প্রথমেই একটা গানাঃ
চুরি করেছো আমার মনটা,
হায়রে হায় মিস লংকা,
ঝড়ো হাওয়া যেন যৌবনটা
হায়রে হায় মিস লংকা.....
ইদানিং চুরি নিয়ে ব্লগের কয়েক জনের মধ্যে "পঁচা শামুক কান্ড" বেঁধে গিয়েছে! তাদের মধ্যে একজন আমাকে এসব নিয়ে পোস্ট দিতে বলেছিল। আমিও একটা ফান পোস্ট দেবার কথা বলেছিলাম! তাই বাধ্য হয়ে পঁচা শামুক দূর করতে এই বুলডোজার পোস্টের আবির্ভাব।
বাংলা সাহিত্যে চোরঃ
চোর ও চুরি বাংলা সাহিত্যের এক বিশাল সম্পদ। যেমনঃ
তস্কর! হাতটান!
চক্ষুদান! পুকুর চুরি!
চোরের মায়ের বড় গলা!
চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে!
চোরের দশদিন গেরস্থের একদিন!
..... ......
আচ্ছা? আলিবাবা ও চল্লিশ চোরের, চিচিং ফাঁক কথাটি আপনাদের মনে আছে নিশ্চয়!!
চুরি নিয়ে কিছু ঘটনাঃ
ঘটনা তো অনেক কয়টা বলবো? ছোট বেলায় দুষ্টোমি করে মায়ের আচার, ডিম, টাকা; অন্যের বই, আম, শশা..... সহ কতো কী যে চুরি করেছি? সব বলতে গেলে আমারই তো ফাঁসি হবে... (যদিও আমার পাঁচ জোড়া জুতো, কয়েক হাজার টাকা, একটা মোবাইল চুরি গিয়ে, সুদ-আসল বকেয়া এতদিনে মনেহয় সব উসুল হয়ে গিয়েছে)
নাটক/সিনেমায় চোর ও চুরিঃ.
নাটকের কথা আসতে পছন্দের দুটি মানুষকে মনে পড়ল: বৃন্দাবন দাশ ও সালাউদ্দিন লাভলু। চোরদের নিয়ে আমার পছন্দের কিছু নাটক আছে। যেমনঃ চঞ্চল চৌধুরি ও শাহনাজ খুশির "চোরের বউ" আর সুপার হিট "সাকিন সারিসুরি" । মগাসর্দার, জংসন কাকা, সাধন দাশ, গুরুদাশ, রুইতন, রঞ্জু, জাপান ডাক্তার, গোলাম, হান্নান-মান্নান, শিউলী ফুল, কাকলী, কস্তুরী, বাসন্তী বৌদি...... ওরা এখনো আমার চোখের সামনে ভাসে। এই নাটকে আমার নামেও একটা চরিত্র আছে(সাহেব মন্ডল), তবে সে ভিলেন। নাটকটা দেখলে ছিঁচকে চোরকে মারার আগে, যে কেউ অন্তত দশবার ভাববে!!
বিরতি ..................................................................................
চুরি নিয়ে গোপাল ভাঁড়ের ঘটনাঃ (সোনার চাষ!)
কৃষ্ণনগরের রাজবাড়ীর বাজারের দায়িত্বে ছিল গোপাল। বাজারের সময় তিনি হিসেব মেলতে পারতেন না। একদিন সে ধরা পড়ল। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র সাজাস্বরুপ তাকে হিমালয়ে পাঠানোর হুকুম করলেন। গোপাল অনেক অনুনয় বিনয় করলো, যে হিমালয়ে গেলে ঠান্ডায় জমে সে মারাই যাবে। কিন্তু লাভ হল না, রাজা কৃষ্ণচন্দ্র তার কথায় অনড়।
এবার গোপাল একটা ফন্দি আঁটলো। সে মহারাজাকে বলল, "হিমালয়ে যেতে আমার আপত্তি নেই। তবে আমি যে সোনা ফলানোর বিদ্যেটা জানি সেটা তো কাউকে শিখিয়ে যেতে হবে?"
গাছেও সোনা ধরে! এটা শুনে রাজা সহ রাজসভার সবাই অবাক!! রাজা তো গোপালকে হিমালয়ে পাঠানোর কথা বেমালুম ভুলে গেলেন। গোপালের এই আশ্চর্য ক্ষমতার কথা শোনার পর রাজসভার সবাই গোপালকে তাদের নিজ নিজ বাসায় নিয়ে যেতে চায়। অবশেষে তাকে রাজ কারাগারে রাখা হয়। গোপাল এই সুযোগে সোনার বীজ তৈরীর বাহানায় দশ জনের খাবার সব(মিষ্টি, দই, ছানা, মাখন, ক্ষীর, লাবড়ি.....) একাই সাবাড় করা শুরু করলো।
এদিকে সোনার বীজ বপনের দিন চলে আসলো। সবাই মহা উৎসবে জমিতে চলে গেল। চাষবাস করে বীজতলা তৈরী। মহারাজা গোপালকে বীজ বপন করতে বলল। কিন্তু গোপাল বলল, "মহারাজ, আমি তো বীজ বপন করতে পারবো না। আমি যে চোর! এই বীজ এমন কারো হাতে বপন করতে হবে যে কোনদিন চুরি করে নি। অন্যথায় সোনার চারাগাছ বের হবে না।" রাজা মন্ত্রীকে কাজটি করতে বলল। মন্ত্রী বলল, "মহারাজ, বেতনের সামান্য কটি টাকায় আমার চলে না, রাজকোষের দু-চারটা মোহর এদিক-ওদিক হয়ে যায়। তাই আমি সোনার বীজ বপন করলে তার চারা গজাবে না।"
এদিকে সেনাপতি, রাজপন্ডিত, রাজ জ্যোতিষী, বিজ্ঞানী, সভাকবি, জহুরী সবাই কিছু না কিছু হাতটান/চক্ষুদান করেছে। সুতরাং তাদের কেউই বীজ বপনে রাজী হল না। শেষে কাউকে না পেয়ে সভাসদরা মহারাজাকে ধরলো। রাজা তো তোতলাতে শুরু করলো! সভাসদরা বলল, "মহারাজা আমরা তো অভাবে পড়ে চুরি করি, আপনার আবার কীসের অভাব?" মহারাজা বলল যে, সে ছোটবেলায় মায়ের সিন্দুক থেকে নাড়ু সহ এটা সেটা চুরি করে খেয়েছে! সুতরাং তারা বপন করা বীজ থেকেও চারাগাছ গজাবে না।।
শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হল; সোনার বীজ থাক, গোপালকে হিমালয়ে পাঠানো হোক। এবার গোপাল তার ভুঁড়ি দোলাতে দোলাতে বলল, "মহারাজ, সবাই তো কিছু না কিছু চুরি করেছে? তাহলে, শুধু আমিই কেন সাজা পাব?"
এবার মহারাজ গোপালের চালাকি ধরতে পারলেন। ঠিকই তো, সবাই তো কোন না কোন ভাবে চোর। তাহলে গোপাল একাই কেন সাজা পাবে? গোপালের বুদ্ধি দেখে হাঁসতে হাঁসতে তিনি গোপালকে রাজসভার ভাঁড় নিযুক্ত করলেন। এরপার থেকে গোপালের নাম হয়ে গেল "গোপাল ভাঁড়"। এমন মজার মানুষকে তিনি কি হিমালয়ে পাঠাতে পারেন???
(এটা আমিই টাইপ করেছি! গতকাল অনেক খুঁজলাম, কিন্তু গল্পে লিংক পেলাম না, ইউটিউবেও পেলাম না! অথচ টাইপ করা শেষে না হতেই গল্পের নাম মনে পড়ল। লিংকও পেলাম। এখন মনে হচ্ছে, "ধূর, কষ্টকরে টাইপ করাটাই সার।" এমন অবস্থায় কার মেজাজ ঠিক থাকে বলুন?? সোনার চাষ, পর্ব-১৭)
বিরতি নিন . ...............................................................
চোর ও চুরি নিয়ে একটি ছড়া
প্রতিদিন চুরি যায় মূল্যবোধের সোনা,
আমাদের স্বপ্ন, আমাদের চেতনা।
কিছুটা মূল্য পেয়ে ভাবি বুঝি শোধ-বোধ,
ন্যায় নীতি ত্যাগ করে, মানুষ আপোস ক’রে,
চুরি গেছে আমাদের সব প্রতিরোধ।
এর পর কোনো রাতে, চাকরটা অজ্ঞাতে,
সামান্য টাকা নিয়ে ধরা প’ড়ে হাতে নাতে।
সকলে সমস্বরে, একরাশ ঘৃণা ভরে
চিত্কার করে বলে —
চোর, চোর, চোর।।
প্রতিদিন চুরি যায় দিন বদলের আশা,
প্রতিদিন চুরি যায় আমাদের ভালবাসা।
জীবনী শক্তি চুরি গিয়ে আসে নিরাশা,
সংঘাত্ প্রতিঘাত্ দেয়ালে দেয়ালে আঁকা,
তবু চুরি যায় প্রতিবাদের ভাষা।
কখনো বাজারে গেলে, দোকানী কিশোর ছেলে,
কাঁপা কাঁপা হাত নিয়ে, ওজনেতে কম দিলে,
সকলে সমস্বরে, একরাশ ঘৃণা ভরে
চিত্কার করে বলে —
চোর, চোর, চোর, চোর, চোর।।(মাথায় কিছু ঢুকলো?)
উপসংহারঃ
আমি তো আজকেই উপরের কবিতাটা কপি-পেষ্ট করলাম। আমাকেও কি হিমালয়ে যেতে হবে। ওরে বাবা! ঠান্ডার মধ্যে আমি মইরাই যামু!! সামুর পাঠক সমাজ? আপনারা সত্যি করে বুকে হাত দিয়ে বলেন তো, এমন কে আছেন; যিনি কখনো, কোনদিন, কোনকিছু চুরি করেন নি???
পুনশ্চঃ
স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ ননী/মাখন চুরি করে খেয়েছে, আর আমরা তো কোথাকার কোন ম্যাওপ্যাও! ও ভালো কথা, এসব দুষ্টো, মিষ্টি চোরাই কাহিনী না থাকলে লাইফটা কি জমে??
@কুঁড়ের_বাদশা
@স্বপ্নের_ফেরিওয়ালা
@জগতারন
কই সোনা মানিকেরা?
দুষ্টোমি না করে, একটু মনযোগ দিয়ে পড়োঃ
এই পোস্ট একটা ফাঁদ/টোপ ছিল। তবে এটা চোর নয়, সাধু ধরার ফাঁদ। আপনার টোপ গিলেছেন!(আহা, সাধু! সাধু!) যদিও টোপে বড়সির জায়গায় ওষুধ দেয়া ছিল! কিন্তু মনে হচ্ছে ওষুধে কাজ হয়নি!!
আচ্ছা?
আপনারা কি আকাইম্মা?
আপনাদের খেয়ে পরে কোন কাজ নেই?
আপনারা ফাউল/ইজি কাজে এত বিজি কেন??
চাকরি লাগবে?? না লাগলে চাকরির ব্যবস্থা কইরা দ্যান, আমার কাছে অনেকে ঘ্যান ঘ্যান করছে? কিন্তু আমার পাওয়ার কম। আপনাদের উসিলায় তাদের একটা গতি হোক!!!
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১৮ দুপুর ১২:০১