্তির রায়।

২০১৩ তে ৫ ফেব্রুয়ারি আবার '৯২ এর মত মানুষ নেমে পড়ল রাস্তায়।
অবাক বিস্ময়ে জাতি দেখল বিশ্বাসঘাতকদের ফাঁসীর দাবিতে কীভাবে সারা দেশ রাস্তায় নেমে যেতে পারে!!

বিশ্বাসঘাতকদের মিথ্যা প্রচারনায় এই অভূতপুর্ব আন্দোলন তার মহীমা হারালো...

১৫ জুলাই '১৩। বিশ্বাসঘাতকদের নাটেরগুরু গোলাম আজমের বিচারের রায় হবে। মানুষ দুরুদুরু বুকে অপেক্ষা করতে থাকে জাতির কলঙ্ক মুছনের। ...

প্রচন্ড অবিশ্বাস নিয়ে জাতি দেখল বিশ্বাসঘাতকের বিচারের রায়ে পুরো জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করল প্রতিজ্ঞাবদ্ধ দলটি!!!

৯২ বছরের অপরাধীকে দেয়া হল ৯০ বছরের 'আরামদন্ড'!!

যে দেশের মানুষের সাথে প্রচন্ড বিশ্বাসঘাতকতা করেছে তাকে জনগনের টাকায় রাখা হবে সর্বোচ্চ আরাম আয়েশে!!

এই একটি মাত্র রায় জাতিকে অপমানে স্তব্ধ করে দিয়েছে।

জাতির পুরো ইতিহাসকে করেছে হাস্যস্পদ!
'৭১ এর মহান স্বাধীনতা যুদ্ধকে করে দিয়েছে 'গন্ডগোল'!
জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে পরিনত করেছে 'লাঠিয়াল বাহিনী'তে!
'৭৫ কে করেছে আত্মশুদ্ধির বছর!!

১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×