somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মো: নিজাম উদ্দিন মন্ডল
পাঠক ছিলাম, লেখক হলাম। পড়ব বেশী, লিখব কম। পছন্দের বিষয় প্রকৃতি, জীবন ও দর্শন। ভালোলাগে প্রবন্ধ ও সম্পাদকীয়। প্রতীক্ষায় আছি একদল বিচক্ষণ লেখকের। যারা সমাজের সমস্যাগুলো বুঝবে, তা নিয়ে ভাববে ও লিখবে। যে লেখায় মানুষ হবে সচেতন, দেশের হবে উন্নয়ন।।জয় বাংলা।।

আমার হৈমন্তী! (বড় গল্প, শেষ পর্ব)

১১ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


৭.
তারপর বলার মত কোন কথা হয় নি। আমিই বলি নি। কারণটা অবস্য তেমন কিছু নয়। আব্বার উপর রাগ, গতদিন মেয়েটাকে যত সুন্দর ভেবেছিলাম বাস্তবে সে ততটা নয়। আসল কথা হল, বাড়ী ভর্তি মানুষের সামনে তার সাথে কথা বলতে সংকোচবোধ করছিল। এদিকে ছোট থেকেই বলে আসছি, "আমি বউ পাগল হব না, বউয়ের কথায় চলব না।" সেটাও তো মাথায় রাখতে হবে?

আহারে হিরো? কত প্ল্যান করেছিলি? গিন্নি হবে শিক্ষা আপার মত বুদ্ধিমান, শামা আপার মত দশভূজা, মিথী বা কথা আপুর মত চঞ্চল, হাসিখুশি, প্রাণবন্ত। যাকে দেখলে মেজাজ ঠান্ডা হয়ে যাবে। শেষে কিনা তোর ভাগ্যে এমন বোবা মার্কা বউ জুটলো? দেখলেই মনে হয় একটু আগে আইসিইউ থেকে উঠে এসেছে!!

শেষ দেখাটা বিয়ের ঠিক কয়দিন পরে মনে নেই। সেদিন(সম্ভবত সকালে) নাস্তা খেতে বসেছি। আমার নিয়ম হল, খাবার সময় যা দরকার হবে আমি একাই তুলে নিব। আদর করে অন্য কারো দেবার দরকার নেই। (অন্য কেউ খাবার দিলে বেশী দিবে, খেতে কষ্ট হয়। না খেলে নষ্ট হবে, বিরক্ত লাগে।)

এমনিতেই চিন্তায় খেতে পারি না। তার উপর হুট করে সে এক গাদা খাবার প্লেটে চাপিয়ে দিল। মাথার নিউরণগুলো খুব দ্রুত কাজ করা শুরু করলো। মনে হল, "মেয়েটা যেন আমাকে বশ করার চেষ্টে করছে। সেই রাতে আমাকে ধর্ষন করা পর থেকে ও ভালোমত কথা বলে নি। সে কি ভেবেছে যে, একটা সন্তান হলে আমি গলে যাব? তার কথায় উঠবো আর বসবো? আমাকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাবে এমন সাধ্যি কার?"

খাবার রেখে সিংহের মত গর্জে উঠলাম। আম্মার কাছে ছুটে গেলাম। কয়েক দিনের যত মেঘমালা সব একসাথে বজ্রসহ ঝরে পড়লো। কথাগুলো প্রায় এরকম, "আমার জীবনটা তোমরা নষ্ট করলে কেন? দুনিয়াতে কি তোমরা আর কোন মেয়ে খুঁজে পাও নি? এরকম মনমরা, হাবাগোবা, বোবা-কালা মেয়ের সাথে আমি ঘর করতে পারবো না। আমি আজকেই শহরে চলে যাব! ... ... ... "

আম্মা তো একটা কথাও বলল না। আমি রাগ ঝেড়ে ফিরে আসলাম। কিন্তু সে কই? তার যে কোন সাঁড়া শব্দ নেই? বাসার গেটেই তো আমি ছিলাম, সে চলে গেলে তো আমি দেখতে পেতাম....( হায় রে মানুষ! যাকে তুই সহ্য করতে পারিস না, এখন তাকে খুঁজিস কেন?)

৮.
এরপর কেটে গিয়েছে অনেক সময়। সেদিন হৈমন্তী গল্পটা পড়তে গিয়ে, চোখটা ভিজে উঠলো। আহা! আমারও তো হৈমন্তী ছিল। আচ্ছা? হৈমন্তীরা এত চুপচাপ/অভিমানী কেন? তারা প্রতিবাদী হতে পারে না? তারা কি মনের কথাগুলো খুলে বলতে পারে না? সবাই কি অপুর মত, অপুর বাবা-মায়ের মত? আমি না হয় রাগ করে সেদিন দুটো কথা বলেই ছিলাম। কিন্তু আমার আব্বা, আম্মা, আপা-দুলাভাই? তারা তো ওকে মেয়ের মত ভালোবাসতো। তাহলে সে কেন এমনটা করলো? আর তাদের পরিবার বা যৌতুক নিয়ে কোন কথা বলবে এমন সাহস কার?

মেয়েরা নাকি মন বুঝতে পারে? সে কি জানে না, আমার রাগের মধ্যেও একটা ভালোবাসা থাকে? আর আমরা মেয়েদের অসম্মান করেছি কবে? আমার এক চাচার বউ পেটানোর বদ অভ্যেস ছিল। আমরা চাচাতো ভাইয়েরা মিলে চাচীর পক্ষ নিতাম। এরপর থেকে চাচা দিনের বেলা চাচীকে মারার সাহস পেত না(আমাদের ভয়ে)। মারলে রাত্রে মারতো, আমরা ঘুমিয়ে যাবার পর। যেদিন রাতে মারতো পরদিন খুব ভোরে উঠে পালিয়ে যেত। যখন ফিরত তখন চকলেট, ক্যান্ডি, বিস্কুট বা অন্য কোন খাবার নিয়ে ফিরত। আমরা কি ওসবে ভোলার পাত্র? মাঝেমধ্যে চাচী আমাদের বীর বাহাদুর বলে ডাকতো। প্রতিবাদের ঐ গুণটা তো এখনো আমাদের মধ্যে আছে!!!

এখনো মাঝেমাঝে বিড়বিড় করে বলি, "হৈমন্তীরে, আমার ভুল হইয়া গিয়াছে। আমারে তুমি মাফ করো, তুমি ফিইরা আসো। আমি আর কোনদিন তোমাকে বকবো না। তোমাকে যে অনেক গল্প শোনানোর বাঁকি!!"

আচ্ছা?
আমার হৈমন্তীর আসল নামটি কী?
সে এখন আছেই বা কোথায়?
--- থাক! অনেক কাজ পড়ে আছে। সময় পেলে ওসব নিয়ে একটা উপন্যাস লিখবো।।

গানাঃ
বড় ইচ্ছে করছে ডাকতে,
তার গন্ধে মেঘে ঢাকতে,
কেন সন্ধ্যে সন্ধ্যে নামলে সে পালায়?
তাকে আটকে রাখার চেষ্টা,
আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে তেষ্টা,
আমি দাঁড়িয়ে দেখছি শেষটা জানলায়।
বোঝেনা সে বোঝেনা, বোঝেনা সে বোঝেনা(২)
বোঝেনা বোঝেনা বোঝেনা, বোঝেনা বোঝেনা বোঝে না.........

.
.
.
(সমাপ্ত)


সারমর্মঃ
দু'পেয়ে জীবগুলো বড় স্বার্থপর। আমি যাকে পছন্দ করি সে আমাকে সহ্য করতে পারে না। আবার আমাকে যে জীবন দিয়ে ভালোবাসে, আমি তাকে বুঝতে পারি না/পাত্তা দেই না/অবহেলা করি। কি জানি? এটাই হয়তো জগৎ সংসারের নিয়ম।।

পুনশ্চঃ
("নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর খাসা।")
গল্পটি আমি দু'দিন ধরে লিখেছি। বলতে গেলে কাজ কর্ম সব ফেলে রেখে। ইচ্ছায়/অনিচ্ছায় বেশকিছু ভুল হয়ে গিয়েছে। সময় পেলে হয়তো এডিট করবো।।

গল্পটি ত্রিমাত্রিক। যা স্বপ্ন, বাস্তবতা ও কল্পনা মিশ্রিত, কিছু অংশ আসলেই সত্য। সেসব নিয়ে আরেক দিন বলবো।

বি. দ্রঃ
লেখাটি ইচ্ছে করেই প্রথম পাতায় দিলাম না। কয়েক দিন ব্যস্ত থাকবো। প্রতিউত্তরে দেরী হবে.....


সবার জন্য শুভকামনা ও ভালোবাসা।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১০:৫৫
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×