somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উত্তরাধুনিক প্রেম ও জটিলতা

০২ রা ডিসেম্বর, ২০০৯ সকাল ১০:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




অ্যান্ড্রোমিডাই মনে হল তাকে। দূর আকাশের তারা। চোখে কিউপেট্রিয় মোহময়তা। সবার মাঝে স্বতন্ত্র। চুলগুলো ঘন কালো কিন্তু দীর্ঘ নয়। একটু কোঁকড়া করে ছাঁটা। দু’একটা কুন্তল বাম গালের পাশে এসে লুটাচ্ছে। ন্যাচারলি হতে পারে আবার স্টাইলও। আজকাল বোঝার উপায় নেই। পার্লারগুলোতে ন্যাচারাল কসমেটিকসের ব্যবহার শুরু হয়েছে। ছোট-বড় সুপার মার্কেটে দেদারছে বিক্রি হচ্ছে। ঘরে বসেই লারা দত্ত বা নন্দিনী দাসগুপ্তার মতো হয়ে ওঠা যায়। প্রেমিকার বেশভুষা নিয়ে কথা বলাটা আহামক্কি নাকি কে জানে— তবে প্রেম জিনিসটা এখন এমনই গণতান্ত্রিক হয়ে উঠেছে যে তা নিয়ে ওপেন ফোরামে ডিবেট করা যায়। প্রেমের যৌন অনুভূতি পাবলিকলি শেয়ার করার মধ্যে এখন আর কেউ দোষ খুঁজতে যায় না। আজকাল জীবনকে একদম রবীন্দ্রনাথের নায়িকাদের মতো গভীর দ্যোতনা দিয়ে তৈরি করার দিন প্রায় শেষ। এখন অ্যান্ড্রোমিডাদের চোখের পাপড়ি কেঁপে ওঠার বর্ণনার সাথে সাথে ঊরু বেয়ে স্বেদ রস চুইয়ে পড়ার কথাও চলে আসে। তো সেই অ্যান্ড্রোমিডার কথা ভাবতে ভাবতে কিউপিড প্রায় ধরাশায়ী। কামজনিত এনজাইমের নিঃসরণে কিউপিডের বর্ণকানা রোগ সেরে ওঠে। লুকানো রংগুলো স্পষ্ট হয়ে দেখা দেয়। অ্যান্ড্রোমিডার রেপিড আই মুভমেন্ট দেখেই সে বুঝতে পারতো লং ড্রাইভে দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা না নদীর ঐ পারে নওয়াবগঞ্জে যেতে চাইছে মন। সোজা গাড়ি চালিয়ে জায়গা মতো হাজির। অ্যান্ড্রোমিডা আশ্চর্য হয়ে যেত সিক্স মিলিয়ন ডলার ম্যানের কাণ্ড কারখানায় একেবারে লা জওয়াব। কিন্তু যতই দিন যেতে লাগল কিউপিডের একঘেয়ে লাগতে লাগল অ্যান্ড্রোমিডাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ পেপারের মতো প্রমাণিত সত্য। এইজন্যই কি আগেকার যুগের গল্প উপন্যাসের মতো প্রেমিকারাও রহস্যময়ী ছিল— এখনতো দেখি কোনো রহস্যই নাই, রোমাঞ্চহীন ঘোস্ট স্টোরি। ভূতের ছবি কিন্তু ভয় লাগে না। পাওয়ার অফ করে বসে বিরক্ত লাগতে থাকে। ভয় ডর সব উঠে গেল নাকি? অ্যান্ড্রোমিডাও আজকাল মনস্তাত্ত্বিক নিরীক্ষা করতে শুরু করেছে; যখনই বুঝতে পারে প্রেমিক গাড়ি নিয়ে তার প্রিয় জায়গায় যাওয়ার জন্য রওনা হয়েছে। ব্যাস। সেও কম্পাসের কাঁটা ঘুরাতে শুরু করে। একবার ডান, একবার বাম, আশুলিয়া, বলধা গার্ডেন। কিউপিডের হাতের স্টিয়ারিং কেঁপে ওঠে। টাল সামলাতে না-পেরে কোথাও না-যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এদিকে বর্ণকানা রোগ আবার ফিরতে শুরু করে। একটু বেশিই ফেরে বোধহয় সব প্রায় গরুর চোখের মতো সাদা-কালো লাগতে থাকে। শেষ পর্যন্ত প্রেমে পড়ে সাদা-কালো সিনেমার যুগে ফিরে যেতে হল! কিউপিড সিদ্ধান্ত নেয় অ্যান্ড্রোমিডার ছায়াও মাড়াবে না, আর নয়। অনেক হয়েছে। সাপের পাঁচ পা দেখা হয়ে গেছে। অ্যান্ড্রোমিডাও কিওপিডের সাদা-কালো অনুভূতিতে জিভে পচা দুধের স্বাদ অনুভব করে এবং শেষ পর্যন্ত ফরাসি ভাষা শিক্ষার কাসে টন টন বমি করে ভাসায়।

এখানেই দু’জনের শেয় কিনা গল্পে জানা যায় না উত্তরাধুনিক যুগের প্রারম্ভে গল্পগুলো বেশ স্মার্ট, টানটান হয়ে ওঠে। ছেলেমেয়েরাও স্মার্টলি প্রেম করতে শুরু করে কিন্তু তাদেরকে গল্পে যত বোল্ড লাগে বাস্তবে উল্টো এমনকী গেঁয়োভূত বললেও কম বলা হয়। আন্কুথ্, মফিজ। উত্তরাধুনিক ছেলে-মেয়েরা গল্পের এ পর্যায়ে একেবারে হা-পিত্যেষ চেহারা বের করে ফেলে লোক-সমাজে। ফেসবুকের স্ট্যাটাসে কামোদ্দীপক কথা-বার্তা লিখতে থাকে, স্বল্প পোশাকের বা সুইমিং-এর ছবি আপলোড করে নিজের সেক্সুয়্যাল্ অ্যাপিল প্রকাশ করতে থাকে। রিয়েল প্রেম করা বাদ দিয়ে ফেসবুকে, স্কাইপিতে সার্চ দিয়ে বয়-ফ্রেন্ড বা গার্ল-ফ্রেন্ড খুঁজে নেয়। এ- প্রেমটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা-সাক্ষাতের বাইরে থাকে বলে ঝামেলাও কমতে থাকে। চ্যাটিং হয়ে ওঠে দিবারাত্রির কাব্য। এমনকী টয়লেটে বসেও মোবাইলে চ্যাটিং চলতে থাকে। এইসব চ্যাটিং চলাকালেই গল্পের প্রায় শেষার্ধে ছেলেরা পুতুপুতু হয়ে মায়ের বা বোনের পছন্দ করা ঐশ্বর্য রায়কে বিয়ে করে কক্স বাজার, সেন্টমার্টিনে মধুচন্দ্রিমায় যায়। আর মেয়েরা নায়কের অভাবে সিনেমা করা-ই ছেড়ে দেয়। তার মধ্যে দু’একজন গল্প লেখা শুরু করে। বাদবাকিরা গায়েবানা জানাজা পড়ে গায়েব হয়ে যায় মানে তাদের রেপিড আই মুভমেন্ট বন্ধ হয়ে যেতে থাকে ফরএভার।

এদিকে যৌতুক প্রথার উন্নয়ন ঘটার কারণে মেয়েরা বাপের বাড়ি থেকে ল্যাপটপ নিয়ে যেতে পারে উত্তরাধুনিক বাড়িতে মানে উত্তর দিকে মুখ করে যে আধুনিক বাড়ি তৈরি করা হয়েছে সেখানে। নতুন নিয়মে অফিসগুলোতেও চ্যাট করার সময় নির্ধারণ করা হয় আছরের বিরতির পর পর। উত্তরাধুনিক প্রেমে হাবুডুবু খেতে খেতে অ্যান্ড্রোমিডা আর কিউপিডের পুনরায় প্রেম হয় ভার্চুয়্যাল দুনিয়ায়; কিন্তু নতুন নামে অ্যাকাউন্ট খোলায় কেউ কাউকে চিনতে পারে না। প্রেম চলতে থাকে নতুন অ্যান্ড্রোমিডা আর কিউপিডের মধ্যে।




৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×