somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নির্জনতা

০৪ ঠা আগস্ট, ২০০৯ রাত ৮:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





গত কয়েকদিন ধরেই লক্ষ্য করছি মানুষের সঙ্গ কেমন যেন অসহনীয় হয়ে উঠেছে। ঘর থেকে বের হওয়া মানেই তাদের সম্মুখীন হওয়া। এমনকি ঘরেও আপনি যত চেষ্টাই করুন না কেন একা হতে পারবেননা। লোকজন আপনাকে চারপাশ থেকে সাড়াশি দিয়ে টেনে ধরবে। এমনকি যখন আপনি নিজের ঘরে নির্জন দুপুরে ঘুমিয়ে থাকবেন তখনও ময়লাওয়ালা নয়তো পিয়ন এসে কলিংবেল চেপে ধরবে এবং যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি তিনতলা থেকে নিচে নেমে এসে কলাপসিবল গেট খুলে দেবেন তারা অপেক্ষা করতে থাকবে। আপনার কাঁচা ঘুম ভাঙ্গিয়ে নিজেদের স্বার্থ উদ্বার করে তবে তারা যাবে। হয়তো সেদিন আপনার ময়লার ঝুড়িতে একটা বাদামের খোসাও জমা হয়নি তবু নিয়ম মাফিক ময়লাআলারা আসতে থাকবে, আপনিও চরম অসহিষ্ণু হয়ে ঝুড়ি হাতে নীচে নেমে আসবেন। সেদিনের ডাকে হয়তো কোনো গুরুত্বপূর্ণ চিঠিই আসবেনা তবু বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলো তাদের কাটতি বাড়াতে যে সকল লিফলেট বিলি করবে তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য পিয়ন আপনাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলবে।

প্রতিদিন কত শত লোকের সাথে যে কথা বলতে হয় তার ইয়ত্তা নেই। ভোর হতে না হতেই এসে হাজির হবে ছুটা বুয়া। তার বাজারের ফিরিস্তি শুনতে শুনতে হয়তো আপনি ঘুম থেকে জেগে আবার ঘুমিয়ে পড়বেন তবু তার ফর্দ শেষ হবে না, ক্রমাগত বাড়তেই থাকবে। তার দাবি পূরণ করতে গিয়ে টাকার বান্ডিলও ফুরিয়ে যাবে। আপনি মহাজনদের কাছ থেকে ধার করতে শুরু করবেন এবং বছর বছর তার সুদ বাড়তে থাকবে। আবার ব্যাপার এমন নয় যে আপনি লোভনীয় খাবার দেখে নিজেকে সংযত রাখতে পারবেন। ফ্রায়েড চিকেনের গন্ধ শুনলেই আপনার মন চনমন করতে শুরু করবে। তখন আপনাকে রেস্তরাঁয় ঢুকতে হবে এবং বেয়ারাকে ডেকে খাবারের অর্ডার দিতে হবে। দেখা যাবে সেখানে এসেও হাজির হয়েছে চেনা লোকজন। তাদেরকে না পারবেন আপনি চলে যেতে বলতে না পারবেন বসতে বলতে। খাবারের মাঝামাঝি সময়ে তারা ঘাড়ের উপর দাঁড়িয়ে ক্রমাগত কথা বলে যাবে এবং সেসব কথা আপনার বাম কান দিয়ে ঢুকে ডান কান দিয়ে সোজা বেড়িয়ে যাবে। এসময় আরও আরও লোকে ভর্তি হয়ে যাবে রেস্তরাঁর ছোট্ট ঘরখানা এবং বেয়ারা এসে আপনার খাবারের বিল দিয়ে যাবে, মানে বিদায় হও।

এরপরতো রাস্তায় নেমে পড়তেই হবে। সেখানেও শুধু লোকে লোকারণ্য। বাসের হাতলে ঝুলে লোক চলছে, নয়তো তারা সার বেঁধে হেঁটে চলেছে বড় রাস্তার মাঝখান দিয়ে। এদের মধ্যে দু’একজন আপনার গায়ের উপরও এসে পড়তে পারে এবং এ ঘটনায় তারা বিন্দুমাত্র অস্বস্তি বোধ করবেনা এবং ক্রমাগত একই ঘটনা ঘটতে থাকলে আপনিও তাদের এই আচরণে অভ্যস্ত হয়ে উঠবেন। আস্তে আস্তে রাত বাড়তে শুরু করলে দ্রুত একটা বাস ধরে নিজ স্টপেজে এসে নামবেন এবং সেখানেও আপনার জন্য অপেক্ষায় থাকবে তরকারিওয়ালা, ফলওয়ালারা। আপনার তাদের সাথে কথা বলতে ইচ্ছা না করলেও তারা নাছোড়বান্দার মতো পিছন পিছন আসতে থাকবে । সুতরাং বাধ্য হয়েই আপনি তাদের থেকে কিছু ফল কিনে নেবেন ।

এসকল ফেরিওয়ালাদের হাত থেকে কোনোমতে পালিয়ে বাড়ির সিঁড়িতে পা রাখামাত্রই দেখা হবে বাড়িওয়ালির সাথে। সে তার কোলাব্যাঙ্গের মতো খসখসে গলায় বলতে থাকবে এবারের বাজেটেও বিদ্যুত আর পানির দাম বাড়ানো হয়েছে, স্যুয়ারেজের ম্যানেজ্মেন্টের খরচও বেড়ে গেছে। মানে বাড়ি ভাড়া বাড়াতে হবে। এসব কথা শুনতে শুনতে নিজের ঘরে এসে ঢুকতেই বেজে উঠবে ফোন। এসব কলের বেশিরভাগই রং নাম্বার নয়তো সার্ভিসিং সেন্টার থেকে ফোন আসবে মাল ডেলিভারি বিষয়ে কথা বলার জন্য। এসকল অপ্রয়োজনীয় লোকের সাথে কথা বলতে বলতে জিভ অসার হয়ে এলে হয়তো ভাবছেন গলাটা একটু ভিজিয়ে নেবেন কিন্তু সে ফুরসৎটুকুও আপনি পাবেননা ঘরে এসে ঢুকবে চিলেকোঠার বুড়ো , যার নিত্য দিনের রুটিন হচ্ছে সারাদিনে পাড়া থেকে সে যেসব চাঞ্চল্যকর তথ্য সংগ্রহ করেছে তা বয়ান করা। ঘড়ির কাটা বারোর ঘরে পৌঁছালে কোনোমতে বাচাল লোকটিকে বিদায় দিয়ে বিছানার উপরে শরীরটাকে এলিয়ে দিতেই ঘুমে চোখ ভেঙ্গে আসবে কিন্তু বেশিক্ষণ স্থায়ী হবেনা এই সুখনিদ্রা। রাত যত বাড়তে থাকবে রাস্তায় শুরু হবে ট্রাক চলাচলের বিকট শব্দ। তার মধ্যেই আধোঘুম আধোজাগরনে রাতটি কেটে যাবে।

পরদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গবে প্রচন্ড মাথাব্যথা নিয়ে। আবার ডেইলি রুটিন - ছুটা বুয়া ,মাছওয়ালা, বাস কন্ট্রাকটর। কোনোমতে এদের হাত থেকে ছুটে অফিসে গিয়ে পৌঁছাতেই টেবিলে নোট-বসের ঘরে যেতে হবে। সেখানে আরেক মচ্ছব। শুরু হবে বসের ম্যারাথন গল্প, পারস্পার্যহীনভাবে তিনি বলে যাবেন একটার পর আরেকটা ঘটনা , যা শুনে দু’কান দিয়ে ধোঁয়া বের হতে থাকবে। দু’ঘন্টা বসের ঘরে গল্প শুনে মাথা ভারী হয়ে গেলে আপনি হয়তো নিজের সিটে এসে বসবেন এবং সেখানেও ক্রমাগত ফোন কল আসতে থাকবে, লোকজন জানতে চাইবে বাংলাদেশ কবে সমুদ্রের নিচে তলিয়ে যাবে বা সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পটি কি ঢাকাতেই হচেছ? পাবলিকের এইসব কৌতুহল মেটাতে মেটাতে আপনি হয়তো চোখে সর্ষে ফুল দেখতে থাকবেন এবং ক্রমাগত সটকে পড়ার কথা মনে আসবে। কিন্তু কোথায় গিয়ে লুকালে নিস্তার পাবেন তা বুঝতে পারবেননা। হয়তো অন্য সকলেই, যারা সটকে পড়তে চায় তারাও কোনো লুকোবার স্থান খঁজে পাবেনা। আর যদিবা খুঁজে পায় তো সেখানে গিয়েও নিস্তার নেই। বহু আগে থেকেই সেখানে জড়ো হয়ে আছে পঙ্গপালের মতো মানুষের দল এবং তারা সকলেই দাঁড়িকমাছাড়া ক্রমাগত বয়ান করে যাচ্ছে একই গল্প।

৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×