somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জন্মদিনে কবি অসীম কুমার দাস-এর কবিতা...

২৫ শে নভেম্বর, ২০১০ দুপুর ১২:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আশির দশকের মেধাবী ও নতুন ভাষা তৈরিকারী কবিদের মধ্যে অসীম কুমার দাস অন্যতম। শুধু সেই সময়ের জন্য নয় তার কবিতা বাংলা ভাষার উজ্জ্বল কবিতাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। যদিও তার উল্লেখ খুব কমই দেখা যায় এবং পাঠ। এর কারণ হয়তো বা কবির নিভৃত জীবন এবং কবিতা প্রকাশের ক্ষেত্রে নীরবতা। কিন্তু যার শব্দে শব্দে ধূম্র কুয়াশা, বিপর্যস্ত অম্লজান, লৌহ চূর্ণ বৃষ্টির দাপট- তাকে তো ভুলে থাকা যাবে না, তার কাব্যসুধাকে। সময় তার কথা বলবে। সময়ের দাঁত আছে, শিং আছে, যখন তখন কামড়ে ধরে। দ্রিমিকি দ্রিমিকি ক্লীং কালী বাতাসে। পাখোয়াজ, এস্রাজ আমাদের অন্ধ চেতনাকে অমৃতলোকের পথে বারবার ডাক দিয়ে যায়; বায়ুকোণে ঈষাণে বিষাণে দূরান্তরে স্তব্ধ নীলিমায়।


বর্তমানে কবি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন আর ধ্যানের মধ্যে নিমগ্ন হয়ে আছেন। এ-সবের মধ্যেও কবিতা বেঁচে আছে। অসীম কুমার দাসের একমাত্র প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ “ঝঞ্ঝা ও পুনরুত্থান”, ১৯৯২ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে শ্রী নারায়ণ চন্দ্র দাস কর্তৃক রাজশাহী থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। দীর্ঘ বিরতির পর আগামী বইমেলার জন্য তিনি তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ প্রকাশে সম্মত হয়েছেন । প্রকাশক "শুদ্ধস্বর" । ১৩ নভেম্বর, ২০১০, কবি একান্ন বছর পূর্ণ করলেন। জন্মদিনে “ঝঞ্ঝা ও পুনরুত্থান” গ্রন্থ থেকে কয়েকটি কবিতা এখানে দেয়া হলো।




অথচ ক্রন্দন থেকে যাবে



তোমার পৃথিবী আর

আমাকে ছোঁবে না কোনোদিন-

অথচ বন্ধন থেকে যাবে,

অবলুপ্ত সূর্যের সোনায়

উষার ক্রন্দন থেকে যাবে।


যেমন ঝঞ্ঝার পরে ঢেউ

ক্রমশ ঢেউয়ের বুকে নামে,

দিনান্তে যুদ্ধের শেষে ঘোড়া

নিহত যোদ্ধার পাশে থামে,

তোমার চোখের জলরেখা

এলায়িত কবরীর খামে।


সেতুর অনেক নীচে টেমস

যদিও প্রচণ্ড শান্ত

বরফের আদিম চুম্বনে,

অথচ অন্তরে তার

অন্ধ জলকল্লোলের ধ্বনি,

সেইভাবে নক্ষত্র-নিহত রক্তে

উদ্বেলিত উন্মত্ত সিম্ফনি।


আর কোনো লুব্ধ রাত্রি

বিপর্যস্ত আঙুলের ফাঁকে

তোমাকে ছোঁবেনা-

রজনীগন্ধার গন্ধ,

অন্তরীক্ষে ছড়াবে বেদনা।

সুদূর নির্জন ফ্লাটে

তোমার অশান্ত ঘুমে

রুদন্ত স্বপ্নের সীমানায়

ফুল হয়ে ঝরে যাবে

রাশি রাশি অন্ধকার

আলোর চেতনা;

তখন হারানো রাত্রি

বিলম্বিত আলেয়ার মতো সেই

শ্যাম্পেন-সময়

কোনো পরিচিত মুখের আদল

ক্রমাগত চূর্ণ হবে

সূর্য-ডোবা পাহাড়ের ফাঁকে-

অথচ বন্ধন

আর অবলুপ্ত দিগন্ত রেখায়

উষার ক্রন্দন থেকে যাবে।




বেলাডোনা সমুদ্রের পারে


দেখা হবে-

বেলাডোনা সমুদ্রের পারে,

হাজার হাজার নীল বাতাসের

বিভ্রান্ত ডানায়

দিশাহারা যখন আকাশ।

ফসফরাস-চূর্ণ তমসায়

তারা হবে লুপ্ত রাত্রি

হাঙরের অবলুপ্ত দাঁতে;

অগনন সূর্যহননের পরে

দানবেরা যখন ঘুমের

তেপান্তরে

বিরাট রাত্রির নীচে কেবলই ঘুমের,

দেখা হবে তখন আবার

বেলাডোনা সমুদ্রের পারে।

স্তব্দতার সাথে আরো স্কব্ধতার

ক্রুশবিদ্ধ ঝড়ে

যখন বিদ্যুৎরেখা

দিগন্তে মিলায়

নিরাকার দিগন্তের যৌবরক্তে

পরাচেতনায়

যেখানে দেবতা নেই

প্রাঞ্জল ধ্বংসের প্রান্তে উৎপাটিত

লবনাক্ত স্মৃতি

অন্ধকার-গ্রাসিত পাহাড়

বেলাডোনা সমুদ্রের পারে।




ব্রেইল


মৃত্যু নিভে গেলে

আলো-তুষারের মতো সাদা

স্বপ্ন ভেঙে গেলে

হলুদ নিয়ন

বিলুপ্ত রঙের দেশে যায়

এলম-গাছ বলেছিলো যাবে

পাতা ঝরে গেছে

পাহাড় আড়াল ক'রে আছে

সমুদ্র-ঝড়ের শেষে

তোমার অস্পষ্ট মুখ

কুয়াশার জ্যামিতিকে পায়

গভীর অরব রাত্রি

নেমে আসে গ্লাসের কোণায়

সুরার অমৃত-জল কালো

ইন্দ্রনীল আদিম জ্যোৎস্নায়

সেতো প্যাপিরাস-ব্রেইল

ছুঁয়ে দেখো ধ্বংসস্তূপ

পোড়া হাড়

চেতনার কাদা

হারানো কোরাস ভেঙে

একা-

কোদাল ঝিমিয়ে পড়ে

পায়ের স্নায়ুর থেকে নির্বাসিত

রক্তের পাখিরা

মৃত্যু নয়

আলোহীন বরফের গ্রাসে।




লুপ্তি


তোমাকে দেখিনা আর

আলোকিত আকাশের পথে

তুমি চলে গেছো কবে

অন্ধকার সূর্য-ভাঙা রথে

ভোর নেমে আসে মাঠে

সবুজ পাতায় আর ঘাসে

ভোর নেমে আসে রক্তে

পাখির গানের কলহাসে;

অথচ আসেনা আর

উষার আলোয় রাঙা প্রাতে-

তোমার আঁধার-ভাঙা মুখ

তোমার আকাশ-ভাঙা স্মৃতি

এখন স্মৃতির পারে স্মৃতি

স্তব্ধতার মতো কোনো গান

স্তব্ধতার মতো অবসান।



বোধন


ধ্বংসবিলাসিনী দেবী-জাগো!

তুমি একা জেগেছিলে,

যখন আঁধার ছিলো

অন্ধকারে ঢাকা আরো দূর

অট্টহাসি

বেজেছিলো পাখোয়াজে–

দ্রিমিকি দ্রিমিকি ক্লীং কালী।

অসিতবরনী দেবী

জেগে ওঠো

ধরো হাত

আমাকে জাগাও–

দুঃস্বপ্ন–মথিত এই জলরাশি

কেটে কেটে

ক্রমশঃ এগিয়ে চলি অনিবার্যতায়

অন্ধকার থেকে আরো দুরন্ত আঁধারে

উথলিত জলদি-প্রলয়

জেগে আছে মহাভয়

দেবতার আলো যেন মমি

দানবীর চুলে মাপ

রাশি রাশি যেন পাপ

জমে আছে

জন্তুর জ্যামিতিকে দেবী

ছিন্ন ক’রো খড়গের আঘাতে

যেমন কুয়াশা কাটে

হাঁসের ক্রেংকার আর ডানা

দাও সেই ডানার চেতনা

উড়ে যেতে পারি যেন

বিভীষিকা-মথিত জলের থেকে দূরে

যেখানে প্রথম তুমি

তাল তাল নগ্ন তমসাকে

বিলোড়িত করেছিলে

আলোর বৃংহিতে

উষা-রাতে-

জেগে উঠেছিলো দেশ-কাল

অনাদ্যন্ত মহাবিস্ফোরণে;

অগণন গ্যালাক্সির গর্জিত কোরাস

ভেঙে পড়েছিলো ওই

জবাকুসুমের মতো পায়ে–

দ্রিমিকি দ্রিমিকি ক্লীং কালী।





সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০১০ দুপুর ১:১৫
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×