আমার স্মৃতিশক্তির মতবাদ অনুসারেঃ যবে থেকে আমার জ্ঞান-বুদ্ধি হয়েছে, তবে থেকেই আমি প্রেমে পড়া শুরু করেছি।। আপনারা আবার এটাকে কোন ছোঁয়াচে রোগ ভেবে ভুল করবেন না। এসব নিয়ে সত্যকথা বলার মত সৎ সাহস ক-জনের থাকে? বলুন??
যাক্ সে কথা, গল্প শুরু করি:
তখন হাইস্কুলে পড়ি। সুন্দরী তমা(ছদ্মনাম) পড়ে আমার দু-ক্লাস নীচে। সুন্দরীর সাথে পরিচয় ক্লাসের এক খচ্চর বন্ধুর মাধ্যমে। বালিকাকে দেখে আমি তো অবাক, "আমার চক্ষু ফাঁকি দিয়া, সুন্দরীটা এতদিন লুকাইয়া ছিল কীভাবে?? পরে খোঁজ নিয়ে জানলুম অনেকেই তাঁকে পছন্দ করে, আমার আগেই দুজন দরখাস্ত দাখিল করে বসে আছে। যদিও সেগুলো মঞ্জুর করা হয় নি।
এতএত প্রেমিকদের ভীড়ে, বালিকাকে পাবার জন্য বালক-বীর বিদ্রোহী হয়ে উঠলো। কিন্তু উপায় আর খুঁজে পাই না। অবশেষে, মোকসেদুল মোমেনিন নামক এক বইয়ে পেয়ে গেলাম "প্রেমিকাকে পাবার উপায়" সম্পর্কে একটা তদবীর। কি সব হাবিজাবি নক্সা আঁকা। নিয়ম দেয়া আছে, "মেয়ের নাম ও তাঁহার পিতার নাম, এই নক্সার সাহিত কাগজে লিখিয়া সুতায় বাঁধিয়া বৃক্ষের ডালে ঝুলাইয়া দিতে হইবে। বাতাসে কাগজ দুলিবে আর প্রেমিকা পাগলের মত ছুটিয়া আসিবে"
এক বুক আশা নিয়ে কোন এক পড়ন্ত বিকেলে ছাদের উপর লুকিয়ে, পঞ্চানন কর্মকারের মত খাতায় সেই নক্সা আঁকা শুরু করলাম। প্রথমে কালিছাড়া কলম ব্যাবহার করলাম, যাতে কপি করাটা কেউ বুঝতে না পারে। কিন্তু বইয়ের অপর পৃষ্ঠায় যে দাগ পড়ে রইলো সেটা বেমালুম ভুলে গেলাম। এরপর সেটা আমগাছের ডালে ঝুলিয়ে দিলাম। কাগজটা বাতাসে দুলতেই আমার চোখ চকচক করে উঠলো, হার্টবিটও গেল বেড়ে। তখন ভাবখানা এমন, "আমার প্রেম এবার ঠেকায় কোন সালা?"
শালা বাবুরা না ঠেকালেও, মেয়ের বড় ভাই এবং তার পাষন্ড পিতা মিলে মেয়েটার বিয়ে ঠিক করে ফেলল। বিয়ের কথা শুনে, স্কুলের দেবদাসদের মাথায় পড়ল বাড়ী। আমি সুবোধ, মনের কষ্ট মনেই চেপে(বন্ধুরা তখনো জানেনা আমার প্রেমিকাদের লিস্টে তার নামও আছে) দেবদাস গণনায় মন দিলাম। শেষে কয়েক হালি দেবদাসের মন ভেঙে বালিকা পার্বতী বিদায় হল। সময়ের স্রোতে সব কিছু ভুলে গেলাম।
কয়েক মাস পর, হঠ্যাৎ একদিন "মোকসেদুল মোমেনিন" বইটা চোখে পড়লো। বুকটা ধক্ করে উঠলো। দৌড়ে গেলাম সেই গাছ তলায়। কিন্তু কোথায় সেই কাগজ? কোথায় সেই সুতো? সব তো দেখি হাওয়া!!
হায়! হায়! এখন কি হবে??
আচ্ছ?
মেয়েটা যদি সত্যি সত্যি পাগল হয়ে আমাদের বাসায় চলে আসে? তখন??
একরাশ প্রশ্ন মাথায় এসে ভীড় করলো।
এসব চিন্তায় আমি না পারি খেতে, আর না পারি ঠিকমত ঘুমাতে। শেষে প্ল্যান করলাম, প্রেমের গুষ্টি কিলাই, আগে নিজের প্রাণ বাঁচাই। বালিকা যদি কাগজের গুনে বাসায় এসেই পড়ে, একা পালিয়ে যাব। টাকা-পয়সাও রেডি করে রাখলাম। ভয়ে ডরে আমি তো ভালোমানুষ হয়ে গেলাম। প্রতিদিন নামায পড়ি আর বালিকাকে তাড়ানোর দোয়া করি। একবার ভাবলাম আমার লাভগুরু, জবা আপাকে(কাজিন) এসব বলি। শেষে ঠ্যাঙানির ভয়ে, কাউকে আর বলা হয় নি।
পুনশ্চঃ
গতকাল অপরাধী গান শুনে ঘটনাটা মনে পড়লো। ঝাঁড় ফুঁকে কাজ না হলেও মানুষ যে খুশি হয়, আমি তার জ্বলোজ্যান্ত প্রমাণ।
ভাগ্যিস, সেদিন কাগজটা কাজ করে নি!!
তা না হলে কী যে হতো???
ছবিঃ সায়েম সাদাত, নেট।
উৎসর্গঃ
যার ছায়া পড়েছে, মনের আয়নাতে
সে তো তুমি নও, ও গো তুমি নও...
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০৩