উপক্রমনিকা
এই চা গরম, গরম চা। খাইলে মজা না খাইলে আরো মজা, আসেন ভাই আসেন। নেন ভাই এক কাপ নেন।
১
সুর করে অদ্ভুতদর্শন ফ্লাক্সে চা বিক্রি করছিলো ইশ্বরদী রেলস্টেশনে লোকটা। ছেড়া ময়লা লুংগী আর মাথায় গামছা বাধা।
প্রচন্ড গরম, সেই সাথে রেলবগিতে ঠাসাঠাসি মানুষ। তিন জনের সিটে পাচজন বসেছে। জানালার পাশের একটা সিটে শাহেদ।কেউ একজন তার কোলে একটি বাচ্চা ধরিয়ে দিয়েছে। ভদ্রলোক লেখক মানুষ মাঝে মাঝে কবিতাও লিখেন (আধুনিক লেখক দের যা সিস্টেম আরকি)। এসেছিলেন বাচ্চাদের স্কুলের এক অনুসঠানে সমাপনী বক্তৃতা দিতে।সেই স্কুল যে এতো ভেতরে এক অজপাড়া গায়ে তাইবা কে জানতো। এক চিঠি পেয়ে ভদ্রলোক নিজের লেখা একটা কবিতা নিয়ে বক্তৃতা দিতে চলে এসেছিলেন। গ্রামের নামটা অবশ্য সুন্দর, কাজলদীঘি।
যাই হোক, যে সমাদর আশা করেছিলেন তার কিছুই পাননি, এমন কি এককাপ চা ও না ( বুঝেনেন কি অবস্থা)
এই গরমে চা খায় কোন পাগলে। কিন্তু লেখক মানুষ বলে কথা, ঘন ঘন চায়ের তৃষ্ণা পায়। সুতরাং..........
---এই চা অলা এককাপ চা দিয়ে যাও
-খাইবেন আমার চা!!! নেন খান
--- ট্রেন এতক্ষন দাড়িয়ে আছে কেনো
- ক্রসিং লাগছে ছ্যার।
--ও আচ্ছা
- খান ছ্যার খান
--গরমে চা অনেক আরাম, সবাই তা বোঝে না। এই কথ বলেই শাহেদ বড়সড় চুমুক দিলো চায়ে এবং জগত অন্ধকার হয়ে এলো তার।
২
আমি শুভ, পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। একটা বিদেশী প্রযেক্টের কাজে ইশ্বরদী এসেছিলাম। ট্রেনে ঊঠার আগে একজন চা বিক্রেতা বহু ঘ্যান ঘ্যান করে এককাপ চা বিক্রি করে।
তারপর আর কিছুই মনে নেই । চেতনা ফেরার পরে নিজেকে আমি সেই চা বিক্রেতার দেহে আবিস্কার করি চায়ের ফ্লাক্স সহ।দেহ চুরী হয়ে গেছে আমার।
ঘর নেই বাড়ি নেই, নোংরা চা বিক্রেতার দেহের ভেতরে আমি। বুঝলাম বাঁচতে হলে আর কারো কাছে চা বিক্রি করতে হবে। কারনএই ফ্লাক্সের চা বিক্রির সাথে সাথে দেহও বদল হয়। সুতরাং অবস্থাপন্ন কারো দেহ অর্থাৎ কাস্টমার খুজতে লাগলাম আমি।
এখন ফুরফুরে মেজাজে নূতন দেহ নিয়ে ঢাকা যাচ্ছি আমি। আমার নূতন পরিচয় আমি লেখক শাহেদ। বাজারে আমার বইয়ের ভীষন কাটতি।
৩
নিজেকে চা বিক্রেতার দেহে আবিস্কার করার পর শাহেদ বাকরহিত হয়ে গেলো। কড়া চেতনানাশক খাইয়ে মালপত্র, টাকা পয়সা চুরি হয় কিন্তু তাই বলে দেহ!!!!!!
বাচতে হলে আবার চা বিক্রি করতে হবে। সুতরাং আবার...............
8
নূতন বিবাহিত দম্পতি অর্পন আর মিথিলা। সেই কি খুশী। মনের ভেতরে ডুগডুগি বাজছে। শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছে।
-ওগো আমি চা খাবো
--চায়ের কি দরকার লক্ষীটি, আমাকে খাও
-বলো পয়সা খরচ করবা না তাই। হুহ।
( এদিকে শাহেদ নামক চা বিক্রেতা এদিকেই ঘুরাফেরা করছে, কারন অর্পনের দেহটাই তার চাই)
অই চা, এককাপ চা দিয়া যা।
নেন স্যার খান
এই দেখো চায়ের মাঝে মাছি পরেছে, এই চা খাবো না। বলেই ফেলে দিলো মিথিলা।
চা চেটে চেটে খেয়েনিলো তৃস্নার্ত পথের কুকুর
এবং.................
উপসংহার
ইশ্বরদি রেলস্টেশন এর একটা চা অলা পাগল হয়ে গেছে। মানুষ দেখলেই কামড়াতে আসে।
একটা কুকুর ভরা পুর্নিমায় সুর করে কেঁদে যায়, মনে হয় যেনো কবিতা আবৃতি করছে।