ছোটবেলা থেকেই শিখেছি বাঙালির তিনটা হাত। তৃতীয় হাতটা হলো অজুহাত। পদে পদে এই অজুহাত নামক হাতের কবলে নাজেহাল হতে হয়। সকালে বের হলাম অফিসের দিকে। বের হতেই একটা সি.এন.জি পেয়ে ডাকলাম। এলাকা থেকে বনানী ভাড়া হাকলো ২০০ টাকা। মেজাজ চড়ে গেলো সপ্তমে। জিজ্ঞেস করলাম , ''ফাঁকা রাস্তায় দুশোটাকা কি খুশীতে চাইলা মামা?''
সি.এন.জিওয়ালা দাঁত কপাটি মেলে বললো ''হরতাল না মামা?'' মনে হলো দাঁত বরাবর বাগাই এক ঘুষি, শালা ফোঁকলা দাঁতে বাকী জীবন সি.এন.জি চালাবে। পরে ঠান্ডা হয়ে একটু এগিয়ে রিকশা দাঁড় করালাম। বেটা ভাড়া হাঁকলো ১০০ টাকা। এবার মেজাজ আরো এক ডিগ্রী উপরে নাচানাচি করছে। জিজ্ঞেস করলাম “কি মামা? তোমারও অবরোধ? নাকি রিকশা চালাতে এখন গ্যাসও লাগে?” এই শালা তো আরো এক কাঠি সরেস। দাঁত পারলে খুলে হেসে বলে ''মামা , ব্যাটারীতে চলে রিকশা তাই বেশী।'' মনে হচ্ছিল ওর পশ্চাৎদেশ দিয়ে ব্যাটারী ভরে দেই। যাই হোক, অফিসে গেলাম কোনোমতে। ভাগ্য ভালো অজুহাত আছে । বললাম ''অবরোধ তো। তাই দেরী।''
সারাদিন কাজ শেষে বিকালে বন্ধুর সাথে দেখা করার কথা। বের হলাম। গিয়ে দেখি ব্যাটা এখনো আসে নাই। মনে মনে গালি দিচ্ছি আর ভাবছি নির্ঘাৎ ব্যাটা এসে বলবে ''রাস্তায় জাম।''
ঠিক আধাঘন্টা লেট করে এসেই বললো ''মামা , সরি রে। ব্যপক জাম।'' মনে হচ্ছিলো তুলে দেই ব্যাটাকে আছাড়। অজুহাত দিবি , ভালো কিছু দে। দরকার হলে বল ''মামা , আমার পাশের সি.এন.জিতে গ্রেনেড মারছে মামা! তাই দেরী হইছে।'' মনে মনে গালি জপতে জপতে বাড়ি ফিরেই আম্মা বললো ''বাড়ি ভাড়া বাড়াইসে ।''
আমার ধৈর্য্যের এহেন পরীক্ষা বিধাতা নিচ্ছেন। জিজ্ঞেস করলাম ''কেন। তার কি অবরোধ ? নাকি বাড়ি ব্যাটারীতে চলে? নাকি জামের মধ্যে তার জীবনের গাড়ি আটকায় গেছে।” আম্মু বললো ''জিনিসপত্রের দাম বাড়সে, তাই ভাড়া বাড়াইসে !''
সবারই এতো এতো অজুহাত দেখে শেষে আম্মাকে বললাম ''এক কাজ করো , বাড়িওয়ালাকে বলো , ভাড়া বেশী দিতে পারবোনা। আমার প্রেশার বেড়ে গেছে। চিকিৎসার খরচ বেড়ে গেছে।''
আম্মু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ... আর আমি দেয়ালের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ... আম্মু কি আমার অজুহাতে কি মুগ্ধ হলো?
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:০৪